Select Page

চমকে দিয়েছে ‘বিজলী’

চমকে দিয়েছে ‘বিজলী’

বিজলী
পরিচালনা : ইফতেখার চৌধুরী
অভিনয়ে : ববি, রণবীর, শতাব্দী রায়, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, দিলারা জামান, জাহিদ হাসান, আনিসুর রহমান মিলন, স্বাধীন খসরু, শিমুল খান, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, টাইগার রবি, সীমান্ত।
রেটিং : ৩.৫/ ৫

সুপার হিরোদের নিয়ে হলিউডে যত সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে, তার বেশিরভাগই সফল হবার ক্ষেত্রে প্রধানতম উপাদান ছিল ভিএফএক্সের কাজ। আবেগের ভূমিকা কম থাকলেও চলে, কিন্তু স্পেশাল ইফেক্টস হওয়া চাই চোখ ধাঁধানো।

বলিউডও ‘কৃষ’ সিরিজ করতে গিয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করেছিল স্পেশাল এফেক্টস-এ। ‘কোয়ি মিল গ্যায়া’ কিংবা ‘কৃষ’, ‘কৃষ থ্রি’ তো বটেই, ‘রা ওয়ান’ কিংবা ‘দ্রোণ’ ছবিতেও আমরা দেখেছি উড়ন্ত নায়কের ক্যারিশমা। খাস বাংলাদেশের ছবি ‘বিজলী’ দেখবার আগে তাই মানসিক প্রস্তুতি ছিল, এবারও বুঝি আবেগকে সাময়িক ছুটি দিয়ে, যুক্তি তর্ককে বাড়িতে রেখে বড় পর্দায় নারী’র উড়ন্ত শক্তি দেখতে হবে।

কিন্তু ২ ঘন্টা ৪ মিনিট ব্যাপ্তির পুরো ছবি দেখবার পর আমার রায় : ‘বিজলী’ শুধু ভিজুয়্যাল ইফেক্টসেই চমক দেখায়নি, বাঙালি দর্শকের আবেগ নিয়েও খেলেছে। অনেক দিন পর হৈ হুল্লোড় করে একটি পূর্ণাঙ্গ দেশীয় ছবি দেখা গেছে, যে ছবিতে রয়েছে দেশের প্রথম সুপার হিরোইনের গল্প। এই গল্পে বাবা-মেয়ের আবেগ আছে, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর সহমর্মিতা আছে, দাদীর প্রতি নাতনীর দায়িত্ববোধের প্রগাঢ় অনুভূতি আছে, প্রেমিকার প্রতি প্রেমিকের নিষ্পাপ ভালোবাসা আছে। এ গল্পে আবেদনময়ী নায়িকার অভিনয়, নাচ, অ্যাকশন, স্টান্ট তো আছেই, সেই সঙ্গে সিক্স প্যাক অ্যাবস ধারী নায়ক আছে। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সুদর্শন বাবা আছেন। সুন্দরী খল অভিনেত্রী আছেন।

বাংলাদেশের সিনেমা পর্দায় নতুন একটি গল্প, নতুন একটি ধারার সূচনা করার জন্য প্রযোজক ইয়ামিন হক ববি এবং পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। ভালো ছবি নির্মাণের জন্য শুধুমাত্র সাহস ও আন্তরিকতা প্রয়োজন, বাজেট কোনো সমস্যা নয়-নির্মাতারা সেটি এ ছবিতে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রযোজকের জলের মত অর্থ খরচ করাটা পর্দায় স্পষ্ট দেখা গেছে।

রঙের বিন্যাস ও শব্দগ্রহণ এতটাই চোখ ধাঁধানো ছিল যে, একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল যেন ভারতের বড় বাজেটের কোনো হিন্দি কিংবা তামিল ছবি দেখছি। এ ছবিতে প্রধান চরিত্র নারী, খল চরিত্রও নারী। প্রচলিত প্রবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রযোজক ববি এ ক্ষেত্রে অনুকরণীয় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের দেশে অনেক তারকার সমাবেশ অর্থাৎ মাল্টিস্টারার ছবি ইদানিংকালে হয় না বললেই চলে। অথচ ‘বিজলী’ ছবিতে প্রায় ১২ জনের বেশি পরিচিত কিংবা তারকা অভিনয়শিল্পী কাজ করেছেন, যাদের অনেকে হয়তো ১টি কিংবা ২টি বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। চরিত্রের প্রয়োজনে যখন যাকে যথার্থ মনে হয়েছে, তাকেই নেয়া হয়েছে। গল্পকার ইফতেখার চৌধুরীও প্রতিটি চরিত্রের চরিত্রায়নের দিকে বাড়তি নজর দিয়েছেন। প্রযোজক ববি’র চরিত্রকে বড় করতে গিয়ে স্বল্প উপস্থিতির চরিত্রগুলোর দিক থেকে মায়া তুলে নেননি। এ ছবির সংলাপ সহজ-স্বাভাবিক, সুন্দর।

পেলে ভট্টাচার্যের চিত্রনাট্যের বুনন আরো যুৎসহই হতে পারতো, ঠিক। এমনকি যুক্তির প্রশ্নে ‘বিজলী’ বাস্তববাদী দর্শকদের কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে, এটিও সত্যি। একটি মেয়ে বলা নেই-কওয়া নেই বাড়িতে এসে বললো আমার জন্ম ২০ বছর ৩ মাস ২১ দিন আগে। ব্যস, সবাই সব কিছু মেনে নিলো? জ্ঞান হারানো বিজলীকে ভিলেনরা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, এমন সময় বাবার ডাক শুনে মুহূর্তেই বিজলী’র দ্বিগুণ উদ্যমে ডাঙায় বিচরণ এবং ফাইট-কিছুটা হাস্যকরও ঠেকেছে। ভিসা ছাড়া মুহূর্তেই সিলেট থেকে নায়ক-নায়িকাকে ব্যাংককে রপ্তানি অবিশ্বাস্য লেগেছে। শেষ দৃশ্যে চাচার সামনে বিজলীর পরিচয় লুকিয়ে নতুন পোষাক গায়ে জড়ানোর বিষয়টিরও প্রয়োজন ছিল না। নায়ক-নায়িকার পরিচয়পর্বটিও আরো আকর্ষণীয় হতে পারতো। বিজলী ও খল চরিত্রের শেষ ক্লাইমেক্স ও অ্যাকশন দৃশ্য আরো চমকপ্রদ হতে পারতো।

তবে আগেই বলেছি, সুপার হিরো/হিরোইন ভিত্তিক ছবি দেখতে হলে এত যুক্তি খুঁজে লাভ নেই। বিশেষ করে এ ছবিতে ভালো লাগার দৃশ্যেরও কমতি ছিল না। কলেজের সবার সামনে বিজলীর পরিচয় প্রকাশের দৃশ্য, অসহায় কিশোরীকে বিজলীর জীবন বাজি রেখে রক্ষার করার দৃশ্য, বিরতির ঠিক আগের দৃশ্য-এরকম অনেক দৃশ্যে আমি বিনোদিত হয়েছি। দিন শেষে ‘শুভ শক্তির জয়, অশুভ শক্তির পরাজয়’-এই প্রবাদকে পর্দায় প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে যারপরনাই আনন্দিত হয়েছি। যুক্তির দরজাগুলো বন্ধ করে পরতে পরতে বিনোদন কুড়িয়ে নেবার চেষ্টা করেছি।

এ ছবির গানগুলো শোনা ও দেখা যেমন বিনোদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ ছিল। ‘পার্টি পার্টি’ গানের তালে প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের নাচতে দেখা এবং সমস্বরে গলা মিলিয়ে গান গাওয়ার বিষয়টি এ গানের প্রতি আমার ভালো লাগা শত গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘উড়ে উড়ে’ গানটির উপস্থিতি কাহিনির গতিকে শ্লথ করলেও গানটি দেখতে ও শুনতে বেশ লেগেছে। ‘আলো কোথায়’ গানটির কথা, সুর এবং গায়কী আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেই সাথে সিলেটের মনোরম লোকেশনে চিত্রধারণ এবং গানে ববির অভিনয় আমার মন ছুঁয়েছে। কবির বকুলের লেখা, শফিক তুহিনের সুর করা, লেমিসের গাওয়া ছবির শিরোনাম গানে এক ধরনের আবেগ আছে। প্রতিজ্ঞা আছে। গল্পের সাথে এ গানের সংযুক্তি ছিল চমৎকার।

তবে ‘বিজলী’ ছবির সবচাইতে চোখ ধাঁধানো গান ছিল আইসল্যান্ডে চিত্রায়িত ‘এ মন’ গানটি। গুটিকয়েক দৃশ্য ভিএফএক্সের সহযোগিতা নিলেও পুরো গানে জীবন্ত এক অনুভূতি পাওয়া গেছে। এ ধরনের সাহস করতেও আত্মা লাগে। তবে সুনিধি চৌহানের গাওয়া আহমেদ হুমায়ূনের সুর করা এ গানের সুরে হিন্দি ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির ‘উফ’ গানের সুরের হুবুহু মিল আবিষ্কার করাটা ছিল আমার জন্য বেদনাদায়ক। অপলক চেয়ে থাকতে হয় যে গানটি দেখে, সে গানের সুরটিও মৌলিক এবং হৃদয় ছোঁয়া আশা করেছিলাম। ‘ফ্রেন্ড বিউটিফুল’ এ ছবির প্রথম গান। তবে গানে নায়কের ঠোঁটে স্বঘোষিত ‘আ’ম হ্যান্ডসাম আ’ম কুল’ বাক্যদ্বয় কিছুটা পীড়া দিয়েছে। কারণ সিক্স প্যাক অ্যাবস্ থাকলেই কুল হওয়া যায় না।

এ ছবির অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সবচাইতে দুর্বল অভিনেতা ছবির নায়ক রণবীর। মরচে ধরা বাংলা উচ্চারণ তো আছেই, সেই সঙ্গে সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনের মডেলদের মত দাঁত বের করা একই অভিব্যক্তি, সেই সঙ্গে কয়েকটি দৃশ্যে ঠোঁটে লাল লিপস্টিকের ছোঁয়া ছিল একঘেয়ে। দেশের এত নায়ক থাকতে, এত সম্ভাবনাময় নায়ক থাকতে নির্মাতারা ভারতের রণবীরের মাঝে কী দেখেছিলেন, প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও রোদচশমায় গানের দৃশ্যে রণবীরকে দেখতে লেগেছে বেশ। বিশেষ করে দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শনের ভঙ্গিমায় রণবীর পূর্ণ নাম্বার পাবে। নাচের দৃশ্যেও নবাগত এই অভিনেতা সাবলীল। তবে অভিনয় ও বাচনভঙ্গিতে কয়েক শ’ মাইল পিছিয়ে যাবার কারণে রণবীরের গুণগুলো ছবিতে কোনো আবেদনই সৃষ্টি করতে পারেনি। যতটা পেরেছেন ছবির মূল চরিত্র ববি।

ববিকে এ ছবির নায়ক বললেও ভুল হবে না। তাকে ঘিরেই এ ছবি আবর্তিত হয়েছে। ববির অভিনয়ে এর আগে বেশ কটি ছবিতে দুর্বলতা দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে কান্নার আবেগী দৃশ্যে ববির অভিনয় মুখ থেকে প্রকাশ পেত। বুকের ভেতর থেকে নয়। তবে ‘বিজলী’ ছবিতে সম্পূর্ণ নতুন ববিকে আমরা দেখেছি। দেহসৌষ্ঠব, শরীরের গড়ন, সৌন্দর্য, নাচ, অ্যাকশনে ববি এবার-ও লেটার মার্কস সহ পাস। তবে সবচাইতে বড় অর্জন, অভিনয়েও ববি আগের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। অনেক বেশি জীবন্ত। বিশেষ করে ‘আলো কোথায়’ গানে ববির কান্নার অভিব্যক্তি তার অতীতের অভিনয়ের সব ব্যর্থতা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। সঠিক চরিত্র, নির্দেশনা, অভিনয়ের প্রতি সততা ও আন্তরিকতার যথাযথ মেলবন্ধন যে কোনো শিল্পীকে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। বিজলী এবং ববি তা আবারো প্রমাণ করলেন। তবে ভয়েস মড্যুলেশনে ববিকে আরো অনেক বেশি অনুশীলন করতে হবে।

বিজলী ছবিতে ভারতের গুণী অভিনেত্রী শতাব্দী রায়কে খল চরিত্রে দেখেছি। পরদেশী অভিনয়শিল্পীদের ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো অ্যালার্জি নেই। রণবীরকে দেখে যতটা আশাহত হয়েছি, শতাব্দী রায়কে দেখে ঠিক ততটাই মুগ্ধ হয়েছি। এমন জাঁদরেল খল চরিত্রে শতাব্দী রায়কেই যথার্থ মনে হয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন এ ছবির আরেকটি বড় প্রাপ্তি। এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ককে এ ছবিতে ভীষণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হয়েছে। সেই সঙ্গে আফসোস বেড়ে গিয়েছে, এমন অভিনেতাদের আমরা অন্য ছবিতে কেন ব্যবহার করতে পারছি না? তাছাড়া নায়ক-নায়িকার বাবা-মা মানেই বুড়িয়ে যাওয়া অভিনয়শিল্পী-এমন ধারণা থেকে ইফতেখার চৌধুরী আমাদের মুক্ত করেছেন-এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। ‘বিজলী’ ভালো লাগার অন্যতম বড় অংশ জুড়ে থাকবে বাবা ড. আলম আহমেদ ও মেয়ে বিজলীর রসায়ন। এক কথায় ‘অসাধারণ’।

‘বিজলী’ ছবিতে বেশ ক’জন অভিনয়শিল্পী বিশেষ/ অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে ছবির শেষাংশে আনিসুর রহমান মিলনকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তার লুক, বডি ল্যংগুয়েজ, ম্যানারিজম সব কিছুই ছিল চমকে যাবার মত। পাঁচ মিনিটের চরিত্রেও যিনি মনে দাগ কেটে যেতে পারেন, তিনিই তো প্রকৃত অভিনেতা। আনিসুর রহমান মিলন সেই দলেরই একজন।

জাহিদ হাসানকে এ ছবির প্রারম্ভে পেয়েছি। যতটুকু পেয়েছি, খিদে মেটেনি। জাহিদ হাসান আমাদের খুব প্রিয় অভিনেতা। তাকে ব্যবহার করে চলচ্চিত্রে নতুন নতুন চরিত্র ও গল্প তৈরি হতে পারে। ছোট্ট চরিত্রে এত বড় অভিনেতার এক ঝলক উপস্থিতি তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি।

মিশা সওদাগরের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ছবির শেষাংশে অ্যাকশন দৃশ্যে মিশার দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গি হাত তালি দেবার মত। তবে দুই হাত এক করতে করতেই নেমে গেছে পর্দা।

গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামানও আছেন এ ছবিতে। ভীষণ মায়াময়, ভীষণ জীবন্ত তার অভিনয়। তার উপস্থিতি। টাইগার রবি এ ছবিতে মুখোশের আড়ালে থাকা খল চরিত্র। তার স্বল্প সময়ের উপস্থিতিও প্রশংসাযোগ্য। একই কথা প্রযোজ্য স্বাধীন খসরুর ক্ষেত্রে। শিমুল খান ইদানিংকালের আরো অনেক ছবির মত এ ছবিতেও আছেন। সেই সঙ্গে বরাবরের মত এ ছবিতেও বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করেছেন। এবার বুঝি শিমুল খানের মত তরুণ অভিনেতাদের দিয়ে বড় ধরনের চরিত্রে নিরীক্ষা করার সময় এসেছে। সীমান্ত’র মত অভিনেতাদের যেমন কমেডি চরিত্রে আরো সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। ওপার বাংলার ‘হাবু’র চেয়ে আমাদের ‘বাবু’ (সীমান্ত) এ ছবিতে কোনো অংশে কম ছিল না। বরং কিছু ক্ষেত্রে বেশিই ছিল। আহমেদ শরীফ, প্রয়াত মিজু আহমেদ এ ছবিতে ডাবিং করেননি। তাদের অভিনয় নিয়ে বলার মত কিছুই নেই।

বলার আছে এ ছবির লোকেশন নির্বাচন নিয়ে। প্রতিটি দৃশ্য ধারণের আগে চিত্রগ্রাহক ও নির্মাতার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল, পর্দায় বোঝা গেছে। রঙের বিন্যাস ও শব্দগ্রহণের কথা আগেই বলেছি, মুগ্ধ হবার মত। আবহ সংগীত কান থেকে মন পর্যন্ত পৌঁছেছে। এক কথায়-দারুণ! রূপসজ্জা ও পোষাক বাস্তবিকই ছিল। তবে বিজলীর চরিত্রে চুল লাল করার পাশাপাশি চোখেও বাড়তি কিছু সংযোজন করা যেত। ‘বিজলী’র শেষ পোশাকটি আরো আকর্ষণীয় হতে পারতো। বিজলী যে বাস দিয়ে সিলেটে যায়, সেটি আরো ভালো হতে পারতো।

তবে এত আক্ষেপ থাকার পরও ব্যক্তিগতভাবে ছবি মুক্তির দুদিনের মাথায় আমি এ ছবিটি দুইবার দেখে ফেলেছি। কারণ একটিই, সব ছবির ‘রিপিট ভ্যালু’ থাকে না। ‘বিজলী’র আছে। নাচে-গানে-অ্যাকশনে ভরপুর দেশের খুব কম ছবি নিয়েই আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাড়ি দিতে পারি। ‘বিজলী’ এই ঘাটতিও মেটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করি। এক কথায় ‘বিজলী’: পয়সা উসুল বিনোদন। ‘বিজলী’র শেষাংশে গল্প বাকি রেখে দর্শকদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ ‘বিজলী টু’ আসবে। আমি নিশ্চিত, ‘বিজলী’ ব্যবসাসফল না হলে ‘বিজলী টু’ নির্মাণের ব্যাপারে নির্মাতারা আর ঝুঁকি নেবেন না। এ গল্পের শেষটাও আর জানা হবে না। নতুন কোনো প্রযোজকও আর এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের সাহস করবেন না। সুতরাং, বাংলা ছবিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ‘বিজলী’র মত ছবির সফল হওয়া প্রয়োজন। চমকে দেয়া বিজলী আমার মত সাধারণ দর্শকদের তো চমকে দিয়েছে, এখন দর্শকদের দায়িত্ব স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বক্স অফিসে নতুন চমক, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার। আমরা যদি পিছিয়ে থাকি, এগিয়ে থাকবে কে?

*রিভিউটির সংক্ষিপ্ত সংস্করণ সমকাল ১৯ এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত।


মন্তব্য করুন