বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা পরিচালক এবং তাঁদের নান্দনিক কাজ
‘এই পৃথিবীর পরে কত ফুল ফুটে আর ঝরে’ গানের দেশাত্ববোধ ধারায় ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) মুভিটি অনেকেরই প্রিয় । তবে নারায়ণ ঘোষ মিতা কারোও প্রিয় পরিচালক তালিকায় আছেন কি না জানি না! আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’ গানটি ‘এতটুকু আশা’ (১৯৬৮) মুভিতে চিত্রায়িত, এ মুভিটিও তার পরিচালিত। কিংবা তার ঝুড়িতে রয়েছে সত্তর দশকের অন্যতম দর্শকনন্দিত রোমান্টিক মুভি রাজ্জাক অভিনীত ‘নীল আকাশের নিচে’ (১৯৬৯)। রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণে দেশীয় চলচ্চিত্রে এ নির্মাতার নাম উপরের দিকেই থাকবে। ‘ক খ গ ঘ ঙ’ (১৯৭০), দীপ নেভে নাই (১৯৭০) বা অলঙ্কার (১৯৭৮) তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য মুভি।
শবনম-রাজ্জাক অভিনীত ‘নাচের পুতুল’ (১৯৭১) মুভিটার কথা মনে পড়ে? বা রবিন ঘোষের সংগীতে মাহমুদুন্নবির কণ্ঠে ‘আয়নাতে ওই মুখ’ গানটির কথা? যদিও বা তা অনেকেরই জানা তবে অশোক ঘোষ নামটা হয়তো ভুলেই গেছেন? কারণ তার নাম ও কাজের উপর আজ ধুলোর স্তূপ। তিনি এ মুভির পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্রে যে কয়জন পরিচালক নান্দনিকতা নিয়ে এসেছেন তিনি তার মধ্যে একজন। রাজ্জাক-কবরী অভিনীত ‘মতিমহল’ (১৯৭৭) ছাড়া উনার ফিল্মোগ্রাফিতে আর কি কি ফিল্ম আছে কোথাও খুঁজে পাই নি।
রোমান্টিক মুভি নিয়ে এই ভদ্রলোকের কাজ চোখে পড়ার মতো। ‘অবুঝ মন’ (১৯৭২) মুভির নাম সেখানে চোখ বন্ধ করে নেয়া যায়। সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ গানটিকে কি ভুলা যায়? না ভুলা যায় গানটির চিত্রায়ণে শাবানাকে? শাবানাকে এতটা মোহনীয় করে পর্দায় ক’জন আনতে পেরেছেন বলেন? তিনি কাজী জহির। ‘ময়নামতি’ (১৯৬৯), ‘মধু মিলন’ (১৯৭০) তার উল্লেখযোগ্য মুভি।
শেষ টানছি সদ্য প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামকে দিয়ে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা এগারো জন’ তাঁর তৈরি। কাজ করেছেন শরৎচন্দ্র নিয়ে (দেবদাস, ১৯৮২), কাজ করেছেন রবীন্দ্রনাথ (শাস্তি, ২০০৫) নিয়েও। তবে মুক্তিযুদ্ধের মতো এত অসাধারণ একটা পটভূমি থাকা সত্ত্বেও আমাদের পরিচালকরা কেন একে আরও বেশি করে সেলুলয়েডে আনেন না বলে দর্শকমনে একটা আক্ষেপ রয়েছে। সেই আক্ষেপ মোচনের তাড়না থেকেই কি না অনুসন্ধানকর্মে ব্রতী হয়ে মুক্তিযুদ্ধকে পর্দায় এনেছেন বেশ কয়েকবার। ‘ওরা এগারো জন’ (১৯৭২), ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৯৫), ‘মেঘের পরে মেঘ’ (২০০৪) তার মধ্যে অন্যতম।
আপনাদের সবার কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ ।