Select Page

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহত, কী বলছেন তারকারা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহত, কী বলছেন তারকারা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল সারাদেশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জনের মতো শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আন্দোলনের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে সোহেল রানা, খিজর হায়াতসহ অল্প কজন শোবিজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কথা বললেও নিহত ও ছাত্রীদের গায়ে হাত তলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

ফেসবুকে চিত্রনায়িকা পরীমনি লেখেন, নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি মুনাফিক। কালোর উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তের ফোটা দেয়া একটি ছবি পোস্ট করে চিত্রনায়িকা বুবলী লেখেন, “শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে সিয়াম আহমেদ লেখেন, “আমার ক্যাম্পাস রক্তাক্ত কেন? শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝড়বে কেন?”

রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের কিছু গ্রাফিক্স করা ছবি পোস্ট দিয়ে তমা মির্জা লেখেন, কাদের আঘাত করছি? জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে আমরা আগের মতো দাঁড়াতে পারবো তো?

নারীর উপর আক্রমণ করা হচ্ছে এমন ছবি পোস্ট দিয়ে পূজা চেরী তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এ কেমন স্বাধীনতা। এই স্বাধীন দেশে নারীদের প্রতি এ আচারণ মেনে নেয়া যায় না। তীব্র নিন্দা জানাই। অপু বিশ্বাস লিখেছেন, “সহিংসতা কাম্য নয়।”

পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের একটি ভিডিও শেয়ার করে সালহা খানম নাদিয়া লিখেছেন, “জীবনটা ফিরিয়ে দিতে পারবেন?”

সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আইমান লিখেছেন, “আর কত রক্ত দিলে স্বাধীন হবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ?”

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালমান মুক্তাদির। এমন ঘটনায় বিব্রত বোধ করছেন বলেও জানান তিনি।

ফেসবুকে সালমান মুক্তাদির লেখেন, ‘এমন কোনো ছাত্র আছেন, যিনি হামলার শিকার হয়েছেন অথবা হলে ঢুকতে পারছেন না? আমি তোমাদের খেয়াল রাখব। তবে, লাখ লাখ মেসেজ বা পোস্টের মধ্যে তোমাদের ফিল্টার করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই যদি আপনাদের কোনো বন্ধু থাকে আমার বন্ধু তালিকায়, তাদের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় বিব্রত বোধ করছেন জানিয়ে সালমান মুক্তাদির আরও লেখেন, ‘এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে না পারার জন্য দুঃখিত। কারও যদি থাকার জায়গার প্রয়োজন হয় অথবা চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন হয়। আমি আছি। এইমাত্র কিছু ভিডিও দেখলাম, যেখানে অনেকেই তাঁদের হলে প্রবেশ করতে পারছেন না… যদি এটা যথেষ্ট না হয় তাহলে আবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি সত্যিই ভেঙে পড়েছি, বিব্রত বোধ করছি। জনপ্রিয় হয়েও কোনো কাজে না আসায় লজ্জাবোধ করছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সোচ্চার পরিচালক ও অভিনেতা সুমন আনোয়ার। তিনি গতকাল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘দেশটা তাহলে শুধুই আপনাদের, আমরা ধৈঞ্চা? আসলে যেখানে দায়িত্ব শব্দটা “ক্ষমতা” হিসেবে ব্যবহার হয়, সেখানে নাগরিক ধৈঞ্চা’ আজ সকালে তিনি আবার লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত ঢাকা উত্তেজিত দেশ, ঘুরে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ।’

সাউন্ড রেকডিস্ট ও নির্মাতা শারমীন দোজা আন্দোলন নিয়ে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথাগুলো, ‘এ-দেশের নাড়িতে-নাড়িতে অস্থিমজ্জায় যে পচন ধরেছে, তাকে এর একেবারে ধ্বংস না হলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না।’

অভিনেতা নিলয় আলমগীরও দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারাই একটা সময় দেশের হাল ধরবে। এত এত ছাত্রছাত্রী ভুল দাবি করতে পারে না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারকে যে সম্মান ও ভালোবাসা আপনি সব সময় দেখিয়েছেন, তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ…।’

নাট্য নির্মাতা মাহমুদ নিয়াজ চন্দ্রদীপ সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে কোটা সংসার আন্দোলন নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি সংস্কৃতিকর্মী? আপনি প্রগতিশীল? আপনি নিরীহ–নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে একটা শব্দও উচ্চারণ করেছেন!’

‘ওরা ৭ জন’ সিনেমার পরিচালক খিজির হায়াত খান লিখেছেন, ‘লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগকে আমাদের দেখিয়ে দেওয়ার জন্য এ দেশটা এই মুহূর্তে শুধু আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের। আপনাদের শিল্পকর্ম টাইম লাইন এ থাকল। একদিন এই দেশটা আবার স্বাধীন হবে জেনে রাইখেন।’

কোটা আন্দোলনের পর থেকে চুপ থাকলেও এবার সরব হলেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনি লিখেছেন, ‘সহিংসতা কাম্য নয়।’

পরিচালক শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘একদিন না একদিন সকলকেই তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করিতে হইবে।’ছবি: চরকি

পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘তবুও আমি কেলাইতে থাকি। সারাক্ষণ নিজেকে বাঁচিয়ে চলি সুবিধাবাদী হয়ে। ভুল সব স্নেহ, ভালোবাসা, প্রেম নিয়ে একটা বানোয়াট জীবনের দিকে ধাবিত হই। মনে মনে পৈশাচিক শান্তি পাই। বলি, কোন মায়ের বুক খালি হইল, সেটা বুঝে আমি করবটা কী? আমার সন্তান তো বিদেশে থাকে। কী প্রশান্তি।’ছবি: ফেসবুক

শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরব হয়েছেন নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্না। তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্রদের চুপ করানো যদি সহজই হতো, তাহলে পৃথিবীর অনেক বিপ্লবই শুরুতে থেমে যেত।’ছবি: ফেসবুক

একটি পোস্টে তরুণ গায়ক তাসরিফ খান লিখেছেন, ‘মানুষ হয়ে মানুষ পেটান, সামান্য কী বুক কাঁপে না? অধিকার চাইল যারা, তারাই-বা কী খুব অচেনা? দলের চেয়ে না দেশটা বড়, তাহার চেয়েও বড় মানুষ, এতই অন্ধ হলাম কবে, ফিরবে কবে মোদেরই হুঁশ? একটুখানি জিরিয়ে ভাবুন, দোহাই একটু আস্তে মারুন, ভাইয়ের গায়ে, বোনের গায়ে আঘাত করতে হাত কাঁপে না? মানুষ হয়েই কী লাভ হলো, আজ মানুষ লাগে খুব অচেনা!’
নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ ফেসবুকে লেখেন, ‘একের পর এক ভুল। সব পক্ষেরই ভুল। যুক্তি, চিন্তা, স্ট্যাটিকস—সব ভুলে বসে আছি সবাই। হুজুগ আর ক্ষমতা লড়ছে। সংলাপ বসে আছে অসহায় হয়ে।’

নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত লেখেন, ‘এরা বুক ফুঁলিয়ে যতই “জয় বাংলা” বলে চেঁচাক, ১৯৭১-র মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে ২০২৪-র আজকের এই ছাত্রলীগের কোন ধরণের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। আজ এরা চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, অর্থলোভী পঙ্গপাল ছাড়া কিছুই নয়। আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে এই পঙ্গপাল বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া কোন আদর্শের রাজনীতি আমি জানি না, তবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বা দর্শনের সাথে তার কোন মিল নেই, তা ঢের বলতে পারি। এই পঙ্গপাল পুষতে পুষতে কবে গোটা জাতিই চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, ও অর্থলোভী হয়ে যায়!’

চিরকুট ব্যান্ডের দলনেতা শারমিন সুলতানা সুমি লেখেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সকলের নিরাপত্তা ও সুদিন; সদ্বিবেচনার সঙ্গে নিশ্চিত করার বিনীত অনুরোধ রইল।’ শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে চিরকুটের ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ফেসবুকে এই প্রসঙ্গে শোবিজের মানুষদের নীরব থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতা মিশুক মনি।

অনেক শোবিজ তারকা আবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মিছিলে ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন।

লেখক ও নির্দেশক মাসুম রেজা ফেসবুকে লেখেন, ‘যারা একাত্তরে পরাজিত হলো তাদের পরিচয়ে নিজেদেরকে পরিচিত করছেন! কী দারুণ মেধাবী আপনারা! এত মেধা আপনাদের কোন প্রেতাত্মা সাপ্লাই করছে!’

অভিনেতা রওনক হাসান লেখেন, ‘কোটা সংস্কার হতেই পারে।..কিন্তু হাজারো সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনকে সুকৌশলে যেদিকে প্রবাহিত করা হলো তা দেখে এটাই স্পষ্ট এর মাস্টারমাইন্ড কারা।’

অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলতেও দ্বিধা করে না, আবার তারাই সরকারি চাকরির জন্য কোটা চায়, তাদের হাতে দেশ গেলে কি হবে সেটাই ভাবছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে, এমন দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ।

এদিকে কণ্ঠশিল্পী লুৎফর হাসান লিখেছেন, এক সময় যাদের সঙ্গে দেখা হলে ধন্য হতাম, যাদের ফেসবুকে যুক্ত থাকাটা গৌরবের ভাবতাম, যারা নাম ধরে ডাকলে আত্মহারা হতাম, যাদের সাথে একটা ছবি থাকলে টাইমলাইনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতো, যাদেরকে মনে করতাম আদর্শ, আজ দেখলাম সেইসব শিল্পী, কবি, লেখক, নেতা, অভিনেতা, ক্রিকেটার, অধিকাংশই বাঞ্চো*দ লেভেলের হিপোক্রেট, মানুষ হিসেবে একেবারেই তো যোগ্য না, শু য়ো রে র বা চ্চা বলে গালি দিতেও ঘেন্না লাগে।


Leave a reply