Select Page

বসগিরি : সহজ গল্পের চেনা চিত্রনাট্য

বসগিরি : সহজ গল্পের চেনা চিত্রনাট্য

bossgiriঅভিনয় : শাকিব খান, বুবলি, মিজু আহমেদ, সাদেক বাচ্চু, মাজনুন মিজান, চিকন আলী,অমিত হাসান, রজতাভ দত্ত প্রমুখ
পরিচালনা : শামীম আহমেদ রনি
প্রযোজক : টপি খান (খান ফিল্মস)
ডিস্ট্রিবিউটর ও কারিগরি সহায়তা : জাজ মাল্টিমিডিয়া

?কাহিনি সংক্ষেপ:

ভুমিদস্যুদের কবল থেকে বেদখল হওয়া জমিগুলো আসল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চাকরি থেকে সাসপেন্ড হওয়া লাকি ওরফে শাকিব খানের বস হয়ে ওঠা যে কিনা বসগিরির মাধ্যমে বাবার সততার আদর্শ বাস্তবায়ন করে, যে কিনা শুধু অসৎ ব্যাক্তিদের সাথে বসগিরি দেখায়, সৎ ব্যাক্তিদের পক্ষে থাকে। কাহিনি গড়ে উঠেছে মূলত লাকি মানে শাকিব খান কিভাবে বুবলি কে পায়,সেটা কে কেন্দ্র করে। গ্যাং এর এক সদস্যের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বুবলির সাথে পরিচয়, প্রথম দেখায়ই বুবলি কে ভালবেসে ফেলা। এরপর বুবলির পেছনে পড়ে থেকে বিভিন্ন ভাবে তাকে রাজী করানোর চেস্টা। এক পর্যায়ে বুবলির বাবা মিজু আহমেদ আর শাকিবের বাবা সাদেক বাচ্চুর মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ, পরবর্তী তে জানা যায়, বুবলির বাবা ডিকে মানে ডাবল কিলার ওরফে অমিত হাসানের ভয়ে বাধ্য হয়ে শাকিবের বাবার জমি কেনা নিয়ে তার সাথে বিরোধে যায় শুধু মাত্র নিজের পরিবার বাচাতে। পরবর্তীতে বুবলির পরিবার কে শাকিব বাচাতে পারে ডিকে ওরফে অমিত হাসান এবং ডাবল ডিকে ওরফে রজতাভ দত্তের গ্যাং এ জয়েন করে বিভিন্ন ছলচাতুরীর মধ্য দিয়ে। এবং পরিবারকে বাচানোর বিনিময়ে বুবলি শাকিবের সাথে প্রেমে রাজি হয়ে যায়।

?কাহিনি বিশ্লেষণ :

মেন্টালের তুলনায় এ ছবির কাহিনি বেশ ভাল ছিল। একেবারে সহজ সরল কাহিনি। এতটাই সহজ সরল যে ভাল সিনেমাখোর হয়ে থাকলে যে কেউই প্রথম কিছুক্ষণ দেবার পর প্রতিটি সিনের শুরুতেই বলে দিতে পারবে ওই সিনে ঠিক কি হতে পারে। কাহিনি কোন দিকে যেতে পারে। কাহিনি বেশ ভালই বলা চলে। আহামরি নয় একদম। আর দশটা বাংলা ছবি থেকে খুব একটা আলাদা কাহিনি না। প্রথম দিকে ভেবেছিলাম, আহামরি কাহিনি পেতে যাচ্ছি। দ্বিতীয় হাফ থেকে দেখে, ওমা, কি ভাবলাম আর কি হল! অনেকটা যত গর্জে তত বর্ষে না টাইপের। তবে আমি বলব, বেশ ভালই কাহিনি। এঞ্জয় করতে পারবেন। সমস্যা নেই। বোরিং হবেন না বলতে পারি।

?সংলাপ :

এ ছবির কাহিনির চেয়ে সংলাপগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ঢাকাইয়া ভাষায় সংলাপগুলো বেশ ভাল লেগেছে। এনজয় করেছি বলা যায়। একটা ডায়লগ ছিল এরকম (ঠিক মনে নাই)

” দর্জি যখন প্যান্ট বানায়, তখন মাইনাস করার জায়গাটা ঠিকই রাইখা দেয় “,,

” ঈদ তো গেল মাগার কোলাকুলি এখনো বাকি”,

বুবলি যখন শাকিবের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে বাবাকে ফোন দিয়ে গুন্ডা এনে শাকিব কে মার খাওয়ায়,সে দৃশ্যে একটি সংলাপ এরকম অনেকটা :

“বেশির ভাগ ডিভোর্স হয় স্ট্যামিনার অভাবে, তাই তোর ভাবি আমার স্ট্যামিনা পরীক্ষা করতেসে”

এরকম আরো কিছু ডায়লগ আছে যা আপনি হলে বসে এঞ্জয় করবেন।

মাঝে মাঝে কিছু ডায়লগ শুনে পরের ডায়লগ কি হতে পারে সেটাও আন্দাজ করা যাচ্ছিল আর প্রায়ুই মিলে যাচ্ছিল, যেমন :

“ওদের যেখানে শেষ, বসের সেখান থেকে শুরু” এটাইপের একটা ডায়লগ আছে,এরকম আরো কিছু ডায়লগ শেষ হবার আগেই ধরা যাচ্ছিল।

? অভিনয় :

সবার আগে শাকিব খানের কথা বলতে হবে। পুরো মুভিতেই বেশ দারুণ করেছেন বরাবরের মত, তবে মাঝে মাঝে চোখ নাড়িয়ে কথা বলাটা ভাল লাগেনি। এছাড়া তার প্রতিটা ডায়লগ ই এনজয় করার মত। দর্শক প্রায়ই হাততালি দিয়ে জানাচ্ছিল কেমন এনজয় করছে। শাকিব খানের গেটাপ ছিল ভাল লাগার মতই। স্পেশালি যখন বাবার জন্য যখন সরকারি ভূমি অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করে সে গেটাপ টা ভালই ছিল। আর প্রতিটা ডায়লগ ডেলিভারি ই ভাল ছিল।বিশেষ করে ঢাকাইয়া সংলাপগুলো এনজয় করার মত ছিল। পুরোটাই ফাটিয়ে দিয়েছেন বলতে পারি। বলতে গেলে তার অভিনয়ে সন্তুষ্ট এবং একই সাথে মুগ্ধ। তবে মাঝে মাঝে তার ভুড়িটা বুঝা গেছে আর কি :/

এরপর আসি শবনম বুবলির বিষয়ে। তাকে আমার পছন্দ হয়নি ততটা। কথা বলার স্টাইল টাই শুধু পছন্দ হয়েছে। ডায়লগ ডেলিভারিতে নতুন হিসেবে উতরে গেছেন মোটামুটি। কিন্তু ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন একেবারে জঘন্য ছিল। কোনটা রাগের এক্সপ্রেশন আর কোনটা ভালবাসার এক্সপ্রেশন বুঝা যায় নি। তিনি এক্সপ্রেশন দিতে পেরেছেন হয়ত, কিন্তু চেহারার সাথে যায় নি, চেহারার জন্য হয়ত এক্সপ্রেশন টা ততটা ফুটে ওঠেনি।

এ মুভিতে বুবলির ছোট বোন কে ভাল লেগেছে। বুবলির ছোট বোন ইরিনের (মুভি তে শাকিবের বোন) যখন পর্দায় আসল তখিন দর্শক বলা শুরু করল, এটা কি বুবলির ছোট বোন নাকি? ? যাই হোক, তার চেহারা বুবলির থেকেও সুন্দর, তার রোল টা ভাল লেগেছে। আমার মনে হয়, বুবলির বদলে ওকে গাইড করলে ভাল হয় 😀

তাছাড়া অমিত হাসান,সাদেক বাচ্চু,মিজু আহমেদের অভিনয় বরাবরেএ মতই ছিল। স্পেশালি রজতাভ দত্ত অনেক ভাল অভিনয় করেছেন, কিন্তু তার ভয়েস অন্য একজন দেয়ার কারণে ততটা ফুটে ওঠেনি।

আর সবশেষে মাজনুন মিজানের কথা আলাদাভাবে বলাই লাগে। জাস্ট ওয়াও! শাকিব খানের পরে তার অভিনয়ই অসাধারণ লেগেছে। কিন্তু তার চরিত্র আরেকটু দীর্ঘ হলে ভাল হত। আর চিকন আলী ভাল কমেডি করার চেস্টা করেছে, তবে আমার কাছে অতটা ভাল লাগেনি। জোর করে হাসানোর চেস্টা ছিল।
তাকে গাইড করারা প্রযোজন।

? মিউজিক :

এ মুভির প্লাস পয়েন্ট হল মিউজিক। সবার আগে আমি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কথা বলতে চাই। মিউজিক টা জাস্ট অসাধারণ ছিল। হলে দেখার কারণে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেক টাচিং ছিল। স্পেশালি, বুবলির এপেয়ারেন্সে মন তোকে ছাড়া বোঝেনা রে গানটির থিম বাজানো হচ্ছিল, তখনকার ফিলিং টা বলে বোঝানো যাবেনা। নিজ দায়িত্বে হলে গিয়ে দেখবেন। পুরো মুভির সবথেকে ভাল দিক ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, স্পেশালি মন তোকে ছাড়া বোঝেনা রে এই গান টার থিম যতবার ই ইউজ করা হচ্ছিল ততবার ই ফিলিং এ ডুবে থাকতে হয়েছে। মনে হয়েছে আরো কিছুক্ষণ এ থিমটি বাজালে ভাল হত 😀 আর শাকিবের এন্ট্রিসিনে বস এর ভোকাল থিম টা ও ভাল হয়েছে।

এরপর আসি, গানের বেলায়। ইউটিউবে গান দেখে যতটা ভাল লেগেছে, তার থেকে ভাল লেগেছে হলে দেখে। শিকারি থেকে অন্তত এ মুভির গান গুলো আমি বেশি এনজয় করেছি। গানগুলো বেশ উপভোগ্য। তাছাড়া গান গুলোর লোকেশন ও অনেক সুন্দর ছিল।

? টেকনিকাল দিক :

এ ছবির টেকনিকাল দিক গুলো ভাল ছিল। অন্তত মেন্টাল থেকে বেশ ভাল ছিল। তাছাড়া শ্যুটিং সেট এফডিসি হলেও বেশ ভাল হয়েছে। আর ১০টা এফডিসির ছবির মত নয়। ক্যামেরার কাজ ভাল ছিল বেশ। কালার কারেকশন এভারেজ, তবে জাজ না থাকলে যে এগুলো সম্ভব হত না বোঝাই যায়।

তবে মাঝে মাঝে কালারফুল ব্যাকগ্রাউন্ড এর কারণে ভাল লেগেছে।

আর হুম, মন তোকে বোঝেনা রে এই গানটির কালার কিন্তু মূল মুভি তে ঠিক করা হয়েছে। ইউটিউবে যে গান টি ছাড়া হয়েছিল,,সেখানে শাকিবের চেহারা লাল দেখাচ্ছিল,কিন্তু মুভি তে সেটা বোঝা যায়নি। এটা ভাল লেগেছে।

? ফাইটিং :

দারুণ বলতে পারছিনা। তবে কিছুটা ইমপ্রুভড হয়েছে বলা যায়। কিছু কিছু দৃশ্য ভাল হয়েছে, যেমন : এন্ট্রি ফাইটিং এ শাকিবের উলটা হয়ে ঘুরে একটা মুভমেন্ট দেয়, সেটা ভাল ছিল। এছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোটামুটি ভাল ইমপ্রুভড বলা যেতে পারে। আমি মনে করি, আরো বাজেট আর ট্রেনিং পেলে আরমান কে দিয়েই ভাল ফাইটিং করানো সম্ভব।

? পরিচালনা :

শামীম আহমেদ রনি পরিচালনায় বেশ ভাল করেছেন। ভাল কিছু করার চেস্টা চোখে পড়েছে। সামনে আরো ভাল হবে আশা করি। প্রফেশনালিজম ব্যাপার টা ধরতে পারলে সামনে অনেক দূর যাবেন তিনি।

?ভাল না লাগার দিক :

এ মুভিতে এতগুলো ভাল লাগার দিক যখন বললাম, তখন ভাল না লাগার দিক গুলো ও বলি :

১। কালার মাঝে মাঝে ওয়াশড আউট লাগছিল। কার্টুন টাইপ হয়ে যাচ্ছিল। স্পেশালি, প্রথমে শাকিবের এন্ট্রি সিনে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং এর সময় সিন টা ওভার এক্সপোজড হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝেই কালার কারেকশন দুর্বল লেগেছে।

২। একজন ইন্টার্ণ ডাক্তার কিভাবে সিনিয়র ডাক্তার কে অর্ডার দিতে পারে বুঝলাম না। আর সিনিয়র ডাক্তার টার হাব ভাব জোকার দের মতই বা হবে কেন।

৩। ফাইটিং দৃশ্য প্রায়ই মান্ধাতা আমলের মনে হচ্ছিল, নায়ক মারছে আর ভিলেন উড়ছে এ দুটো দৃশ্য এক ফ্রেমে না এনে দুটো আলাদা ফ্রেমে আনা হল, খুবই বিরক্ত লেগেছে। মনে হয়েছে ভিলেন দের ওড়ার দৃশ্য আলাদা শ্যুট করে জোড়া লাগানো হয়েছে।

৪। ফাইটিং এ শাকিব আর ভিলেনদের ওড়াওড়ি যে দড়ি দিয়ে হচ্ছে তা বোঝাই যাচ্ছিল।

৫। সবথেকে বিরক্ত লেগেছে, প্রথম হাফেই তিনটা গান দেয়া হয়েছে, প্রথম গানটার প্লেসমেন্ট ঠিক ছিল না, বুবলি তো শাকিব কে ভালবাসত না, সেক্ষেত্রে ভালবাসা ছাড়া বেচে থাকা গানটি তে ফিমেল ভয়েস দেয়ার যৌক্তিকতা খুজে পেলাম না।

৬। শাকিবের লুক প্রায়ই ভ্যারি করেছে। এক সিনে খোচা দাড়ি,তো পরের সিনে মুখ ভর্তি দাড়ি। শেষ দিকে এটা মনে হয়েছে। আর গান গুলো তে দাড়ি রাখার কি দরকার ছিল,যেখানে গানের আগের আর পরের সিনে শাকিবের মুখ ভর্তি দাড়ি নেই? পুরাই আজগুবি জিনিস।

৭। শাকিব কে কখনো স্লিম তো কখনো মোটা লেগেছে হঠাৎ।

৮। চিত্রনাট্য সহজ করতে গিয়ে দুর্বল হয়ে গিয়েছে। একদম আলাদা কিছু দেখলাম না যতটা আশা করেছিলাম।

৯। গান ছাড়া লোকেশনে বৈচিত্র‍্য কম ছিল।

১০। শাকিব খানের বাড়িতে শ্যুটিং আর কতদিন দেখতে হবে? বোরিং লাগছে দিনদিন।

১১। তেমন কোন টুইস্ট নেই।

১২। রজতাভ দত্তের ডাবিং আরেকজন দিয়ে করানো হয়েছে। অথচ উনি ভয়েস নিয়েই ভাল খেলতে জানেন।

১৩। কাহিনি ততটা ইন্টেলেকচুয়াল নয়। একেবারেই গতানুগতিক।

১৪। শেষ দিকে বুবলির আই লাভ ইউ বলার মধ্যে কোন আবেগ ছিল না। বাধ্য হয়ে বলেছে মনে হল।

১৫। মেয়ে পটানোর ব্যাপার টি আমার কাছে ভাল লাগেনি। এটি পুরোনো স্টাইলের চিত্রনাট্য।

১৬। কালার ফুল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই যেসব সিনে সেগুলো বেশির ভাগ সাদাটে লেগেছে, যেমন : অমিত হাসানের একটি সিন আছে বাংলাদেশে ল্যান্ড করার পর।

?রেটিং : ৬.৫/১০

(রনির জন্য ৬.৫ মানে অনেক কিছু)

শেষ কথা :

পরিশেষে বলব, মুভিটি হলে গিয়ে দেখার মত একটা মুভি। তবে দ্বিতীয়বার দেখার মত মুভি মনে হয়নি। তবে মুভিটি দেখলে আপনার বোরিং লাগবে না একটুও। বেশ এন্টারটেইনিং একটা মুভি (যদি আপনার নিয়মিত হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখার ইচ্ছে থাকে)। যতক্ষণ দেখবেন, ভালই লাগবে বলতে পারি। তবে বের হবার পর সেই রেশ কতক্ষণ থাকবে জানিনা 😀
তবে এটা বলতে পারি, একদম নিম্নমানের মুভি না। যতটা সমালোচনা হচ্ছে ততটা নয়। আবার একদম খুব ভাল হয়েছে সেটাও নয়। আরো ভাল করা যেত। মোটকথা, আপনি হলে থাকা সময়টুকু এঞ্জয় করবেন বলতে পারি 🙂 মুভিতে একচুয়ালি শাকিব খান এর পারফরমেন্স আর গান গুলো ছাড়া তেমন কিছুই নেই। তবুও বলব, মুভিটি দেখতে পারেন, পরিবার নিয়ে এঞ্জয় করতে পারেন মুভিটি।

যারা মেন্টাল দেখে বসগিরি না দেখার কথা ভাবছেন, তারা একদম ই ভুল করছেন হলফ করে বলতে পারি 🙂


Leave a reply