Select Page

গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস-২০১৬

গোল্ডেন বাঁশ এ্যাওয়ার্ডস-২০১৬

সিনেমায় ভাল পারফরম্যান্সের জন্য সারাবিশ্বে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা বা পুরষ্কার। কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে আমেরিকায় সবচেয়ে বাজে সিনেমাগুলোকে পুরষ্কার দেওয়া শুরু হয়। এই পুরষ্কারের উদ্দেশ্য হলো নিম্নমানের সিনেমা বানাতে বা কাজ করতে নির্মাতা ও কলাকুশলীদের অনুৎসাহিত করা। হলিউডে দেওয়া এই পুরষ্কারের নাম Golden Raspberry Awards. এর দেখাদেখি ২০০৯ সালে ভারতে শুরু হয় Golden Kela Awards. আমাদের দেশেওতো কত আজেবাজে ছবি নির্মিত হয়। তাই ২০১৫ সাল থেকে আমরাও আমাদের দেশের সবচেয়ে বাজে সিনেমাগুলোকেও পুরস্কৃত করা শুরু করি। আমাদের ঢালিউডে এই পুরষ্কারের নাম দেওয়া হয়েছে Golden Baash Awards.

২০১৬ সালে যে সকল সিনেমা ও কলাকুশলীরা আমাদের বিনোদনের নাম বাঁশ দিয়েছেন, সেসকল সিনেমা ও কলাকুশলীদের এই পুরষ্কার দেওয়া হবে। এই বছর সিনেমায় সবচেয়ে বাজে অবদানের জন্য নিম্নে উল্লেখিত সিনেমা ও ব্যক্তিবর্গ Golden Baash Awards পাবেন …

সবচেয়ে বাজে সিনেমাঃ দর্পন বিসর্জন

পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের ছোট গল্প “আয়না” অবলম্বনে সুমন ধর নির্মাণ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি “দর্পণ বিসর্জন”। মূলত পল্লীকবি তার লেখনীর মাধ্যমে নিছক হাস্যরসের জন্য এই ছোট গল্পটি লিখেছিলেন। কিন্তু সেটা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমা বানানোর কোন যুক্তি আসে না। একটি গ্রাম যেখানের লোকজন কোনদিন আয়না দেখেনি!!! এটা বিশ্বাস করাতে হলে গল্পের পটভূমি নিয়ে যেতে হবে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে। কিন্তু সিনেমার পটভূমি দেখে তা মনে হয়নি। এই গল্পে মোল্লা-মুসল্লিও আছে, তার মানে তখন ইসলাম ধর্ম প্রচার হয়ে গেছে। আয়না দেখা নিয়ে একাধিক হাদিস ও দোয়াও আছে, অথচ এই সিনেমায় মোল্লা সাহেব জানেনও না আয়না কি!!! তাছাড়া নদীর পানিতেও নিজের চেহারার প্রতিবিম্ব সে হাইডেলবার্গ সময়ের মানুষ দেখে নিজেকে চেনেছে, আর এই সভ্য জগতের মানুষ চিনে না। তাই সব দিক থেকে বলা যায় উক্ত গল্প নিয়ে সর্বোচ্চ একটি ফান শর্টফিল্ম বা কমেডি নাটক করা গেলেও কোন ভাবেই এই উদ্ভট সিনেমাটি (পুরষ্কারের আশায়) নির্মাণ করা উচিৎ হয়নি।

সবচেয়ে বাজে পরিচালকঃ শেখ শামীম

আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, “ভাল্লুকের হাতে খুনতা দেওয়া”। যার বাংলায় অর্থ “অসামর্থ্য ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দেওয়া”। “পৃথিবীর নিয়তি” সিনেমাটি দেখলে পরিচালক শেখ শামীম সম্পর্কে আপনার এমন ধারণাই জন্মাবে। মানলাম বাজেট কম ছিল, স্ক্রিনপ্লে দুর্বল ছিল, তারপরও তার মেকিং দেখে মনে হয়েছে কেউ তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোর করে শুটিং করিয়ে নিয়েছে। এবার জাতিকে উদ্ধার করুন।

সবচেয়ে বাজে অভিনেতাঃ রুবেল (পৃথিবীর নিয়তি)

পৃথিবীর-নিয়তি-বাংলা-সিনেমা-পোস্টার

এই ক্যাটাগরিতে এই নামটি লিখতে আমার ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নায়ক রুবেলের যত বড়ই ভক্ত থাকুন, আমার বিশ্বাস “পৃথিবীর নিয়তি” সিনেমাতে তার কাজ দেখে নির্ঘাত আপনার মনে তার প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাবে। একজন সিনিয়র শিল্পী হয়ে কিসের জন্য নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে তিনি এমন মানহীন সিনেমায় মানহীন কাজ উপহার দিলেন তা তিনিই বলতে পারবেন। আশা করব আগের সেই নায়ক রুবেল খুব শীঘ্রই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।

সবচেয়ে বাজে অভিনেত্রীঃ মৌসুমী হামিদ (মাস্তানি)

ফিরোজ খান প্রিন্স পরিচালিত “মাস্তানি” সিনেমাটি যারা দেখেছেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন গল্পটা মূলত নেতিবাচক চরিত্র সাদিয়া আফরিনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে। এই সিনেমায় কাজী মারুফ ও মৌসুমী হামিদের যে ক্যারেক্টার দুটো দেখানো হয়েছে এর মূল হিন্দি সিনেমাতে কিন্তু সেই ক্যারেক্টার দুটো ছিল না। তবুও “প্রধান নায়ক” মারুফের উসিলায় মৌসুমী হামিদের চরিত্রটা ছিল প্রধান নায়িকার। রোমান্টিক ধাঁচ ছেড়ে এ্যাকশন ধাঁচে অভিনয় করাটা মৌসুমীর জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু এই সিনেমায় তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে তিনি সেই চ্যালেঞ্জ ওভারকাম করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

সবচেয়ে বাজে খল অভিনেতাঃ শতাব্দী ওয়াদুদ (চোখের দেখা)

নিঃসন্দেহে শতাব্দী ওয়াদুদ একজন ভাল অভিনেতা। একাধিক নাটকে, গেরিলা, জীবনঢুলি ও অজ্ঞাতনামায় তার কাজ দেখে সমালোচকরা ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। কিন্তু পি.এ. কাজল পরিচালিত “চোখের দেখা” সিনেমায় তিনি “টিপিকাল ভিলেন” চরিত্রটির রুপ দিতে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলেছেন। চিৎকার চ্যাচামাচি করে ডায়লগ ডেলিভারি, অখাদ্য আইটেম গানে অভিজ্ঞতাহীন পারফর্ম্যান্স খুবই দৃষ্টিকটু ছিল। আশা করি ভবিষ্যতে তার কাছে আরো ভাল কিছু পাবো।

সবচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেতাঃ রাশেদ মোরশেদ (পৃথিবীর নিয়তি)

যতটুকু জানি এই ব্যক্তি একজন শখের অভিনেতা+কণ্ঠশিল্পী+পয়সাওয়ালা মানুষ। এর আগে তিনি একক নায়ক হিসেবে শ্রদ্ধেয় শহীদুল ইসলাম খোকন, শাবনূর ম্যাডাম, সোহেল রানা স্যার ও সুচরিতা ম্যাডামকে নিয়েও “ভালোবাসা সেন্টমার্টিনে” নামের একটি জঘন্য সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন। তাহলে কি শখ+টাকা-ই অভিনেতা হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন সেইসব দর্শক যারা “পৃথিবীর নিয়তি” দেখার জন্য টিকেট কেটে হলে গিয়ে এই ভদ্রলোকের অভিনয় দেখে বিরতির আগেই বাড়ি ফিরে গেছেন।

সবচেয়ে বাজে পার্শ্ব অভিনেত্রীঃ রেবেকা (পৃথিবীর নিয়তি)

বর্তমানে ঢালিউডে অন্যতম পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ হচ্ছেন রেবেকা। এই সিনেমায় তার চরিত্র হচ্ছে একজন চল্লিশোর্ধ কুমারী নারী (!) যিনি ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তান (নায়ক) প্রসব করেন, সেই নায়ক আবার চল্লিশ বছর পর তার মায়ের ধর্ষককে খুঁজে বেড়ায়। এমন আজগুবি গল্পের এক আজগুবি চরিত্রে বেমানানভাবে পর্দায় উপস্থিত হয়েছেন রেবেকা। উনার মত সিনিয়র শিল্পীর কাছে এই ধরণের কাজ জাতি আশা করে না।

সবচেয়ে বাজে নবাগত অভিনেতাঃ রাফি সালমান (দিওয়ানা মন)

নায়ক হতে যা যা লাগে এই ভদ্রলোকের সেরকম লুক, ফিগার, হাইট সবই আছে শুধু অভিনয় জ্ঞানটা বাদে। দিওয়ানা মন সিনেমার পরিচালক নুরুল ইসলাম প্রিতম হলেন এই নায়ক সাহেবের ভাই, আর নায়ক ছিলেন এই ছবির প্রযোজক। “আমার টাকায় আমি সিনেমা করে নায়ক হবো, যেমন খুশি তেমন অভিনয় করব” এই ধ্যানধারণা থেকে সিনেমা করলে যে আর যাই হোক দর্শকদের “অত্যাচার” ছাড়া আর কিছুই দেওয়া যায়না, সেটা এই সিনেমার দর্শকরা হাতেনাতে টের পেয়েছেন।

সবচেয়ে বাজে নবাগতা অভিনেত্রীঃ জ্যাকলিন মিথিলা (চোখের দেখা)

আইটেম গানকে বলা হয় বাণিজ্যিক সিনেমার অন্যতম মসলা। তার উপর বাংলার সানি লিওন খ্যাঁত (!) জ্যাকলিন মিথিলা ছিল বলে এই সিনেমার আইটেম গানের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ ছিল চরম। কিন্তু “উঠান বাঁকা” টাইপের নাচ আর মৃগী রোগীদের মত শরীর মোচড়ানো দেখিয়ে খুব বাজেভাবেই এই নারীর ঢালিউডে অভিষেক ঘটে।

সবচেয়ে বাজে গানঃ এ খোদা (দিওয়ানা মন)

সিনেমায় স্যাড সং বা বিরহের গান শুনলে দর্শকদের মনে কষ্ট অনুভব হওয়ার কথা। কিন্তু এই সিনেমার স্যাড সং “এ খোদা, এ কি খেলা” শুনে হলের দর্শকদের হাসাহাসির শব্দ শুনে কানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রেমো বিপ্লবের গীত, সুর ও কণ্ঠে গাওয়া এই গানটি মূলত মোহিত সূরি পরিচালিত ২০১১ সালের হিন্দি সিনেমা “মার্ডার-২” এর মিঠুনের সুরে গাওয়া “এ খোদা” গানের নকল। তার সাথে বোনাস হিসেবে রাজা চন্দ পরিচালিত ২০১২ সালের কলকাতার সিনেমা “জানেমান” এর জুবিন গার্গের গাওয়া “তোমার আমার প্রেম আমি আজও বুঝিনি” ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে!!!

সবচেয়ে বাজে নকল সিনেমাঃ- মন জানে না মনের ঠিকানা (মুশফিকুর রহমান গুলজার)

২০১৬ সালের ৩ ভাগের ১ ভাগ সিনেমা-ই ছিল নকল। তার মধ্যে সবচেয়ে আশাহত নকল সিনেমা ছিল মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত মন জানে না মনের ঠিকানা। এক খুনের মামলায় দুই সংযুক্ত জমজ বোনের জড়িয়ে পড়ার গল্প নিয়ে এই সিনেমাটি নির্মিত হয়। মৌলিক গল্প বলে প্রচারিত হলেও পরে ফাঁস হয় সিনেমাটি ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি সনি চ্যানেলে প্রচারিত “আদালত” সিরিজের ৮৮তম পর্বের হুবহু নকল। পরিচালক সমিতির উচ্চপদস্থ একজন পরিচালকের এমন কর্মকাণ্ড সত্যিই লজ্জাজনক। সিনেমাটিতে মৌসুমি কে.ডি পাঠক (রনিত রয়ের) এবং পরিমণী ও শিলা দুই জমজ বোন মায়া ও মিহিকা’র করার চরিত্রে অভিনয় করেন।

সবচেয়ে হতাশাজনক সিনেমাঃ অঙ্গার (ওয়াজেদ আলী সুমন)

এই সিনেমার পোস্টারে ট্যাগলাইন অনুযায়ী কথা ছিল অঙ্গার সিনেমাটি “গত ১০ বছরের বাংলা চলচ্চিত্রের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন ইতিহাস গড়বে”। অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে ইতিহাসও গড়েছে, তবে সেটা চরম ব্যর্থতার রেকর্ড ও ইতিহাস!!!

সবচেয়ে বাজে পর্দা জুটিঃ- শাকিব খান+পড়শি (রানা পাগলা দ্যা মেন্টাল)

শাকিব খান তার বডি ফিটনেস আর গেটআপে অনেক পরিবর্তন এনেছেন এটা সত্য। কিন্তু রানা পাগলা দ্য মেন্টাল সিনেমায় “মন নাজেহাল” নামের একটি বিশেষ গানে গায়িকা পড়শির সাথে তার অসামঞ্জস্য নাচ-গান দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন মনে হচ্ছে কোন “মামা তার আদরের ভাগ্নির সাথে তার জন্মদিন উপলক্ষে নাচছে”। এখানে পড়শির তুলনায় শাকিবের দ্বিগুন বয়সটা কোন ব্যাপার ছিল না, সমস্যা ছিল দুজনের অসম উচ্চতা।

দাঁতভাঙ্গা এ্যাওয়ার্ড (সবচেয়ে বাজে ডায়লগ ডেলিভারি): রাশেদ মোরশেদ+সানজানা (পৃথিবীর নিয়তি)

নায়কঃ হায়, আই লাভ ইউ…

নায়িকাঃ কেন সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকো ?

নায়কঃ উহু, পেছন দিয়ে কিছু করার বদ অভ্যাস আমার নেই !!!

(বিঃদ্রঃ ট্রেলারে এই ডায়লগ শুনে দেশ ও জাতি ধন্য হলেও, বেরসিক সেন্সরবোর্ড এই ডায়লগ অব দ্যা ইয়ারের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়)


১ টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন