Select Page

ইতিহাস ও রহস্যে ‘হডসনের বন্দুক’

ইতিহাস ও রহস্যে ‘হডসনের বন্দুক’

আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে থ্রিলার কাজ তুলনামূলক কম। একসময় বাণিজ্যিক ছবিতে থ্রিলারের কাজ হত সেটাও হাতেগোনা। পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ছবিতে ‘ক্ষতি পূরণ, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’-র মতো ক্লাসিক কাজও অত্যন্ত কম। চলতি সপ্তাহে থ্রিলারে নতুন একটি ছবি ‘হডসনের বন্দুক’ মুক্তি পেল। পরিচালনায় প্রশান্ত অধিকারী।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের গল্প থেকে ছবিটি নির্মিত হয়েছে সেদিক থেকে এটি সাহিত্যভিত্তিক ছবিও। গল্পটি পরিচিত অনেকের কাছেই। একটি নির্দিষ্ট সময়ের ইতিহাসের সাথে রহস্য মিলিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে।

ছবিটি ইতিহাসকে তুলে ধরেছে রহস্যের আবরণে। এনফিল্ড রাইফেল যেটির ইতিহাস আমরা ছোটবেলায় পড়তাম বইতে। ১৮৫৩ সালে ব্রিটিশরা উদ্ভাবন করেছিল রাইফেলটি যেটির মাথায় চর্বি লাগানো থাকত এবং একসময় ট্যাবু চালু হয় যে চর্বিযুক্ত অংশটি গরু ও শূকরের মাংস থেকে তৈরি। ঢাকার শেষ স্বাধীন নবাবের তিন ছেলেকেও এ রাইফেল দিয়ে হত্যা করা হয়। সেই বিরল একটি এনফিল্ড রাইফেল ও বিট্রিশ মিস্টার হডসনের একটি অসৎ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে ছবিটি নির্মিত। ঘিরে একজন গোয়েন্দার মাঠে নামা ও রহস্যের কিনারা করার মাধ্যমে ছবিটি পরিণতির দিকে যায়।

ছবিটি ২০১৩ সালে মুক্তি পাবার কথা ছিল কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যায় পিছিয়ে যায়। নয় বছর পর ছবিটি মুক্তি পেল। ছবিতে প্রথমত বলিউডের নাসিরউদ্দিন শাহকে নিতে চেয়েছিলেন পরিচালক সেটা সম্ভব না হওয়ায় টলিউডের সব্যসাচী চক্রবর্তী ও অঞ্জন দত্তকেও প্রস্তাব করা হলে তারা সময় দিতে পারেননি।

ছবির মেকিং-এ স্লো স্টোরি টেলিং-এর বিষয় আছে। তবে ভালো নির্মাণের চেষ্টা পরিচালকের ছিল।

প্রধান চরিত্র হডসনের ভূমিকায় একজন রাশিয়ান মাজিদ শিখালেভ অভিনয় করেছেন। গোয়েন্দার চরিত্রে লুৎফর রহমান জর্জ চলনসই আর চটপটে চরিত্রে মৌসুমী হামিদ বেশ ভালো ছিল। নয় বছর আগের ছবি হওয়ায় মৌসুমী হামিদের তখনকার লুকে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষণীয় এখনকার থেকে। মডেল অর্ণব অন্তুকেও ন্যাচারাল লেগেছে। মাহমুদুল ইসলাম মিঠুর অভিনয়ও তার সহজাত।

‘আমি রাতের ডাকপিওন
আমি গোলকধাঁধার ফেরিওয়ালা’
চমৎকার লিরিকের গান ছিল। গানটির গায়কীতেও রয়েছে ভিন্নধর্মী ব্যাপার। এছাড়া
‘আমি পাখি নই তবু আমি উড়ে যাব তোর কাছে’ এ গানটিও বেশ রোমান্টিক ছিল। মিউজিকটা ভালো ছিল ছবিতে।

লোকেশন সিলেটের হওয়াতে পাহাড়ি ফিলটা ভালোভাবে এসেছে। সৌন্দর্য ছিল লোকেশনে। ব্যাাকগ্রাউন্ড মিউজিকও যথেষ্ট ভালো।

‘হডসনের বন্দুক’ ভালো ছবি নির্মাণের একটা প্রচেষ্টা বলা যায়।

রেটিং – ৬.৫/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন