Select Page

খলনায়কের গান

খলনায়কের গান

দেশের চলচ্চিত্রে শুধু নয় বিশ্বের সব চলচ্চিত্রেই খলনায়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় নায়কের থেকেও খলনায়ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কিংবা নিজের চরিত্রের শক্তিতে ফোকাস থাকে তাঁর দিকে। আমাদের চলচ্চিত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি। খলনায়কের অনেক ধরনের গান হয় বাণিজ্যিক ছবিতে। এটা ভারতীয় উপমহাদেশে বেশি প্রচলিত। আমাদের ছবিতেও খলনায়কের অনেক ধরনের গান আছে।

খলনায়ক কখনো নায়িকার সাথে রোমান্স করে কখনো বা নিজের রাজত্বের শক্তি তুলে ধরতে নায়িকাকে গান করাতে বাধ্য করে এমনকি নিজেও ঠোঁটে গান ধরে আধ্যাত্মিক দর্শনে। খলনায়কের গানে এরকম রকমফের আছে। আমাদের বাণিজ্যিক ছবির সেরা খলনায়ক থেকে শুরু করে একটা অবস্থান তৈরি করা খলনায়কেরও লিপে গান আছে। বাছাই করা কিছু গান নিয়ে এ আয়োজন।

হুমায়ুন ফরীদি

তোমরা কাউকে বোলো না – বিশ্বপ্রেমিক
এ কি কথা শোনাইলি রে – বিশ্বপ্রেমিক
তেল গেলে ফুরাইয়া – ত্যাগ
কে বলে আমি ভালো না – সৎ মানুষ
শাম রে তোমার সনে – মানুষ
ঢাকা শহর দিয়া দিমু – সুখের আশায়
শামরে তোমার সনে – মানুষ
নাচো নাচো সব সুন্দরীরা – কালো চশমা
তু তু তু তু তারা – অপরাজিত নায়ক
চাবি দিয়া স্টার্ট দিয়া – দেশের মাটি
জাদুরে সোনারে – পালাবি কোথায়
চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার – চিরশত্রু
রসিক আমার মন বান্ধিয়া – অন্ধ আইন
আমি তোমারে দেখিয়া আজ – আগুন জ্বলে
সবাই পইড়া গ্যাছে গ্যাড়াকলে – বিদ্রোহ চারিদিকে
আইলারে কই গেলি – বিপ্লবী জনতা
এই যে দুনিয়া – সেয়ানা পাগল
মনে ঢিল মারিয়া দেখ রে – মিয়া বাড়ির চাকর
সাজিয়ে গুজিয়ে দে মোরে – বাংলার কমান্ডো
গরম তেলে বেগুন পড়লে – রাঙা বউ

হুমায়ুন ফরীদি খলনায়কের গানে সবচেয়ে এগিয়ে। অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয়ক্ষমতার পাশাপাশি এখানেও তিনি রাজত্ব করেছেন। তাঁর লিপে জনপ্রিয় এবং কালজয়ী গানের সংখ্যাও বেশি এ ক্যাটাগরিতে। মৌসুমীর বিপরীতে ‘তোমরা কাউকে বোলো না’ কালজয়ী ও জনপ্রিয় গান। এ ছবির ‘এ কি কথা শোনাইলি রে’ গানটিও অসাধারণ। ফরীদি গানটিতে গীটার বাজায়, নাচে একদম স্টাইলিশ ওয়েতে। এত স্টাইলিশ গান তেমন কোনো খলনায়কের নেই। দিতি-র বিপরীতে ‘শাম রে তোমার সনে’ গানটিও জনপ্রিয়। কালজয়ী গানের মধ্যে নিজের লিপে ‘কে বলে আমি ভালো না, চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার, তেল গেলে ফুরাইয়া, জাদু রে সোনা রে’ অন্যতম। ‘পালাবি কোথায়’ ছবির ‘জাদু রে সোনা রে’ গানটি কমেডিতে খলনায়ক ফরীদিকে অন্যভাবে তুলে ধরেছে। এমন গান আর কোনো খলনায়কের নেই। খলনায়কের গানে জনপ্রিয়তা ও কালজয়ী মাপকাঠিতে তিনিই সেরা।

রাজিব

সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম উপহার – শেষ খেলা

রাজিবের অসাধারণ অভিনয়ক্ষমতা ছিল। কিন্তু খলনায়কের গানে তিনি সংখ্যায় পিছিয়ে। ‘শেষ খেলা’ ছবির এ গানটি জনপ্রিয় এবং কালজয়ী করেছে তাঁকে। গানে তাঁর লুক ছিল স্মার্ট।

মিজু আহমেদ

যমের সাথে যুক্তি করে – ইতিহাস

মিজু আহমেদের খলনায়কী গান বেশকিছু আছে কিন্তু বেশিরভাগই অশ্লীল এবং লিরিক যথেষ্ট আপত্তিকর। ‘ইতিহাস’ ছবির এ গানটি কিছুটা আলাদা ছিল।

মিশা সওদাগর

রঙ্গিলা রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে – শেষ ঠিকানা
পাগলা হাওয়ার তরে – আগুন আমার নাম
কৃষ্ণ আইলা রাধার কুণ্ঞ্জে – ডেন্জার মিশন
খ্রিস্টান হইলে কফিনে – ক্ষমতার দাপট

মিশা সওদাগরের খলনায়কী গানও ৩৫ মিলিমিটার ও ডিজিটাল মিলিয়ে অনেক কিন্তু বেশিরভাগ গানই একইরকম এবং অশ্লীলতায় ভরা। তাছাড়া গানের লিরিকও ভালো না। ‘শেষ ঠিকানা’ ছবিতে নায়িকা কাঞ্চির সাথে তাঁর স্টেজ পারফরম্যান্সের একটি সুন্দর গান আছে ‘রঙ্গিলা’ শিরোনামে এ গানটি সেরা। গুরু জেমসের ‘পাগলা হাওয়ার তরে’ গানে মিশা পারফর্ম করেছিল ‘আগুন আমার নাম’ ছবিতে। দৃশ্যায়ন ভালো না হলেও জেমসের বলিষ্ঠ গায়কীর জন্যই উল্লেখ করার মতো। কায়া-র কণ্ঠে ‘কৃষ্ণ আইলা রাধার কুণ্ঞ্জে’ গানটির দুর্বল উপস্থাপন ছিল ‘ডেন্জার মিশন’ ছবিতে। মিশার গীটার বাজানোর স্টাইল ঠিক ছিল না। মনির খানের জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক গান ‘খ্রিস্টান হইলে কফিনে’ গানটিতে মিশা অভিনয় করেছিল ‘ক্ষমতার দাপট’ ছবিতে। এটা মোটামুটি মানের ছিল।

আহমেদ রুবেল

বিষম পিরিতি – কে অপরাধী

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আহমেদ রুবেল বাণিজ্যিক কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিল খলনায়কের ভূমিকায়। ‘কে অপরাধী’ ছবিতে ডলি সায়ন্তনী-র জনপ্রিয় গান ‘বিষম পিরিতি’-তে ছিল আহমেদ রুবেল। ভালো অভিনয় করেছিল।

সজীব তাহের

মর্জিনার বাপ মার্কামারা – প্রথম প্রেম

নব্বই দর্শকের খলনায়ক সজীব তাহের ‘প্রথম প্রেম’ ছবির এ গানটিতে স্টেজ পারফর্ম করেছিল। মজার বিষয় গানটির শিল্পী ছিলেন জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি-র উপস্থাপক হানিফ সংকেত। ঐ সময় গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

ডিপজল

আমার ইচ্ছা করে উড়াল দিয়া – দুশমন দরদী
দে আরো দে নেশার পানি – ধর
ঐ ছেমরি তোর কপাল ভালো – আম্মাজান
কি খেলা খেলিছ তুমি – ধর
বিয়ার সাজনী সাজো – দুশমন দরদী

নব্বই দশকের শেষের দিকে আসা খলনায়ক ডিপজলের বেশকিছু গান আছে। তাঁর লিপেই ছিল বেশিরভাগ। গানগুলোর বেশিরভাগই আপত্তিকর লিরিক এবং বাজে অঙ্গভঙ্গির ছিল। বেশিরভাগ গানের শিল্পী আগুন। দু’একটা ভালো গানের মধ্যে আছে ‘দুশমন দরদী’ ছবির ‘আমার ইচ্ছা করে উড়াল দিয়া’ এবং ‘ধর’ ছবির ‘কি খেলা খেলিছ তুমি’।

দেশের বাণিজ্যিক ছবিতে খলনায়কের গানে যেমন মানসম্মত গান আছে তার পাশাপাশি হতাশাজনক গানও আছে। দুই ঘটনার মধ্য দিয়েই এ গানগুলোকে আলোচনায় আনতে হবে।


মন্তব্য করুন