Select Page

অভিনয়শিল্পী যখন প্রযোজক

অভিনয়শিল্পী যখন প্রযোজক

অভিনয় ও প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে অনেক তফাত। তারপরও দেখা যায় বাংলা চলচ্চিত্রের সফল অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রায় সবাই একসময় প্রযোজক হয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে একের পর এক ছবি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিনয়শিল্পীদের প্রযোজনা নিয়ে বিশেষ আয়োজন—

নায়ক সোহেল রানার মতে, অভিনেতা হওয়া যত সহজ, প্রযোজক হওয়া ঠিক ততটাই কঠিন। উনি অভিনেতা হবার আগেই প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্রে আসেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ওরা ১১ জনের প্রযোজক তিনি, এরপর  প্রথম পরিচালিত ও অভিনীত চলচ্চিত্র মাসুদ রানা ছাড়াও জীবন নৌকা, লড়াকু, বজ্রমুষ্টি ও সর্বশেষ অদৃশ্য শত্রুর মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। তবে ২০০০ সালে খাইছে তোরে নামক একটি সিনেমা প্রযোজনা করে সমালোচিত হয়েছিলেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা রাজ্জাক সত্তরের দশকেই প্রযোজনা শুরু করেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রাজলক্ষ্মীর ব্যানারে এই পর্যন্ত নির্মাণ করেছেন ১৯টি ছবি। তার প্রযোজিত প্রথম ছবি রংবাজ, এরপর প্রযোজনা করেন বেঈমান, অনন্ত প্রেম, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, ঢাকা ৮৬, বাবা কেন চাকরের মত ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের। সর্বশেষ ‘মরণ নিয়ে খেলা’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেন।

রাজ্জাক-সোহেল রানার সমসাময়িক অনেকেই ছবি বানিয়েছেন, এর মধ্যে আজিম, উজ্জ্বল, ওয়াসিম, আলমগীর, ফারুক অন্যতম। এদের মধ্যে সবচেয়ে সফল উজ্জ্বল, তিনি নসীব, উসিলাসহ প্রায় ১৫টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন, যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসাসফল।

ভিলেন থেকে নায়করূপে আবির্ভূত হওয়া অভিনেতা জসিম প্রযোজক হিসেবে বেশ সফল। ‘জ্যাম্বস ফিল্মস’ থেকে রকি, কালিয়াসহ বহু ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছিলেন। তবে তার ছবিগুলোর ব্যবসাসফল হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে বলেন, তাঁর ফাইটার গ্রুপ ছিল, প্রোডাকশন টিম ছিল, এমনকি পরিচালকও ছিল নিজেদের মধ্যেই, ফলে স্বল্প খরচে তিনি ছবি নির্মান করতে পারতেন।

সফল অভিনেতা মান্না তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র’ থেকে ৮টি চলচ্চিত্র নির্মান করেছিলেন, যার সবগুলোই ছিল বেশ ব্যবসাসফল। লুটতরাজ সিনেমা দিয়ে প্রযোজনায় নামেন মান্না। এরপর লাল বাদশা, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, পিতা মাতার আমানতের মত সিনেমা প্রযোজনা করেন। তিনি নায়িকা নির্বাচনেও বেশ বৈচিত্র্য আনেন। তাঁর ছবিতেই দিতি-মৌসুমী, মৌসুমী- শাবনূর, পূর্ণিমা- অপু একসাথে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করে। গত দুই যুগে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে যে সবচেয়ে বেশি সফল তিনি অভিনেতা ডিপজল। তিনি ‘অমি -বনি কথাচিত্রের ব্যানারে প্রায় ৩০টির মত চলচ্চিত্র বানিয়েছেন। এর মধ্যে আম্মাজান, চাচ্চু, কোটি টাকার কাবিন, দাদীমা উল্লেখযোগ্য। তবে বেশকিছু অশ্লীল সিনেমা প্রযোজনা করে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। তিনি মাঝে বিরতি দিয়ে সম্প্রতি আবার চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নেমেছেন।

এছাড়া ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল ও কয়েকটি সফল সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। এর মধ্যে শেষ রক্ষা ও বিচ্ছু বাহিনী উল্লেখযোগ্য। তবে নায়ক রুবেলের একাধিক প্রযোজিত সিনেমা অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত।

নব্বই পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিব খান ও প্রযোজকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। রিয়াজ তাঁর একমাত্র প্রযোজিত সিনেমা ‘হৃদয়ের কথা’ দিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন, ছবিটিও হয়েছে জনপ্রিয়। দর্শকদের আফসোস তিনি কেন আর চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এলেন না! ফেরদৌস প্রযোজনা করেছেন ‘এক কাপ চা’, মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘পোস্টমাস্টার ৭১’। শাকিব খানের প্রথম প্রযোজিত সিনেমা ‘হিরো দ্য সুপারস্টার। এরপর বেশ বিরতি দিয়ে এই বছর ‘প্রিয়ারে’ সিনেমার মাধ্যমে আবার প্রযোজক রুপে আসছেন।

মিজু আহমেদ- রাজীব দুইজন মিলে ‘ফ্রেন্ডস মুভিজ’ থেকে নির্মান করেন বেশ কয়েকটি ছবি, যার মধ্যে আসামী গ্রেফতার, চালবাজ অন্যতম। নায়ক অনন্ত জলিল প্রযোজক হয়ে এসেছেন প্রথম চলচ্চিত্রেই, তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘মুনসুন ফিল্মস’ এর ব্যানারে নির্মান করেন বিশাল বাজেটের খোঁজ দ্য সার্চ, মোস্ট ওয়েলকাম, নি:স্বার্থ ভালোবাসার মত চলচ্চিত্র। হুমায়ূন ফরিদী প্রযোজনা করেছিলেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘পালাবি কোথায়’। মিশা সওদাগরের প্রযোজনায় একমাত্র চলচ্চিত্র ‘প্রতিবাদী মাস্টার’।

শুধু অভিনেতারাই ছবি প্রযোজনা করেছেন তা নয়, অভিনেত্রীরাও এসেছেন প্রযোজক রূপে।

শাবানার ‘এস এস প্রোডাকশন’ ছিল বাঙালী নারী চলচ্চিত্র ভক্তদের কাছে একটি ব্র্যান্ড। এই প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত হয়েছে মাটির ঘর,গরিবের বউ, স্বামী কেন আসামী সহ বেশকিছু বানিজ্যিক সফল চলচ্চিত্র। ববিতাও প্রযোজনা করেছেন বেশকিছু চলচ্চিত্র। এরমধ্যে লেডি স্মাগলার, পোকামাকড়ের ঘর বসতি অন্যতম। সুচন্দা তাঁর ‘সুচন্দা কথাচিত্র’ থেকে বানিয়েছেন তিন কন্যা, প্রেম প্রীতি, হাজার বছর ধরের মত সিনেমা। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে যারা প্রযোজনায় এসেছেন তাদের মধ্যে শুধু শাবানা, ববিতা ও সুচন্দাই প্রযোজক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন। এছাড়া নূতন তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে দুইবাংলার যৌথ প্রযোজনায় আমি সেই মেয়ে, শত্রু ধ্বংস নির্মান করেছেন। মৌসুমী প্রযোজক রূপে আসেন গরীবের রানী, সুখের ঘরে দু:খের আগুন, বউয়ের সম্মান চলচ্চিত্র দিয়ে। এর মধ্যে বউয়ের সম্মান বেশ সমালোচিত হয়। এছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে শাবনূর প্রযোজক হওয়ার ঘোষনা দিলেও এখনো কোনো কার্যত ফল পাওয়া যায় নি। পপি ও চেষ্টা করেছিলেন প্রকিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।

এছাড়া নানা সময়ে প্রযোজক রূপে দেখা যায় নাঈম, বাপ্পারাজ, অমিত হাসান, ইমরান, সম্রাট, ববি, পরী মনির মত অভিনয়শিল্পীদের।


Leave a reply