Select Page

অগোছালো ‘অবতার’

অগোছালো ‘অবতার’

অবতার
ধরন: সোশ্যাল ড্রামা
গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: মাহমুদ হাসান সিকদার
প্রযোজনা: সাগা এন্টারটেইনমেন্ট
অভিনয়: মাহিয়া মাহি (মুক্তি), জে.এইচ রুশো (হীরা), আমিন খান (মুক্ত), মিশা সওদাগর (বুলেট বাবর), শিবা শানু (রকি), রাইসুল ইসলাম আসাদ (মুক্ত ও মুক্তির মামা), সুব্রত (পুলিশ অফিসার) মিলন ভট্টাচার্য (হীরার বন্ধু), হৃদয় আল মিরু (ল্যাব সহকারী), সুস্মিতা সিনহা, সাফী মাহবুব প্রান্ত, আবুল হায়দার কাঞ্চন, রহিম সুমন প্রমুখ।
শুভমুক্তি: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

নামকরণ: অবতার বলতে মূলত স্রষ্টা কর্তৃক পৃথিবীতে পাঠানো কোনো মানুষ বা পশুরূপী দেবতাকে বোঝায়। এরা জাতিকে সঠিক পথ দেখায়, মন্দের কালো থাবা থেকে সমাজকে দুরে থাকে। এগল্পে বর্তমান সমাজে চলমান একাধিক সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে এবং সামাজিক ব্যাধি থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে অবতারণা হয় কিছু সৎ মানুষের। যারা সামাজিক সমস্যা দুর করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে। তাই নামকরণ হিসেবে “অবতার” নামটি যথার্থ মনে হয়েছে।

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ: এ ছবির তিনটি ডিপার্টমেন্ট-ই সামলিয়েছেন পরিচালক মাহমুদ হাসান সিকদার নিজে। আগেই বলেছি, ছবির গল্পের মূল বিষয়বস্তু হলো বর্তমান সমাজের নানারকম সামাজিক সমস্যা। মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, ধর্ষণ, গুম, খুন চোরাকারবারি, শিশুখাদ্যে বিষ এই মোট ৭টি সমস্যা বিভিন্নভাবে এছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এসব সমস্যা থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হলে উপায় আছে একটাই। কাউকে না কাউকে প্রতিবাদের চিৎকার দিতে সামনে এগোতে হবে। নেতৃত্ব দিতে হবে। হাতে তুলে নিতে হয় মুক্তির ঝান্ডা, যেন অসহায় মানুষেরা তাদের পেছনে দাঁড়ানোর মতো ভরসা পায়।

সামাজিক সমস্যা নিয়ে সিনেমা আমাদের দেশে সেই সত্তর দশক হতেই নির্মিত হয়ে আসছে। এটি এমন একটি জনরা যার চাহিদা কখনোই ফুরোবে না। এর মধ্যে যেসব ছবি চিত্রনাট্য ও উপস্থাপনায় ভিন্নতা আনতে পেরেছে, সেগুলোই গণমানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাহ, “অবতার” সেরকম ভিন্ন কোনো ছবি হয় নাই। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। ধীরে সুস্থে শুরু করি।

সোশ্যাল ড্রামা ছবিগুলোতে চরিত্রের আবেগ বা ইমোশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক‌টি বিষয়। মূল ইতিবাচক চরিত্রগুলি তাদের আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে পরবর্তীতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে। “আমার আর হারাবার কিছু নাই”… ইমোশন বা আবেগের সংস্পর্শে মানবমন সর্বদা এই মন্ত্র জপতে থাকে। ফলে প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক, মানুষ তার শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঠিকই অন্যায়কে পরাজয় করে।

প্রথম দূর্বলতা হলো এছবির চরিত্র গঠনে সেই আবেগ নামক বিষয়টির বড্ড অভাব। দ্বিতীয়ত, চিত্রনাট্যে বেশ কিছু ফাঁকফোকর ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেগুলোর কুলকিনারা খুজেঁ পাওয়া বেশ কষ্টকর। রুশো ঠিক যে উদ্দেশ্যে তিনি তার পরিবারকে দুরে রেখে লড়াই করা শুরু করেছিল, পরবর্তীতে দেখা গেলো তার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বদলে গেলো। সে তার প্রেমিকার জন্য লড়াই করা শুরু করলো। ওদিকে ধর্ষণ ও মাদক চোরাচালানের মূল হোতাকে সে কীভাবে খুজেঁ খুজেঁ মারধর করলো, কোনো ব্যাখ্যা পেলাম না। সিনেমায় মাহি-রুশোর প্রেম হওয়ার আগে তাদের বড়জোর একটা সিক্যুয়েন্স দেখানো হলো, যেখানে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে ফর্মাল ভাষায়; অপরিচিত মানুষজন একে অন্যের সাথে যেভাবে কথা বলে আরকি। এরপর দেখানো হলো মেয়ে তার বান্ধবীর কাছ থেকে ছেলের পরিবারসংক্রান্ত কিছু অতীত ঘটনাবলী শুনেই ইমপ্রেস হয়ে গেলো!

তাও নাহয় কমার্শিয়াল ছবি হিসেবে ধরলাম এটা সম্ভব। কিন্তু এটা তো এক সাইডের প্রেম হলো। অন্য সাইড থেকে অর্থাৎ ছেলের পক্ষ থেকে প্রেমটা হলো কিকরে? কল্পনার গানের মাধ্যমে? কোনো ব্যাখ্যা নেই…

এগুলোকে ছাপিয়ে চিত্রনাট্যের সবচেয়ে দূর্বল দিক ছিল এক সিনের সাথে পরবর্তী সিনের যথেষ্ট সামঞ্জস্যতার অভাব। গল্পে একের পর এক টার্ন এবং টুইস্ট আসছে, কিন্তু এগুলো সাজানোর সিস্টেমটা বড্ড অগোছালো। তাই গল্পের গতিবিধি দেখে বারংবার শুধু কনফিউজড হয়েই যেতে হয়।

এছাড়া সংলাপ মোটের ওপর চলনসই বলা যায়। মিশা সওদাগরের চরিত্রে কিছু সংলাপ দুই বা ততোধিক বার রাখা হলো। খল অভিনেতা শুধু ঐ বাছাই করা সংলাপগুলোই ঘুরেফিরে আওড়ান। “আমার সাথে হুজ্জুতি করস”, “এবার দেখা তোর হুজ্জুতি”, “হুজ্জুতি আমি একদম পছন্দ করি না”, “এলাকা আমার পাবলিক আমার পাওয়ার আমার”.. এরকম আরো কিছু নির্দিষ্ট সংলাপ তার চরিত্রে ততোধিক বার পাঞ্চলাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ২০

পরিচালনা ও অভিনয়: এটি পরিচালক মাহমুদ হাসান সিকদারের পরিচালিত প্রথম ছবি। প্রথম ছবি যে কোনো পরিচালকের জন্যই স্বপ্নকে সত্যি করার মতো। তিনি তার প্রথম ছবির জন্য বেশ ভালো একটি বিষয়বস্তু বাছাই করতে পেরেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন নন-লিনিয়ার স্টাইলে গল্প সাজানোর। কিন্তু তার চিত্রনাট্য সাজানো যেমন ভালো হয়নি, তেমনি নির্মাণও ততটা ভালো হয়নি। এছাড়া, তিনি অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাইয়ে ভুল করেছেন। চরিত্রগুলি যেরকম অভিনয় ডিজার্ভ করে, সেরকম অভিনয় দুই/একজন বাদে বাকি কারো কাছ থেকে পরিচালক আদায় করে আনতে পারেনি।

অভিনেতা/অভিনেত্রীদের মধ্যে সবথেকে ভালো পারফরমেন্স পেয়েছি একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আমিন খানের কাছ থেকে। পুরো ছবিতে তিনি স্বাভাবিক অভিনয়টি করার চেষ্টা করেছেন, আন্ডারটোনে থেকে। বহুদিন পর তাকে নতুন কোনো ছবিতে পাওয়া গেলো। গল্পটি মূলত তার চরিত্রকে ঘিরেই, কিন্তু সিনেমায় তার স্ক্রিণটাইম যতটুকু দেওয়া হয়েছে তা সত্যিই হতাশাজনক। চরিত্রটিকে পর্দায় আরো বেশি সময় দেওয়া উচিত ছিল, তার পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় সংস্থার কাজগুলি আরেকটু বিস্তারিত দেখানো উচিত ছিল। এটাকে ঠিক তার কামব্যাক ছবি বলা যায় না, সম্প্রসারিত অতিথি চরিত্র বলা যায়।

মাহিয়া মাহির পারফরমেন্স দুই জায়গায় আমার দুরকম লেগেছে। গল্পে মোট দুটি অংশ রয়েছে, একটি হলো বর্তমান ও অন্যটি হলো অতীত যা ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান অংশে মাহির পারফরমেন্স ভালো লেগেছে। চরিত্রের জন্য তিনি লুকে ভিন্নতা এনেছেন, অভিনয়ে চেষ্টা করেছেন যতটা সম্ভব আবেগকে ফুটিয়ে তোলার। অন্যদিকে গল্পের অতীতে মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়া মাহির পারফরমেন্স আমার কাছে যাচ্ছেতাই লাগলো। সবধরনের চরিত্রের আগে মুখে চওড়া মেকআপ বসানো অবস্থায় তাকে মাহিকে মানানসই মনে হয় না। তবে বলাবাহুল্য, সিনেমায় মাহির স্ক্রিণটাইম সবথেকে বেশি।

অভিনয়ে সব থেকে বেশি হতাশ করেছে নবাগত নায়ক জে.এইচ রুশো। এর মধ্যে পরিচালক ঠিক কি ট্যালেন্ট দেখলো, পুরো ১৪০ মিনিটের সিনেমার দেখেও তা আমার বুঝে আসলো না। তার মধ্যে পজেটিভ কিছুই পাইনি যা উল্লেখ করে তাকে বাহবা দেওয়া যাবে। হিরোয়িজম দিয়ে চরিত্রটি পরিপূর্ণ, অথচ স্ক্রিণপ্রেজেন্স মহামারী আকারের দূর্বল! জিম করা দেহ, কিন্তু আকর্ষণীয় না। সংলাপে কোনো দম নেই, নাচে পারদর্শী না, ফাইটেও উল্লেখ করার মতো কিছু না। অভিনয়ের কথা আর না-ই বা বলি…

গল্পের দুই ভিলেন মিশা সওদাগর ও শিবা শানু বরাবরের মতো গতানুগতিক পারফরমেন্স দিয়েছেন। মিশার চরিত্রটি সিনেমায় বেশ শক্তিশালী দেখানো হলো, কিন্তু তার কাছ থেকে ততটা ভালো পারফরমেন্স পেলাম না। হতাশাজনক।

অন্যান্য ছোটবড় চরিত্রে যারাই ছিলেন, তারা কেউই বিশেষ করে উল্লেখ করার মতো পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি। বেশিরভাগই ছিলেন নবাগত/নবাগতা, তাই আশাকরি ভবিষ্যতে তারা এর থেকে ভালো অভিনয় দেখাতে পারবেন।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৩০

কারিগরি: এ ছবির সিনেমাটোগ্রাফি মোটামুটি মানের হয়েছে। মেহেদী রনি কিছু লং শর্ট দেখিয়েছেন যেগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগছিল। ক্যামেরা কোয়ালিটি বেশ ভালো ছিল। এই এক দিক ছাড়া এছবিতে উল্লেখ করার মতো ইতিবাচক কারিগরি পারফরমেন্স চোখে পড়েনি।

সিনেমার এডিটিংটা ঠিকভাবে হয়নি। টাইটেল ট্র্যাক সহ সিনেমায় থাকা ৫ গানের মধ্যে ৩টিই দিয়ে দেওয়া হয়েছে সিনেমার প্রথমার্ধে, এর মধ্যে দুইটি গান এসেছে ৮-১০ মিনিটের ব্যবধানে। উপরন্তু গানগুলো সঠিক জায়গায় বসেওনি, গান শুরু হওয়ার আগে সেরকম কোনো সিচ্যুয়েশন ডেভলপ করা হয়নি। ফলে ছবিতে যদি শুধুমাত্র টাইটেল ট্র্যাকটি রেখে বাকিগুলি বাদ দেওয়া হতো, তাতেও আহামরি কোনো ক্ষতি হতো না।

বেশ কয়টি তেলেগু ছবি থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সরাসরি এসিনেমায় তুলে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিষেক সিনহার এহেন কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়েছি। সাউন্ড মিক্সিং ততটা ভালো হয়নি। ফাইট ডিরেক্টর ছিলেন সেই ডি.এইচ চুন্নু (ভাতিজা চুন্নু)। আবারো বরাবরের মতো বাজে বিরক্তিকর মারামারি দেখতে হলো। মন্দের ভালো হিসেবে সিনেমার কালার গ্রেডিং টা ভালো পেয়েছি। সেই সাথে সিনেমার লোকেশন ভালো পেয়েছি। পুরো সিনেমাটির শ্যুট হয়েছে পাবনায়।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০

বিনোদন ও সামাজিক বার্তা: সিনেমাতে মোট গান রয়েছে ৫টি; তন্মধ্যে গুরু জেমসের গাওয়া টাইটেল ট্র্যাক টিই সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে। জাভেদ আহমেদ কিশলু সুর ও পরিচালক মাহমুদ হাসান সিকদার নিজে এই গানের কথা লিখেছেন। জাভেদ আহমেদ কিশলুর সুর দেওয়া আরেকটি গান “আসমানী পিরিত” মোটামুটি লেগেছে। পুলক অধিকারী ও ইসরাত জাহান জুঁই গানটি গেয়েছেন, লিরিক্স লিখেছেন তারেক তুহিন। এছাড়া “রঙ্গিলা বেবী” নামক আইটেম সং টি বেশ ভালো ছিল; ঐশৗ খুবই ভালো গেয়েছেন। গানে মাহির পারফরমেন্স ভালো ছিল, তবে এ গানের কোরিওগ্রাফি কিছুটা হিন্দি ছবি “সত্যমেভ জয়তে” এর জনপ্রিয় গান ‘দিলবার দিলবার’ এর সাথে মিলে যায়। আরিফ ও রোহান গানটির কোরিওগ্রাফি করেছেন। এছাড়া ন্যান্সির গাওয়া “যারে দেখে মন” এবং ছবিতে থাকা আরেকটি রোম্যান্টিক গান ততটা ভালো লাগেনি।

সিনেমায় থাকা কিছু কমেডি সিক্যুয়েন্স দেখে মনে হলো বেহুদা ভাঁড়ামি করা হচ্ছে। হাসানোর দায়িত্বটি কেউই সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি। সিচ্যুয়েশনের সাথে সামঞ্জস্যহীন কমেডি বিরক্তিকর পরিবেশ তৈরী করেছে।

সিনেমাটি মূলত সমাজে চলতে থাকা নানা অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলে। সমাজকে বাঁচাতে হলে সবসময় অবতার খুজেঁ পাওয়া যায় না, নিজেকেই তখন অবতাররূপে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের মোকাবেলা করতে হয়। সাধারণ মানুষই তখন হয়ে ওঠে একেকজন অবতার। তাতে মৃত্যু আসলে আসুক, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করা যাবে না। সিনেমাটি মুলত এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০

ব্যক্তিগত: সিনেমাটি নিয়ে প্রত্যাশা যে খুব বেশি ছিল, ঠিক তা নয়। খুব সামান্য প্রত্যাশা নিয়েই দেখতে বসেছিলাম। তবে সেই প্রত্যাশাতেও পানি ঢেলে দিয়েছেন এ ছবি সংশ্লিষ্ট নবীনেরা। আশাকরি তারা এই কাজ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে পরবর্তীতে এর থেকে ভালো কিছু করতে পারবেন।

সবমিলিয়ে বলবো ছবিটি কোনোরকমে বস্তাপচা ট্যাগলাইন এড়িয়ে গেছে, গল্পের মূল বিষয়বস্তু ভালো হবার কারণে। মাস কিংবা ক্লাস, কোনো শ্রেণির দর্শকদের এ ছবি পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি দিবে না।

রেটিং: ৩.৫/১০

ছবিটি কেন দেখবেন: সিনেমায় মাহিয়া মাহির স্ক্রিণটাইম সবথেকে বেশি, তাই মাহির ভক্তকুল সিনেমাটি উপভোগ করতে পারবে। এছাড়া যারা বাংলা বাণিজ্যিক ফর্মুলার ছবি নিয়মিত দেখেন, তারা একবার এটি দেখে আসতে পারেন।


মন্তব্য করুন