Select Page

গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস ২০১৭

গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস ২০১৭

সিনেমায় ভাল পারফরম্যান্সের জন্য সারাবিশ্বে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা বা পুরষ্কার। কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে আমেরিকায় সবচেয়ে বাজে সিনেমাগুলোকে পুরষ্কার দেওয়া শুরু হয়। এই পুরষ্কারের উদ্দেশ্য হলো নিম্নমানের সিনেমা নির্মাণ বা এই ধরণের সিনেমায় কাজ করতে নির্মাতা ও কলাকুশলীদের অনুৎসাহিত করা। হলিউডে দেওয়া এই পুরষ্কারের নাম Golden Raspberry Awards. এর দেখাদেখি ২০০৯ সালে ভারতে শুরু হয় Golden Kela Awards. আমাদের দেশেওতো কত আজেবাজে সিনেমা নির্মিত হয়। তাই ২০১৪ সাল থেকে আমরাও আমাদের দেশের সবচেয়ে বাজে সিনেমাগুলোকেও পুরস্কৃত করা শুরু করি। আমাদের ঢালিউডে এই পুরষ্কারের নাম দেওয়া হয়েছে Golden Baash Awards (গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস)।

২০১৭ সালে যে সকল সিনেমা ও কলাকুশলীরা আমাদের বিনোদনের নাম বাঁশ দিয়েছেন, সেসকল সিনেমা ও কলাকুশলীদের এই পুরষ্কার দেওয়া হবে। এই বছর সিনেমায় সবচেয়ে বাজে অবদানের জন্য নিম্নে উল্লেখিত সিনেমা ও ব্যক্তিবর্গ Golden Baash Awards পাবেন …

সবচেয়ে বাজে সিনেমা : শেষ কথা

প্রায় প্রতিবছরই দেখা যায় এমন সব সিনেমা জাতীয় পুরস্কারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা পায় সাধারণ দর্শকরা যেসব সিনেমা দেখা তো দূরে থাক নাম পর্যন্ত শুনেনি !!! তাহলে জাতি যে চলচ্চিত্র সম্পর্কে ভালমন্দ কিছুই জানে না, সে চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার পাওয়াটা একটা বিস্ময়সূচক চিহ্নের সমান। বেশ কয়েকবছর ধরেই আমাদের দেশে “পুরষ্কার পাওয়ার জন্য” কিছু তথাকথিত অফট্র্যাক সিনেমা নির্মাণের প্রচলন শুরু হয়েছে। এর মানে এমন নয় যে সেসকল সিনেমাগুলো জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নয়, কিন্তু এগুলোর আধিক্যতা মানসম্পন্ন বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতাদের আশাহত করছে। তেমনই একটি পুরষ্কার পাওয়ার জন্য নির্মিত সিনেমা হচ্ছে সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত ডকুমেন্টারি ড্রামা সিনেমা “শেষ দেখা”। পুতুল নাচের আদ্যোপান্ত এই সিনেমার থিম হলেও প্যারালালভাবে যে রোমান্টিক আবহ আনার চেষ্টা করা হয়েছে তা দর্শকদের মনে চরম বিরক্তির সৃষ্টি করেছে। বিনোদনের ছিটেফোঁটাও এই সিনেমায় নেই, তারপরও ইহা সিনেমা। এই সিনেমা জাতীয় পুরস্কার পেলেও অবাক হবেন না প্লিজ।

সবচেয়ে বাজে পরিচালক : জুয়েল ফারসী (কপালের লিখন)

Kopaler-Likhon-Bangla-Cinema-with-Sangram-Khan-Sanjana-Anan-by-Jewel-Farsi-Poster-BMDb-2

বাংলাদেশি সিনেমাপ্রেমীদের কপালের লিখন খারাপ বলেই হয়তো ২০১৭ সালে এসে “কপালের লিখন” এর মত একটি সিনেমা তারা “উপহার” পেয়েছেন। মুক্তির আগে সিনেমাটি সম্পর্কে পরিচালক সাহেব যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, তাতে অনেক আশার সুর ছিল। কিন্তু ট্রেলার দেখেই দর্শক মারাত্মকভাবে বদহজমের শিকার হয়। আর পরিচালকের মুন্সিয়ানার কথা বাদই দিলাম। মোটরসাইকেল চালনা শিখতে চাইলে প্রথমে জনমানবহীন খোলা মাঠেই শিখতে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু শেখার আগেই যদি কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে হাইওয়েতে উঠে যায়, তাহলে সেটা তার নিজের ও পথচারীদের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই পরিচালকের হয়েছে সেই দশা। শুধু শখ বা অর্থ ভাল পরিচালক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

সবচেয়ে বাজে অভিনেতা : জেফ (মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা)

অনেকের কাছে নতুন মুখ হলেও জেফ মোটেও নবাগত কোন অভিনেতা নয়। একাধিক সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা এই নায়কের সাথে শুধু বাহ্যিক নয়, আভ্যন্তরীণ দিক থেকেই অনন্ত জলিলের সাথে অনেক মিল আছে (!) দুর্বল ডায়লগ ডেলিভারি, অসংলগ্ন বডি ল্যাঙ্গুয়েজের কারণে তিনি সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যসমূহকে মূল্যহীন করে তুলেছেন। তার আরো শিখে আসা উচিৎ বলে মনে করি। তা না হলে এভাবেই মধু হয়ে হয়ে দর্শকদের বিষ খাইয়ে যাবেন।

সবচেয়ে বাজে অভিনেত্রী : বুবলি (রংবাজ)

আমাদের দেশের নির্মাতা ও কলাকুশলীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা মনে করে যে কেউ যে কোন চরিত্রে মানানসই হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বড় ধরণের ভুল ধারণা। বহির্বিশ্বে কোন শিল্পী কোন চরিত্রে অভিনয় করার আগে সেই চরিত্রটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা বা স্টাডি করে। যার ফলে সেই চরিত্রটি তার মাঝে এবং সে নিজে চরিত্রটির মাঝে মিশে যেতে পারে। আর আমাদের দেশে এসব নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। “রংবাজ” সিনেমায় বুবলির চরিত্রটি ছিল একজন নাচ শিক্ষিকার, অথচ তার নাচের ধরণ বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে মনে হয়েছে তিনি নাচের শিক্ষিকা তো দূরে থাক এখনো নাচের “ন”ও শিখতে পারেননি। তাহলে কেনই এমন চরিত্রে অভিনয় করার “দুঃসাহস” দেখালেন ?

সবচেয়ে বাজে খল অভিনেতা : এইচ কে সুজন (খাস জমিন)

“আমার টেকা দিয়া ছবি বানামু, আমিই নায়ক হমু।
কিন্তু ভাই আপনে এই চেহারা নিয়া নায়ক হইলে তো ছবি কুত্তায়ও দেখব না।
নায়ক না হইতে পারি, ভিলেন তো হইতে পারুম ?
কিন্তু আপনে তো অভিনয় পারেন না।
আরে ব্যাটা, অভিনয় পারা লাগব না। আমার টেকার ছবি, আমি যেটা কমু সেটাই হইবো”।

এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আর কি-ইবা বলার থাকে। এই ভদ্রলোক “খাস জমিন” সিনেমার প্রযোজক। তাই সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ খল চরিত্রটি ছিল তারই দখলে। তার অত্যাভিনয় ও নিম্নাভিনয় মিলে চরিত্রটিকে খাসভাবে জমিনে পুতে ফেলেছে।

সবচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেতা : ওমর সানী (মার ছক্কা ও শূন্য)

হ্যাঁ মানলাম ওমর সানীকে এখন কেউ নায়কের চরিত্রে কাস্ট করবে না। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে ভাল কিছু সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। তার ফেইস ভ্যালু আছে, তাই কয়েকজন পরিচালক নিম্নমানের সিনেমায় আনকোরা আর্টিস্টদের পাশে তাকে কাস্ট করে তারই মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছে। নিশ্চয়ই অভিজ্ঞ ওমর সানী এই ব্যাপারে অবগত আছেন, তারপরও কেন তিনি “মার ছক্কা” ও “শুন্য”র মত সিনেমায় কাজ করছেন ? যেখানে তার চরিত্রগুলো আগাছার মত মনে হয়েছে। টিকে থাকা মানেই তো নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া না।

সবচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেত্রী : রেবেকা রউফ (তুই আমার)

নিঃসন্দেহে রেবেকা রউফ ঢালিউডের অন্যতম পার্শ্ব অভিনেত্রী তথা পরিচিত মুখ। কিন্তু যারা “তুই আমার” সিনেমাটি দেখেছেন, তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন এই সিনেমায় তিনি অভিনয়ের মধ্যে ছিলেন না। আর এই মাপের অভিনয় তার মত সিনিয়র আর্টিস্টের কাছে কেউ আশাও করেন না। বিশেষ করে শেষ দৃশ্যে যখন তার একমাত্র যুবতী কন্যা বিষ খেয়ে মারা যায়, এমন দৃশ্যে তার পাগলের মত কাঁদার কথা ছিল। অথচ তার কান্নার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে তিনি পাশের বাড়ির একজন প্রতিবেশি, যে মুর্দার বাড়িতে এসেছেন লোকজনকে সান্তনা দিতে !!!

সবচেয়ে বাজে নবাগত অভিনেতা : ফিরোজ শাহী (যে গল্পে ভালোবাসা নেই)

যতটুকু জানি এই ভদ্রলোক মঞ্চ ও নাটকের সাথে জড়িত। তার মানে অভিনয়ে অভিজ্ঞ। মঞ্চ থেকে আসা অনেক গুণী অভিনেতারাই সিনেমার পর্দা কাঁপিয়েছেন। তার কাছ থেকেও এমনটা আশা ছিল। কিন্তু উনার কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছে তিনি যাত্রাপালা করছেন। ভাল কথা, এই ভদ্রলোক কিন্তু এই সিনেমার প্রযোজকও।

সবচেয়ে বাজে নবাগতা অভিনেত্রী : ফারিন (ধ্যাততেরিকি)

কমেডি অব এরর মুভি “ধ্যাততেরিকি”তে আরিফিন শুভ, নুসরাত ফারিয়া ও রোশানের পাশাপাশি নবাগত ফারিনের চরিত্রটিও ছিল প্রায় সমান গুরুত্ব। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার তিনি এই গুরুত্বের মুল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। নতুন হিসেবে কিছুটা জড়তা থাকবে স্বাভাবিক; কিন্তু তিনি গ্ল্যামার প্রদর্শন (!) ছাড়া আর কোনটাতেই ব্যালেন্স করতে পারেননি। যাহোক ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো।

সবচেয়ে বাজে গান : ইয়ারা মেহেরবান (বস-২)

দেশ, ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে ভাল ধারণা নেই; এমন লোকদের যদি ঐ ধরণের কাজই দেওয়া হয়, তাহলে ফলাফল কি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই দশা হয়েছে “বস-২” সিনেমার কর্তৃপক্ষের। তারা বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে এরাবিয়ান স্টাইলের গানবাজনা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। যদিও বিতর্কের মুখে তারা “আল্লাহ মেহেরবান” এর পরিবর্তে গানটি “ইয়ারা মেহেরবান” করেছেন, তারপরও প্রাঞ্জলের লেখা, জিৎ গাঙ্গুলির সুর করা এবং জনিতা গান্ধী ও নাকাশ আজিজের গাওয়া এই গানের অর্থ, পরিবেশ বা সাজসজ্জা কিছুই পাল্টায়নি।

সবচেয়ে বাজে নকল সিনেমা: চল পালাই

পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাসের নাম শুনেই অনেকে ধারণা করেছিলেন ছবিটি নকল হবে !!! অত:পর ট্রেলার দেখেই লোকজন প্রায় নিশ্চিত হলেন ছবিটি ভারতীয় একটি ছবির নকল। শেষ পর্যন্ত হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখে দর্শকরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হলেন সিনেমাটি ২০০২ সালের ভারতীয় সিনেমা Road এর নকল। Road  সিনেমাটি ব্যাপক প্রশংসিত হলেও “চল পালাই” সিনেমাটি দর্শকদের অত্যাচারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বল্প বাজেটের অল্প পরিসরের সিনেমাটি চরমভাবে ব্যর্থ হয়। যা পরবর্তীতে প্রযোজকের হাতে পরিচালকের মার খাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় !!!

সবচেয়ে হতাশাজনক সিনেমা : পরবাসিনী

“দেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন সিনেমা, বিগ বাজেটের, বিগ এরাঞ্জমেন্টের সিনেমা”; প্রভৃতি কারণে স্বপন আহমেদ পরিচালিত “পরবাসিনী” ছিল সিনেমাপ্রেমীদের কাছে একটি বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা। কিন্তু সাফটা চুক্তিতে আমদানিকৃত ভারতীয় সিনেমা “ওয়ান” এর কারণে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমাহলে মুক্তি পাওয়ায় দর্শকরা যতটুকু কষ্ট পান, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পান সিনেমাটি দেখে। তাদের স্বপ্নের ৫%-ও সিনেমাটিতে পরিস্ফুটিত হয়নি। দর্শকদের কয়েকবছরের প্রতীক্ষা হতাশায় রূপান্তরিত হয়।

সবচেয়ে বাজে পর্দা জুটি : হিরো আলম+রাবিনা বৃষ্টি (মার ছক্কা)

হিরো আলম ইউটিউবে সীমাবদ্ধ ছিল ভাল ছিল। সিনেমায় আসার কি দরকার ছিল ? সিনেমায় আসছে ভাল কথা, কমেডি চরিত্রেই সীমাবদ্ধ থাকত, দ্বিতীয় নায়ক বানানোর কি দরকার ছিল ? রাবিনা বৃষ্টি যেরকম সাবলীলভাবে এই সিনেমায় হিরো আলমের সাথে অভিনয় করেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি কাজ পেলে কলাগাছকেও নায়ক হিসেবে নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এই ছবিতে এই জুটির লিপকিসের দৃশ্য আপনার চরম বিরক্তি যোগাবে গ্যারান্টি। হাস আর বেজীকে যেমন লাগে আর কি !!!

নির্মাতা আর কলাকুশলীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনার টাকা বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিনেমার নামে অখাদ্য বানিয়ে দর্শকদের গেলানোর মত জুলুম করবেন না। এতই যখন নিজের চেহারা সিনেমার পর্দায় দেখার শখ, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেরা সিনেমা বানিয়ে সেগুলো নিজেদের বানানো সিনেমা হলেই সপরিবারে দেখুন। সেন্সরবোর্ড পার করে দর্শকদের কাছে নিয়ে আসার মত অন্যায় করবেন না প্লিজ।


মন্তব্য করুন