খুঁড়িয়ে চলা বাংলা নাটক আর কতদিন?
বাংলা নাটকের নামে গফ-বফের উপস্থাপনকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ভর ভাঁড়ামি বন্ধ করাটা এখন সময়ের দাবি। একটু খেয়াল করলে দেখা যায় অর্বাচীন পরিচালক তার অজ্ঞাতকুলশীল প্রযোজককে সঙ্গে নিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রী নামে কতিপয় নাসিকা-নেত্রহীন প্রতিবন্ধীকে ক্যামেরার সামনে জড়ো করে একটা ঘুটা দিচ্ছে। পরে তার প্রসেসিং থেকে নাটক নামের যে অখাদ্য বের হচ্ছে সেখানে বিনোদন থেকে বিরক্তি বেশি এটা স্বীকার না করে উপায় নেই।
ঐ এক বাংলা ভাষা বিকৃতকারী মোশাররফ করিম, ছেলে হয়েও মেয়েসুলভ ন্যাকামিতে তিক্ত এক সময়ের বিখ্যাত ব্ল্যাক ব্যান্ডের তাহসান, মিসেস ফারুকী তিশা এবং একই সঙ্গে নাম না জানা অগণন ছেলেমেয়েকে দিয়ে যা বানানো হচ্ছে তাকে নাটক সিনেমা যাই বলুন বাংলাদেশের স্পর্শ নাই।
আপনারা যাই মনে করেন গাঁড়ি হাঁকিয়ে প্রেম করতে যাওয়ার সামর্থ বাংলাদেশের সব ছেলেময়ের নাই। অন্যদিকে প্রাইভেট ভার্সিটির সব ছেলেমেয় থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, হাতাকাটা গেঞ্জি পরে মাথার চুল পাখির বাসা বানিয়ে শুধু প্রেমই করে না। তাদের কেউ কেউ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি পড়ালেখাও করে।
নাটক সিনেমাকে টিকে থাকতে গেলে হতে হবে জনমুখী। বিশেষ করে যেই নাটক নামী রেস্তোরাঁয় গাড়ি হাঁকিয়ে প্রেম করতে চাওয়া ছেলেমেয়ের গল্প বলে সেটা জনমুখী নয়। একে জনমুখী করতে গেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে হবে। ছেলেমেয়েদের ফার্স্টফুডের বদলে পেঁয়াজু, পুরি, সিঙ্গারা এবং ফুচকা খাওয়াতে হবে। ছেলেমেয়েদের ফটকা টাইপ পোশাক বদলাতে হবে। মেয়েদের স্লিভলেস টপস আর থ্রি-কোয়ার্টার পাল্টে সালোয়ার কামিজে আনতে হবে। এখানে যদ্দুর কারিকুরি দেখান যায় সেটা পরিচালকের ক্রেডিট।
পরিচালকদের মনে রাখা উচিত গ্রামবাংলার মেয়েরা একদম ভালো নেই। তারা ভাগ্য ভালো হলে এইচএসসির পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। প্রতিদিন সাত সকালে মা-বাপের কাছে বিয়ের হুমকি শুনে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাশতা না করে চোখ মুছতে মুছতে কলেজ যায় তারা। উপরন্তু রাস্তার মোড়ে মোড়ে বখাটে হায়েনাদের মোকাবিলা করতে হয় তাদের। আর এসব নাটক-সিনেমার সান্ধ্যকালীন দর্শক কিন্তু তারাই।
অন্তত দিনের যন্ত্রণা শেষে ঘুমানোর আগে এই মেয়েরা যখন রিমোর্ট হাতে নেয় কখনই ঐ সব মাথার পাখির বাসাওয়ালাদের ফালতু ফষ্টিনষ্টি তাদের ভালো লাগবে না। এখানে এমন কিছু দেখাতে হবে যেখানে তারা নিজেদের খুজেঁ নিতে পারে। আর সেটা করতে পারছে ভিনদেশী চ্যানেলগুলো। তারা স্বভাবসিদ্ধ কূটনামী, নষ্টামি আর ফাউ প্যাচালের সবই দেখাচ্ছে পর্দায়। মানুষ দিনকে দিন সেগুলোতে আসক্ত হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ সম্ভব না হলে অচিরেই দর্শকহীনতায় বন্ধ করে দিতে হবে বাংলা নাটক।
যে যাই মনে করেন আমি স্বীকার করতে বাধ্য মোশারফ করিম বাংলাদেশ শুধু নয় পুরো বিশ্বের মধ্যে একজন গুণী অভিনেতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে একটা গাইয়ের দুধ দেয়ার ক্ষমতা ৫ লিটার। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত তার স্তন ধরে টানাটানি করতে থাকলে তার পক্ষে যাই হোক অন্তত ৫০ লিটার দুধ দেয়া সম্ভব নয়। সংখ্যা বিচারে একই কথা তাহসান এবং তিশার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
প্রয়োজনে মঞ্চ নাটককে নতুন করে জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের অভিনেতা অভিনেত্রী তৈরি হওয়ার যে ক্ষেত্রগুলোকে সেগুলোকে মূল্যায়ন করাও জরুরী। নচেৎ পরিচালকের সঙ্গে কয়েকরাতের সুখশয্যা যে দুখঃযন্ত্রণাতুর দৃশ্য পর্দায় আনবে সেখান থেকে মুখ লুকিয়ে পালানো ছাড়া কোনো পথ থাকছে না দর্শকের জন্য।
আজ আকাশের চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে, তবু এখনও অনেক রাত। এই রাত যেন বাংলা নাটকে ভর করে সংস্কৃতি অঙ্গণে ধেয়ে আশা যন্ত্রণাবিক্ষেপের ইতিকথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বলতে মন চাইছে এক ফইন্নির ঘরে ফইন্নি, মারস্নাক্যারেহ,. তরে কুইট্টা আলু দিয়া রাইন্ধা ফেলুম ফইন্নির পুত এগুলো যে ফইন্নির ঘরে ফইন্নি চালাচ্ছে তাদের ভিক্ষার থালায় একটা কয়েন ফেলতে হবে এখনই। বলতে হবে কাজ করে খাও বাবা, জোয়ান তাগড়া লোক ভিক্ষা করে আর কদ্দিন? স্বাবলম্বী হও।