গোলাম মামুন: জুতসই স্পিন-অফ ও গল্পের প্রাসঙ্গিকতা
শিহাব শাহীন প্রথম স্পিন-অফ সিরিজ বানান ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সেই সিরিজ নিয়ে তুমুল সাড়া পড়েছিল, কিন্তু অ্যালেন স্বপন চরিত্রটি শিহাব শাহীনের নিজের সৃষ্টি ছিলো। এবার তানিম রহমান অংশুর ‘বুকের মধ্যে আগুন’ এর পুলিশ অফিসার গোলাম মামুনকে নিয়ে স্পিন-অফ বানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে ওয়েব সিরিজ কিংবা ফিকশনে স্পিন-অফ খুব সে অর্থে নেই। এর ভেতর শিহাব শাহীন পরপর দুটো স্পিন-অফ সিরিজ বানিয়ে আলাদা বিশেষত্ব পেয়েছেন বলা যায়। ওয়েব সিরিজ ‘গোলাম মামুন’ হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছে ১৩ জুন মধ্যরাতে।
স্পিন-অফ সিরিজ হলেও ‘গোলাম মামুন’-এর গল্পটি গতানুগতিক চরিত্র নির্ভর ফিকশন নয়। অয়ন চক্রবর্তীর এ গল্পে দেখা যায় পুলিশ অফিসার গোলাম মামুনকে অভিযুক্ত করা হয় নাসির নামে এক বিপথগামীর হত্যার জন্য। একই সময়ে একে একে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় গোলাম মামুনের কলিগ সাকিব আর তার বউ সাংবাদিক তানিয়া। এই হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ অভিযোগের আঙুল উঠে গোলাম মামুনের দিকে, একজন অন ডিউটি পুলিশ অফিসার গোলাম মামুনকে কোর্টে হাজির করা হয়। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান, পলাতক গোলাম মামুন একে একে পলাতক অবস্থাতেই অনুসন্ধান করতে থাকেন এতগুলো হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র। এক পর্যায়ে গিয়ে হত্যাকাণ্ডগুলোর সাথে কানেকশন খুঁজে পান তার দুলাভাই, অপর এক পুলিশ অফিসারের হত্যাকাণ্ডেরও। রহস্য উদঘাটন করতে মামুন গিয়ে পড়েন বেইমানি, অবিশ্বাস আর তার আশপাশের মানুষের মুখোশের কবলে। এই মুখোশধারী মানুষগুলোর কবল থেকে তিনি কি উঠে দাঁড়াতে পারবেন? নাকি তার অপর কলিগ চৌকষ অফিসার রবিনের হাতে গোলাম মামুনকে ধরা পড়তে হবে। রবিন ও গোলাম মামুন কি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি বন্ধু আর গোলাম মামুনই বা এতগুলো হত্যারহস্যের কুল-কিনারা করতে পারবেন কিনা এ সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায় সিরিজটিতে।
সিরিজটির স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন শিহাব শাহীন ও মেজবাহ উদ্দিন সুমন। সিরিজের প্রথম দৃশ্যটাই মর্মান্তিক। একটা বাচ্চা মেয়ে তার মৃত মায়ের শুয়ে থাকার গল্প বলছে ফোন কলে। এ দৃশ্যের অবতারণা ঘটলেই একটা বিষাদ এসে হাজির হয়। সিরিজে অনেকগুলো ঘটনাকে একত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এবং সিরিজের বিশেষত্বই এই যে এই একের পর এক জুড়ে দেয়া ঘটনাগুলো শেষ অবধি একটা প্যাটার্ন ধরে রেখেছে, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেনি মোটেও। শিহাব শাহীন গল্পটাকে একটা ওয়াইড ফ্রেমের গল্পরূপে তুলে আনতে চেয়েছেন। তবে সেটা করতে গিয়ে মূল গল্পের বাইরে সারকামফারেন্সের সাথে সম্পর্কিত যেসব ইস্যুকে ছোট ছোট ডায়ালগে গল্পের ভেতর নিয়ে আসতে চেয়েছেন সেসবের কিছু কিছু অংশ ভালো ছিলো, সবটাই নয়। তিনি চেষ্টা করেছেন ইস্যুগুলোকে কাভার করতে, কিন্তু প্রেজেন্টেশনটা সেভাবে হচ্ছিল না। যেমন, দুই ঘণ্টা লোডশেডিং-জাতীয় গ্রিডে সমস্যা এই লাইনগুলো দিয়ে ন্যাশনাল ইস্যু কাভার করার চেষ্টাটা ভালো, কিন্তু এমন একটা ফ্ল্যাটে আইপিএস বা জেনারেটর না থাকাটা অস্বাভাবিক। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ‘Stop your outh’ টাইপের শুকনা জোকসগুলো ভালোই। আবার প্লট টুইস্টগুলো খুব বেশি জোরদার মনে হয়নি। মিলনের কোর্টে গিয়ে ফাইল নেওয়ার ওই প্লটটা দূর্বল ছিলো। মামুনের গাড়ি নিয়ে কোর্টে অপেক্ষা করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
আবার মামুনের দুলাভাইকে খুন করার প্রশ্নে মামুন যে যুক্তিটা দাঁড় করিয়েছেন সেটাও দূর্বল। মারার দরকার যদি দুলাভাইকেই থাকতো তাহলে মামুন যাওয়া অবধি অপেক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা ছিলো কেন? মামুনের দুলাভাই-বোনের মেরিটাল রিলেশনে ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের একটা আনকমন ন্যারাটিভ সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাও প্রশংসনীয়। ‘যদিও এই পৃথিবীতে সবকিছু রিয়েল না, মুখোশ আছে। তবুও আই উইল ট্রাস্ট ইউ’- অথবা ‘ভয় পেয়ে ডালের আগায় না গেলে একটাও পাকা ফল পাবা না’ প্লটের চরম মুহূর্তগুলোয় এই ডায়ালগগুলো স্ক্রিনে জীবন্ত আর রিয়েলিস্টিক রাখছিলো। শিহাব শাহীন ক্যারেক্টারগুলোকে ভায়োলেন্স এর সাথে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য এখানকার বেশিরভাগ সিরিজের যে অহেতুক ধুমপান, মদ্যপানের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া তার বাইরেই একটা গল্প বলেছেন।
উপমন্ত্রীর ছেলের মৃত্যুতে কোরান তেলাওয়াতের দৃশ্য সুন্দর। কিন্তু মৃতদেহের পাশে কোরান তেলাওয়াত আরো ফাস্ট হয়। চট্টগ্রাম পোর্টে আগুন, স্বর্ণ চোরাচালান, দেশের অস্থিরতা এসবে বড় স্বার্থ জড়িত; এই স্বার্থগুলো একে অন্যের সাথে আবার সংশ্লিষ্ট এসব ইস্যুকে শাহীন কাভার করেছেন, রীতিমতো ক্যারেক্টারের মুখ দিয়েই এসব কথা বলিয়েছেন। কিন্তু ‘হুকুমাত’ নামে আরোপিত এক আইডিওলজির নাম দিয়ে এসব সারফেস লেভেলের কথা বলাটা মূলত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অথরিটির ব্যর্থতাকেই ঢেকে দেয় সে ব্যাপারটাও আমাদের মাথায় রাখা উচিত।
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব অভিনয় করেছেন ‘গোলাম মামুন’ চরিত্রে। অপূর্ব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। ‘বুকের মধ্যে আগুন’ সিরিজের রেফারেন্সেই তার চরিত্র নিয়ে এই স্পিন-অফ। অপূর্ব সেই পূর্বের রেশ ধরে রেখেছেন তার অভিনয়ে। অপূর্বর অতি অভিনয় নেই, অ্যাকশন দৃশ্যগুলোয় করেছেন দারুণ পারফরম্যান্স। অপূর্বকে অ্যাকশনে দর্শক সেভাবে আগে দেখেননি। তাই অপূর্বর এই নতুন ধাঁচে স্ক্রিনে হাজির হওয়াটা দর্শকদের বিশেষ করে অপূর্বর ডাই-হার্ড ফ্যানদের কাছে একটা চমক। তবে একশন কিংবা থ্রিলিং মোমেন্টের বাইরে অপূর্বকে নির্জীব মনে হয়েছে কিছুটা। কিন্তু সাবলীল ডায়ালগ ডেলিভারি আর বডি ল্যাংগুয়েজের কারণে ওটা বিশেষভাবে চোখে পড়ার কথা নয়। তার চুল ট্রিম করে নতুন বেশে আবির্ভূত হওয়ার মুহূর্তটুকু বাংলা ওয়েব সিরিজেই দারুণ এক ট্রানজিশনের উদাহরণ। ইমোশন-দৃঢ়তা-ভাঙা-গড়া কোনকিছুতেই কমতি ছিলো না তার।
পুলিশ অফিসার রবিনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। বর্ষণের এই নিয়ে পরপর তিনটি সিরিজে (১৬.৫, কালপুরুষ, গোলাম মামুন) কপ ক্যারেক্টারে দর্শকের সামনে আসা। তিনটি সিরিজে তিনটি আলাদা আলাদা ক্যারেক্টার, আলাদা রোল, আলাদা এপেয়ারেন্স, আলাদা ভূমিকা, আলাদা লুক. অভিনয়ের বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে বর্ষণের পারদর্শীতা নিয়ে সন্দেহ রাখার সুযোগ নেই। গোলাম মামুনেও সমানতালে অপূর্বর প্যারালালি অভিনয় করে গেছেন তিনি। অ্যান্টাগনিস্ট ক্যারেক্টার এ রবিনের নিষ্ঠুরতা দেখে আলাদা করে প্রোটাগনিস্ট ক্যারেক্টার মামুনের প্রতি দর্শকের যে সিমপ্যাথি জন্মায়। আবার অন্যদিকে তাকে শো রান করতে হয় ডিপার্টমেন্টে খুবই আস্থার জায়গায় থেকে। সব মিলিয়ে বর্ষণ আরো একবার প্রমাণ করলেন নিজের ক্যাপাবিলিটি। তবে কিছু জায়গায় ডায়ালগ ডেলিভারিতে আরো নজর দেয়া প্রয়োজন ছিলো। মামুনের সিরিঞ্জ পুশের জায়গাকে মশার দাগ বলা কিংবা ‘AI generated’ কে ‘AI generate’ বলা বেশ কানে লাগে।
সাবিলা নূর অভিনয় করেছেন পুলিশ অফিসার রাহীর চরিত্রেয়। চরিত্রটা এই সিরিজে ভীষণ ইন্টারেস্টিং রোল প্লে করে। একটা ক্ষ্যাপাটে ধাঁচের পুলিশ অফিসার থেকে আবার নরম স্বভাবের সহকারী কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রাহীর একটা অজানা পরিচয়ে হাজির হওয়া সবকিছুতেই সাবিলা পেশাদারীত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তবে তার আরবান বাংলাদেশি এক্সেন্টে কথা বলাটাই ছিলো অ্যাট্রাকটিভ। এ গল্পে সাবিলা নূরের অভিনয়ে যেটুকু দেয়ার ছিলো তা তিনি দিয়েছেন। তবে শেষমুহূর্তের দূর্ঘটনার পূর্বের সময়টায় তার ভেতর থেকে আরো বেশি ক্ষিপ্রতা আশা করেছিলাম।
ট্যুরিস্ট পুলিশ অফিসার মিলনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজমুস সাকিব। সাকিব নিয়মিত বিরতিতে অভিনয় করেন। তবে স্পেস খুব বেশি পান না। এ সিরিজে স্পেস পেয়েছেন। মিলন চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষেত্রটা সচরাচর গল্পে নতুন মাত্রা দেয়ার মতো। যাতে গল্পের উৎকর্ষ বাড়ে। সেদিক থেকে সাকিব আরো ভালো করতে পারতেন। ক্লিশে ডায়ালগ বুলানো বা আরোপিত কমেডি এসব এ আরো মনোযোগ দিতে হতো।
চিফ চরিত্রে মাসুম বাশার অনবদ্য পারফরম্যান্স দিয়েছেন। রাশেদ মামুন অপু, সাবরিন আজাদ এদের এপেয়ারেন্সও ভালো। তবে দীর্ঘ বিরতির পর শার্লিন ফারজানা এসে ভালো ব্রেকথ্রু দিতে পারেননি।
কাস্টিংয়ে সবারই কমবেশি যে ভুলটা ধরা পড়েছে তা হলো স্যালুট আর হিল আপের পার্থক্য বুঝতে না পারা। সিভিল ড্রেসে যখন সেল্যুট দেওয়া হয় তা হাস্যকর ঠেকে।
সিরিজটায় ডিওপি ছিলেন কামরুল ইসলাম শুভ। স্টার্টিংয়ের ঘরের দৃশ্য, প্রেস কনফারেন্সে চিফের ফ্রেম অ্যাঙ্গেল, মনোরম ড্রোন শট, ট্রেনের সাথে প্যারালালি দৌড়ানোর সময়ের দৃশ্য, কোর্টের গোলাগুলির দৃশ্য এসবকিছুতে তিনি বাহবা পাবেন। তবে খোর আমিনকে দেখানোর জন্য গাড়ির লুকিং গ্লাস নাড়িয়ে দেয়ার দৃশ্যটা বাজে দেখায়। স্টিল শটেও যখন ক্যামেরা নড়ে যায় তখন ফ্রেমের অ্যাঙ্গেলে তারতম্যও ঘটে কয়েক জায়গায়। সেসব ক্ষেত্রে হ্যান্ডহেল্ড শট নেওয়ায় বেটার ছিলো।
সাউন্ড ডিজাইন করেছেন দিব্য এবং সুরজিত। ডাবিংয়ে লিপ সিংক মিস গেছে বেশ কিছু জায়গায়। রবিনের ফোন কলে রিসিভ করার পরেও রিংটোন বাজছিলো। পরিত্যক্ত কারখানায় গাড়ির দরজা বন্ধ করার সময়ে দু’বার আওয়াজও হয়েছে। ফলির এই দুয়েকটি ভুল বাদ দিলে বাকিটা সময়ে রিয়েলিস্টিক এমবিয়েন্স আর সাউন্ড মিক্স নিয়ে প্রশংসা করতে হয় এই টিমের। মিউজিকেও আছে কারিশমা। রবিনের সাথে মামুনের দৌড়ানোর সময়ের বিজিএমটা খুবই হাই স্কোরের, টানটান সাসপেন্স রাখতে বেশ কাজে এসেছে। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে এই সিরিজে অহেতুক ইমোশনাল কোনো কর্ড ইউজ করা হয় নাই। রাহীর সাথে পরিত্যক্ত কারখানায় মামুনের কনভারসেশনের মিউজিকটাও টাচি ছিলো।
সিরিজে কালারের কাজ করেছেন প্রসেনজিৎ। মামুনের বাড়ির ফটোজেনিক কালার, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ব্লু-গ্রিটি টোন, দিনের বেলায় ফ্লাইওভারের আশেপশের কালারের একটা গ্রে ব্লার শেইড যাতে মনে হয় ধুলাবালি উড়ছে এসবকিছুই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো মেকআপ আর কস্টিউমের দারুণ কম্বিনেশনের ফলে। মেকআপে শেষ এপিসোডে এসে গুলির মুহূর্তে মামুনের বোনের কপালে রক্তের ছিটা আসাটা খুবই ইলজিক্যাল ছিলো কেননা গুলি যিনি খেয়েছেন তিনি ছিলেন বোনের পিছনে। মেকাপ করেছেন আতিয়া রহমান। ইমন খন্দকার কালার আর ক্যারেক্টারের বিল্ড আপের ক্ষেত্রে কস্টিউমের ভূমিকাটা বড় করে তুলতে পেরেছেন। তবে টিভি নিউজ কিংবা পত্রিকায় মামুনের যে একই শার্টে পোজ দেয়া ছবি দেখাচ্ছিলো, সেই একই পোশাক যেটা পড়ে মামুন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তা খুবই বেখাপ্পা লেগেছে৷
রাতে কারখানায় লাল কনট্রাস্টের ওপর সবুজ শেইডটা সুন্দর। দৌড়ানোর সময়ে ওই পুরান বাড়িটার আশপাশ সুন্দর লাগে লাইটিংয়ের কারণে। তবে কারখানায় একটা বাতি গাড়ির ভেতরে অহেতুক নিভে যাওয়াটা চোখে পড়বে।
এডিটে সাকিবকে খুঁজতে গিয়ে কলিংবেল বাজানোটা পারফেক্টলি হয়নি। দুটো সুইচ। তাই একসাথে দুটো অঅঙুল ব্যবহার করতে হয়েছে। তবে সিরিজের ইন্ট্রো ডিজাইনটা খুব সুন্দর হয়েছে। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে মেগাসিটির উপর ক্যারেক্টার গুলোর একটা ধাঁচ। তবে মাইক্রোতে দুলাভাই আর মামুনের ডায়ালগের পরের লোকেশানের সিনক্রোনাইজেশন ঘটে নাই। লাইটিংয়ের তারতম্যের সাথে টাঞ্জিশনের অভাবও পরিলক্ষিত হয়েছে অনেক জায়গায়।
‘গোলাম মামুন’ স্পিন-অফ সিরিজ হলেও শিহাব শাহীন এই সিরিজটা দিয়ে বর্তমান সময়, আমাদের সোশিও-পলিটিক্যাল বাস্তবতাকে একটা কানেকশানের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন, ফিকশন আকারে এবং ছোট ছোট ডায়ালগের সাহায্যে আমাদের আশপাশের অসংখ্য অসঙ্গতির কথাই বলেছেন তিনি। তবে তিনি সবকিছুকে যে এক অদৃশ্য ছায়া তথা ‘হুকুমাত’ দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন সেটাকে নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করা উচিত। কেননা ‘অদৃশ্য’ ব্যাপারটাই আমাদের মস্তিষ্কে এক অশরীরী বাস্তবতাকে ঢুকিয়ে দেয় যা একটা সময়ে আমরা দুর্ভেদ্য মনে করতে শুরু করি। আর তার সবচেয়ে বড় সুযোগ নেয় শাসনযন্ত্র, তারা এক্টিভ হয়ে উঠে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। স্টোরিটেলিং তো এই ধরনের ন্যারাটিভ তৈরি করতে বড় ভূমিকা রাখে। তখন দর্শকের আস্তে আস্তে অথরিটিকে প্রশ্ন করার প্রবণতা কমে যায়। এই কমে যাওয়াটা নিশ্চয়ই কোনো রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্যই ভালো কিছু নয়।