
হাস্যরস, মানবিক টানাপড়েন, রহস্য আর বাস্তবতার মিশ্রণ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’
“বোহেমিয়ান” মানে কি? “বোহেমিয়ান” শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ Bohémien থেকে, যার অর্থ একপ্রকার যাযাবর জীবনধারার মানুষ। নিয়ম-নীতির বাঁধনে না বাঁধা, স্বাধীনচেতা—এই রকম জীবনযাপনকারীদেরই বলা হয় বোহেমিয়ান।

আর সেই ভাবনাতেই কি তৈরি হয়েছে হইচই-এর নতুন সিরিজ “বোহেমিয়ান ঘোড়া”? চলুন, খুঁজে দেখি তার সার্থকতা।
গল্প বিশ্লেষণ (স্পয়লার ছাড়া)
অমিতাভ রেজা চৌধুরীর পরিচালনায় হইচই-তে সদ্য মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ “বোহেমিয়ান ঘোড়া” শুরু হয় এক রহস্যময় চরিত্র আব্বাস ড্রাইভারকে কেন্দ্র করে—যার সাত জেলায় সাত বউ, ভ্যাজাল তাঁর আটে! শুরু থেকেই সিরিজটি দর্শককে টেনে ধরে তার অনিশ্চিত ও রোমাঞ্চকর গল্প দিয়ে।
মূলত এই “বহুবিবাহ” রহস্য এবং তার জেলাভিত্তিক সম্পর্কের জট খুলতেই এগিয়ে যায় পুরো কাহিনি।
অভিনয় ও চরিত্র বিশ্লেষণ
মোশাররফ করিম
আব্বাস চরিত্রে মোশাররফ করিম যেনো চরিত্রটিকে নিজের মতো করে পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর সংলাপের ধরন, অভিব্যক্তি এবং সিগনেচার স্টাইল এই চরিত্রে চমৎকারভাবে মিশে গেছে। এমন ভিন্নধর্মী চরিত্রে তাঁর উপস্থিতি এক কথায় দুর্দান্ত।

অন্যান্য চরিত্র
আট বউ চরিত্রে প্রত্যেকেই যথেষ্ট ভালো করেছেন, তবে “জুঁই করিম”কে দেখে কিছুটা “অভিনয় করছেন” বলেই মনে হয়েছে।অন্যদিকে, রুনা খান (আম্বিয়া চরিত্রে) ছিলেন একেবারে আগুন—দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। আর আমার দেখা সাদিয়া আয়মান-এর এটিই প্রথম কাজ—অভিনয় খারাপ লাগেনি মোটেও। যথেষ্ট সুন্দরী সে, এজন্য সুন্দরী নামটা তাঁর সাথে ভালোই মানিয়েছে।
পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি ও কালার গ্রেডিং
অমিতাভ রেজা চৌধুরীর পরিচালনায় সিরিজটি বাস্তবধর্মী হলেও শেষটা যেন একটু তাড়াহুড়া করে শেষ করা হয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফিতে ট্রাক ড্রাইভারের জীবন ও বাংলাদেশের প্রকৃতি বেশ জীবন্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও কিছু হ্যান্ডহেল্ড শটে অতিরিক্ত কম্পন চোখে লেগেছে—ক্যামেরা যেন দর্শক নিজেই নাড়াচ্ছে এমন অনুভূতি হয়েছিল কয়েক জায়গায়। এটা আমার তেমন ভালো লাগে নি, হ্যান্ড হেল্ড শট গুলো অপরিপক্ক হাতে করা হয়েছে তা বুঝাই যাচ্ছিলো। তবে কালার গ্রেডিং ছিল এক কথায় প্রশংসনীয়। বড় স্ক্রিনে দেখলে অনেক বেশি উপভোগ্য মনে হবে, মোবাইলেও অবশ্য ঠিকঠাক লেগেছে। আমি দুটোতেই দেখেছি।
পরিশেষে…
বোহেমিয়ান ঘোড়া একটি ভিন্ন ধাঁচের সিরিজ—যেখানে হাস্যরস, মানবিক টানাপড়েন, রহস্য আর বাস্তবতার মিশ্রণ রয়েছে। মোশাররফ করিমের অনবদ্য অভিনয়, চেনা অভিনেতাদের নতুন চরিত্রে উপস্থাপন এবং পরিচালনায় কিছু নতুন ভাবনা সিরিজটিকে উপভোগ্য করেছে।
শেষদিকে পরিচালক নিজেই ছোট একটা ক্যামিও দিয়েছেন—দর্শকের মনে থাকবে হয়তো সেটা। তবে শেষ পর্বে কিছুটা গাফিলতির ছাপ ছিল, যেটা আরও গোছানো হতে পারতো। দেখা যাক পরের সিজনে কতোটুক উপভোগ্য করতে পারে।
রেটিং: ৭/১০
🎯 যাদের ভালো লাগবে: যারা ভিন্নধর্মী গল্প ও চরিত্র দেখতে ভালোবাসেন, একটু হিউমার, একটু রসালো রহস্য—তাদের জন্য একদম পারফেক্ট না হলেও চলনসই।