কিনার থেকে দেখা ‘রেডরাম’
উল্টো যাত্রার একটা রীতি উপন্যাসে কিছু কিছু লেখক চালু করেছিলেন। কেন্দ্রকে বাদ দিয়ে কিনার থেকে দেখার একটা চেষ্টা ছিল তাদের। একটু অন্যভাবে ভাবা কিংবা দেখানোর চেষ্টা। ভিকি জাহেদ নির্মিত প্রথম ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’-এ কিনার থেকে দেখা হয়েছে অপরাধ ও শাস্তিকে।
ভিকি জাহেদ অলরেডি জেমে পরিণত হয়েছেন ড্রা+মা ইন্ডাস্ট্রিতে। আপনি যদি সচেতন দর্শক হয়ে থাকেন তবে অনায়াসে তাকে অন্য নির্মাতাদের থেকে ভিন্নভাবে পাবেন বা আলাদা করতে পারবেন। এক্সপেরিমেন্ট করা, আগের কাজটি থেকে ভিন্নভাবে ভাবার একটা অবকাশ তিনি রাখেন সবসময়।
‘রেডরাম’-এ প্রথমে যে কাজটি করা হয়েছে টিমের পক্ষ থেকে তা হচ্ছে প্রচারণার নতুন কৌশল। ‘মার্ডার’-কে উল্টে ‘রেডরাম’ বলা হয়েছে। শুনতে ইউনিক লেগেছে আর এই ইউনিক জিনিসটাই দর্শকের মধ্যে নতুন আগ্রহের জন্ম দিয়েছে যার জন্য ইতোমধ্যে ফিল্মটি সাড়া জাগিয়েছে।
যা বলা হচ্ছিল কিনার থেকে দেখার চোখ ‘রেডরাম’-এ আছে। হত্যা, হত্যার ক্লু, সাসপেন্স, টুইস্ট, কেস সলভ হয়ে গেল ভেবেও নতুন করে আটকে যাওয়া এসব ছিল গল্পে কিন্তু গোয়েন্দা চরিত্রের নিশোর যে সাইকোলজিক্যালি তদন্ত করার ব্যাখ্যা সে দেয় সেখানে বডি ল্যাংগুয়েজকে দিয়ে হত্যার কিনারা করতে দেখা যায় তাকে। সেখানে সাসপেক্ট চোখের সামনে থেকে মরীচিকা হবার মতো কোনো কিছু ঘটছে কিনা বা নতুন করে চমকে দিচ্ছে কিনা সেটা ছিল গল্পের কিনার, কেন্দ্র ছিল অন্যকিছু যা ফিল্মের শেষে গিয়ে বোঝা যায়। কি সেটা? তা তো দেখেই জেনে নিতে হবে। ভিকি জাহেদের অন্য কাজগুলোর থেকে তাঁর প্রথম ওয়েব ফিল্মও যে নতুন এক্সপেরিমেন্ট হলো তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
অভিনয় তো থ্রিলারের প্রাণ, যা আপনি বাজনা দিয়ে বোঝাতে চান অভিনয়ে তার থেকে বেশি বোঝানোটাই আসল থ্রিল দেবে। এক্ষেত্রে আফরান নিশো টপ ছিল ফিল্মে। এক তৃতীয়াংশই তার দখলে ছিল। ক্লোজ শটের এক্সপ্রেশনগুলোতে তার অভিনয়ের শক্তি অবশ্যই বর্তমানে অনেকের থেকে তাকে শক্তিমান বলার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া নতুন চরিত্র তো বটেই তার জন্য। মেহজাবিনের নাম দেখে অনেকেই বিশেষত ভক্তশ্রেণি প্রশংসায় তাকে এগিয়ে রাখতে চাইবে কিন্তু এ ফিল্মে মনোজ প্রামাণিক দ্বিতীয় সেরা পারফর্মার হয়ে উঠেছে। মেহজাবিন ও সালহা নাদিয়া যৌথভাবেই সমান ভালো অভিনয় করেছে কারণ নাদিয়া বর্তমান প্রজন্মের ভালো অভিনেত্রী এবং আলোচনা কম পায় বলেই তার অভিনয়ের স্ট্রং দিকটা ফোকাস হয় না। মেহজাবিনের চরিত্রের লেন্থ বেশি ছিল এটাই শুধু তফাত। চতুর্ভুজ এ চরিত্রের বাইরে আজিজুল হাকিমের ব্যক্তিত্বপূর্ণ অভিনয় পুরনো চাল ভাতে বাড়ে প্রবাদকে সত্য করে দেয়। ফখরুল বাশার, শিল্পী সরকার অপু তাদের মতো।
সব ফিল্মেই কারিগরি দিক গুরুত্বপূর্ণ। বিজিএম, কালার কারেকশন যথেষ্ট ভালো ছিল কিন্তু সেটের দিক থেকে কিছু সমস্যা ছিল। টক শো বা টেলিভিশন রিপোর্টিং-এ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও যেসব দুর্বলতা দেখা যায় এখানেও ছিল এবং জনসাধারণকে দিয়ে অভিনয় করানোর যে গতানুগতিক চ্যালেঞ্জ থাকে এটাতেও তাই ছিল। ফিল্মের প্রথম ১ ঘণ্টার সাথে পরের ঘণ্টার নির্মাণ দূরত্বও লক্ষণীয়।
‘রেডরাম’ চরকি-র নতুন কাজ এবং ভিকি জাহেদের প্রথম ওয়েব ফিল্ম হওয়ায় দর্শক দেখছে এবং দেখবে। আলোচনা, সমালোচনায় এটির গুরুত্ব কী আছে সেটাও বের হয়ে আসবে।
রেটিং – ৭.৫/১০