Select Page

চেনা ছকের বাইরে গিয়ে নির্মাণ ‘ওমর’

চেনা ছকের বাইরে গিয়ে নির্মাণ ‘ওমর’

ওমর; বানিয়েছেন: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ; পর্দায়: শরিফুল রাজ, নাসিরউদ্দিন খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী ও দর্শনা বণিক।

কোর্ট প্যান্ট পড়লেই ভালো মানুষ হয় না

সংলাপটা ওমরের। ঠিক একইভাবে ট্রেইলার সবসময় মুভি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয় না। কিন্তু দিনশেষে আমরা কমবেশি আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী। ‘ওমর’ এর শুরুর দিককার দর্শন খুব একটা জুৎসই মনে হয় নি। একটা আইটেম সংয়ের ক্লিপ আর কিছু রেন্ডম শট কেটে যেন অতি হুড়োহুড়ি করে নামিয়ে দেয়া একটা ট্রেইলার। একটা পোস্টার দেখে মনে হচ্ছিল দারাজের টেমপ্লেট, আরেকটাতে সব ক্যারেক্টারের ছবি লাগানো রাজনৈতিক ব্যানার। আর সবখানে দর্শনার আবেদনময়ী ছবির অতিব্যবহার। যেন দর্শনার আইটেম সংটায় ছবির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। কিন্তু হল ফিরতি মানুষজনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সাথে সঙ্গত দিতে দেখেই ফেললাম ‘ওমর’।

ওমর যেথায় অতিউত্তম

সিনেমায় আবহ সঙ্গীতের একটা শক্তিশালী দিক হলো আপনি সংলাপ দিয়ে কিছু না বলিয়ে স্রেফ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে তা বলিয়ে নেয়া যায়। ওমর এর গল্পটা ছিল একটা মাল্টিলেয়ারের জার্নি। একক্ষণে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। পরের ক্ষণেই উত্তেজনার পারদ নেমে আবেগে মিশেছে। সুসঙ্গত দিয়ে টেনশন মোমেন্টে বিজিএম চড়া হয়েছে, আবার আবেগের দৃশ্যে নেমে এসেছে খাদে। দৃশ্যের আবেদনের সাথে বিজিএম যাচ্ছে না এমনটা হয়নি। দ্বিতীয় দিকটা হচ্ছে ওমর চেনা ছকের বাইরে গিয়ে নির্মাণ। নায়ক-নায়িকা ফর্মুলা এই সিনেমায় নেই। সে অর্থে কোন নায়িকার উপস্থিতি ছাড়াই গল্প পরিণতিতে এগিয়েছে।

সামথিং মোর দ্যান এ মার্ডার থ্রিলার

ওমরকে অনেকেই মার্ডার থ্রিলার জনারায় ফেলছেন। তবে এ নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি আছে। দুর্ঘটনা হয়েছে বটে, তবে মূল গল্পে মাথাব্যথা কখনো তা নিয়ে ছিল না। ওমরের গল্পে সাসপেন্স ছিল, টেনশন ছিল, সন্দেহ ছিল, আবেগ ছিল। তবে সবাইকে গল্পে জয়ী নেমেসিস। প্রাচীন গ্রিসে যা প্রতিহিংসার আরেক নাম।

প্লট

ক্যামেরার চোখে আলো ফুটলেই দেখা যায় সমুদ্র ঘেরা এক পাহাড়ি জনপদ। এই এলাকার রাজা বড় মির্জা। বাঁশের চেয়ে যেমন কঞ্চি শক্ত তেমনি বড় মির্জার পিএস মতি। বড় মির্জার চোখের মণি তার ছেলে ছোট মির্জা। যাকে বলে আলালের ঘরে দুলাল। হেন অপকর্মে নেই যা ছোট মির্জা করে না। বদি তারই পিএস। দুই বান্দার নিয়মিত যাতায়াত বারে। এমন বারেই একটা ছোট্টখাটো বচসা থেকে ঘটা একটা দুর্ঘটনা দিয়েই পর্দায় যাত্রা করবেন দর্শকরা। চূড়ান্ত গন্তব্য না হয় তোলা থাকুক পর্দার ২ ঘন্টার যাত্রার জন্য।

পর্দার যাত্রা যখন ছিল সপ্তম স্বর্গে

ট্র্যাকিং শটের ব্যবহার ওমরের চিত্রভাষাকে আলাদা গতিময়তা দিয়েছে, থ্রিলারের যে গতি ক্যামেরার চোখে দর্শককে তা পৌঁছে দিতে এ ছিল দারুন কার্যকরী। এই সিনেমার প্লটে থ্রিল ছিল, টেনশন ছিল, সার্ভাইভাল গেইম ছিল, কমিক রিলিফ ছিল, আবেগমুক্তি (Catharsis), পোয়েটিক জাস্টিস ছিল। কিন্তু সব এতোটাই পরিমিত যে কখনো বিরক্ত লাগেনি। ক্যামেরা, সম্পাদনা সবকিছু ছিল একদম বেসিক, মেদহীন। মেইন রোল কী সাপোর্টং রোল প্রত্যেকেই শতভাগ ঢেলে অভিনয় করেছেন। ক্লোজ শটে খুব নিঁখুত লাগছিল সবার মুখভঙ্গি। নাসির উদ্দীন বরাবরের মতো পর্দার টেনশনের পারদ নামিয়ে দর্শকদের হাসার সুযোগ দিয়েছেন। সেরাদের মধ্যে সেরা ছিলেন শরিফুল রাজ। বিশেষ করে শেষ দিকে বিদায় দৃশ্যে রুল অব থার্ড সূত্র মেনে নেয়া শটে নির্বাক রাজের চোখগুলো যেন সংলাপের চাইতে শক্তিশালী। আরফিন রুমীর ‘রব জানে’ গানটা বাড়তি পাওয়া। গল্পের ব্যাপ্তিকে বাড়ানোর জন্য সাইকোলজিক্যাল দ্বন্দ্বের বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার হয়েছে। এই সাইকোলজিক্যাল ফাইটটা না থাকলে ওমরকে অ্যাভারেজের চেয়ে ভালো মুভি বলাটা মুশকিল হতো।।

যেখানে খাদে নেমেছে গল্পের সুর

চরিত্রগুলো ঠিকঠাক গড়ে তোলার আগেই কনফ্লিক্টের আবির্ভাব ফলশ্রুতিতে চরিত্রের ডেভেলপমেন্টে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আইটেম সংয়ের টাইমিংটা আরো ভালো হতে পারতো। মুভি জুড়ে ফলি আর এমবিয়েন্সের কাজ একদমই কম। কিছু জায়গায় সিনেমার প্লটটা প্রেডিক্টেবল ছিল বিশেষত যারা ট্রেইলার দেখেছেন তাদের কাছে। গল্পের কথক হিসেবে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ যদি আরেকটু খাটতেন ওমরের রহস্য আরো ঘনীভূত হতো।

শেষ কথা

এবারকার ঈদে দেখা তিনটে মুভির মধ্যে ‘ওমর’ কে এগিয়ে না রাখার কোন কারণ পাচ্ছি না। ইন্ট্রোর টাইটেল আমাকে সত্যজিতের ফেলুদার ভাইব দিচ্ছিল। আরফিন রুমীর গান যখন তুমুল জনপ্রিয় ছিল তখন কলেজে পড়তাম। এতো বছর তাঁকে ফিরতে দেখা আনন্দের। ওমর ভালোই তবে ভালোর তো গাছ-পাথর পাওয়া মুশকিল এই আর কি!!


About The Author

Leave a reply