বাংলা চলচ্চিত্রের সালতামামি ২০১৪
২০১৪ সাল বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এক উল্লেখযোগ্য বছর। ঝিমিয়ে পড়া ইন্ডাস্ট্রীতে হঠাৎ করেই প্রাণ-চাঞ্চল্য দেখা গিয়েছে। গত সাত বছরের মাঝে সর্বাধিক পরিমাণ চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে ২০১৪-তে। শুধু সংখ্যাগত দিক থেকেই নয়, গল্পেও বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় এই বছরের ছবি গুলোতে। দীর্ঘদিন পর পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত একটি ছবি মুক্তি পায়। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু নামে ছবিটির মূল ভূমিকায় ছিলেন রিয়াজ–পূর্ণিমা–আমিন খান। গতবছরের ইভটিজিং– কে কাজী হায়াতের শেষ ছবি বলে প্রচার করা হলেও, এবছর তার পরিচালনায় সর্বনাশা ইয়াবা মুক্তি পায়। এক কাপ চা ছবির মাধ্যমে অনেকদিন পরদেশী পর্দায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের প্রত্যাবর্তন ঘটে। শেষবারের মতো দেখা যায় শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদীকে। আলোচিত নায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিল এই বছর মাত্র একটি ছবি মুক্তি দেন। কিস্তিমাত ও দেশা চলচ্চিত্র দুটি দর্শকদের নতুনধারার নির্মাণ শৈলীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
সূচিপত্র
১. এক নজরে ২০১৪
২. সব মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি’র তালিকা
৩. অনুকরণের সমীকরণ
৪. সারা বছরের গান
৫. ভিন্নধারার চলচ্চিত্র
৬. ভারতীয় সিনেমা আমদানি
৭. স্মরণ
৮. সরবে ফেসবুকে
৯. বছরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা
২০১৪ সালে মোট ৭৬টি বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৮, ২০১২ সালে ৫১ এবং ২০১৩ সালে ৫৩। দেখা যাচ্ছে প্রতি বছরই মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা বাড়ছে। জানুয়ারীর তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত দাবাং এ বছরের প্রথম ছবি। ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত দেশা, ৭১ এর মা জননী ও ক্ষণিকের ভালোবাসা দিয়ে শেষ হয় ২০১৪ সালের চলচ্চিত্র যাত্রা। গত বছরের মত এ বছরেও সর্বাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছে মিশা সওদাগর, সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়ক শাকিব খান, সর্বাধিক চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি ও অপু বিশ্বাস। দুইটি ক্যামিও অ্যাপিয়ারেন্স বাদে শাকিব খানের এ বছর আটটি ছবি মুক্তি পেয়েছে (রাজত্ব, ডেয়ারিং লাভার, ভালবাসা এক্সপ্রেস, ফাঁদ, হিরো-দ্য সুপারস্টার, হিটম্যান, কঠিন প্রতিশোধ, সেরা নায়ক, দবির সাহেবের সংসার এবং এক কাপ চা)। শাকিবের ঠিক পেছনেই আছেন ইমন সাতটি ছবি নিয়ে (জোনাকির আলো, মায়ের মমতা, জান, কখনো ভুলে যেও না, জানেনা এ মন, স্বপ্ন যে তুই ও হৃদয়ে ৭১)। তার পরেই আছেন গত বছরের দ্বিতীয় বাপ্পী ছয়টি ছবি নিয়ে (কি দারুণ দেখতে, দবির সাহেবের সংসার, হানিমুন, আই ডোন্ট কেয়ার, লাভ স্টেশন ও অনেক সাধের ময়না)। হালের ক্রেজ আরেফিন শুভ’র এ বছর তিনটি ছবি মুক্তি পায় ও তিনটি ছবিই ব্যবসাসফল হয় (অগ্নি, তারকাঁটা, কিস্তিমাত)। বছরজুড়ে পর্দায় ছিলেন গত বছরের সর্বাধিক ছবির অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। তবে মাহি এবারও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ নির্ভর নায়িকার তকমাটা ছাড়তে পারেননি। হারিয়ে যেতে যেতে দারুণভাবে ফিরে এসেছেন অপু বিশ্বাস। যদিও ইন্ডাস্ট্রীতে এখনো তার নিজস্ব কোন পরিচয় নেই। তিনি রয়ে গিয়েছেন শাকিব নির্ভর নায়িকা হয়ে। এবছরও অপু বিশ্বাসের সবকয়টি ছবিই ছিল নায়ক শাকিব খানের সাথে (ডেয়ারিং লাভার, ভালবাসা এক্সপ্রেস, হিরো-দ্য সুপারস্টার, হিটম্যান, সেরা নায়ক ও কঠিন প্রতিশোধ)। এছাড়া একই ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন ফিগার নিয়ে উপস্থিত হয়ে অপু দর্শকমনে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছেন। মাহি ও অপু দুজনেই অভিনয় করেছেন ছয়টি ছবিতে। সংখ্যাগত দিক থেকে তাদের ঠিক পেছনেই আছেন ববি, চারটি ছবি নিয়ে (রাজত্ব, আই ডোন্ট কেয়ার, হিরো-দ্য সুপারস্টার ও স্বপ্নছোঁয়া) ।
এ বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত ৭৬টি চলচ্চিত্রের মধ্যে নবাগত পরিচালক ছিলেন বাইশজন। যার মাঝে ফেরদৌস ওয়াহিদ, আশিকুর রহমান, সায়মন জাহান, সানিয়াত হোসেন, গীতালি হাসান, মাসুদ পথিক, মাশরুর পারভেজ ও আকিব পারভেজ (যৌথভাবে), মুনসুর আলী, অ্যাডাম দৌলা, নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল, জাহিদুর রহিম অঞ্জন, সৈকত নাসির উল্লেখযোগ্য। প্রযোজক হিসেবে অভিষেক ঘটেছে চিত্রনায়ক শাকিব খান ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসের। ২০১৪ সালে ৩৫টি নতুন মুখ যোগ দিয়েছে নায়ক/নায়িকা হিসেবে। এর মাঝে শাহরিয়াজ, ফারিয়া, শিরিন শিলা, রুহি, রোজ, হৃদি, সোহেল রানার পুত্র ইউল রাইয়ান, প্রিয়া আমান, পুষ্পিতা, মিষ্টি জান্নাত, প্রসূন আজাদ, আফ্রি ও শিপনের কথা আলাদাভাবে বলা যেতে পারে।
এ বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো হলো :
চলচ্চিত্র | পরিচালক | অভিনয় শিল্পী |
---|---|---|
দাবাং | আজাদ খান | |
দাগ এ বুকের ভেতর | বজলুর রাশেদ চৌধুরী | |
কি দারুণ দেখতে | ওয়াজেদ আলী সুমন | |
মনের মধ্যে লেখা | মাহমুদ হোসেন মুরাদ | |
তোমার কাছে ঋণী | শাহাদাৎ হোসেন লিটন | |
আকাশ কতো দূরে | সামিয়া জামান | |
অগ্নি | ইফতেখার চৌধুরী | |
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু | সোহানুর রহমান সোহান | |
প্রেম কি অপরাধ | জাদু আজাদ | |
জীবনঢুলী | তানভীর মোকাম্মেল | |
কুসুমপুরের গল্প | ফেরদৌস ওয়াহিদ | |
সীমারেখা | দেওয়ান নাজমুল | |
রাজত্ব | ইফতেখার চৌধুরী | |
অনন্তকালের-ফর এভার | মাসুম আজিজ | |
’৭১-এর সংগ্রাম | মুনসুর আলী | |
অনুক্রোশ | গোলাম মোস্তফা শিমুল | |
দবির সাহেবের সংসার | জাকির হোসেন রাজু | |
জোনাকির আলো | খালিদ মাহমুদ মিঠু | |
ডেয়ারিং লাভার | বদিউল আলম খোকন | |
তোকে ভালবাসতেই হবে | রাজু চৌধুরী | |
এক নম্বর আসামি | রাজু চৌধুরী | |
মায়ের মমতা | মোস্তাফিজুর রহমান বাবু | |
জান | জি সরকার | |
লাভ এক্সপ্রেস | শাফিউদ্দিন সাফি | |
আমি শুধু চেয়েছি তোমায় | অশোকপতি | |
Children of War | মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত | |
তারকাঁটা | মোস্তফা কামাল রাজ | |
ফাঁদ-দ্য ট্র্যাপ | সাফি উদ্দিন সাফি | |
দুটি মনের পাগলামী | ||
হিরো-দ্য সুপারস্টার | বদিউল আলম খোকন | |
মোস্ট ওয়েলকাম-টু | অনন্ত জলিল | |
আই ডোন্ট কেয়ার | মোহাম্মদ হোসেন | |
হানিমুন | শাফিউদ্দিন সাফি | |
প্রিয়া তুমি সুখি হও | গীতালি হাসান | |
হেডমাস্টার | দেলোয়ার জাহান ঝন্টু | |
মুক্তি | পিএ কাজল | |
অদৃশ্য শত্রু | মাশরুর পারভেজ ও আকিবপারভেজ | |
কখনো ভুলে যেও না | মোস্তাফিজুর রহমান বাবু | |
অল্প অল্প প্রেমের গল্প | সানিয়াত হোসেন | |
আগে যদি জানতাম তুই হবি পর | মনতাজুর রহমান আকবর | |
লাভ স্টেশন | শাহাদাৎ হোসেন লিটন | |
তুই শুধু আমার | রাজু চৌধুরী | |
ভালবাসার তাজমহল | আহসান উল্লাহ মনি | |
নেকাব্বরেরমহাপ্রয়াণ | মাসুদ পথিক | |
ভালবাসতে লাগে মন | আনোয়ার শিকদার | |
ক্ষোভ | ||
বৃহন্নলা | মুরাদ পারভেজ | |
সেদিন বৃষ্টি ছিল | শাহিন সুমন | |
সর্বনাশা ইয়াবা | কাজী হায়াৎ | |
মার্ডার টু | এমএ রহিম | |
হিটম্যান | ওয়াজেদ আলী সুমন | |
কঠিন প্রতিশোধ | নজরুল ইসলাম খান | |
সেরা নায়ক | ওয়াকিল আহমেদ | |
কিস্তিমাত | আশিকুর রহমান | |
আমরা করবো জয় | আহসান সারোয়ার | |
বৈষম্য | অ্যাডাম দৌলা | |
টাইম মেশিন | সায়মন জাহান | |
পিঁপড়াবিদ্যা | মোস্তফা সরয়ার ফারুকী | |
জানেনা এমন | এম এ রহিম | |
অনেক সাধের ময়না | জাকির হোসেন রাজু | |
হরিজন | মীর্জা শাখাওয়াত হোসেন | |
মাই নেম ইজ সিমি | মনতাজুর রহমান আকবর | |
স্বপ্ন যে তুই | মনিরুল ইসলাম সোহেল | |
অনেক সাধনার পরে | আবুল কালাম আজাদ | |
এক কাপ চা | নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল | |
চার অক্ষরের ভালবাসা | জাকির খান | |
স্বপ্নছোঁয়া | শফিক হাসান | |
প্রেম করবো তোমার সাথে | রকিবুল আলম রকিব | |
মেঘমল্লার | জাহিদুর রহিম অঞ্জন | |
জিরো থেকে টপ হিরো | শাহিন সুমন | |
’৭১-এর ক্ষুদিরাম | মান্নান হীরা | |
’৭১-এর মা জননী | শাহ আলম কিরণ | |
ক্ষণিকের ভালবাসা | আবুল কাশেম মন্ডল | |
দেশা দ্য লিডার | সৈকত নাসির |
দেশে যেহেতু এখনো ছবিগুলোর আয় জানার কোন নিয়মানুগ উপায় নেই, তাই টেবিল কালেকশন, হল সংখ্যা, বুকিং এজেন্টদের কথার ভিত্তিতে হিট-ফ্লপের বিচার করতে হয়। সে হিসেবে এ বছর মাত্র পাঁচটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে, দশটি ছবি কোনমতে আয় ব্যয়ের সমতা রক্ষা করতে পেরেছে। ২০১৪ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত আলোচিত চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে অগ্নি, রাজত্ব, দবির সাহেবের সংসার, ডেয়ারিং লাভার, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, তারকাঁটা, হিরো-দ্য সুপারস্টার, মোস্ট ওয়েলকাম-টু, আই ডোন্ট কেয়ার, কিস্তিমাত, হিটম্যান, সর্বনাশা ইয়াবা, পিঁপড়াবিদ্যা, স্বপ্ন যে তুই, অনেক সাধের ময়না, মেঘমল্লার, দেশা অন্যতম।
অন্যান্য বছরের মত এ বছরও নকলের মহাসমারোহ ছিল। বছরের শুরুতেই মুক্তিপ্রাপ্ত দাবাং তার নকল নাম ও গানের জন্য সমালোচিত হয়। বিগ বাজেট মুভি অগ্নি হলিউডের কলম্বিয়ানা, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু ডায়াল এম ফর মার্ডার ও হামরাজ, রাজত্বের শেষাংশ হিন্দি ওয়ান্টেড, ডেয়ারিং লাভার তামিল Thiruvilaiyaadal Aarambam-এর নকল বলে জানা যায়।। ঈদ-উল-ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খান প্রযোজিত হিরো-দ্য সুপারস্টারের গল্প পুরোটাই তেলেগু নায়াক ও রেবেলের সমন্বয়ে করা। হিরো ছবির পরিচালক বদিউল আলম খোকন এখন পর্যন্ত আটটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করলেও, এর একটিও মৌলিক গল্পের ছবি নয়। এছাড়াও আই ডোন্ট কেয়ার তেলেগু রেবেল থেকে ও মোস্ট ওয়েলকাম-টু তেলেগু নায়াক ও হিন্দি গাজিনি থেকে অন্তত একটি করে হলেও দৃশ্য ধার করেছে। এ হিসাব বলে শেষ করা যাবে না। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। মূল ধারার পাশাপাশি ভিন্ন ধারার নির্মাতাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে। সানিয়াত হোসেনের অল্প অল্প প্রেমের গল্প সাথে তেলেগু Ala Modalaindi, মোস্তফা কামাল রাজের তারকাঁটার সাথে আশিকী-২ ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পিঁপড়াবিদ্যার সাথে কোরিয়ান চলচ্চিত্র হ্যান্ডুফোনের সাথে মিল আছে বলে দর্শকরা অভিযোগ করেন। আইনগতভাবে নকল চলচ্চিত্রের মুক্তির অনুমতি না থাকলেও, সেন্সরবোর্ডের নাকের ডগাতেই এসব চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গত কয়েক দশকের মাঝে প্রথমবারের মত নকলের অভিযোগে একটি ছবি সেন্সর বোর্ড কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত হিটম্যান তামিল ছবি ভেত্তাই-এর নকল হবার অভিযোগে সেন্সরবোর্ড ছবিটিকে ছাড়পত্র দেয়নি। একদিন পরেই সবাইকে আরও অবাক করে মানবিক কারণ দেখিয়ে ছবিটিকে ছাড়পত্র প্রদান করে সেন্সরবোর্ড। ঈদ-উল-আযহায় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মাঝে হিটম্যান ছিল সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও সবচে বেশি গানে সুরারোপ করেছেন আলী আকরাম শুভ। নকল গানের অভিযোগটাও তার বিরুদ্ধেই সবচে বেশি। আহমেদ হুমায়ূনের সুর করা জানেনা এমন ছবির ললনা গানটির সুর ও চিত্রায়ন ভারতীয় “আর…রাজকুমার” ছায়াছবিরএকটি গান থেকে হুবুহু নকল করা হয়, যা সমালোচনার জন্ম দেয়।তারকাঁটা ও মোস্ট ওয়েলকাম-টু চলচ্চিত্রের সঙ্গীতশিল্পীদের মাঝে ভারতীয় শিল্পীর আধিক্য নিয়েও সমালোচনা হয়। এক কাপ চা ছবির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর নচিকেতা ঘোষ বাংলাদেশী ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করেন। অপরদিকে ভারতীয় ছবি আমি শুধু চেয়েছি তোমায় চলচ্চিত্রে হৃদয় খানের দুটি, বিন্দাস ছবিতে হাবিব ওয়াহিদের ও ওয়ার্নিং ছবিতে জেমসের একটি করে গান ছিল। যদিও হাবিব ও হৃদয় খানের গান তিনটি পুরনো ছিল। এছাড়া নগর বাউল জেমস দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশী ছবির জন্য প্লেব্যাকে করেছেন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে তার তিনটি নতুন গান শ্রোতারা শুনতে পায়। এর মাঝে দেশা’র টাইটেল সংটি বাদে বাকি দুটো গান আগামী বছরে মুক্তি প্রতীক্ষিত দুটি সিনেমার। গানের চিত্রায়নে ভিন্নতা না আসলেও, আইটেম গানের আধিক্য ছিল এ বছর। গত বছরের মত এবারও সবচে বেশি আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন বিপাশা কবির। প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক ছবিতেই অন্ততপক্ষে একটি করে আইটেম গান ছিল। রাজত্ব, হিটম্যানের মত ছবিতে একাধিক আইটেম গানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আলাদাভাবে কিস্তিমাত, মোস্ট ওয়েলকাম-২, কুসুলপুরের গল্প ছবির গান জনপ্রিয় হলেও এ বছরের সেরা OST ছিল অগ্নি, রাজত্ব, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ, অল্প অল্প প্রেমের গল্প ও তারকাঁটা চলচ্চিত্রের।
প্রথাগত বাণিজ্যিক ধারার বাইরে বেশ কিছু ভিন্ন ধারার ছবির দেখা পাওয়া যায় ২০১৪-তে। বছরের শুরুতে মুক্তি পায় কামার আহমেদ সাইমন ও সারা আফরীনের শুনতে কি পাও। এছাড়াও ছিল পরিচালক সামিয়া জামানের দ্বিতীয় ছবি আকাশ কতো দূরে, তানভীর মোকাম্মেলের জীবনঢুলি, সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ পরিচালিত কুসুমপুরের গল্প, মুনসুর আলীর ’৭১-এর সংগ্রাম, গোলাম মোস্তফা শিমুলের অনুক্রোশ, খালিদ মাহমুদ মিঠু’র জোনাকির আলো। পিঁপড়াবিদ্যা ও জোনাকির আলো ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ৮৪তম অস্কারের জন্য জোনাকির আলো চলচ্চিত্রটি জমাদান করা হয়েছে।
দেশীয় বাণিজ্যিক ধারার ছবিগুলো সাধারণত অ্যাকশন-ড্রামা-রোম্যান্টিক ঘরানার হলেও এবছর ভিন্ন কয়েকটি জনরার ছবি মুক্তি পেয়েছে। যেমন : আমরা করবো জয়আর সেদিন বৃষ্টি ছিল হরর, দবির সাহেবের সংসার পিওর কমেডি, টাইম মেশিন ছিল সাই-ফাই/ফ্যান্টাসি, দেশা পলিটিক্যাল ড্রামা জনরার। আমরা করবো জয়, একাত্তরের ক্ষুদিরাম, মুক্তি, টাইম মেশিন ছবির সাবজনরা থাকলেও মূলত শিশুতোষ ছবি। অনুদানপ্রাপ্ত ছবির মাঝে আছে-মেঘমল্লার, জীবনঢুলি, হরিজন, বৃহন্নলা, হেডমাস্টার, মুক্তি, আকাশ কত দূরে ও নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবির আধিক্য দেখা যায়। যার মাঝে ’৭১-এর সংগ্রাম, অনুক্রোশ, মুক্তি, জীবনঢুলি, হৃদয়ে ’৭১, মেঘমল্লার, একাত্তরের ক্ষুদিরাম, ৭১ এর মা জননী অন্যতম।
গত কয়েক বছরের শঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে এই বছর তিনটি ভারতীয় ছবি মুক্তি পায়। যুদ্ধশিশু বা চিলড্রেন অফ ওয়ার বিষয়বস্তুর জন্য দর্শকের নজর কাড়লেও দুর্বল ডাবিং ও নির্দেশনার কারণে সমালোচকদের আনুষ্ঠানিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়। ভারতের সাথে চলচ্চিত্র বিনিময় চুক্তির ফল হিসেবে বাংলাদেশে বছরের শেষদিকে মুক্তি পায় ভারতীয় ছবি রোর (Roar) আর ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তকমা জোটে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বৈষম্যর উপর। অ্যাডাম দৌলা পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি ভারতের একটি মাত্র হলে (মুম্বাইয়ের আনন্দ চিত্র মন্দির) প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ১৯ শে ডিসেম্বর জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘মা আমার স্বর্গ’ ছবিটি কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। তবে বছরের সবচে বড় নাটকটা হয় “আমি শুধু চেয়েছি তোমায়”-কে নিয়ে। অশোক পতির সাথে নিজেকেও ছবির সহপরিচালক দাবি করে ছবিটিকে বাংলাদেশে মুক্তি দিতে চান অনন্য মামুন। পরিচালক সমিতি মামুনের সদস্য পদ বাতিল করে ছবিটির মুক্তি বন্ধ করে দেন। অনন্য মামুন আদালতের স্থগিতাদেশ (স্টে অর্ডার) এনে ছবিটি যথাসময়ে মুক্তি দেন এবং তা ব্যবসাসফলও হয়।
২০১৪ সালের ১০ই জানুয়ারি মাত্র ৩৪ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন একসময়কার জনপ্রিয় নায়িকা অন্তরা। পাগল মন, প্রেমের কসম, আমার মা, বোনেরমতোবোন, দোলন চাঁপা, শয়তান মানুষ, ফজর আলী আসছে প্রভৃতি চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী অন্তরা ব্রেইন হেমোরেজের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ২১শে জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন চিত্রপরিচালক মহম্মদ হাননান। অবরোধ, বিচ্ছেদ, বিক্ষোভ, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, ভালোবাসি তোমাকে, বিদ্রোহ চারিদিকে, পড়েনা চোখের পলক, সাহসী মানুষ চাই, নয়ন ভরা জল, জীবন এক সংঘর্ষ, ভালোবাসা ভালোবাসা, টিপটিপ বৃষ্টি, শিখণ্ডী কথা প্রভৃতি ছবির পরিচালক মহম্মদ হাননান। বিভিন্ন জনপ্রিয় রোম্যান্টিক ছবির পাশাপাশি বক্তব্যধর্মী বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন তিনি। ২৯ জানুয়ারি নোলক চলচ্চিত্রের নায়িকা মিন্না খান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি “ঘানি”-এর পরিচালক কাজী মোরশেদ। এবছরই আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত শক্তিমান অভিনেতা খলিলুল্লাহ খান মৃত্যুবরণ করেন ৭ই ডিসেম্বর। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন পরিচালক এম বি মানিক। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত রূপসজ্জাকর দীপক কুমার সুর। মেক-আপের পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেন। আজ রবিবার নাটকে উন্মাদের ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
রোজার ঈদের প্রাক্কালে অভিনেত্রী ইয়ামিন হক ববি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি আই ডোন্ট কেয়ার ছবির পরিচালক মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে ফটোশপ ও এডিটিঙের মাধ্যমে অশ্লীলতার অভিযোগ আনেন। মোহাম্মদ হোসেন অবশ্য সে অভিযোগ নাকচ করে দেন। তারকাঁটা ছবি মুক্তির প্রথমদিনেই একটি স্ট্যাটাসে চিত্রনাট্যকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু ও চিত্রনায়ক কাজী মারুফ সমালোচনামুখর ও ব্যাঙ্গাত্নক আলোচনায় মেতে ওঠেন। যদিও এর মোস্তফা কামাল রাজের বিনয়ী জবাবের কারণে বিষয়টি আর বেশিদূর গড়ায়নি। ইউটার্ন ছবি থেকে বাদ পড়া নিয়ে ফেসবুকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন অভিনেত্রী পিয়া ও প্রযোজক আরশাদ আদনান। গত দুই বছর ধরে ফেসবুক দাপিয়ে বেড়ানো পরীমনি ও অমৃতা খানের এ বছরও কোন ছবি মুক্তি পায়নি। পরীমনির রানা প্লাজা মুক্তির কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের আদেশে তা আটকে যায়। উল্টো পরিচালক ইরানী বিশ্বাসের সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে ছবি থেকে বাদ পড়া, শাকিব খানের সাথে ধূমকেতু ছবির শুটিঙে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয়, পরিচালক রানার সাথে প্রেমের অভিযোগ ও ফলস্বরূপ তার স্ত্রীর আত্মহত্যার প্রচেষ্টা, অনন্ত জলিলের সাথে অভিনয়ের গুজব ইত্যাদি কারণে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন পরীমনি। বছরের শেষদিকে অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ এক ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান সর্বনাশা ইয়াবা ছবির জন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক পাননি। ফেসবুক কেলেঙ্কারিতে গত এক বছর ধরে ভারতে আত্মগোপন করে থাকা পরিচালক পি এ কাজল এ বছর সদর্পে দেশে ফিরে এসে একসাথে তিনটি ছবি পরিচালনা করার ঘোষণা দেন। কামরুজ্জামান কামু ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে শওকত আলী ইমন এবং কবির বকুলের বিরুদ্ধে গান চুরির অভিযোগ আনেন। এত নেতিবাচক ঘটনার মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ইতিবাচক ব্যবহারও পাওয়া যায়। চলচ্চিত্রশিল্পীদের মাঝে ফেসবুক কর্তৃক প্রথম ভেরিফাইড পেজের স্বীকৃতি পান অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। পিঁপড়াবিদ্যা ছবির জন্য “হিরো হইতে কি লাগে” শীর্ষক ভিডিও সিরিজের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী প্রচারণা পদ্ধতির আশ্রয় নেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বছরের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার মাঝে আছে :
- পড়শী, তিশা, পাওলি দামের শাকিব খানের বিপরীতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া।
- নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন, অভিনেতা টেলি সামাদ, রাণী সরকার ও বনশ্রী প্রত্যেকের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান প্রাপ্তি।
- মাই নেম ইজ সিমি‘র ভিন্ন ভিন্ন নাম ও পরিচালকের মাধ্যমে নির্মাণ এবং অভিনয় শিল্পীদের পারিশ্রমিক না দেওয়া।
- অনাগত সন্তান নিয়ে অনন্ত-বর্ষা জুটির লুকোচুরি। এবং বছর শেষে বর্ষার এক পুত্র সন্তানের জন্ম।
- পত্রিকার সাক্ষাৎকারে শাকিব খানের Knight and Day-এর অফিসিয়াল রিমেক ব্যাং ব্যাং-কে নকল ছবি বলে আখ্যা দেওয়া।
- কিছু আশা কিছু ভালোবাসা চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী হ্যাপি আক্তারের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা।
- চিত্রনায়ক নিরবের হঠাৎ করে বিয়ে ও মেয়ের বাবার নিরবের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন বড্ড অস্থির সময় পার করছে। এক দিকে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে হল মালিকদের নাভিশ্বাস উঠছে। অপর দিকে দর্শকদের হল বিমুখতা প্রযোজকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া দাবাং, মার্ডার টু, আই ডোন্ট কেয়ার এর মতো ছবিগুলো ঢালিউডে আবারও অশ্লীলতা ফিরিয়ে আনবে বলে সবাই আশঙ্কা করছেন। দর্শকদেরও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। গতানুগতিক কাহিনী ও নির্মাণ, হলের অব্যবস্থা বিবিধ কারণে মধ্যবিত্ত দর্শক মাল্টিপ্লেক্স নির্ভর হয়ে পড়েছে।
তবে আশার কথা এফডিসির আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সরকার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসছেন তরুণরা। বাংলা ছবির অনলাইন যোদ্ধারাও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে কাজ করছে। আশা করা যায়, বাংলাদেশী ছবির দিনবদল শুরু হবে ২০১৫ থেকেই।
সম্পাদকের নোট:
১. সালতামামি প্রস্তুত করেছেন স্নিগ্ধ রহমান।
২. এই লেখাটি সময়ের সাথে হালনাগাদ করা হবে।
৩. ২০১৪ সালের বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা ১০ গান।
৩. বাংলা মুভি ডেটাবেজ-এ ২০১৩ সালের সালতামামি।
আরিফিন শুভর ৩ টি ছবি সুপ্পার হিট !!!!! ???? “তারকাটা ” সুপ্পার ফ্লপ এবং ফালতু মুভি । আমি জানি না কেন bmdb আরিফিন শুভ কে নিয়া বেশি মাতামাতি করে । তাকে অরও অনেক উন্নতি করতে হবে “অবিনয়ে” । আর “অগ্নি” একটি নায়িকা প্রধান মুভি।
bmdb শুভকে নিয়ে মাতামাতি করে!! এরকমটা কেন মনে হলো?
আমি তো দেখছি বিএমডিবি শিপনকেও কাভার করে, শাকিবকেও কাভার করে, এমনকি জায়েদ খানকেও।
বাংলা চলচ্চিত্রে আমাদের মত শিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ শ্রেণীর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য নায়ক হলো আরেফিন শুভ ।