Select Page

টান-এর প্রাণ বুবলি

টান-এর প্রাণ বুবলি

শবনম বুবলি। উপস্থাপিকা থেকে শাকিব খানের নায়িকা। ঐ যে ‘দিল দিল দিল’ গানটা হিট হয়েছিলো, গান দিয়েই তার পরিচিতি। কিন্তু শবনম বুবলি অভিনেত্রী হিসেবে কেমন?

কাল পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তরে দর্শকদের যে রেসপন্স আসতো তা সত্যিই হতাশাজনক।

বাংলা সিনেমার নায়িকাদের আবার অভিনয়?

চরিত্র বলতে তো ঐ নায়কের সঙ্গ দেয়া আর গানে সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে নাচা।

অথচ মাত্র কিছু কাল আগেও বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি শাসন করে গেছেন শাবানা, ববিতা কিংবা পরবর্তীতে শাবনূর, মৌসুমীরা।

কেন আরেকজন শাবানা নেই, কেন শাবনূরের পর আর কোন দাপুটে অভিনেত্রী আমরা বাংলা সিনেমায় পাইনি?

অনেকেই বলবেন তাদের মতো অভিনেত্রী বারবার জন্মায় না। অথচ শাবানা কিংবা শাবনূরের জন্ম একদিনে হয়নি। তাদেরকে নির্মাতারা একের পর এক শক্তিশালী চরিত্র দিয়েছেন। আজকের নায়িকাদের সেই সুযোগটাইতো নেই।

একজন শবনম বুবলিকে তাই শাকিব খানের নায়িকা হিসেবেই দেখতে হয়। ঐটুকুই সুযোগ তার।

অথচ শাবানা, ববিতারা থাকতেন ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শাবনূর পর্দায় নাচে-গানে যেমন দর্শক মাতাতেন তেমনি তার চরিত্র থাকতো ছবির প্রাণ হয়ে।

আজকের শবনম বুবলিদের চরিত্র শুধু ঐ সাংবাদিক হয়ে ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়ানো কিংবা বার ড্যান্সার রুপে মঞ্চে নেচে বেড়ানো। এইটুকুই তাদের স্পেস।

আফসোস হয়। সত্যিই আফসোস হয়। এই আধুনিক যুগে এসে চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রের স্পেস দেখে হতাশ না হয়ে পারা যায় না।

অথচ বর্তমান নায়িকারাও যে সুযোগ পেলে কতটা জ্বলে উঠতে পারেন তার প্রমাণ আমরা বার বার পেয়েছি। রায়হান রাফি’র ‘টান’ দেখার পর অভিনেত্রী বুবলিকে দেখেও দর্শক বলতে বাধ্য হচ্ছে, এই বুবলি এতোদিন কোথায় ছিলো?

চরকি’র নতুন ছবি ‘টান’ দেখার সাথে সাথেই আমি রিভিউ লিখেছি এবং সেখানে বুবলি’র অভিনয়ের প্রশংসা করেছি। কিন্তু আজ মনে হলো বুবলির প্রশংসার জন্য ঐ কয়েক লাইনই যথেষ্ট নয়। যে বুবলিকে এর আগে তুচ্ছ করে দেখতাম আজ এমন একটি শক্তিশালী চরিত্রে চমৎকার অভিনয় দেখানোর পর মন খুলে তার প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে।

বিশেষ করে এই সময়ে যেখানে পর্দায় নারী চরিত্রকে একপ্রকার শো পিস করে রাখার বাজে ট্রেন্ড চলছে সেখানে একজন সাম্যবাদী চেতনার মানুষ হিসেবে বুবলির এই ট্রান্সফরমেশনকে এপ্রিশিয়েট না করে পারছিনা।

টান ছবির গল্প গড়ে উঠেছে অবনী নামের এক স্ট্রাগলার তরুণীকে কেন্দ্র করে। মেয়েটি বোনের বাসায় থাকে। সাধারণ একটা চাকুরী করে যার কারণে বোনের বাড়িতে নানা জনের নানা কথা শুনে ছোট হয়েই থাকতে হয়। অন্যদিকে যে ছেলেটিকে সে ভালোবাসে সে ছেলেটি নেশায় আসক্ত। তারপরও অবনী ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘর বাঁধে। কিন্তু এতে তার স্ট্রাগল কমে না বরং আরো বাড়ে।

স্ট্রাগলার তরুণীর চরিত্রে বুবলির মুখের রুক্ষতা, কণ্ঠের কর্কশতা, হৃদয়ের চাপা কান্না টান’কে টেনে নিয়েছে।

ছবিতে অন্য সবাই নিজ নিজ চরিত্রে ভালো করেছেন। যেমন, সিয়াম আহমেদ, সোহেল মন্ডল, নীলাঞ্জনা নীলা, ফারজানা ছবি এরা সবাই ভালো শিল্পী এবং ছবিতে এদের প্রত্যেকের চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। বুবলির প্রশংসা করছি বলে এটা ভাবার জো নেই যে অন্যরা প্রশংসা দাবি করেন না। আজ বুবলির প্রশংসা করে লিখছি, কাল হয়তো ছবির অন্য শিল্পীদের প্রশংসা করে লিখবো। এ ছবির প্রত্যেক শিল্পীই দারুণ চরিত্র পেয়েছেন এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন। তারপরও বুবলির চরিত্রটি আমার কাছে ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী চরিত্র মনে হয়েছে এবং তিনি তার চরিত্রের দাবী খুব ভালো ভাবেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন যার ফলে তার প্রশংসা করতে হচ্ছে সবার আগে।

কিছুদিন আগে ভীষণ আলোচিত ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ – এ অত্যন্ত শক্তিশালী একটি নারী চরিত্র দেখেছিলাম। ‘টান’কে অবশ্যই ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ – এর সাথে তুলনা করবো না কিন্তু তারপরও বলবো যে, টান- এর অবনী চরিত্রটিও এ সময়ের বাংলা ছবিতে আমার দেখা অন্যতম শক্তিশালী নারী চরিত্র।

দুইটি ছবিই এই মুহূর্তে জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি’তে দেখা যাচ্ছে। অনেকে ছবি দুটো দেখেছেন। অনেকে আবার হয়তো এখনো দেখেননি। যারা ছবি দুটো দেখেননি তারা দেখে নিতে পারেন। দেখার পরে অনেকেই হয়তো আমার কথার সাথে একমত হবেন যে, বাঁধন এবং বুবলি নামের দুইজন শক্তিশালী অভিনেত্রীর জন্ম হয়েছে এই দুই ছবির মাধ্যমে।

একজন সুস্থ সিনেমার দর্শক হিসেবে আমি চাই এরকম শক্তিশালী নারী চরিত্র নিয়ে আমাদের অভিনেত্রীরা পর্দায় নিয়মিত আসুক। অন্তত সিনেমার মতো প্রগতিশীল মাধ্যমটি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বেড়াজালে আটকে না থাকুক।

শক্তিশালী নারী চরিত্র এবং শক্তিশালী পুরুষ চরিত্রের সমন্বয়েই আরো একবার মাথা তুলে দাঁড়াক আমাদের সিনেমা।

ঠিক যেমন রায়হান রাফীর ছবিগুলোতে আমরা শক্তিশালী পুরুষ এবং শক্তিশালী নারী চরিত্রের সমন্বয় দেখি। রাফীর নতুন ছবি ‘টান’ – এও শক্তিশালী পুরুষ এবং শক্তিশালী নারী চরিত্রের সমন্বয় ঘটেছে বলেই একজন অভিনেত্রী বুবলিকে আবিষ্কার করতে পেরেছি আমরা।

রায়হান রাফীর মতো প্রগতিশীল চিন্তার নির্মাতারা আমাদের চলচ্চিত্রকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাক। ফিরিয়ে আনুক চলচ্চিত্রে স্বর্নালী সুদিন। আমাদের অভিনেত্রীরাও ফিরে পাক তাদের হারানো ইমেজ।

বুবলির মতো অভিনেত্রীরা ভালো ভালো চরিত্রে অভিনয় দেখানোর সুযোগ পাক এবং প্রমাণ করুক অভিনয়ে নারী শিল্পীরা পিছিয়ে নেই বরং এগিয়ে ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।


মন্তব্য করুন