
‘গুলমোহর’ যেমন
বেশ ভাল!
কোন হাইলেভেল টুইস্ট নাই, কোন মিস্ট্রি থ্রিলারও না বা না কোন মার্ডার মিস্ট্রি। শাওকী তার ‘তাকদীর’ বা ‘কারাগার’কে আলাদা রেখেই ‘গুলমোহর’ বানাতে পেরেছেন, এটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। প্ল্যাটফর্মের চাপে সিরিজ বানালেই থ্রিলার হতে হবে – সেইটা স্ক্রিপ্টে অন্তত ফিল করা যায়নি। অন্তত আট থেকে দশটা সিন এমন আছে যেগুলো ‘ঝুলে গেছে’ বা ‘বোরিং’ বলতে পারে কেউ৷ কিন্তু এই সিরিজের ভাইভটা শুরু থেকেই এমন, একটা সময় পর আর একই রিদমে যেতে সমস্যা হয় না। ‘কারাগার টু’ আমার খুব ভাল লাগেনি, ‘গুলমোহর‘ সেদিক থেকে একটা জনরা রিলিফ বলতে পারি।

গল্পটার শেকড় বর্তমান সময়ের অনেক আগে, আমাদের এই ভূখণ্ডের একটা গুরুত্বপূর্ণ, অবিচ্ছেদ্য ইতিহাসের সাথে জড়িত, সেটা মাঝের দিকে জানা যায়৷ তবে শুরুটা হয় বাবা মারা যাওয়ার পর গুলমোহর নামক বাড়ি ও বাকি সম্পত্তি নিয়ে তিন সন্তানের বিবাদ নিয়ে। কেউ হয়তো কারো অধিকার নষ্ট করছে না, তারপরও একটা ব্যক্তিগত, চাপা ক্ষোভ যেন দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে থেকেই যায়। এরমধ্যে আগমন চতুর্থ ভাইটির, যে কী না বন্ধুকে হত্যার দায়ে কিশোর সংশোধনে থেকে এসেছে।
আর যাকে ঘিরে এই বাড়ির মালিকানার পত্তন, সন্তানদের মা গুলবাহার ধীরে ধীরে জ্যোতি কমতে থাকা চোখেই দেখছেন এই প্রতীয়মান বিবাদ। এখানে মৃত তালুকদারের প্রতি আছে এলাকার মানুষের ক্ষোভ, আছে মারাত্মক রকম ঘৃণা। এসবের মধ্যে এলাকার পরবর্তী তালুকদার হতে যাওয়া মেজো সন্তানের ছেলে হারিয়ে যায়।
মারুফ প্রতীক নামটা দেখেই স্বভাবতই নিজের ভাল লাগার কথা। শাওকীর সঙ্গে রাইটিংয়ে বেশ ড্রামাটিক কিছু মুভ এস্টাবলিশ করেছেন হয়তো। শাওকী অনেকটা ওয়েস্টার্ন সাইডবারে তার মেকিংকে দেখেন, সেখানে মারুফ প্রতীক হয়তোবা শেকড়ের খোঁজ করেছেন৷ বিজিএম মোটামুটি। ক্যামেরায় প্রশংসনীয় বিশেষ করে কবুতরের পেছনে ছোটার সিনটায়।

সারা যাকেরকে নিশ্চল লেগেছে, অন্ততঃ শেষপর্বে আরো এক্টিভ আশা করেছিলাম। মোস্তাফিজুর নুর ইমরান ভাল অভিনেতা, এখানেও ভাল, তাকে এন্টিরোলেও নির্মাতারা ভাবতে পারেন। সুষমার স্পেস কম ছিল পারফরম্যান্স হিসেবে। সারিকা সাবা তার ব্যাকগ্রাউন্ড কম্পারিজনে বেশ ভাল। ইন্তেখাব দিনার ততটাও ক্যারেক্টার অনুসারে ইমপ্যাক্ট ক্রিয়েট করতে পারেননি।
তবে খুব ভাল করেছে জিশান, সিরিজের সেরা পারফরম্যান্স তার জোন অনুসারে। বেশি এক্সপেকটেশন ছিল শাশ্বতের ক্যারেক্টারটায়, প্লেসমেন্ট ঠিকঠাক, পারফরম্যান্সও ভাল। তবে এই ধরণের অভিনেতা পেলে নির্মাতা যে বাড়তি কিছু করিয়ে নেন, সেটা নিতে পেরেছেন বলে মনে হয় নি। অল্প শিডিউলে উনাকে সিন করিয়ে নেয়া হয়েছে, খুব চ্যালেঞ্জিং কিছু হবার কথা না।
সিরিজের নেগেটিভ দিক স্ক্রিনপ্লেতে এর মূলগল্পটা ততটাও ভালভাবে আনতে না পারাটা। যে শেকড়ের গল্প বলা হয়েছে, সেটা ভাল লাগছিলো। কিন্তু কোথাও যেন যেতে গিয়েও পারিনি। যে গ্রামবাসী এত ঘৃণা করে এই বাড়ির লোকদের, এক জানাযা ছাড়া তাদের ইন্টারেকশন পাইনি। দুইটি বাড়ি আর একটু থানাতেই যেন শেষ হয়ে গেলো সবটা। যে ফ্ল্যাশব্যাকগুলো অতীতের পাপ সামনে আনছে, সেগুলোতে খুব একটা টাচড হতে পারিনি অভিনেতাদের কান্নার মত।
রেটিং : ৭/১০