Select Page

“আয়নাবাজি – এ পারফেক্ট ক্রাইম “- সামগ্রিক বিশ্লেষণ

“আয়নাবাজি – এ পারফেক্ট ক্রাইম “- সামগ্রিক বিশ্লেষণ

আয়নাবাজি ছবির বিশ্লেষন উত্তেজনা !!! উত্তেজনা কি? কত প্রকার ও কি কি? এমন প্রশ্নের উত্তর যদি চাওয়া হয়। উওর একটিই হবে, তা হল- উত্তেজনা মানে আয়নাবাজি, আয়নাবাজি, আয়নাবাজি। ঈদের সিনেমার যেমন হাইপ বা ক্রেজ সৃষ্টি করে এবার আয়নাবাজি ঈদ ছাড়াই তা করে দেখিয়েছে। সিনেমা নিয়ে বলার অনেক কিছু আছে, আবার কিছুই নেই। কেন? চলুন একটু ঘুরে আসি আয়বাজির লাগ ভেলকির দুনিয়া থেকে।

আয়নাবাজি’র অর্থ বিশ্লেষনঃ 

আয়নাবাজি নিয়ে আলোচনা করতে হলে আগে আলোকপাত করতে হবে এর নামের উপর, দৃষ্টিপাত করতে হবে এর অন্তর্নিহিত বার্তার উপর। আয়না, পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে সমতল দর্পনের উদাহরণ হিসাবে দেখা হয়। দুইপাশে স্বচ্ছ থাকার কারনে কাচে ভালো বিম্ব ফুটে ওঠে না। যেকোন একপাশে তাই সিলভার বা অন্য কিছুর প্রলেপ দিয়ে অস্বচ্ছ করে দেওয়া হয়। যেন ফুটে ওঠে প্রকৃত প্রতিবিম্ব। মানুষ দেখতে পায় তার নিজের প্রতিচ্ছবি। সমতল দর্পনে সমতল ভাবে প্রতিফলিত হতে থাকে তার অবয়ব কিন্তু পার্শ্ব পরিবর্তন হয়ে যায়। একটি সরল আয়না যখন মানুষের দিক পরিবর্তন করে দিতে পারে, সেখানে মনের আয়না তো আরো জটিল জিনিস। মন যেখানে এবস্ট্রাক্ট জিনিস সেখানে মনের আয়নার দেখা মেলা তো ভার। মানুষের মনের ভিতর কি আছে তা কি দেখতে পাওয়া যায়? যায় না, গেলে তো জগৎটা সরল সমীকরণ আকারে চলত!!!! জীবনের বক্ররেখার মত আয়নাবাজির আয়নার চরিত্র ও ঘুরঘুটিয়ার মত রহস্যে আচ্ছাদিত। আয়নাবাজি খুব সরল সহজ গল্প । বাংলার মানুষে সহজ জীবনের জটিল ধাঁধার এক সমীকরন।

আয়নাবাজির সামগ্রিক বিশ্লেষণঃ 

সব চলচ্চিত্রেরই কিছু ভালোদিক থাকে, থাকে কিছু খারাপ দিক। আয়নাবাজিরও ভালো খারাপের উপরে নয়। তবে সৃষ্টিশীল উপস্থাপন, অভিনয়ে পেশাদারিত্বের ছাপ, মৌলিক সরল কাহিনী সব মিলিয়ে খারাপ দিকগুলোকে ভালোভাবেই এড়িয়ে আয়নাবাজি আপন মহিমায় উজ্জ্ব্বল হয়ে উঠেছে।

  • কাহিনী বা গল্পের বিন্যাস

আলোচনার কথা বলা হলেই প্রথমে চলে আসে কাহিনী বা গল্পের বিন্যাস নিয়ে। গল্প !!! সিনেমার সব থেকে মূল বিষয়। কোটি কোটি টাকা দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করে যদি একটি ভালো মৌলিক গল্পের দেখা দর্শকদের দেওয়া না যায়, তাহলে সেটি  সিনেমা হয়ে ওঠে না, হয়ে ওঠে উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মত ব্যপার। সেদিক থেকে আয়নাবাজিতে রয়েছে একটি সরল গল্প তবে যার সমাধান খুব জটিল। কারণ একবার জাহাজে পা দিলে জাহাজ আদৌ আসবে কি না অর্থাৎ সমীকরণে সমাধানের দেখা পাবে কি না, তা বলা মুশকিল। অনেকদিন পর ভালো একটি গল্পের দেখা পাওয়া গেলো বলাই যায় 🙂 , যদিও গল্পের শুরুটা বেশ ধীরময়।

গল্পের বিন্যাস কেমন? খুব দারুণ এক কথায়। এতো দারুণভাবে বর্ণনা করা যায় গল্প অনেক দিন পড়ে দেখলাম। একদম শুরুটা যেভাবে হয়েছে ঝলক দিয়ে শেষটা মনে হল বাড়ি দিয়ে শেষ করে দিল। দাঁড়িয়ে ছিলাম, একেবারে ধুম করে বসে পড়লাম। অসাধারণ ছিল গল্পের বলার ধরণ।

  • অর্থবহ স্ক্রীনপ্লে

আইসক্রিমের পর আর একটি সিনেমা পেলাম যেখানে ছিলো অর্থবহ স্ক্রীনপ্লের কারুকাজ। পার্থ বড়ুয়া হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েও তা হাত ছাড়া হয়ে যায় তখন অবস্থা হয় চোর পালিয়ে গেলে নেড়ি কুকুরেও লেজ নাড়ে। পাপ করার পর যখন শরীর অপবিত্র হয়ে যায় সে অপবিত্রতাকে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে পরিস্কার করলেও মনের ময়লাকে কি দূর করা যায়? হয়তো সে ময়লা বারবার মুছে দিতে চায় আয়না কিন্তু পারে না 🙁 জীবন অনেকটা লঞ্চ ঘাটের মত বারবার লঞ্চ আসে, ঘাটে ভিড়ে আবার ছেড়েও যায়। আয়নার জীবনটাও ঠিক এমন। সদরঘাটের লঞ্চের দিকে তাকিয়ে থেকে আয়না যে তার এ জীবনকে এভাবে দেখছে এটাও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

  • দৃশ্যধারণ

ক্যামেরার কাজ, আপ টু দ্যা মার্ক। লং শর্ট, ক্লোজ শর্ট , আপার ভিউ সব কিছু ছিল নিখুঁত। আর রোমাঞ্চকর মূহুর্তের ব্যাক শর্ট দিয়ে দর্শকের নিজের মত করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আপনি যা ভাবার ভাবেন 😉 আমার বোঝানোর দরকার বুঝিয়ে দিয়েছি 😉

  • অভিনয়

অভিনয়ে এবার একটা জাতীয় পুরস্কার পেতেই পারেন চঞ্চল চৌধুরী। বদলাপুরের নওয়াজ কিংবা চতুস্কোনের পরমব্রত, এদের নাম বলে বলে যারা এতোদিন মুখে ফেন তুলে ফেলেছেন তাদের বলছি ভাই একবার যদি চঞ্চলের অভিনয় দেখতেন তাহলে বলতে ওদের এখনো অনেক শেখার বাকি। ওরা তো নিজের মত করে একটা একটা ক্যারেক্টার করে আর এখানে চঞ্চল অন্যদের মত করে সেম টু সেম অন্যদের ক্যারেক্টার করে? ভাবতে পারবেন? আচ্ছা আর একটু ভাবিয়ে দি? নিজেকে নিজে কোনদিন কপি করেছেন? মানে একটু আগে যা করলেন ঠিক সেটাই আবার করবেন? বা আপনার সামনে যিনি বসে আছেন তিনি যা করবেন তাই আপনি সাথে সাথে করবেন? অন্যের মত করে হাঁটবেন, কথা বলবেন? খুব সোজা কাজ তাই না? যাদের অভিনয় শেখার ইচ্ছা আছে আজই চঞ্চল চৌধুরীর কাছে চলে যান, আয়না টিচারের অভিনয় স্কুলে ভর্তি হন। অভিনয়ের এখনো অনেক কিছু শেখার আছে উনার কাছ থেকে। অসাধারনের থেকেও যদি বেশি বলা হয়ে তাহলেও হয়তো কম হয়ে যাবে। চঞ্চল নিজেকে ছাড়িয়ে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। আমারা বাইরে থেকে শিল্পী আনি কিন্তু ঘরে প্ল্যাটিনাম থাকতেও তার কদর করি না। সব শেষ একটা কথায় বলল চঞ্চল চৌধুরীর জন্য – “উনি চঞ্চল, একজনই।” চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলাম শুধু অভিনয় দেখে।

হৃদি চরিত্রে নাবিলা ছিল বেটার দ্যান এক্সপেক্টেশন। এতো ন্যচারাল আর সাবলীল অভিনয় কি করে করে। আহামরি কোন মেকআপ নেই, তবুও সুন্দর। মনে হচ্ছিল তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, ও গো প্রিয়। বানিজ্যিক চলচ্চিত্রে নাবিলাকে নিয়মিত হতে অনুরোধ করব।

সাংবাদিক চরিত্রে পার্থ আর কমেডিয়ান হিসাবে মীরক্কেল খ্যাত জামিল দারুণ ছিল।

ব্যাক গ্রাউন্ড সাউন্ড আর মিউজিক নিয়ে কোন কথা হবে না। জোশ জোশ বেশি জোশ।

  • আয়নাবাজি কি আর্ট ফিল্ম?

আপনি যদি ভাবেন, আয়নাবাজি আর্ট ফিল্ম তাহলে ভুল করবেন। আয়নাবাজি থ্রিলার ফিল্ম ও না, আয়বাজি আর্ট ও কর্মাশিয়ালের মাঝামাঝি একটি ডার্ক কমেডি ফিল্ম। সংলাপের মাঝেই আপনি হাসবেন, আলাদা সুড়সুড়ি দেওয়া লাগবে না কারণ যদি আপনি শুনে ওঠেন

” কি রে সাইজ কত :3 “

এবার আসি পরিচালনা। নামটা আর একবার বলছি “অমিতাভ রেজ চৌধুরী“, আর কিছু বলব না। উনি ওনার মান রেখেছেন 🙂 অভিনয় কি করে বের করতে হয় তা উনি দেখিয়েছেন। আমাদের সৃজিত কেন লাগবে ভাই? দেশের হীরাদের দিকে তাকান, সৃজিতের থেকে ভালো জিনিস পাবেন এদের কাছে।

আয়নাবাজি – এ পারফেক্ট ক্রাইম এবং কিছু প্রশ্নের সমাধানঃ

সিনেমা মুক্তির পর থেকেই কম আলোচনা বা সমালোচনা হয় নি। নকলের অভিযোগ থেকে শুরু করে, অন্য নির্মাতা ও শিল্পীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে বারবার। সিনেমাটি ২য় বার দেখব এমন ইচ্ছা ঠিক তখন থেকেই শুরু হয়েছে যখন থেকে বলা হচ্ছে একাধিক ত্রুটি এবং অনেক প্রশ্নের না পাওয়া উত্তরের কথা। আয়নাবাজির সেসব প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান এবং কিছু প্রাসঙ্গিক কথা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলার চেষ্টা করব।

  • সবার আগে আলোকপাত করব, একটি কমন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার। প্রশ্নটি ছিল, “সাংবাদিক সাবের আয়নার ছবি কোথায় পেলো? সে তো ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে পারে নি, তাহলে কি করে পেলো আয়নার ছবি?”

– উত্তর খোঁজার জন্য আপনি একটু মনে করার চেষ্টা করুন সেই দৃশ্যটির কথা যেখানে সাবের রাতে তার স্ত্রী কতৃক ভৎসনার জন্য মদ্যপান করে মাতলামি করে এবং ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে জামিল কে বলে, দে মদ দে। মদের গ্লাস হাতে নিয়ে হঠাৎ তার চোখ চলে যায়, কম্পিউটারের মনিটরের উপর। সেখানে যে কুদ্দুসের পার্টির ছবি দেখে। (এখানে বলে রাখি তখন কিন্তু আয়না জেল থেকে বেড়িয়ে বাসায় চলে এসেছে) জামিল কে বলে এই ছবি কার? জামিল বলে “কুদ্দুইচ্চার”, আবার বলে তাহলে এটা কে, জামিল আবার বলে “কুদ্দুইচ্চা”, সাবের কিন্তু তখন বলে নাহ এ কুদ্দুস না। পয়েন্ট টু বি নোটেড – কম্পিউটারে কার ছবি ছিল সেটা কিন্তু পর্দায় দেখানো হয় নি। সাবের বলেছিল এ কুদ্দুস না এই বেটাই হল সেই বদলী। ঐ পার্টির কোন একটা ছবি সাবের দেখেছিল যেখানে হয়তো আয়না ছিল ঠিক সেম ড্রেস পড়ে (মানে যেটা পড়ে সে জেলে গিয়েছিল বা এসেছিল, সেম গেটাপে)। এখান থেকেই সাবের আয়নার ছবির হদিস পেয়ে যায়। (এটাই সিনেমাতে একমাত্র লজিক্যাল উপস্থাপনা আয়নাকে খুজে পাবার বিষয়ে)।

  •  দ্বিতীয়ত, আয়নার মা কে?

– হাসপাতালে প্রথমে যে মহিলা ক্যান্সারে আক্রান্ত অবস্থায় মারা যায় এবং যার অদেখা পুত্র ৩ বছর ধরে তার চিকিৎসার টাকা দিয়ে আসছিল সে আর কেউ না সেটি ছিল আয়না। কারন সিনেমার শেষ দৃশ্যতে সাবের হৃদিকে বলছিল আয়না তার মায়ের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করার জন্য জেলে গিয়েছিল ৩ মাসের জন্য কিন্তু সেখানে তার ৩ বছর লাগে বের হতে।

  •  তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, জেলের একজন গার্ডের মাথায় কি কিছু নেই? সে এমনিতেই তালা খুলে দিবে?

– উত্তরের দেখা মিলানোর জন্য আপনাকে আমি নিয়ে যাবো সাইকোলজিতে। এখানে কিছুটা পুথিগত বিদ্যার দরকার হবে। জানতে হবে, হিপনোটিজম নিয়ে। চলুন একটু ঘুরে আসি হিপনোটিজমনের এলাকা থেকে –

হিপনোটিজম শব্দের অর্থ সম্মোহন। সন্মোহন বা হিপনোটিজম অথবা মনুষ্য বশীকরণ বিদ্যায় নাকি আদিকালের সাধু সন্যাসী ও কামরুপ কামাখ্যার ডাকিনী যোগিনীরা সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তারা নাকি কি সব মন্ত্রবলে সন্মোহিত করে ফেলতে পারতো যে কোনো মানুষকেই। জেনে নিতে পারতো যে কারো মনের কথা। একজন সন্মোহিত ব্যাক্তি নাকি সন্মোহনকারীর যে কোনো আদেশ নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য হত অবলীলায়। অষ্টাদশ শতকে সম্মোহন বিদ্যার নামকরণ হয় ‘মেজমেরিজম’। অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের ড. ফ্রাণ্ডস্ অ্যান্টন মেজমার সম্মোহন বিদ্যার চর্চা শুরু করেন। ফলে এর ব্যাপক প্রচার শুরু হয় এবং ডাক্তারবাবুর নামানুসারে সবাই একে ‘মেজমেরিজম’ বলতে থাকে। ১৮৪০ সালে স্কটল্যান্ডের এক ড. জেমস ব্রেড নতুন নামকরণ করেন। গ্রিক শব্দে ঘুমের দেবতার নাম ‘হুপ্নস’ এই শব্দের অর্থ হল ঘুম। সম্মোহিত ব্যক্তি যে হেতু এক প্রকার ঘুমের ঘোরে কাজ করে যায় তাই ড. ব্রেড এই বিদ্যার নাম দিলেন ‘হিপনোটিজম’ এ নামই বর্তমানে প্রচলিত। এ ভাবে সম্মোহন করা হয় তা জানা গেলেও আসলে কি ঘটে এ পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি। কারণ মানুষের মন কিভাবে কাজ করে এটা আসলে অনেক বড় বিভ্রান্তির মধ্যে এক টুকরা ছোট বিভ্রান্তি। এটি এক ধরণের চরম প্রস্তাবনা, শিথিলতা এবং তীব্রতার কল্পনা শক্তির দ্বারা একটি অস্বাভাবিক স্বপ্নায়ন মোহগ্রস্তের অবস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ননা করে। যা অনেকটা ঘুমের মত মনে হলে আসলে ঘুম নয়। কারন বিষয়টি পুরো সময়জুড়ে সজাগ থাকে। অধিকাংশ সময় একে দিবা স্বপ্নের মত মনে হয়। অথবা কোন বই বা মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত।

এখন বলি কিভাবে একজন মানুষকে করা যায় এই সন্মোহন বা হিপনোটাইজড তারই কিছু নিয়ম কানুনঃ

1. pre-talk – এখানে হিপনোটাইজ করা হবে এমন ব্যাক্তিকে হিপনোটিজম ব্যাপারটা সম্পূর্নভাবে এক্সপ্লেইন করতে হবে। এখানে তার কোনোরকম ক্ষতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই সেটাও বুঝিয়ে বলতে হবে। নয়তো বা তার সাবকনসাস মাইন্ড তাকে সন্মোহিত হতেই দেবেনা। নেতিবাচক মনোভাব বা ভীতির কারণে অনিচ্ছুক ব্যাক্তিকে সন্মোহিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

2. induction- এটা এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে যাকে সন্মোহিত করা হবে তার স্নায়ুকে শিথিল করে দিতে হবে। এখানে সন্মোহনকারীকে থাকতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও অবিচল কিন্তু কোমল আর অবশ্যই তার সকল আদেশ নির্দেশ হতে হবে ইতিবাচক। আরাম চেয়ারে বসিয়ে বা শুইয়ে দিয়ে তাকে এমন কিছু নির্দেশ দিতে হবে

এবার চলে আসুন ঐ দৃশ্যতে যখন নিজাম সাইদ রুপী আয়না লাবু মিয়ার সাথে কথা বলছিল। ভালো চলে খেয়াল করুন, আয়না লাবু মিয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষন প্রি-টক বা কথা বলেছিল। বলছিল রাজনীতি হল সব থেকে বড় অভিনয়ের স্থান। এরপর আস্তে আস্তে সে লাবু মিয়াকে induction স্টেজে নিয়ে যায়। তখন সে বলে লাবু মিয়া তুমি ভাবো যে তোমার মাঝে আমি অর্থাৎ নিজাম সাইদ চৌধুরী অবস্থান করছে। উত্তরে লাবু বলে “আমি কি পারব স্যার?”

স্পটত বোঝা যাচ্ছে এখানে হিপনোটিজমের ব্যবহার করা হয়েছে, যার ব্যবহার এর আগেও আয়না মাছ বিক্রেতার সাথে করেছে। তাই যদি কারো এরপর ও সন্দেহ থাকে তাহলে বলব আপনি চিন্তার উর্ধের মানুষ। আমার লেখা আপনার জন্য নয়।

  • এবার আসি সব থেকে বড় প্রশ্নে, “আয়না এতো বড় অপরাধ করার পর ও তাকে ছাড় দেওয়া হল? এখানে তো অপরাধকে উৎসাহিত করা হয়েছে, এটা কোন সিনেমা হল?”

– হ্যা ভাই এটা কোন সিনেমা না, কারন আপনার সিনেমা দেখার জগত হয়তো এতো বিশাল সেখানে আপনি আপনার জ্ঞানের সাগরে “পারফেক্ট ক্রাইম” মানে একটি শব্দ আছে তা হারিয়ে ফেলেছেন। আয়নাবাজি পুরোপুরি একটি পারফেক্ট ক্রাইম মুভি। এখানে দেখানো হয়েছে অপরাধ করার পর কোন ক্লু না থাকলে সেখানে আইন ও কিছু করতে পারে না। ঠিক আছে আরো বুঝিয়ে বলি, পারফেক্ট ক্রাইম কাকে বলে সেটা দিয়ে শুরু করি। সংজ্ঞামতে –

” Perfect crime is a colloquial term used in law and fiction (especially crime fiction) to characterize crimes that are undetected, unattributed to a perpetrator, or else unsolved as a kind of technical achievement on the part of the perpetrator. In certain contexts, the concept of perfect crime is limited to just undetected crimes.”

undetected or unsolved – শব্দগুলোর অর্থের দিকে যদি আলোকপাত করি তাহলে দাঁড়ায় যা নির্ণয় করা যায় না, বা যা সমাধান করা যায় না। এই দুইটি অর্থ দিয়েই আপনি পুরো সিনেমাটি বুঝতে পারেন। চেষ্টা করে দেখেন তো আপনি আয়নার অপরাধ কি করে প্রমান করবেন? আছে কোণ ক্লু? একমাত্র প্রমাণ আয়না নিজে আর যাদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়ে অপরাধ করেছে তারা। আর অপরাধীরা তো কেউ নিজে এসে স্বীকার করবে না আমি করেছি আসুন ধরুন। সিনেমার ঘটনাগুলো আপনি আমি পর্দায় দেখছি কিন্তু সে সময়ের প্রেক্ষিতে কিন্তু সেগুলো কেউ জানে না। যারা জানত তাদের ও কিন্তু সরিয়ে দেওয়া হল, গাউসুল কে হত্যা ও মজনুকে গুম। কোথায় পাবেন প্রমান? যেখানে প্রমান নেই সেখানে তো অপরাধী সিনেমার শেষে এসে প্রেমিকার সাথে হাসি মুখেই দাঁড়িয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

এতো কিছুর পর ও যদি আপনি বলেন না এটা কোন সিনেমা না তাহলে বলব প্লিজ “মেমোরিজ অফ মার্ডার” এর খুনী বা “দ্য ওয়েলিং” এর কাহিনী নিখুত ভাবে বের করে দিন আপনি। কোরিয়া কেন পুরো বিশ্ব আপনাকে বাহবা দিবে। জোডিয়াক এর কাহিনীতে তো জোডিয়াক নিজে ফোন করে ক্লু দিলেও ধরতে পারে নি, সেখানে ক্লু ছাড়া ধরার কথা আপনি কি করে চিন্তা করেন?

এখন আসি সিনেমা থেকে কি কি শিক্ষা পেলাম। সিনেমা দেখলাম আর শিক্ষা পেলাম না এটা কি কোন সিনেমা হল? শিক্ষামূলক বিষয়ঃ

– ভালোবাসা পারে মানুষকে ভালোর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। আয়না কিন্তু চায়নি পরের বার সে জেল খাটবে। সে ভালো হতে চেয়েছিল।

– রাজনীতির চাল খুব ভয়াবহ।

– সৎ ও নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করলে পুলিশ চাইলেই যে কাউকে ধরতে পারে, সেটা যত বড় নেতা হোক না কেন?

– লাস্ট দৃশ্য মনে করুন পাগল পুরির দোকানে বসে হাসছে… কি বুঝছেন? পাগলের কোন শত্রু নেই কিন্তু বেশি বুদ্ধিমান হলেই সমস্যা।

– ঢাকার জ্যামের কারনে অনেক মানুষ অকালে প্রান হারায় শুধুমাত্র সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে।

যাই হোক, যাদের জ্ঞান লাগবে আশা করি এখানে অনেক ভালো ম্যাসেজ আছে তাদের জন্য। আর না বুঝলে সিনেমার একটি ডায়লগ ছিল “নিজাম সাইদ চৌধুরী” চরিত্রের মুখেঃ

কার্ল মার্ক্স বলেছেন, ” একটি ঘটনাকে বিভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে, এরপর সব থেকে সেরা উপায় টা বেছে নিতে হবে।”

  • অসংগতি

অনেক তো গুনকীর্তন করলাম আসেন কিছু খারাপ দিক তুলে ধরি। পার্থ বড়ুয়ার ডিভোর্সের কারণ টা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে পুরো। এছাড়া অনেকের কাছে হয়তো প্রথম দিকটা একটু বোরিং লাগতে পারে। যদিও আমি আগেই বলেছি এটা একটা ডার্ক কমেডি সিনেমা। এছাড়া আছে কিছু দৃশ্যের অসংগতি।

  • অসংগতি ১ঃ বাচ্চা ছেলের (যদিও বাবু না) মত চুল কাটার পর, হুট করে গোসলের দৃশ্যেতে বড় চুল বেমানান লেগেছে। এছাড়া জেলের ভিতরে কি ভাবে মেকাপ ঠিক রেখে নিজাম সাইদ চৌধুরীর চরিত্র করে গেলো তাও ভাববার বিষয়।
  • অসংগতি  ২ঃ এছাড়া কিছু স্থানে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের শূন্যতা অনুভব করেছি। পার্থ যখন আয়নাকে খুঁজতে থাকে তখন একটা স্লো থ্রিলের মত কাজ করছিল, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকলে পুরো জমে ক্ষীর হয়ে যেতো 🙂

পরিশেষ বলব, সিনেমার মেকাপে কিছু ত্রুটি ছাড়া আপনি যদি সিনেমাটিকে সার্বিকভাবে বিশ্লেষন না করে আগে বলে দেন এটা ভুল ঐটা ভুল, তাহলে পর্যবেক্ষন ক্ষমতার উন্নতি ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না। সব মিলিয়ে আয়নাবাজি বেশ ভালো  কালার গ্রেডিং, মিউজিক, মেকআপ, অভিনয় পরিচালনা সব দিকে মিলিয়ে অন্যতম সুনির্মিত সিনেমা আয়নাবাজি। যদিও স্টার্টিং বেশ স্লো, যা হয়তো দর্শকদের একটু কষ্ট দিলেও পরে দূর্দান্তভাবে ধরে রেখেছে স্ক্রিনে। আয়নাবাজি কেমন ?একথা বললে বলব ভালো, বেশ ভালো। যদি দর্শক হিসাবে বিবেচনা করি তাহলে দিবো ৮.৫/১০ আর সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে রেটিংঃ ৭/১০।


মন্তব্য করুন