কারো সফলতায় আপনার জ্বলে, কষ্ট লাগে, সেটার দায় আমাদের না: হিমেল আশরাফ
রাজকুমার’ গান, পোস্টার ও সামগ্রিকভাবে প্রচারণা কৌশল নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। যদিও ইতিবাচক মন্তব্য আসছে বেশি। এর সঙ্গে আছে পিআর ঘরানার সাংবাদিকদের অপেশাদার প্রচারণা। তা সত্ত্বেও সমালোচনা নিয়ে অস্বস্তি পরিচালক হিমেল আশরাফের। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেই দিলেন, কারো সফলতায় ব্যক্তিগত ভাবে আপনার জ্বলে, আপনার কষ্ট লাগে, সেটার দায় আমাদের না।
পড়ুন দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয় সেই পোস্ট-
“সিনেমার বিভিন্ন কন্টেন্ট সিনেমা মুক্তির আগে আলাদা আলাদা ভাবে প্রচার হয়, তবে সেটা কিন্তু সিনেমারই একটা অংশ। কেন গানটা এমন, কেন পোষ্টারটা এমন, কেন অমুক অভিনেতা এমন করল এইটার উত্তর আসলে সিনেমায় থাকে, ওই কন্টেন্টে না।
আমরা কিন্তু পুরো দুই আড়াই ঘন্টার একটা সিনেমা বানিয়েছি, শুধু একটা পোষ্টার বা একটা গান না। তাই চাইলেই আমি সিনেমার বাইরে যেয়ে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করতে কোন কন্টেন্ট দিতে চাই নাই। গল্পে যা আছে, সিনেমায় যা আছে আপনি হলে যেয়ে যেন তাই পান সেই চেষ্টা ছিল।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে গল্পের সিনেমা বানাতে পছন্দ করি। সুলতানা বিবিয়ানা, প্রিয়তমা কিংবা এই রাজকুমার, সবই গল্প নির্ভর সিনেমা। আমার প্রধান টার্গেট দর্শক মধ্যবিত্ত, যারাই আসলে আমাদের বড় অংশ, এর মধ্যে ফ্যমিলি দর্শক আমার প্রধান নিশাণা। তবে আমি চেষ্টা করি সব ধরনের দর্শকের পছন্দের কিছু রাখতে। যেমন ধরেন রাজকুমারের “বরবাদ” গান আর টাইটেল ট্র্যাক “আমি একাই রাজকুমারের” মধ্য আকাশ পাতাল পার্থক্য। দুটি গান একেবারে আলাদা রুচির মানুষের জন্য তৈরি। এক গান যার কাছে ভালো লাগবে, অন্যটা তার কাছে ভালো লাগার কোন কারন নেই। আপনি যখন একটি গান নিয়ে ট্রল করছেন সেটা আবার অন্য কারো কাছে সবচেয়ে পছন্দের! এই দুই দর্শকই কিন্তু টাকা দিয়ে আমাদের সিনেমা দেখবে, তারা দুই পক্ষই আমার জন্য জরুরী।
আমার সিনেমায় তথাকথিত ভিলেন থাকে, নায়কের বানিজ্যিক এন্ট্রি থাকে, নায়িকার এন্ট্রি ট্রিটমেন্ট থাকে, ফাইট থাকে, কমেডি থাকে। সব কিছুর পরে বড় করে যেটা থাকে সেটা গল্প, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক থাকে, প্রেম, পারিবারিক আবেগ ইত্যাদি। এখন কিছু অতি বোদ্ধা বলবেন প্রিয়তমার শেষের ৩০ মিনিট ছাড়া কি ছিল? শেষের ৩০ মিনিট ছাড়া যদি কিছুই না থাকতো তাইলে শেষের ৩০ মিনিত পর্যন্ত দেখলেন কেন? বিরতিতে বের হয়ে যান নাই কেন? আর শেষের ৩০ মিনিট এর পরিচালক কে ছিল, শেষের ৩০ মিনিটের প্রযোজক, অভিনেতা কে ছিল?
প্রিয়তমার সব-ই ছিল। ম্যাচ জেতা দিয়ে কথা, প্রথম ১৫ ওভার মারছেন নাকি শেষের ১৫ ওভার সেটা মূখ্য না। কারো সফলতায় ব্যক্তিগত ভাবে আপনার জ্বলে, আপনার কষ্ট লাগে, সেটার দায় আমাদের না। প্রিয়তমা কি ছিল জানতে চাইলে আপনার পাশের হল ম্যানেজারের কাছে প্রশ্ন করেন, যারা দিগুন তিনগুন টাকা দিয়ে রাজকুমার নিচ্ছে। কেন নিচ্ছে?
রাজকুমার সিনেমায় আসি, এই সিনেমা আসলে যা নিয়ে তার কিছুই আমি প্রচার করি নাই।
ওহ, প্রচার নিয়ে অনেক অভিযোগ আমার উপর। সব অভিযোগ সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশে প্রচার হওয়া উচিত একদম শেষের দিকে, সিনেমা মুক্তির আগে যদি আপনার হিরো হয় শাকিব খানের মত মেগাষ্টার। শাকিব খান কি সিনেমা করতেছে এইটা যারা হলের দর্শক তারা সবাই জানে, তাদের তিন মাস আগে থেকে জানানোর কিছু নাই। আমার দেশ ইস্যুর দেশ, নানান টপিক আসতে থাকে, আমরা আগের টপিক ভুলতে থাকি। বাইরের দেশে এ্যাডভান্স টিকেট বুকিং সিস্টেম থাকে, আগে থেকেই সিনেমার হাইপ তোলে, মানুষ সাথে সাথে সিনেমার টিকেট কিনে, হাইপটা কাজে লাগে। আমাদের দেশে টিকেট কাটে হলে যেয়ে, এক সপ্তাহ আগের উত্তেজনা আজকে তাকে সিনেমা হলে নাও নিতে পারে।
আমি মনে করি, সিনেমার প্রচারনা সিনেমা বা আমার হাইপ উঠানোর জন্য না, সিনেমার প্রচারনার মূল কাজ সিনেমার দর্শকদের সিনেমা হল মুখি করা। প্রচারের ব্যপারে এইটা আমার ভাবনা। এইটাই ঠিক বা ভুল আমি বলছি না। সব পরিচালক বা প্রযোজকের আলাদা আলাদা প্রচার প্লান থাকে। আমরা এটাতেই বিশ্বাসি, এটাতেই সফল।
আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রচার কোনটা জানেন? হল থেকে বের হয়ে আসা দর্শক। তারা যখন বলে সিনেমা ভাল, ওই সিনেমা হিট। তারা যদি বলে সিনেমা ভাল না, ওই সিনেমার কাম শ্যাষ। সিনেমার আগে আপনি কি আওয়াজ তুললেন, কি পোষ্টার ছাড়লেন, কি গান ছাড়লেন তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। আওয়াজে সিনেমা চলে প্রথম ৩ দিন। বাকিটা সিনেমার দৌড় ভাই। তাই আমার কাছে সিনেমাটাই বড়।
আমি জানি হল থেকে বের হওয়া প্রত্যেকটা দর্শক হবে আমাদের সিনেমার প্রচারক। প্রিয়তমা তারাই হিট করাইছে, রাজকুমারও তারাই হিট করাবে। কারন আমরা রাজকুমার বানিয়েছি সাধারন মানুষের জন্য এবং এই সিনেমা তাদের ভালো লাগবেই। আমি নিজে সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, আমি জানি আমাদের আবেগটা কোথায়।
আপনারা যারা আমাকে ওভার কনফিডেন্ট ভাবছেন তাদের সম্মান জানিয়ে বলি, আমি আসলে আত্নবিশ্বাসী। ২০০৬ সালে কলেজে থাকতে মিডিয়াতে পা দিয়েছিলাম। নানান ঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে, দেশ ছেড়ে প্রবাসী হয়েও এখনো সিনেমায় টিকে আছি ওই আমার আত্নবিশ্বাসের জোরেই ভাই। আর সাথে আছেন শাকিব খান আর আরশাদ আদনান। এই দুইটা মানুষ আমার উপর আস্থা রাখে, এটাই আমার জন্য অনেক বড় কিছু। এদের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ,এদুজন ছাড়া আমি না সিনেমা বানাতে পারতাম, না কেউ সে সিনেমা আমার দেখতো।
লিখি না, লিখি না করে অনেক কিছু লিখে ফেললাম, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রাজকুমার আপনাদের ভালো লাগবে, আপনাদের হাসাবে, কাদাবে,ভাবাবে। সিনেমা হলে আসেন, ভাল বাংলা সিনেমা দেখেন। শুধু রাজকুমার না, সব ভাল সিনেমা দেখেন।
আর কবে, কোন দিন সিনেমা বানাতে পারি কিনা জানিনা, তবে রাজকুমারই আমার জীবনের সেরা সিনেমা হয়ে থাকবে সেটা বলতে পারি। কথা দিচ্ছি আপনাদের ভাল লাগবে।
একটা প্রশ্ন রেখে শেষ করি, বলেন তো সিনেমার নাম রাজকুমার কেন?”