Select Page

এক মাসেই ‘দুষ্টু পোলাপাইন’কে অতিক্রম ‘বাগিচায় বুলবুলি’র

এক মাসেই ‘দুষ্টু পোলাপাইন’কে অতিক্রম ‘বাগিচায় বুলবুলি’র

ফাতেমা তুজ জাহরার ‘দুষ্টু পোলাপাইন’ এবং কোক স্টুডিওতে ঋতুরাজ ও নন্দিতার গাওয়া ‘বাগিচায় বুলবুলি’ দুটি ভিন্ন ধরনের গান। সম্প্রতি গান দুটির তুলনা আসলো প্রসঙ্গ ক্রমে, সেটা হলো ইউটিউব ভিউ। এ নিয়ে মতামতটি রেখেছেন নজরুলসংগীতের বিশিষ্ট শিল্পী, সংগীতশিক্ষক সুজিত মোস্তফা।

ইউটিউবে দেখা যায় পাঁচ মাস আগে আপ হওয়া ‘দুষ্টু পোলাপাইন’ ও এক মাস আগের ‘বাগিচায় বুলবুলি’র একই ভিউ। অর্থাৎ, নজরুল সংগীতের ফিউশনটি শিগগিরই আইটেম গানের ভিউকে অতিক্রম করে যাবে। দুটো গানই দেখা বা শোনা হয়েছে ৮৮ লাখের বেশিবার।

নিচে ফেসবুকে শেয়ার করা সুজিত মোস্তফার সে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

বেসিক বাংলা গান বা আমাদের নজরুল, রবীন্দ্রসংগীতে বর্তমান সময়ের দর্শকশ্রোতাদের আগ্রহ অনেক কম বলে বারবার শুনছি, জানছি। একটি পরিসংখ্যান এর উল্টো কথা বলছে। ঠিক এক মাস আগে অবমুক্ত হয়েছে কোক স্টুডিও বাংলা থেকে ঋতুরাজের গাওয়া কাজী নজরুলের খুবই শ্রুতিনন্দন একটি গান।

এটি একটি সেমি ক্ল্যাসিক্যাল ধাঁচের গজল। গানের কথা, বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল। ঋতুরাজের চমৎকার দৃঢ় সুরেলা কণ্ঠ এবং গায়কি শ্রোতাকে আবিষ্ট করেছে। গানের যন্ত্রানুষঙ্গ অসাধারণ। গানের দ্বিতীয় অংশে নন্দিতার কণ্ঠে হামিংটুকু মিউজিক হিসেবে মেনে নিতাম কিন্তু অন্য একটি গানের কথা সংযুক্ত করা সমীচীন হয়নি বলেই আমি বিশ্বাস করি। যে ভালো লাগা বা বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা চিন্তা করে এটা করা হয়েছে, সেটা ঋতুরাজের মূল গান, যন্ত্রানুষঙ্গ এবং চমৎকার মঞ্চ পরিবেশনাতেই অর্জিত হয়েছিল। আশা করব, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে ভবিষ্যতে আমরা বিশেষভাবে সতর্ক হব।

 এই লেখাটি একটি তুলনামূলক আলোচনার জন্য। যদিও তুলনামূলক আলোচনাটি কারও কারও মনঃপূত নাও হতে পারে। এই নজরুলসংগীতটি কোক স্টুডিওর ইউটিউব চ্যানেলে ১ মাসে ৮.৪ মিলিয়ন বার ভিউ হয়েছে। আজ অবধি প্রচারিত যেকোনো নজরুলসংগীত ভিউয়ের ক্ষেত্রে এই রেকর্ডের ত্রিসীমানায় কারও কোনো গান নেই। অর্থাৎ এই সময়ের দর্শকশ্রোতাকে গানটি প্রবলভাবে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

এখন একটু তুলনায় আসি। প্রায় তিন মাস আগে আমারই ছাত্রী ফাতেমা তুজ জাহরা ঐশীর কণ্ঠে তার একটি প্রবল জনপ্রিয় মৌলিক গান ‘দুষ্টু পোলাপাইন’ মুম্বাই থেকে চিত্রনায়িকা সানি লিওনি এবং আরও অনেক গ্ল্যামারাস নৃত্যশিল্পীসহযোগে ব্যাপক কোরিওগ্রাফি করে গান বাংলার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এই সময়ের ভীষণ জনপ্রিয় শিল্পী ঐশীর এই গানটির ভিউ হয়েছে ৩ মাসে ৮.৬ মিলিয়ন। *

অর্থাৎ একটি নজরুলসংগীতকেও দর্শক–শ্রোতা অধিকতর মূল্যায়ন করে গ্রহণ করেছে। মজার ব্যাপার হলো, ঐশী যে কী অসাধারণ নজরুলসংগীত গায়, সেটা অনেকেই জানে না। কারণ, এভাবে আয়োজন করে তার নজরুলসংগীত প্রচারের কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। হয়তো সেটা ভবিষ্যতে নেওয়া হবে। গান বাংলা বা কোক স্টুডিও বাংলা কী কী পরিকল্পনা করছে, সেটা তো আর আমি জানি না। আমি শুধু এই তুলনাটা এ জন্যই করলাম যে আমাদের জাতীয় কবির অসাধারণ গানগুলো যদি এ রকম আয়োজন করে সেগুলোর সাথে অযথা অতিরিক্ত বাণী সংযোজন না করে প্রকাশ হতে থাকে, আমাদের সংগীতাঙ্গন আবার মানসম্পন্ন এবং প্রকৃত গুণী শিল্পীদের পরিবেশনায় শুধু হারানো গৌরব ফিরে পাবে তা নয়; বরং আরও উজ্জ্বলতর হয়ে আধুনিকতার সংযোগে সারা বিশ্বের সংগীতামোদী দর্শক–শ্রোতাকে বিমোহিত করবে।’

  • ঐশীর গানটি প্রকাশ হয়েছে গত ২৮ ডিসেম্বর। অর্থাৎ পাঁচ মাস আগে।


মন্তব্য করুন