Select Page

গুড রিমেক ‘প্রেমী ও প্রেমী’

গুড রিমেক ‘প্রেমী ও প্রেমী’

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে জাজ মাল্টিমিডিয়ার এবার পরিবেশনা ছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এবং আরিফিন শুভনুসরাত ফারিয়া অভিনীত ‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমাটি। মূলত ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই সিনেমাটি নকলের অভিযোগে দুষ্ট ছিল।

সিনেমার কাহিনী একটি সরল প্রেমের গল্প, যেখানে প্রেমিকা ভালোবাসার মানুষকে নিজের মনের কথা বলার জন্য ৮ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ভালোবাসার মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য কলকাতার পথে রওনা দেয়। এরপর ঘটনাক্রমে আরিফিন শুভর সাথে দেখা হয়, তারপর এগুতে থাকে ঘটনাটি।

সিনেমার এই কাহিনী দেখার পর হয়তো আপনি বলতে পারেন এটা তো দেব ও কোয়েল মল্লিক অভিনীত ‘মন মানে না’ সিনেমার নকল। কেউ আবার বলতে পারেন কার্থি ও তামান্না ভাটিয়া অভিনীত তামিল রোড সিনেমা ‘পাইয়া’ এর নকল যার বাংলা রিমেক ‘জানেমান’। কিন্তু সিনেমাটি দুটির কোনটা থেকেই বানানো না। সিনেমাটি অ্যামি অ্যাডামস ও ম্যাথু উইলিয়ামের আমার অনেক পছন্দের আমেরিকান রোমান্টিক সিনেমা ‘লিপ ইয়ার’ এর আন অফিশিয়াল কাট কপি পেস্ট অর্থাৎ আন অফিশিয়াল রিমেক। চলুন একটু দেখা যাক কেমন রিমেক করেছে, ভালো কিছু পেলাম কী? নাকি সেই আগের মত করেই চলছে বাংলা সিনেমাতে নকলের মহোৎসব।

সিনেমাটি যেহেতু আমেরিকান সিনেমা থেকে রিমেক করা তাই আমাদের দেশের উপযোগী করার জন্য ফাইটিং ও গান জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গানগুলো বেশ ভালো লেগেছে, তবে প্রথম দুটি গান বলা যায় জোর করে সিনেমাতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষের গানগুলো ব্যাকগাউন্ডে সিনেমার দৃশ্যের সাথে বেশ ভালোভাবে মিলে ছিল এবং গানগুলো বেশ উপভোগ্য লেগেছিল তখন। সিনেমাতে ভালো আর একটি দিক ছিল লোকেশন ও ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নেওয়া লং শটগুলো। এছাড়া ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল বেশ ভালো।

অভিনয়ের দিক থেকে বলা যায় পুরো সিনেমা দুজনের উপর ফোকাস করা ছিল। আরিফিন শুভ ও নুসরাত ফারিয়ার উপর। নুসরাত ফারিয়া এই সিনেমার ক্ষেত্রে ছিল লিড রোলে, আরিফিন শুভ মূলত সাপোর্টিং ক্যারেক্টারের ভূমিকায় থেকে ফারিয়ারকে টেনে নিয়ে চলেছে।

আরিফিন শুভ অভিনয়ের থেকে মূলত এক্সপ্রেশন দিয়ে মানুষের মন বেশি জয় করেছেন বলে আমি মনে করছি। ফারিয়ার প্রতি তার ভালোবাসা কিংবা পুরোনো ভালোবাসার স্মৃতি রোমন্থন করার সময় তার চোখে কষ্টের ছায়া খুব দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ফাইটিং দৃশ্যে তিনি বারাবর ভালো ছিলেন, তাই ফাইটিং নিয়ে বলার কিছু নেই তার ক্ষেত্রে। তবে গান বা নাচের সময় তার দু-হাত প্রসারিত করে শাহরুখ খান হবার চেষ্টা বরাবারের মত এবারো দৃষ্টিতে লেগেছে। আরিফিন শুভর বোঝা উচিত, সবাইকে এক স্টাইলে মানায় না।

সিনেমার মূল ফোকাস যার উপর ছিল তিনি ছিলেন নুসরাত ফারিয়া। বলা যায়, তার গন্তব্যের উপর ও তার ভালোবাসার মানুষের কাছে পৌছানো নিয়েই পুরো গল্পের অবতারণা। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র তাই নুসরাত ফারিয়া। আমরা মতে (অন্যদের মত ভিন্ন হতে পারে), এই চরিত্রের জন্য নুসরাত ফারিয়ে পারফেক্ট কাস্টিং না। সিনেমাতে ফারিয়াকে ওভার স্মার্ট, গ্ল্যামারাস করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সিনেমার দৃশ্য ও সিচুয়েশন অনুযায়ী এখানে দরকার ছিল এমন কাউকে যার চরিত্রে একই সাথে স্মার্ট এবং চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটে উঠবে। মূল সিনেমার প্রধান চরিত্রে থাকা অ্যামি অ্যাডামসের অভিনয় বা এক্সপ্রেশন দেখলেই বুঝবেন এখানে কেমন চরিত্র দরকার। এছাড়া হুটহাট করে চিৎকার করে ওঠা কিংবা অসহায় মূহূর্তে ফারিয়ার গলার স্বর কোনটাই সিনেমার অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। যেটা প্রেমী ও প্রেমী সিনেমার সব থেকে বড় উইক পয়েন্ট।

পুরো সিনেমাতে বেশ কিছু দৃশ্য ও সংলাপে ছিল অসাঞ্জস্যতা। হয়তো এই খুটিনাটি ভুলগুলো খুব একটা চোখে পড়ার মত না, তারপর ও সংলাপ বা দৃশ্যায়নের সময় এসব দিক খেয়াল করা উচিত।

– বলা হয়েছে আবহাওয়া খারাপ এবং যখন চট্টগ্রামে ফ্লাইট ল্যান্ড করে তখন বাইরে অনেক বৃষ্টি পড়ছিল, প্লেনের জানালা দিয়েই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ফারিয়া বাইরে বের হয়ে যখন গাড়ি খোঁজ করে তখন বাইরে বৃষ্টি তো দূরে থাক রাস্তার কোথাও বৃষ্টির নাম নিশানা ছিল না।

– দাদার আমলের গাড়ি এবং দাদা শুরু থেকেই বান্দরবানে থাকে। মজার ব্যপার হল গাড়ী রেজিস্ট্রেশন করা সিলেট থেকে। কথা হল দাদা চট্টগ্রাম থেকে রেজিস্ট্রেশন না করিয়ে সিলেট থেকে করিয়েছে ব্যাপারটা বেশ বেমানান।

– ফারিয়া কত সুন্দর করে বাংলাদেশে নেমে গেলো, আমার জানা নেই তার ভিসাতে কি বাংলাদেশ ট্রানজিট ছিল নাকি? না হলে এতো ইজি ইন্ডিয়ার ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে ঘোরাঘুরি করল। ওকে ধরে নিলাম সিনেমার জন্য ভিসা লাগে না।

– বান্দরবান, ঢাকা, বান্দরবান লেখা ছিল টিকেট কাউন্টারে কিন্তু দৃশ্যায়ন করা হয়েছে ঢাকার ৩০০ ফিট রাস্তায়, যেখানে আবার লেখা মালুম সিটি, ঢাকা। এসব তো একটু দেখা উচিত তাই না? অন্তত লোকেশন তো ঠিক রাখবেন?

– ভালো কথা বান্দরবান থেকে বাসে উঠলেন কিন্তু বাসটা আবার হল চট্টগ্রাম-ঢাকা-কোলকাতা। কথা হল তাহলে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম কী করে গেলো?

– ইন্ডিয়াতে যে বাংলদেশি টাকা পাওয়া যায়, জানতাম না। শুভকে কী সুন্দর বলল, এই নাও ৩৫ হাজার টাকা। মেক সাম সেন্স ম্যান, হয় ডলার দিবে বা রুপি দিয়ে বলবে এটা ভাঙ্গিয়ে টাকা করে নিও। এতোটুকু ভাই করতে পারেন। মানুষ হলে হাসাহাসি করে, আপনি না দেখেলো আমরা দেখি।

এতসব ভুলের পরও, ‘প্রেমী ও প্রেমী’-কে গুড রিমেক বলা যায় ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লিপ ইয়ার’ মুভির। এসব খুটিনাটি বিষয় ও প্রপার কাস্টিং এর দিকে আরো বেশি নজর দেওয়া উচিত। মোটের উপর মেকিং ও প্রেজেন্টেশন সুন্দর থাকার কারণে সিনেমাটি মোটামুটি ভালো বলা যায়। তবে আমাদের সাউথ কিংবা হলিউড সিনেমা থেকে কাহিনী না নিয়ে মৌলিক কাহিনী নির্ভর সিনেমা নির্মাণের দিকে বেশি মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ হলিউড বা সাউথের প্রযুক্তি ও সেই মানের সুবিধা আমাদের এখানে এখনো অপ্রতুল। তাই আমাদের নিজেদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চিত্রনাট্য ও কাহিনীর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ মৌলিক চলচ্চিত্রের একটা জোয়ার চলছে বলা যায় আমাদের চলচ্চিত্রে, সেটিকে নষ্ট না করে বরং আরো বেশি মৌলিক সিনেমা নির্মাণ করা উচিত।

রেটিং : ৬.৫/১০


মন্তব্য করুন