ওটিটির অসুস্থ থ্রিলার চর্চায় খাঁটি সোশ্যাল ড্রামা ‘দ্য লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’
পুরুষ মানুষকে এত কাঁদতে দেখে ভাল্লাগসে।
জেফার বা ‘দ্য লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’ ছবির লামিয়া এক পর্যায়ে যখন বলে, ওয়াট এবাউট মি? ইটস অলওয়েজ এবাউট ইউ। -সেটা চঞ্চল চৌধুরীকে খোঁচা হিসেবেও ধরে নেয়া যায়। যে ওনাদের মতন তারকা থাকলে জেফারের মতন নতুনরা সাইডলাইন হবেই৷ বাইরে নারী নির্মাতারা এসব ক্ষেত্রে নারী চরিত্রটাকে জাস্টিস করতে পারে, এখানেও লামিয়ার ক্যারেক্টরটা ফার মোর ইন্টারেস্টিং ভাবে লেখা যেত, একজন গো-গেটারকে স্পেস দিলে চঞ্চলের শাফকাত ক্যারেক্টরটার শেইডস বের হয়ে আসতো।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান’এও দেখেছি নতুন মেয়েদের থেকে ভালো কাজ বের করতে পারেন। জেফারের স্রেফ রিয়্যাকশন ভিডিও করার ক্লিপটার মতন ছবিতেও তার অ্যাকশন, রিয়্যাকশন সাবলীল ছিল। দেখতে সুন্দরের পাশাপাশি সংলাপ শুনতে ভালো লেগেছে৷ মাঝে মাঝে বলা ইংরেজিগুলোও স্বতস্ফুর্ত, মনে হয়নি স্ক্রিপ্টে আছে বলে লাগিয়ে দিতে হচ্ছে।
চঞ্চল চৌধুরীর কমিক টাইমিং বরাবরই ভালো, কাচে বাড়ি খাওয়ার দৃশ্যটায় সজোরে হেসেছি। বাংলা কন্টেন্টে কমেডি ওয়ার্ক করে না, তাই ওটার কথা আলাদা করে বললাম। স্টুডিওতে মনিটরের সাউন্ড অন রাখাটাও মজার, কিন্তু এই আড়ি পেতে শোনা প্র্যাকটিসটা পরে এতবার ইউজ হয়েছে যে কৃতিত্ব দিতে চাই না। গল্প ভালো, এয়ারপোর্ট, শাড়ি দু’টো জিনিসই স্ক্রিনপ্লেতে সুন্দরভাবে আনা হয়েছে৷ বাচ্চাদের দিয়ে অভিনয় করানো বরাবরই একটা চ্যালেঞ্জ, তাই আমি হলে এমনভাবে ব্যবহার করতাম যাতে তাদের সীমাবদ্ধ অভিব্যক্তি ধরা না পড়ে৷ তবে একটা দৃশ্যে ‘সব বুঝতে পারা’ মেয়েটার অভিব্যক্তি ভালো লেগেছে। আরেকটা দৃশ্যে তার একটা ডায়লগ বেশ মাথা ঘুরানো, ‘ভাইয়াকে বলবে, আমি কিন্তু সব বুঝতে পারি’ এটা কাকতালীয় না হলে যেটা বোঝার বুঝে নিয়েছি। গুড জব!
কিন্তু ‘দ্য লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামীতে অ্যাজ ইউজুয়াল: অফিস স্পেসে আলাপগুলো মেকি। ‘পার্ফম্যান্স ভালো’ ধরনের সার্ফেস লেভেলের ডায়লগ না দিলেও চলে৷ একজন ভালো ডিরেক্টর নন-এক্টরদের দিয়েও কাজ বের করতে পারে, তা না করে করলেন কক্সবাজারে শুটকি খোঁজা কমেডি। ওনার প্রায় সব কন্টেন্টেই ভালোর সাথে কিছু ল্যুজ সিন ওভারল ইম্প্যাক্ট নষ্ট করে, উনি ভাবতে পারেন ড্রামা খুব স্ট্রং পারছেন, একটু কমেডি দিলে ব্যালেন্স হয়ে যাবে৷ কিন্তু ড্রামা হয়ে গেছে মেলোড্রামা। বস তার জুনিয়রকে যেভাবে তার তথৈবচ অবস্থা ব্যাখা করছেন, তা বাংলা কন্টেন্টে সবকিছু স্পেল আউট করার পুরান প্রবণতাই, একজন কর্পোরেট লেভেলের ব্যক্তিত্ব এভাবে বলবে না৷ পুরা ফিল্মেই চঞ্চল বা শাফকাত সাহেবের ক্যারেক্টর গ্রোথ নেই। শারিরীক আকর্ষণকে চিত্রনাট্যে দুর্বলভাবে লেখা, সেই জাম্প করে যাওয়া… গ্র্যাজুয়াল ডেভলপমেন্ট দেখাতে ৫ মিনিটের একটা মন্টাজ হলেও চলে, সংলাপ লাগেনা, দেখানোর মুন্সিয়ানা থাকা লাগে, কিন্তু এক্সট্রা কষ্ট কেন করা?
ফলাফল, ছোঁক ছোঁক করা থেকে কাউকে পেয়ে যাওয়াটা কনভিন্স করলো না, গ্যাপ ফিল করতে যেই কারণ দেখানো হয়েছে, তাও সেই স্পেল আউট করে দেয়ার মাধ্যমেই। সব কন্টেন্টে একই জিনিস নিয়ে বলাটা ক্লান্তিকর। কেন করি, জানি নাহ
তারপরও, ওটিটির অসুস্থ থ্রিলার চর্চায় এই পিওর সোশ্যাল ড্রামা ‘দ্য লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’ একটা ব্রেথ অব ফ্রেশ এয়ারের মতন। ফারুকীর ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ও এজন্য ‘ঢাকা মেট্রো’র পাশাপাশি প্রিয় একটা সিরিজ। আর ‘দ্য লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’ ৮০ মিনিটের একটা নাটকের মতন। জলের গান’-এর পুরানো জনপ্রিয় গানটা আর আহমেদ সানীর নতুন গানটা আরাম লেগেছে। সাউন্ডপও এবার কোন সমস্যা নেই। ফাঁকিবাজি ডায়লগ সীমিত। আর একটু ঘষামাজা করলে আগের দিনের প্যাকেজ নাটক সময়ে অমিতাভ রেজা, গিয়াস উদ্দিন সেলিমদের চমৎকার কাজের মান এ উঠতে পারত। তবু যেন অনেকটা ওই সময়কে ট্রিবিউট দেয়া হল, সাথে আধুনিকতাকে ছুঁয়ে যাওয়া। I quite enjoyed it.
এমন ড্রামা কমেডি আরেকটু হলে ভালো লাগে…