অনন্ত জলিলের একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, সে ডুয়ার
আপনে দেখবেন অনন্ত জলিলের কথাবার্তা অত স্মার্ট না, ইংরাজিও তার মত বলে মানে তথাকথিত শিক্ষিতরা যেই সহী ইংলিশ আশা করেন সেইরকম না, অভিনয় পারে না, অনেক আমি আমি করে এবং সে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অনেক স্মার্ট বা ইন্টেলেকচুয়াল না। কী বুঝাইতেছি, একটা তুলনা দিলে বুঝবেন, যেমন হুমায়ূন ফরিদী, সংস্কৃতি ধারণ করেন, অভিনয়ে সেরা, ইন্টেলেকচুয়ালি স্মার্ট, আপনি তারে নিয়া মার্লন ব্র্যান্ডোর সাথে অবলীলায় দাঁড় করাইয়া দিতে পারবেন। কিন্তু জলিলরে পারবেন না, কারণ সে ওইরকম না।
কিন্তু, কেন সে সাকসেসফুল?
শুধু টাকায় সাকসেসফুল এটা না, তার চাইতে অনেক বেশি টাকা বাংলাদেশে অনেকেরই আছে। অনন্ত তার কাজে সফল। সে যে সিনেমা বানাইছে, বলছে অনেক আধুনিক টেকনোলজি দেখাবে, দেখাইছেও। ইরানের সাথে যৌথ প্রযোজনায় গেছে, ১০০ কোটি টাকার নাকি সিনেমা, ইরান দিছে ৮০ কোটি ইত্যাদি।
এটা তো এক সাকসেস। ইরানের ফারাবি সিনেমা ফাউণ্ডেশন কেন তার সাথে কাজ করলো? এত ফালতু অভিনেতা হয়েও, কীভাবে সে সফল হইল এটা করতে?
জলিল চিন্তা করছে নতুন কিছু একটা করার। সে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নেয়া শুরু করছে। ২০১৮ সালে ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশনের সাথে মিটিং করছে। তারা বলছে, ভালো স্ক্রিপ্ট হলে কাজ করবে। সে ইসলাম ইরান শান্তি ইত্যাদি মিলাইয়া এক স্ক্রিপ্ট রেডি করছে। ইরানের এই ফাউন্ডেশন এটাই চায়। তারা রাজী হইছে।
জলিলের এক সাক্ষাৎকারে দেখলাম, গার্মেন্ট ব্যবসাতেও সে একইরকম। সে ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঢাকার বাইরে নিছে তার ফ্যাক্টরি। দেশের সব কারখানায় খোঁজ নিছে, দেখছে তারা কী মেশিন ইউজ করে। পরে সে গেছে তুর্কিতে। গিয়া ২৫টা কারখানা বের করে ঐগুলাতে গেছে। মেশিন দেখছে, নোট নিছে, ইত্যাদি।
তার এই সাক্ষাৎকারে, তার মাইন্ডসেট মিলে। সে এক্টে বিশ্বাস করে। কাজটা করতে পারে।
এবং এইটাই গুরুত্বপূর্ণ।
অধিকাংশ লোকে ভাবে নলেজ, স্মার্টনেস, বুদ্ধি এগুলা বেশি গুরুত্বের। কিন্তু মূলত গুরুত্বপূর্ণ হইল, করাটা। এক্ট।
খোঁজ নিলে হয়ত পাবেন, ঐ ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশনে এর আগে বাংলাদেশের কেউ যায়ই নাই। ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল চিন্তা করছে তার কী দরকার, এবং এইটা পাইতে তার কী করতে হবে। সে করা শুরু করে দিছে।
অনন্ত জলিল এত আনস্মার্ট হইয়াও যে এসব করে বেড়ায়, সফলতা পায় এটা নিয়া এনভিতে ভুইগেন না। মানুষ এটা নিতে পারে না, তার চাইতে আনস্মার্ট কেউ সফল হইতে থাকলে। বরং তার কাছ থেকে এই ইনসাইট নেন যে, আপনার অনেক ইনসাইট, অনেক গিয়ান বুদ্ধি স্মার্টনেস আসলে দরকার নাই সফল হইতে। যা আছে তা দিয়াই পারবেন, শুধু এক্টে, একশনে নজর দিতে হবে। এই জায়গায় মাইন্ডসেট বদলাইতে হবে।
দেখেন, জলিল যাই করুক, যত ফালতু অভিনয়ই করুক, সে বাংলা ফিল্মে অলরেডি একটা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ হইয়া গেছে। টেকনোলজির ব্যবহার, বিগ বাজেটের ফিল্ম, এবং সাথে বিনোদনমূলক অভিনয়ের ব্যাপারটা তো আছেই। সামনে একটা আলাদা কমেডি ধারাই হতে পারে জলিলের স্টাইল কেন্দ্র করে।
সে আর বর্ষার মাথা থেকে অভিনয়ের ভূত নেমে গেলে, যদি তারা ফিল্ম প্রডাকশনে যায় কেবল, সিনেমাতে ইনফ্লুয়েনশিয়াল হয়ে উঠবে। এই যে সিনেমা করছে, ভাবেন খালি এখানে যদি, এই শরিফুল রাজ বা এইরকম কোন ভালো নায়ক ও একটা ভালো নাইকা নিত, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াইত। ভবিষ্যতে এইরকম সম্ভাবনা উড়াইয়া দেবার জায়গা নাই।