Select Page

জনগণ নন্দিতা বিউটি কুইন শাবানা

জনগণ নন্দিতা বিউটি কুইন শাবানা

শাবানা… যিনি ৭০ দশক থেকে ৯০ দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে গেছেন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে। ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনি, যার নামেই দর্শকেরা ছুটে যেতেন ছবি ঘরে— সুস্থ পরিচ্ছন্ন সামাজিক, ফ্যান্টাসি, লোককাহিনি, পোশাকি, অ্যাকশন প্রায় সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করে মাতিয়েছেন দর্শকদের মন। বিনিময়ে পেয়েছেন অফুরন্ত ভালোবাসা সঙ্গে ‘জনগণ নন্দিত নায়িকা বিউটি কুইন শাবানা’র মতো খেতাব।

তার পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্না, বাবা মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ চৌধুরী ও মা ফজিলাতুন্নেসা। ফয়েজ চৌধুরী এক সময় কলকাতায় চাকরি করতেন, পরে বেশ কিছুদিন ঢাকার জজ কোর্টের পেশকার ছিলেন। পরবর্তীতে পরিচালনায় জড়িয়ে পড়েন, চলচ্চিত্রে তিনি ফয়েজ চৌধুরী নামে পরিচিত, যা অনেকেই জানেন না। তিনি মোট পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন, যার প্রথমটি নির্মাণ করেন মেয়ে শাবানাকে নিয়ে ‘মুক্তি’ নামে, ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৭/১০/১৯৬৯ সালে। ছবিটিতে শাবানার বিপরীতে ছিলেন সাজ্জাদ।। ওনার শেষ পরিচালিত ছবি ছিল শাবানা প্রযোজিত ‘রাজার মেয়ে বেদেনী’ (২৪/০৬/১৯৯১)।

শাবানা ১৯৫২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মা-বাবার বড় সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথমদিকে স্থানীয় রামসেবক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডাবুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন, পরবর্তীতে বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকার গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি হন।

সবার জানা মতে, ‘চকোরী’ শাবানা অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র হলেও মূলত তার অভিষেক হয়েছিল ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে ছোট্ট একটি মেয়ের ভূমিকায়, সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। যদিও এ ছবিটির আগে তিনি ‘বিশ বছর আগে’ নামের একটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন, যা মঞ্চস্থ হয়েছিল রংপুরে। যাই হোক… ‘নতুন সুর’-এর পর শাবানা ‘তালাশ’, ‘পয়সে’, ‘সাগর’, ‘মালা’, ভাইয়া’ ছবিগুলোতেও কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যার সবগুলোই ছিল উর্দু। ইবনে মিজানের ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ও মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাকবাবু’ ছবিতে ছিলেনন সহ-নায়িকা। তবে সে পর্যন্ত তিনি রত্না নামেই পরিচিত ছিলেন, এরপর প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোস্তাফিজের হাত ধরে ১৯৬৭ সালে প্রথম একক নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন ‘চকোরী’ নামের একটি চলচ্চিত্রে, যার পরিচালক ছিলেন গুণী মেধাবী পরিচালক মরহুম ক্যাপ্টেন এহতেশাম সাহেব। তিনি পারিবারিক নাম রত্না বদলে দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম দেন শাবানা। ছবিটি ২৪ মার্চ ১৯৬৭ সালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তি পেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ঢাকাসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন মনোরম লোকেশনে সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল, টানা ৮১ সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন সিনেমা হলে চলাতে ছবিটি পালন করেছিল ‘হীরক জয়ন্তী’ হিসেবে।

শাবানার দ্বিতীয় একক নায়িকা হয়ে অভিনীত ছবিটি ছিল ‘জংলী মেয়ে’ (১৯/০৫/১৯৬৭) ইবনে মিজানের পরিচালনায়। পরবর্তীতে একে একে করতে থাকেন কুলি, আনাড়ি, ভাগ্যচক্র, ছোট সাহেব, (উর্দু) মুক্তি, পায়েল (উর্দু) সমাপ্তি, ছদ্মবেশী, বাবলু ইত্যাদি, তবে এসব ছবির মধ্যে প্রথম নায়িকা হওয়া ‘চকোরী’র মতো বড় কোন সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলেন না। ততদিনে করা হয়ে গেছে ২১টির মতো চলচ্চিত্র। অবশেষে ৭০এর শেষ দিকে পান পরপর দুই ছবির সাফল্য, বিখ্যাত পরিচালক কাজী জহির পরিচালিত ‘মধুমিলন’ (৩১/০৭/১৯৭০) ও আরেক বিখ্যাত পরিচালক মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘একই অঙ্গে এত রূপ’(১৮/১২/১৯৭০)। ছবি দুটির অভাবনীয় সফলতায় শাবানা হয়ে উঠলেন যেন চলচ্চিত্র পাড়ার নির্ভরযোগ্য নায়িকায়। মূলত এরপর থেকেই শুরু একজন শাবানার সামনের দিকে ছুটে চলা, যার শেষ ছবিটির গল্পও যেন সফলতায় ভরা!

বর্ণিল ক্যারিয়ারের শাবানার তিন দশক:

*১৯৭০-১৯৭৯*

কাজী জহিরের ‘মধু মিলন’ (৩১/০৭/১৯৭০) ও মোস্তাফিজের ‘একই অঙ্গে এত রূপ’ (১৮/১২/১৯৭০)  ছবি দুটির সফলতা দিয়েই ৭০-দশক শুরু করেন শাবানা। পরপর দুই ছবির সাফল্যে শবনম, সুজাতা, সুচন্দা ,কবরীর মতো অভিনেত্রীদের ভিড়ে শাবানা হয়ে উঠলেন যেন নির্মাতাদের আস্থার একজন। ৭২-এর প্রথম দিকে আজিজুর রহমানের ‘সমাধান’ (১১/০২/১৯৭২) নামের হিট ছবি উপহার দেন শাবানা, কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ (০৮/১১/১৯৭২) ও এসএম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’র (২২/০৯/১৯৭২) মতো সুপার হিট ছবিও আসে সে বছর। মুক্তি পায় মাসুদ পারভেজের প্রযোজনায় ও চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা এগারো জন’ (১১/০৮/১৯৭২)।

পরের বছর মুক্তি পায় সি বি জামান পরিচালিত ‘ঝড়ের পাখী’, সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার ‘দস্যুরানী’ আজিজুর রহমানের ‘অতিথি’। উল্লেখ্য এই ‘দস্যুরানী’ ছবিটি থেকেই জুটি গড়েন শাবানা ও আলমগীর, যার শেষটা হয়েছিল ১২৬টি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয়ের মাধ্যমে। ওয়াসিমের সঙ্গে জুটি হয়ে ইবনে মিজানের পরিচালনায় ‘ডাকু মনসুর’ নামের সুপারহিট ছবিটি করেন ৭৪-এ। সে বছর আরো করেন নূরুল আলম পরিচালিত ‘আঁধারে আলো’, মোস্তফা মেহমুদের ‘অবাক পৃথিবী’ ও বাবা ফয়েজ চৌধুরীর পরিচালনায় ‘মালকা বানু’!

নিম্নে সাল অনুযায়ী শাবানার উল্লেখ্যযোগ্য ছবি:

(১৯৭৫)

বাবুল চৌধুরী> চাষীর মেয়ে

ইবনে মিজান> দুই রাজকুমার

আকবর কবির পিন্টু> বাদশা

নাজমূল হুদা মিন্টু> অনেক প্রেম অনেক জ্বালা

(১৯৭৬)

মোস্তফা মেহমুদ> জয় পরাজয়

আজিজুর রহমান> গরমিল

এফ এ বেনু> রাজরানী

বাবুল চৌধুরী> সেতু

মোহসিন> আগুন

মোস্তফা মেহমুদ> মনিহার

(১৯৭৭)

আজিজুর রহমান> অমর প্রেম

সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া> জননী

দেওয়ান নজরুল> দোস্ত দুশমন

মোস্তফা মেহমুদ> মনের মানুষ

(১৯৭৮)

শফি বিক্রমপুরী> রাজ দুলারী

সাইফুল আজম কাশেম> সোহাগ

দীলিপ বিশ্বাস> আসামী

কাজী জহির> বধূ বিদায়

নারায়ণ ঘোষ মিতা> অলংকার

ইবনে মিজান> শাহজাদা

অশোক ঘোষ> তুফান

দারাশিকো> ফকির মজনু শাহ

(১৯৭৯)

কামাল আহমেদ> অনুরাগ

আজিজুর রহমান> মাটির ঘর (শাবানার প্রথম প্রযোজিত ছবি)

মাসুদ পারভেজ> জবাব

দেওয়ান নজরুল> বারুদ

সাইফুল আজম কাশেম> ঘর সংসার

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু> বন্দুক

আজিম> বদলা

মোস্তফা মেহমুদ> মাটির মানুষ

আজিজুর রহমান> সাম্পানওয়ালা

ফয়েজ চৌধুরী> বিজয়িনী সোনাভান

মমতাজ আলী> ঈমান

এই দশকে শাবানা অভিনয় করেন ৯১টি চলচ্চিত্রে, যার বেশির ভাগই ছিল জনপ্রিয় ও নন্দিত। বিশেষ করে ‘দোস্ত দুশমন’, ‘বাদশা’, ‘রাজ দুলারী’, ‘বধু বিদায়’, ‘মাটির ঘর’, ‘দুই রাজকুমার’, ‘তুফান’ ছিল সে সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। প্রথম থেকেই রাজ্জাকের সঙ্গে একটি জুটি গড়ে উঠে শাবানার, সে হিসেবে এই দশক পর্যন্ত রাজ্জাকের সঙ্গে করেন ৩৩টি চলচ্চিত্র, যা অবাক করার মতো। এ ছাড়া ওয়াসিমের সঙ্গে করেন আটটি, উজ্জ্বলের সঙ্গে আটটি আর আলমগীরের সঙ্গে জুটি হয়ে করেন ছয়টি চলচ্চিত্র, যার বেশির ভাগই ছিল সফল। একের পর এক সফল ছবি মোহনীয় রূপ আর অভিনয়ের মাধুর্য্য দিয়ে শাবানা তখন সিক্ত দর্শকদের ভালোবাসায়!

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য করার, তা হলো… স্বাধীনতার পরবর্তী প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘বাদশা’র (২৯/০৮/১৯৭৫) নায়িকা ছিলেন শাবানা!

‘ভাত দে’ সিনেমায় শাবানা-আলমগীর

*১৯৮০-১৯৮৯*

আশির দশকে ক্যারিয়ারের একেবারে তুঙ্গে শাবানা, যে ছবিই করছেন সেটাতেই যেন সফল হচ্ছেন। বছরের শুরুতেই মুক্তি পাওয়া আবদুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় ‘সখি তুমি কার’ (১১/০১/১৯৮০) ছবিটির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর বিভাগে পান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এতে তার সহশিল্পী ছিলেন রাজ্জাক ও ফারুক। একই বছর মুক্তি পায় তার প্রযোজিত দ্বিতীয় ছবি ‘রাজ নন্দিনী’ (১৪/০৩/১৯৮০), এফ কবির চৌধুরী পরিচালিত ছবিটি সে বছর চুটিয়ে ব্যবসা করে, নায়ক ছিলেন ওয়াসিম। একই বছরে আজিজুর রহমান বুলির ‘শেষ উত্তর’ (১১/০৪/১৯৮০) আজিজুর রহমানের ‘ছুটির ঘণ্টা’ (০২/০৫/১৯৮০) সাইফুল আজম কাশেমের ‘বৌরানী’ (২৭/১০/১৯৮০) ছবিগুলোর অসাধারণ অভিনয় তাকে সুখ্যাতি এনে দেয়। পরের বছর দিলীপ বিশ্বাসের ‘অংশীদার’ (০২/০১/১৯৮১), অশোক ঘোষের ‘বাদল’ (০৯/০১/১৯৮১), কামাল আহমেদের ‘পুত্রবধূ’ (১৩/০২/১৯৮১), হাফিজ উদ্দিনের ‘ঘরনি’ (২১/০৮/১৯৮১), এ জে মিন্টুর ‘বাঁধন হারা’ (২৮/০৮/১৯৮১), মমতাজ আলীর ‘কুদরত’ (৯/১০/১৯৮১),  কামাল আহমেদের ‘ভাঙা গড়া’র (০৯/১০/১৯৮১) মতো অভিনয়সমৃদ্ধ ছবি মুক্তি পায়।

১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল এই সময়টায় ছিল শাবানার সবচেয়ে সাফল্যময়। এ সময়ে প্রায় সব ছবিই ছিল সফল এবং  টানা তিনবার যথাক্রমে দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), নাজমা (১৯৮৩) ও ভাত দে (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আমজাদ হোসেন পরিচালিত জীবন ঘনিষ্ঠ ‘দুই পয়সার আলতা’ ছবিতে চাচার সংসারে থাকা গ্রামের এক অসহায় অনাথ মেয়ে কুসুমের চরিত্রে মর্মস্পর্শী অভিনয় করেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘নাজমা’ ছবিতে স্বামীর সংসারে নিগৃহীত নাজমা চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন। আমজাদ হোসেনের আরেক জীবন ঘনিষ্ঠ চরিত্র ‘ভাত দে’ ছবিতে সংগ্রামী দুঃখী জরি চরিত্রে হৃদয়স্পর্শী অভিনয় করেন, যা সে সময়ের মতো এখনো মানুষের মনে দাগ কাটে!

এ সময়ে তার অভিনীত অন্যান্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সমূহ যথাক্রমে:

(১৯৮২)

সাইফুল আজম কাশেম> সানাই

মতিন রহমান> লাল কাজল

জহিরুল হক> কেউ কারো নয়

সুভাষ দক্ত> সবুজ সাথী

মমতাজ আলী> নালিশ

কামাল আহমেদ> রজনীগন্ধা

আমজাদ হোসেন> দুই পয়সার আলতা

(১৯৮৩)

কামাল আহমেদ> লালু ভুলু

হাফিজউদ্দিন> ঝুমুর

এ জে মিন্টু> মান সম্মান (প্রযোজিত)

আজিজুর রহমান> মেহমান

সাইফুল আজম কাশেম> ধন দৌলত

মালেক আফসারী> ঘরের বউ

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু> নাগরানী

সামসুদ্দিন টগর> বানজারান

সুভাষ দত্ত> নাজমা

(১৯৮৪)

শেখ নজরুল ইসলাম> পরিবর্তন

মমতাজ আলী> নসিব

এম এ মালেক> হাসান তারেক

এফ কবির চৌধুরী> জালিম(প্রযোজিত)

অশোক ঘোষ> হিম্মতওয়ালী

মোতালেব হোসেন> সালতানাৎ

আজিজুর রহমান> মায়ের আঁচল

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু> মহল

কামাল আহমেদ> গৃহলক্ষ্মী

সুভাষ দত্ত> সকাল সন্ধ্যা

আমজাদ হোসেন> সখিনার যুদ্ধ

আমজাদ হোসেন> ভাত দে

(১৯৮৫)

এ জে মিন্টু> অন্যায়

দিলীপ বিশ্বাস> অস্বীকার

কামাল আহমেদ> মা ও ছেলে

(১৯৮৬)

কামাল আহমেদ> আওয়ারা

মোতালেব হোসেন> আক্রোশ

হাফিজউদ্দিন> অভাগী

আবদুস সামাদ> শিরি ফরহাদ

মমতাজ আলী> উসিলা

এ জে মিন্টু> অশান্তি(প্রযোজিত)

রাজ্জাক> চাপা ভাঙার বউ

(১৯৮৮)

আজিজুর রহমান বুলি> দেশ বিদেশ

বুলবুল আহমেদ> রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত

জহিরুল হক> সারেন্ডার

এ জে মিন্টু> লালু মাস্তান

সুভাষ দত্ত> স্বামী স্ত্রী (প্রযোজিত)

দিলীপ বিশ্বাস> অপেক্ষা

(১৯৮৮)

এ জে মিন্টু> বিশ্বাসঘাতক (প্রযোজিত)

হাফিজউদ্দিন> অবদান

প্রমোদ চক্রবর্তী ও তমিজউদ্দিন রিজভী> বিরোধ

গাজী মাজহারুল আনোয়ার> স্বাক্ষর

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু> কোহিনূর

শেখ নজরুল ইসলাম> বউ শাশুড়ি

(১৯৮৯)

শেখ নজরুল ইসলাম> বিধাতা

এ জে মিন্টু> সত্য মিথ্যা

মতিন রহমান> রাঙা ভাবী (প্রযোজিত)

জহিরুল হক> বিজয় (প্রযোজিত)

রায়হান মুজিব> ভাইজান

উল্লেখ্য… (৮০ থেকে ৮৯) এই দশকে শাবানা অভিনয় করেন মোট ১০৪টি চলচ্চিত্রে। আগেই বলেছি এ দশকটি ছিল শাবানাময়, সে হিসেবে অভিনয় করা তার বেশির ভাগ ছবিই ছিল জনপ্রিয় ও নন্দিত। গত দশকের মতো এই দশকেও রাজ্জাকের সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় শুরু করেন শাবানা, এক সঙ্গে করেন ৩১টি চলচ্চিত্রে অভিনয়, ওয়াসিমের সঙ্গে করেন বারোটি আর আলমগীরের সঙ্গে করেন সর্বাধিক ৩৬টি। এ ছাড়া বুলবুল আহমেদ, সোহেল রানা, মাহমুদ কলি, জসিমের সঙ্গেও জুটি হয়ে অভিনয় করেন।

চরিত্র ভেরিয়েশনে এই দশকেই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে শাবানাকে দেখা গেছে, কখনো সংসারের বৌরানী হয়ে কখনো নাগরানী, আবার কখনো বানজারান, কখনো জীবনযুদ্ধের একজন সখিনা, কখনো সারেন্ডারের প্রেমিকা, কখনো চাঁপা ডাঙার বউ, আবার কখনো অশান্তিতে প্রতিবাদী নারীর চরিত্রে— যার সব চরিত্রই ছিল সফল, আমার যদি ভুল না হয় তাহলে সম্ভবত নায়ক রাজরাজ্জাক পরিচালিত ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ছবিতেই শাবানা প্রথম ভাবির চরিত্রে অভিনয় করেন এবং দারুণভাবে সফল হন। ছবিটিতে তিনি এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যেখানে তাকে গ্রামের একজন সাধারণ নারীর চরিত্রে দেখা গেছে। অথচ এর আগের সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে ‘অশান্তি’, যেখানে তাকে দেখা গেছে একজন প্রতিবাদী নারীর চরিত্রে, যে একাই দশ বারো জন শত্রুদের শায়েস্তা করছে। দুটি ছবির একেবারে ভিন্ন দুটি চরিত্র, অথচ ছবি দুটিই ছিল মেগাহিট, দর্শকেরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল তার ভিন্নধর্মী দুটো চরিত্রকে। চরিত্রের এমন ভেরিয়েশন দক্ষতা যা একজন শাবানার দ্বারাই সম্ভব ছিল!

উল্লেখ্য… তৎকালীন বোম্বের (বর্তমান মুম্বাই) পরিচালক প্রমোদ চক্রবর্তী পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘শত্রু’ ছবিতে শাবানা অভিনয় করেন সে সময়ের সুপারস্টার রাজেশ খান্নার বিপরীতে, ছবিটি (৪/১১/১৯৮৮) যৌথ প্রযোজনা হিসেবে আমাদের দেশেও মুক্তি পেয়েছিল ‘বিরোধ’ নামে!

*১৯৯০-২০০০*

মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘বিজলী’ (১৫/১২/১৯৮৯) ছবির চটুল রোমান্টিক চরিত্র থেকে নব্বই দশকের শুরুতেই আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ঘর ভাঙা ঘর’ (১৬/০৩/১৯৯০)-এর মাধ্যমে চরিত্র ও ছবি বাছাইয়ে আমূল পরিবর্তনে চলে গেলেন শাবানা, নিজেকে মা ভাবি বড় বোনের চরিত্রে তুলে ধরলেন। এর যথার্থ কারণও ছিল, বয়সের একটা ব্যাপার ছিল, তা ছাড়া নিজের সঙ্গে মানায় না এমন চরিত্রে কখনই তিনি সায় দিতেন না। যার প্রেক্ষিতে ‘বিজলী’র অ-সফলতাই তাকে চরিত্র নির্বাচনে ভাবিয়েছে। সে হিসেবে সময়োপযোগী চরিত্রে অভিনয় করে আবারও তিনি নিজের সেরা অবস্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এ ধারার বেশির ভাগ ছবিতেই শাবানাসহ আরো বেশ কিছু চরিত্র দেখা গেছে, তবে ছবির মূল ফোকাস বা আলোটা ঠিকই তাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। যার প্রতিফলন হিসেবে ছবির মূল বক্তব্যটি শাবানাকে ঘিরেই থেকেছে। উদাহরণস্বরূপ; গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘স্বাধীন’ (০৪/০৭/১৯৯০), দিলীপ বিশ্বাসের ‘অকৃতজ্ঞ’ (০৪/০১/১৯৯১), দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘স্ত্রীর স্বপ্ন’ (১৫/০২/১৯৯১), এ জে মিন্টু পরিচালিত ‘পিতা মাতা সন্তান’ (১৭/০৪/১৯৯১) অন্যতম। এসব ছবির প্রতিটি কাহিনিই একাধিক চরিত্র সংবলিত, অথচ মূল কাহিনি শক্তি ছিল ওই শাবানাকেই ঘিরেই। এ রকম আরও বহু ছবির উদাহরণ দেয়া যাবে যেখানে শাবানাই ছিলেন ছবির প্রাণ। আবার এমনও কিছু ছবি আছে যেখানে নায়ক প্রধান হলেও শাবানার অভিনয় দক্ষতায় তা ম্লান হয়ে গেছে, অভিনয় জাদু দিয়েই পুরো হলের দর্শকদের নজর নিজের দিকে ফিরিয়েছেন, ঢুকে গিয়েছেন সেসব ছবির মূল চরিত্রে সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছিলেন অগণিত দর্শকদের ভালোবাসায়, স্থান পেয়েছিলেন তাদের মণিকোঠায়।

গরীবের বউ, মায়ের দোয়া, স্বামীর আদেশ, স্ত্রীর স্বপ্ন, অচেনা, মরণের পরে, অকৃতজ্ঞ, পিতা মাতা সন্তান— লাগাতার সাফল্যের কারণে প্রযোজক/পরিচালকরা শাবানাকে সামনে রেখে গল্প তৈরি করতে লাগলেন এবং সফলও হলেন। সে সময়ে একটি বিষয়ে খুব লক্ষণীয় ছিল, তা হলো… যে সব ছবিতে শাবানার দুঃখের চরিত্র ছিল এবং যে-সব চরিত্রে তিনি চোখের পানি ফেলেছেন দেখা গেছে সে-সব ছবির প্রতি দর্শকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে মহিলা দর্শকদের এ ধারায় বেশি দেখা গেছে, অর্থাৎ দর্শকেরা শাবানার হাসিতে হেসেছে আবার তার দুঃখেও তারা কেঁদেছে। এ এক অদ্ভুত অভিনয় শক্তি যা আমার জানামতে আর কারো মধ্যে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে এক বিখ্যাত পরিচালক বলেছিলেন, শাবানার চোখের পানির দাম লাখ টাকা, অর্থাৎ শাবানা যে সব ছবিতে চোখের পানি ঝরাবেন তা হলেই সে ছবি ক্লিক করবেই!

সাল অনুযায়ী এ দশকের উল্লেখ্যযোগ্য কিছু ছবি:

(১৯৯০)

কামাল আহমেদ> প্রায়শ্চিত্ত

কামাল আহমেদ> গরীবের বউ

গাজী মাজহারুল আনোয়ার> স্বাধীন

আলমগীর কুমকুম> মায়ের দোয়া

আজহারুল ইসলাম> মরণের পরে

(১৯৯১)

এ জে মিন্টু> পিতা মাতা সন্তান

সাইফুল আজম কাশেম> স্বামীর আদেশ

রায়হান মুজিব> কাজের বেটি রহিমা

শিবলী সাদিক> অচেনা (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত)

শহীদুল ইসলাম খোকন> টপ রংবাজ

কাজী মোরশেদ> সান্ত্বনা

(১৯৯২)

মনোয়ার খোকন> লক্ষ্মীর সংসার (প্রযোজিত)

মতিন রহমান> অন্ধবিশ্বাস‌‌

মালেক আফসারী> ক্ষমা

গাজী মাজহারুল আনোয়ার> শ্রদ্ধা

(১৯৯৩)

দেওয়ান নজরুল> মাস্তান রাজা

শহীদুল ইসলাম খোকন> শত্রু ভয়ংকর

মোতালেব হোসেন> হিংসা

এ জে মিন্টু> বাংলার বধূ

(১৯৯৪)

দেওয়ান নজরুল> কালিয়া

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু> জজ ব্যারিস্টার

শহীদুল ইসলাম খোকন> দুঃসাহস

মোতালেব হোসেন> শাসন

গাজী মাজহারুল আনোয়ার> স্নেহ

শহীদুল ইসলাম খোকন> ঘাতক

ফারুক হোসেন> সবার উপরে মা

ইস্পাহানী আরিফ জাহান> বিদ্রোহী বধূ

(১৯৯৫)

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু> চাকরানী

দেওয়ান নজরুল> বাংলার নায়ক

মনোয়ার খোকন> সংসারের সুখ দুঃখ

(১৯৯৬)

মনোয়ার খোকন> ঘাত প্রতিঘাত (প্রযোজিত)

গাজী মাজহারুল আনোয়ার> তপস্যা

সোহানুর রহমান সোহান> বিদ্রোহী কন্যা

মোতালেব হোসেন> স্ত্রী হত্যা

বাদল খন্দকার> বিশ্বনেত্রী

ছটকু আহমেদ> সত্যের মৃত্যু নেই

আলমগীর(অভিনেতা)> নির্মম

মালেক আফসারী> দুর্জয়

(১৯৯৭)

মনোয়ার খোকন> স্বামী কেন আসামী (প্রযোজিত)

শহীদুল ইসলাম খোকন> পালাবি কোথায় (ছবিটি না চললেও পরে বেশ আলোচিত ছিল)

মতিন রহমান> স্নেহের বাঁধন

শহীদুল ইসলাম খোকন> নর পিশাচ

(১৯৯৮)

মনোয়ার খোকন> মেয়েরাও মানুষ (শেষ প্রযোজিত ছবি)

মোতালেব হোসেন> ভালোবাসার ঘর

সোহানুর রহমান সোহান> অগ্নি সাক্ষী

সোহানুর রহমান সোহান> মা যখন বিচারক

গাজী মাজহারুল আনোয়ার> পরাধীন

(১৯৯৯)

মনোয়ার খোকন> জিদ্দি

মনোয়ার খোকন> একটি সংসারের গল্প

হাফিজউদ্দিন> লাট সাহেব

(২০০০)

আজিজুর রহমান> ঘরে ঘরে যুদ্ধ(শাবানার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র)

উল্লেখ্য… (১৯৯০থেকে২০০০) পর্যন্ত শাবানা অভিনয় করেন মোট ৮৭টি চলচ্চিত্রে, যার বেশির ভাগই তাকে কেন্দ্র করে নির্মিত, জনপ্রিয় ও নন্দিত। তবে সহ অভিনেতা হিসেবে গত দুই দশকের মতো এবার রাজ্জাকের থেকে আলমগীরকেই পাশে পেয়েছেন বেশি, যার পরের অবস্থানে আছেন জসিম, রাজ্জাকের সঙ্গে মাত্র আটটি ছবিতে জুটি হয়ে অভিনয় করেন তিনি, সে ক্ষেত্রে জসিমের সঙ্গে করেন ২১টি আর আলমগীরের সঙ্গে করেন সর্বাধিক ৪২টি। মজার ব্যাপার হলো শাবানা নায়িকা চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন আজিজুর রহমানের প্রযোজনায় ‘চকোরি’ ছবিটিতে আর চলচ্চিত্রে ইতি টানেন তারই পরিচালনায় ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবির মাধ্যমে!

*শাবানার নায়কেরা*

রাজ্জাক-আলমগীর নাকি জসিম, কার সঙ্গে শাবানাকে বেশি মানাতো— এমন মধুর প্রশ্নের উত্তর সব সময় খুঁজেছেন দর্শকেরা। রাজ্জাক-আলমগীর-জসিম তিনজনই জাঁদরেল অভিনেতা, তিনজনের সঙ্গেই আছে শাবানার বহু হিট ছবির অভিজ্ঞতা। তিনি যখনই যার সঙ্গে পর্দায় এসেছেন দর্শকেরা তা মনভরে উপভোগ করেছেন, কোন বিতর্কে জড়াননি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যেমন রাজ্জাক তার একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন তেমনি মধ্য ক্যারিয়ার থেকে একেবারে শেষ অবধি আলমগীর/জসিম তার পাশে থেকেছেন। তবে এদের মাঝে শাবানার পয়মন্ত নায়ক ছিলেন ওয়াসিম, ইবনে মিজানের ‘ডাকু মনসুর’ (২৬/০৭/১৯৭৪), ‘দুই রাজকুমার’ (২৫/০৭/১৯৭৫), শফি বিক্রমপুরীর ‘রাজদুলারী’ (২০/০১/১৯৭৮), শামসুদ্দিন টগরের ‘বানজারান’ (১৮/১১/১৯৮৩), দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ (১৫/০৭/১৯৭৭), অশোক ঘোষের ‘তুফান’ (১৩/১০/১৯৭৮), এফ কবির চৌধুরীর ‘রাজ নন্দিনী’ (১৪/০৩/১৯৮০) বাম্পার হিট ব্যবসা করে। এ জুটির ছবিই যেন সে সময়ে রজতজয়ন্তী-সুবর্ণজয়ন্তীর ছড়াছড়ি!

আজিজুর রহমানের ‘মাটির ঘর’ (২৭/০৪/১৯৭৯), নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘অলংকার’ (১৫/০৯/১৯৭৮), আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সখি তুমি কার’ (১১/০১/১৯৮০), বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’ (২৯/১০/১৯৭৬), সাইফুল আজম কাশেমের ‘সোহাগ’ (১০/০৩/১৯৭৮), ‘বৌরানী’ (২৭/১০/১৯৮০),  ‘সানাই’ (১২/০২/১৯৮২), আজিজুর রহমানের ‘ছুটির ঘণ্টা’ (০২/০৫/১৯৮০), দিলীপ বিশ্বাসের ‘অংশীদার’ (০২/০১/১৯৮১), কামাল আহমেদের ‘পুত্রবধূ’ (১৩/০২/১৯৮১), ‘ভাঙাগড়া’ (০৯/১০/১৯৮১), ‘রজনীগন্ধা’ (১৪/১০/১৯৮২), মতিন রহমানের ‘লাল কাজল’  (০৭/০৫/১৯৮২), আমজাদ হোসেনের ‘দুই পয়সার আলতা’ (৩১/১২/১৯৮২)-সহ আরো বহু সফল ছবি উপহার দিয়েছেন রাজ্জাক-শাবানা, সিক্ত হয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসায়!

‘ডাকু মনসুর’, ‘লুকোচুরি’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘রাজ দূলারী’, ‘বদলা’, ‘বিজয়িনী সোনাভান’, ‘ওমর শরীফ’-এর মতো সুপারহিট ছবিগুলোতে মন্দ চরিত্রে একজন জসিমের নখরামি দেখেছেন শাবানা। অনেক ছবিতে ভয়ংকর রূপে জসিমকে পরাস্তও করতে হয়েছে তাকে। দর্শকরাও তা মনভরে উপভোগও করেছেন। আবার মন্দ চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসা নায়ক রূপে জসিমের বুকে শাবানার মাথা রাখাও সাদরে গ্রহণ করেছে দর্শক। নায়ক/নায়িকা হয়ে এ জুটির প্রথম ছবি ‘সারেন্ডার’ (১৭/০৪/১৯৮৭) রীতিমতো সিনেমা হল কাঁপিয়েছে, মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে সেই বিখ্যাত গান ‘সবাই তো ভালোবাসা  চায়, কেউ পায়, কেউ বা হারায় তাতে, প্রেমিকের কি আসে যায়’… ছবিটির অভাবনীয় সাফল্যে তখনকার সময়ের প্রযোজক-পরিচালকরা নড়েচড়ে বসেন। নির্মাণ হতে থাকে একের পর এক সুপারহিট ছবি। শেষের দিকে শাবানার বেশির ভাগ ছবির নায়ক ছিলেন জসিম। অবাক করার বিষয় হলো এই জুটির দর্শকপ্রিয়তা শেষদিন পর্যন্ত অটুট ছিল।

শাবানা-জসিম জুটির উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের মধ্যে জহিরুল হকের ‘সারেন্ডার’ ‘বিজয়’ (৩০/০৬/১৯৮৯), দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কোহিনূর’ (১১/১১/১৯৮৮), রায়হান মুজিবের ‘ভাইজান’ (১৪/০৭/১৯৮৯), ‘কাজের বেটি রহিমা’ (২৪/০৬/১৯৯১), মনোয়ার খোকনের ‘লক্ষ্মীর সংসার’ (০৩/০১/১৯৯২), ‘জিদ্দি’ (১৯/০১/১৯৯৯), দেওয়ান নজরুলের ‘মাস্তান রাজা’ (০১/০১/১৯৯৩), ‘কালিয়া’ (১৫/০৩/১৯৯৪), ‘বাংলার নায়ক’ (০৩/০৩/১৯৯৫), মোতালেব হোসেনের ‘হিংসা’ (২৫/০৩/১৯৯৩), ‘স্ত্রী হত্যা’ (২৯/০৪/১৯৯৬), বাদল খন্দকারের ‘বিশ্বনেত্রী’ (২৯/০৪/১৯৯৬) অন্যতম!

শাবানার সর্বাধিক সফল ছবির নায়ক ছিলেন আলমগীর, শুরুটা ৭০-দশকে হলেও জুটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় আশির দশকের পরপরই এ জে মিন্টুর ‘মান সম্মান’(১৩/০৫/১৯৮৩) ছবিটির মধ্য দিয়ে। শাবানা প্রযোজিত ছবিটি সে সময়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অবশ্য এর আগে ‘সাম্পানওয়ালা’ (১৯/১০/১৯৭৯)-সহ ‘মনের মানুষ’, ‘মধুমিতা’, ‘অতিথি’, ‘মনিহার’ ছবিগুলোও হিট হয়। তবে আলোচনার টেবিলে তারা আসেন ওই ‘মান সম্মান’ ছবিটি দিয়েই, শুরু হয় শাবানা/আলমগীরের এক দীর্ঘ পথচলা, যে পথ শুধুই সফলতায় ভরা। আশি দশকের মধ্যবর্তী থেকে নব্বই দশকের শেষ অবধি ছিলেন জুটি হয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাদের জনপ্রিয়তার প্রভাব এতটাই ছিল যে তা ছড়িয়ে পড়েছিল শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জ, হাটে-ঘাটে প্রতিটি ঘরে ঘরে। বাণিজ্য নির্ভর সুস্থ সামাজিক পারিবারিক শিল্পশোভন চমৎকার সব ছবিতে অভিনয় করেছেন তারা।

তাদের অভিনীত কিছু নন্দিত চলচ্চিত্র যেমন; আজিজুর রহমানের ‘সাম্পানওয়ালা’, এ জে মিন্টুর ‘মান সম্মান’, ‘অন্যায় অত্যাচার’, ‘অশান্তি’, ‘লালু মাস্তান’, ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘বাংলার বধূ’,   দীলিপ বিশ্বাসের ‘অস্বীকার’, ‘অপেক্ষা’, সাইফুল আজম কাশেমের ‘ধন দৌলত’, ‘স্বামীর আদেশ’, এম এ মালেকের ‘হাসান তারেক’, সুভাষ দত্তের ‘সকাল সন্ধ্যা’, আমজাদ হোসেনের ‘ভাত দে’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, কামাল আহমেদের ‘ব্যথার দান’, ‘গরীবের বউ’, মতিন রহমানের ‘রাঙা ভাবী’, আজহারুল ইসলামের ‘মরণের পরে’, আলমগীর কুমকুমের ‘মায়ের দোয়া’, কাজী মোরশেদের ‘সান্ত্বনা’, বেলাল আহমেদের ‘বন্ধন’, জামশেদুর রহমানের ‘ননদ ভাবী’, মোতালেব হোসেনের ‘শাসন’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারে ‘স্নেহ’, শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ঘাতক’, ‘নর পিশাচ’, মনোয়ার খোকনের ‘সংসারের সুখ দুঃখ’, ‘একটি সংসারের গল্প’, সোহানুর রহমান সোহানের ‘বিদ্রোহী কন্যা’, ‘মা যখন বিচারক’, মালেক আফসারীর ‘দুর্জয়’,  আলমগীর পরিচালিত ‘নির্মম’ উল্লেখ্যযোগ্য। উল্লেখ্য শাবানার শেষ ছবি ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ (০৯/০২/২০০০)-এর নায়কও ছিলেন আলমগীর!

ওপরের উল্লেখিত নায়ক ছাড়াও শাবানা জুটি হয়ে কাজ করেছেন জাভেদ, সোহেল রানা, বুলবুল আহমদ, ফারুক, উজ্জ্বলদের মতো তারকা অভিনেতাদের সঙ্গেও। অভিনয় জীবনের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাবানা ‘সখি তুমি কার’ (১১/০১/১৯৮০) চলচ্চিত্রের জন্য, যেখানে তার সহশিল্পী রাজ্জাক ছাড়াও ছিলেন ফারুক। ফারুকের সঙ্গে এরপর করেন স্বপন সাহার ‘ভাই ভাই’ (৩০/০৫/১৯৮০), আবদুস সামাদ খোকন পরিচালিত ‘মাটির পুতুল’(০৩/০৮/১৯৮১), আজিজুর রহমানের ‘মেহমান’ (২২/০৭/১৯৮৩)।  ফারুকের সঙ্গে এই চারটি ছবি ছাড়াও ‘চোখের মনি’, ‘ছক্কা পাঞ্জা’, ‘মায়ের আঁচল’সহ মোট আটটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাবানা।

সোহেল রানার সঙ্গে জুটি হয়ে প্রথম ছবিটি করেন এফ এ বেনুর পরিচালনায় ‘রাজরানী’ (০৮/১০/১৯৭৬)। এরপর করেন এ জে মিন্টুর ‘বাঁধন হারা’ (২৮/০৮/১৯৮১), শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘টপ রংবাজ’ (০৬/১২/১৯৯১) ও ‘চোখের পানি’ (০৪/১২/১৯৯২)-র মতো হিট চলচ্চিত্রে। বুলবুল আহমেদ ও উজ্জ্বলের সঙ্গে শাবানার জুটিও বেশ জমে গিয়েছিল। এই দুজনের সঙ্গেই রয়েছে তার বিশাল বড় হিটের ছবির তকমা।

বুলবুলের সঙ্গে কাজী জহিরের পরিচালনায় ‘বধু বিদায়’ (১৯/০৫/১৯৭৮) ও মমতাজ আলীর পরিচালনায় ‘নসিব’ (১৮/০৫/১৯৮৪)— দুটি ছবিই দর্শকদের ভালোবাসায় সিনেমা হলে চলেছে মাসের পর মাস। বুলবুল আহমেদের সাথে শাবানার উল্লেখ্যযোগ্য কিছু ছবি— মোস্তফা মেহমুদের ‘মনের মানুষ’ (২২/১১/১৯৭৭), সাইফুল আজম কাশেমের ‘সানাই’ (২১/০২/১৯৮২), দিলীপ বিশ্বাসের ‘অপমান’ (০৫/০৮/১৯৮৩), কামাল আহমেদের ‘মা ও ছেলে’(২৭/০৮/১৯৮৫) অন্যতম। এদিকে উজ্জ্বলের সঙ্গে নূরুল আলম পরিচালিত ‘আঁধারে আলো’ (০৮/০২/১৯৭৪), আজিজুর রহমানের ‘গরমিল’ (১৬/০৭/১৯৭৬), ‘অনুভব’ (১৩/০২/১৯৭৭), মঞ্জুর হোসেনের ‘দূটি মন দুটি আশা’ (০৫/১০/১৯৭৯), মমতাজ আলীর ‘ঈমান’ (০৮/১০/১৯৭৯), ‘কুদরত’ (০৯/১০/১৯৮১), ‘নালিশ’ (১০/০৯/১৯৮২) ‘উসিলা’ (১৪/০৩/১৯৮৬) অন্যতম।

অভিনেতা ও নৃত্য পরিচালক জাভেদের সঙ্গে শাবানা প্রথম অভিনয় করেন মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘মুন্না আউর বিজলী’ (১৭/০৫/১৯৭২) ছবিতে। এরপর বাবা ফয়েজ চৌধুরীর পরিচালনায় করেন ‘মালকাবানু’ (১৫/১০/১৯৭৪) যা দারুণ সফল হয়েছিল। একই পরিচালকের ‘বিজয়িনী সোনাভান’ও (১৪/০৯/১৯৭৯) ছিল সফল একটি ছবি। এ ছাড়া জাফর ইকবাল, নাদিম, খসরু, মাহমুদ কলি, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে অভিনয় করেন শাবানা।

শাবানা তার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং বিশটির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ১৯৭৯ সালে তারা গড়ে তোলেন এসএস প্রডাকশন নামের একটি চলচ্চিত্র প্রডাকশন হাউস। যেখান থেকে শাবানা উপহার দেন বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র, যার মধ্যে মাটির ঘর, সোনার তরী, রাজ নন্দিনী, নাজমা, লাল কাজল, মান সম্মান, রাজার মেয়ে বেদেনী, স্বামী স্ত্রী, অশাম্তি, স্বপ্নের পুরুষ, বিজয়, অন্ধবিশ্বাস‌‌, রাঙা ভাবী, অচেনা, লক্ষ্মীর সংসার, ঘাত প্রতিঘাত, মেয়েরাও মানুষ, স্বামী কেন আসামী, স্বামী ছিনতাই-এর মতো সফল সব চলচ্চিত্র।

অভিনয় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এছাড়াও শাবানা বাচসাসসহ অন্যান্য সংগঠনের অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। আমার যদি ভুল না হয় তাহলে শাবানাই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি জীবনের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ১৯৭৭ সালে ‘জননী’ ছবিতে তাকে পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত করায়। মজার ব্যাপার হলো, এই নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মধ্যে দুইবার তিনি হ্যাটট্রিকও করেছিলেন, সম্ভবত এটাও একটি রেকর্ড। ছবিগুলো হলো— ‘সখি তুমি কার’ (১৯৮০), ‘দুই পয়সার আলতা’ (১৯৮২), ‘নাজমা’ (১৯৮৩), ‘ভাত দে’ (১৯৮৪), ‘অপেক্ষা’ (১৯৮৭), ‘রাঙা ভাবী’ (১৯৮৯), ‘মরণের পরে’ (১৯৯০) ‘গরীবের বউ (শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসেবে ১৯৯০) ও ‘অচেনা’(১৯৯১)৷

মধ্য আশি থেকে নব্বই দশকের পুরোটা সময় জুড়ে শাবানাকে নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় একটি কথার খুব চল ছিল। তা হলো, ‘শাবানার চোখের পানির দাম নাকি লাখ টাকা’। আসলেই তাই… মধ্য আশি থেকে নব্বই পুরোটা যখন শাবানা সামাজিক পারিবারিক ছবিতে নিজেকে তুলে ধরছেন ঠিক তখনই মধ্যবয়সী থেকে বাড়ির নতুন বউ ঝিরা যেন শাবানার প্রতি নতুন করে ভক্ত বনে গেছেন। বিভিন্ন ছবিতে শাবানার পারিবারিক সংগ্রামী চরিত্রের সঙ্গে তার দুঃখ ভরাক্রান্তের অশ্রুসজল যেন দর্শকদের মনে মিলেমিশে যায়। বিশেষ করে মহিলা দর্শকেরা যেন নিজেদের জীবনের গল্পকেই খুঁজে পায় একজন শাবানার মাঝে, তাইতো শাবানার এমন জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে বহু প্রযোজক পরিচালকরা চাইতেন যেন তাদের ছবির যে কোন একটি দৃশ্যে শাবানার চোখে অশ্রু ঝরে… আর তাতেই যেন ছবির ভাগ্য খুলে যাবে। এবং হতোও তাই… বহু মহিলা দর্শকদের দেখা গেছে শাবানার দুঃখী চরিত্র নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপেও করতে, এ যেন এক অভাবনীয় ব্যাপার, একজন শাবানা যে কীভাবে প্রতিটি দর্শকদের মনে গেঁথে গিয়েছিলেন তা এই ছোট্ট উদাহরণটুকুই যথেষ্ট।

শাবানা তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন, আলোকিত করেছেন কতশত সিনেমা হলের রঙিন পর্দা। সেসব ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো— সোহাগ, বধূ বিদায়, অবুঝ মন, দুই পয়সার আলতা, মধু মিলন, সত্য মিথ্যা, মধুমিতা, মিলন, ভাত দে, সানাই, সখী তুমি কার, সবুজ সাথী, মান সম্মান, কেউ কারো নয়, মাটির ঘর, চাঁপা ডাঙার বউ, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, পুত্রবধূ, ওরা ১১ জন, লক্ষ্মীর সংসার, ছুটির ঘণ্টা, মনিহার, নসিব, উসিলা, নালিশ, মরণের পরে, জজ ব্যারিস্টার, শাসন, বাংলার বধূ, অশান্তি, জালিম, ভাবীর সংসার, ননদ ভাবী, স্বামীর আদেশ, বউ রানী, ঈমান, তুফান, রাজ নন্দিনী, ঘর সংসার, রাজ দুলারী, বানজারান, শশীপুণ্য, শিরি ফরহাদ, আশার আলো, নাজমা, অন্ধবিশ্বাস, ভাইজান, সবুজ সাথী, পিতা মাতা সন্তান, মিথ্যার মৃত্যু, সত্যের মৃত্যু নেই, স্ত্রী হত্যা, স্নেহ, কন্যা দান, গরীবের বউ, রাঙা ভাবী, অগ্নিসাক্ষী, মায়ের দোয়া, চাকরানী, স্বামী কেন আসামী, মেয়েরাও মানুষ, কাজের বেটি রহিমা, নির্মম, বাংলার মা, সবার উপরে মা, মা ছেলে, চাষীর মেয়ে, দুরে থেকে কাছে, মায়ার বাঁধন, ঘরে ঘরে যুদ্ধ, অপেক্ষা, সমর, হাসান তারেক, মায়ের দোয়া, টপ রংবাজ, রাগ অনুরাগ, মা যখন বিচারক, তপস্যা, আসামী, দোস্ত দুশমন, সুখের স্বর্গ, স্নেহের বাঁধন, গৃহবধূ, নীল সাগরের নিচে, বেঈমান, বাংলার নায়ক, শত্রু ভয়ংকর, বন্ধন, বাংলার মা, অজান্তে, ভালোবাসার ঘর, স্ত্রীর স্বপ্ন, লালু মাস্তান, একটি সংসারের গল্প, আখেরি মোকাবেলা, রজনীগন্ধা, প্রায়শ্চিত্ত, ঘরে ঘরে যুদ্ধ ইত্যাদি।

ব্যক্তি জীবনে শাবানার দুই মেয়ে সুমি ও উর্মি ও একমাত্র ছেলে নাহিন, বর্তমানে শাবানা সপরিবারে আমেরিকাতে বসবাস করছেন।

একজন শাবানা যেমন চলচ্চিত্রের রূপালি পর্দায় অভিনয়ের আলো ছড়িয়েছেন তেমনি তার অভিনীত বহু চলচ্চিত্রের গান দিয়েও দর্শকমহলে দিয়েছেন দোলা, যা এখনো মানুষের মনে গেঁথে আছে ভালো লাগা আর ভালোবাসার পরশ নিয়ে৷

শাবানা অভিনীত জনপ্রিয় কিছু গান:

বলবো কী আর ওগো তুমি যে আমার (সানাই), আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো (রজনীগন্ধা), যদি ভালোবেসে কাছে এলে বন্ধু (রজনীগন্ধা), তুমি ভুলে যেয়ো সবই শুধু এই কথা ভোলো না (স্বাধীন), চিনেছি তোমারে আকারে প্রকারে (ভাত দে), ভালোবেসে ভুল করেছি (ভাত দে), জীবন যেন শুরু হলো এবার নতুন করে (সান্ত্বনা), আঙুল কেটে আলতা করে (দুই পয়সার আলতা), এই দুনিয়া এখনতো আর (দুই পয়সার আলতা), সুখে দুঃখে জনম জনম (মায়ের দোয়া), তুমি আশা ভালোবাসা (ঘর দুয়ার), কী দিয়া মন কাড়িলা (অশান্তি), এই আমি ওগো সেই আমি (অশান্তি), ভালোবেসে গেলাম শুধু (কেউ কারো নয়), সবাইতো ভালোবাসা চায় (সারেন্ডার), মধু বনে কানে কানে (বানজারান), হাঁটু জলে নেমে কন্যা (বানজারান), এক দিল দিবানা আমার (নসিব), এসো না ভাব করি প্রেমে ডুবে মরি (নসিব), এক পলকে ওগো (ঘর দুয়ার), যে দিকে তুমি দেখবে দুচোখে (স্বামী স্ত্রী), তোমার নামে শপথ নিলাম (মায়ার বাঁধন), ও দুটি হাত চিরদিন থাক (ঘর সংসার), ওগো প্রিয়তমা (মনের মানুষ), আমার সুখের জীবনে (রাগ অনুরাগ), নজর লাগবো বলে (লাল কাজল), কত দূরে আর কত দূরে (সখি তুমি কার), লাভ মানে কী (মনিহার), ফুল দিয়ে বিনিময়ে মন নিও না (আলতা বানু), তুমি আমার মনের রাজা (রাজ রানী), আমি কারে কী বলিবরে (সখিনার যুদ্ধ), আনা আনা ষোলো আনা (নালিশ), এমন একটি মানুষও কি নাই (নসিব), ওমন করে যেও না গো তুমি (ঈমান), আরে রে রে রে মোর পায়েরও ঘুঙুর (রাজ দুলারী), আরে লাল গোলাপী অঙ্গ আমার (রাজ নন্দিনী), কথা দাও সাথী হবে (রাজ নন্দিনী), ও দরিয়ার পানি (তুফান), ডাকে বারেবারে কে আমারে (শিরি ফরহাদ), এই ভালোবাসা বেঁচে থাকবে (হিম্মতওয়ালী), সন্ধ্যারও ছায়া নামে (পুত্রবধূ), শুধু গান গেয়ে পরিচয় (অবুঝ মন), চিঠি দিও প্রতিদিন (অনুরোধ), দুঃখ আমার বাসর রাতের (অলংকার), জীবনও আঁধারে পেয়েছি তোমারে (পুত্রবধূ), ও পাখি তোর যন্ত্রণা  (অতিথি), শত জনমের স্বপ্ন (রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত), যমুনা বড় বেইমান (রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত), কত দুরে ভালোবাসার ঠিকানা (সখি তুমি কার), প্রেমেরও ছোট্ট একটি ঘর আমায় দাও (ঝুমুর), চোখের নজর এমনি কইরা (ফকির মজনু শাহ), হীরার চেয়ে দামি (তুফান), প্রেম করেছো তুমি তাই মন দিয়েছি আমি (রাজ দুলারী), তুমি আরো কাছে আসিয়া (পিতা মাতা সন্তান), আমার এই ঘর যেন স্বর্গ (সত্য মিথ্যা) ও তুমি আছো বলে আমি সোহাগিনী (বৌরানী)।


মন্তব্য করুন