গ্রহণযোগ্যতা পায়নি স্টোরি অব সামারার ট্রেলার
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথম ভৌতিক ও সায়েন্স ফিকশন ছবি হিসেবে দ্য স্টোরি অব সামারাকে অনেকদিন আগেই পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এটার ট্রেলার রিলিজ করেছে ইউটিউবে। ধীরে ধীরে তার ভিজিটর বাড়লেও সংখ্যাটা আশাতিত নয়। ইউটিউব কমেন্ট রিসার্চ করলে বোঝা যাচ্ছে ট্রেলার সবার কাছে ভালো লাগেনি। এখন ছবি মুক্তির পরে আপামর জনসাধারন কিভাবে নেয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
পুরো ট্রেলার দেখার পরে মাথায় যে গল্পটা আসে সেটা অনেকটা এরকম: পৃথিবীর বাইরের দুটো ভিন্ন গ্রহ নিয়ে এই ছবির কাহিনী। সামারা গ্রহের সুন্দরী প্রিন্সেস এবং তার রাজ্যকে যেকোন মুল্যে জয় করার জন্য বদ্ধপরিকর অপশক্তি আরকানা। কিন্তু সামারার ভবিষৎবানীতে লেখা আছে পৃথিবির কথা। এখান থেকে আগমন হবে বিশেষ পাচজন মানবসন্তানের।যাদেরকে ট্রেলারে পঞ্চপান্ডব (ভালোবাসা, ঘৃনা , সুখ, অনুভুতি,দুঃখ) হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। আর তারা ধ্বংস করবে অশুভ শক্তি আরকানাকে। তারা বিভিন্ন জটিল ধাঁধা মিলিয়ে আবিষ্কার করতে পারে এই পাচজনই সেই শক্তি। তাদের জন্ম দাগের মাধ্যমে তারা তাদের শক্তি সমন্ধে ওকাকিবহাল হয়। এবং আরকানার শক্তি বধ করতে যুদ্ধ ঘোষনা করে।
রিকিয়া মাসুদো পরিচালিত এ ছবির ট্রেলার দেখে ধারনা করা যায় এটা অনেকটা সাই-ফাই ফ্যান্টাসির আদলে নির্মিত। এদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঘাটলে ফ্যান্টাসির প্রতাপ লক্ষ্য করা যায়। বানিজ্যের দিক থেকে সবসময় ফ্যান্টাসি মুভিগুলো এগিয়ে থেকেছে বাংলাদেশে যার অধিকাংশ আলিফ লায়লা (এক সহস্র আরব্য রজনী) এর ছায়া অবলম্বনে দেশীয় পেক্ষাপটে নির্মিত।
এ ছবিটি নির্ঘাত সেরকম একটা ফ্যান্টাসি ছবি তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সাই-ফাইয়ের আদলে মিশে কতটা রুপ পাবে তা বড় পর্দা ছাড়া বোঝার উপায় নেই। ট্রেলার দেখে স্পষ্টত ধারনা করা যায় এ ছবি ভুতুড়ে দৃশ্যের সংখ্যা অনেক এবং সাউন্ডগুলোও বেশ হরর।
এ ধরনের সিনেমা বাংলাদেশে কম হলেও একদমই যে হয়নি তা দাবী করাটা অন্যায় । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে হরর উপাদান নিয়ে বেশ কিছু সিনেমা বাংলাদেশে হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সাড়া ফেলতে পেরেছে খুব কম সংখ্যক ছবি।
খাইরুন সুন্দরী খ্যাত চিত্রপরিচালক এ কে সোহেল নির্মাণ করেছিলেন ভৌতিক মুভি ডাইনি বুড়ি। এই লো বাজেটের হরর ফিল্মটি জনসাধারনের খুব কাছে পৌছে যায়। বড় পর্দায় ততটা স্বার্থকতা না পেলেও সিডি/ডিভিডি এবং ক্যাবল নেটওয়ার্ক সার্ভিসে এই মুভির কাটতি ভালো। তাছাড়া গত বছর শাহিন-সুমন পরিচালিত এবং চিত্রনায়িকা রত্না অভিনীত “সেদিন বৃষ্টি ছিল” হরর ছবি মুক্তি পেয়েছে । সায়মন জাহান পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি: “টাইম মেশিন” গত বছরের ঈদে চ্যানেল আইতে মুক্তি পেয়েছিল। সে ছবির ডাইনোসর শিরোনামে একটা গানে আইরিন অভিনয় করেছিল। ছবিটা শিশুতোষ, কিন্তু সাই-ফাই। এবং ছোট পর্দার পরিচালক হিসেবে জনপ্রিয় তানিম রহমান অংশুর গল্প ও পরিচালনায় জিটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে ভৌতিক মেগা সিরিয়াল ‘ডেইলি ফ্রাইট নাইট’। এছাড়াও স্বপন আহমেদ পরিচালিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর ছবি পরবাসিনী মুক্তির আগেই বেশ আলোচিত হয়েছে।
রিকিয়া মাসুদো পরিচালিত দ্য স্টোরি অব সামারার গ্রাফিক্স কাজ কিছুটা মন খারাপ করে। ছোট পর্দার মেগা সিরিয়াল ‘ডেইলি ফ্রাইট নাইট’ এ গ্রাফিক্স যতটা শক্তিশালী ছিল ততটা দ্য স্টোরি অব সামারাতে দেখা যায় না। কিন্তু গল্পের বাধন যদি শক্ত হয় তবে তাহলে গ্রাফিক্সের ঘাটতি ছাপিয়ে যেতে পারে।
কিন্তু এটাও সত্যি কথা যে এ ছবির মাধ্যমে মানুষ নতুন কিছু একটা দেখতে যাচ্ছে যা বাংলা ছবিতে বহুল পরিচিত কিছু নয় বরং নতুন কিছু। আমার মনেহয়, প্রযুক্তি নির্ভর এবং হলিউডি ফিল্মের ন্যায় হরর ফিল্ম বানাতে গেলে তাতে সাফল্য আসবেনা। বরং আমাদের সাহিত্য নির্ভর হরর ফিল্ম নির্মান করা উচিত। বাংলা সাহিত্যে প্রচুর হরর উপাদান আছে যা দিয়ে একটা স্বার্থক এবং সুন্দর পরিচ্ছন্ন হরর ফিল্ম হয়ে যাবে। এবং তা মানুষের মনে দাগও কাটবে।