
অ্যাকশন ছবির অন্যতম সেরা পরিচালক রায়হান মুজিব
রায়হান মুজিব বাংলাদেশের অ্যাকশন ঘরানার ছবির অন্যতম সেরা পরিচালক। তাঁর ছবির মেকিং থাকত আপ টু দ্য মার্ক। কাজের হাত অসাধারণ। কমার্শিয়াল ছবির পরিপূর্ণ ভাষা তাঁর কাজের মধ্যে ফুটে উঠেছে।
তিনি অ্যাকশন ছবির পাশাপাশি ফ্যামিলি ড্রামা ও রোমান্টিক ছবিও নির্মাণ করেছেন তবে অ্যাকশনই প্রধান হয়ে উঠেছে।

তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবি : হিরো, চিরশত্রু, কাজের বেটি রহিমা, আখেরী মোকাবেলা, রাজা গুণ্ডা, ভাইজান, হিংসার আগুন, আত্ম অহংকার, অগ্নিপুরুষ, প্রেমপ্রীতি, খবর আছে, জগৎ সংসার ও তেজী সন্তান।
অ্যাকশন ছবির সেরা নায়ক জসিম ছিল রায়হান মুজিবের বেশিরভাগ অ্যাকশন ছবির নায়ক। রায়হান মুজিবের ইন্টারভিউ থেকে জানা যায় জসিমই তাঁকে বলেছিলেন তিনি তাঁর পরবর্তী ছবির পরিচালক এবং সেই ছবিই ছিল ‘হিরো’। সেই সময়ের জমকালো একটি ছবি। জসিমের গেটআপ তখনকার সময়ের থেকে আধুনিক ছিল। জসিমের সাথে ‘চিরশত্রু, কাজের বেটি রহিমা, হিরো, আখেরি মোকাবেলা, রাজা গুণ্ডা, ভাইজান’ ছবিগুলো যাদের দেখা আছে রায়হান মুজিবের মেকিং-এর দিকটা চিন্তা করলে দেখবেন কোন লেভেলের ছিল তাঁর কাজ।
‘কাজের বেটি রহিমা’ দিয়েই বোঝা সম্ভব এটা কি পরিমাণ অসাধারণ ছবি। শহুরে অঞ্চলে কাজের মেয়েদের উপর যে নির্যাতন চলে তার একটি চিত্র এ ছবিতে ফুটে উঠেছে। শাবানাকে প্রধান চরিত্র করে ছবিটি নির্মিত। ছবির নামের ক্ষেত্রেও ক্রিয়েটিভিটি লক্ষণীয়। কাজের মেয়ে না বলে ‘বেটি’ বলা হয়েছে এখানে কাজের মেয়েদের প্রচলিত যে নামে ডাকা হয় সেটাই ফুটে উঠেছে। শাবানার উপর চলা অমানবিক নির্যাতনের শাস্তি দেয় জসিম। ছবির শেষের দিকে শাবানার চোখ অপারেশনের সময় হাসপাতালের ছাদের ফাইটিং ছিল দেখার মতো।

‘ভাইজান’ তো মাস্টারপিস ছবি। জসিমের মতো অ্যাকশন কিংকে কোনো অ্যাকশন ছাড়াই শুধু অভিনয় দিয়েই দর্শকের চোখের পানি ঝরিয়েছেন তিনি। এক আদর্শ ভাই বোনের জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তার একটি উদাহরণ এ ছবি।
‘আখেরি মোকাবেলা’ জমজমাট অ্যাকশন ছবি ছিল। হাসপাতালের ডাক্তারি সিন্ডিকেটকে ধরার পর শাবানাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয় তারপর জসিম তাঁকে বাঁচায়। বাপ্পারাজ-কবিতাও ছিল।
‘রাজা গুণ্ডা’ জমজমাট অ্যাকশন ছবি ছিল। এ ছবিতে আহমেদ শরীফ নিজের জিঘাংসা মেটাতে বাঁশি বাজায় এবং ছবির শেষের দিকে তাঁকে মারার আগে জসিম বাজায় বাঁশিটা, ঐ সময়টা গুজবাম্প লেভেলের ছিল। ‘চিরশত্রু’-ও দারুণ অ্যাকশন ছবি।
‘আত্ম অহংকার’ রায়হান মুজিবের অন্যতম সেরা ছবি। কী দুর্দান্ত পরিচালনা করেছেন রায়হান মুজিব! এ ছবিতে মৌসুমী-ওমর সানীর মতো জনপ্রিয় জুটি থাকার পরেও হুমায়ুন ফরীদিকে ছবির প্রাণ করেছিলেন রায়হান মুজিব পরিচালনার গুণে। ছবির বড় একটা অংশ জুড়ে হুমায়ুন ফরীদিই ডমিনেট করেছেন।
‘হিংসার আগুন’ ছবিটি রায়হান মুজিবের সবচেয়ে গর্জিয়াস ছবি। এ ছবির সেট, অভিনয়শিল্পীদের কস্টিউম জাস্ট মাইন্ডব্লোয়িং। সোহেল চৌধুরী, দিতি ও অরুণা বিশ্বাসের গেটআপ দেখলে তাকিয়ে থাকতে মন চায় এত গর্জিয়াস ছিল। ইভেন ছবির ‘স্বর্ণালী সঙ্গিনী গো’ গানটিও অনবদ্য। একটা আভিজাত্য রেখে ছবিটি করা হয়েছিল।

মান্নার সাথে ‘খবর আছে, তেজী সন্তান, জগৎ সংসার’ তাঁর ক্যারিয়ারের শেষের দিকের ছবি হয়েও বেশ এনজয়অ্যাবল ছিল। ‘খবর আছে’ ঐ বছরের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল ছবি ছিল।
‘প্রেমপ্রীতি’ তাঁর রোমান্টিক ছবি। সাহিত্যিক জহির রায়হান ও সুচন্দা দম্পতির ছেলে তপু রায়হানকে নায়ক করে ছবিটি নির্মিত হয়েছিল।
রায়হান মুজিবের ছবির কিছু উল্লেখযোগ্য গান :
আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা – আত্ম অহংকার
তুমি চলে যেও না ও সাথী আমার – আত্ম অহংকার
আমায় দেখে আমি চিনতে পারি না – কাজের বেটি রহিমা
স্বর্ণালী সঙ্গিনী গো – হিংসার আগুন
তুমি যদি ডাকো আমায় – প্রেমপ্রীতি
একজন রায়হান মুজিবের পরিচালক আজ আর একজনও নেই। দেশীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দৈন্যদশার জন্য এমন পরিচালকদের অনুপস্থিতিও অন্যতম কারণ। রায়হান মুজিবকে আমরা মনে রাখব।