Select Page

ট্রেলার রিভিউ: দর্শক আটকে রাখার মতো ‘সাড়ে ষোলো’

ট্রেলার রিভিউ: দর্শক আটকে রাখার মতো ‘সাড়ে ষোলো’

 ‘নাতাশা খুন হয়ে যাওয়ার পর নাতাশার লাশ নিশ্চয় আপনাদেরকে ফোন করে বলে নাই যে আমি খুন হয়েছি’- আশফাক রেজার এই উক্তিকে কেন্দ্র করেই গোটা গল্পের সব টুইস্ট ঘুরতে দেখা যাবে এমনটাই আঁচ করা যায় হইচইয়ের আপকামিং ওয়েব সিরিজ ‘সাড়ে ষোলো’র ট্রেলার দেখে। আগামী ১৭ আগস্ট (ভিজ্যুয়ালি সাড়ে ষোলো বলা যায়) মুক্তি পেতে যাচ্ছে ইয়াছির আল হকের পরিচালনায় সিরিজটি।

ট্রেলারের শুরুতেই কিছুটা ইন্ট্রোডাকশনের ধাঁচে গল্প বলার শুরু হয়। যেখানে দেখা যায় আলোচিত এক মামলার ফাইনাল হেয়ারিংয়ের আগের রাতে আশফাক রেজা তথা আফরান নিশো তার বান্ধবী নাতাশাকে নিয়ে প্রবেশ করছেন একটি হোটেলের (দ্য এলিট) ১৬.৫ নং ফ্লোরে৷ সেখানেই মৃত্যু ঘটে নাতাশার। এ মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয় রহস্যের ধুম্রজাল। প্রাইম সাসপেক্ট হিসেবে তার দিকে পুলিশ অফিসার আলতাফ তথা ইমতিয়াজ বর্ষণ আঙুল তুললেও পরে এই গোটা ঘটনার প্লটে বেশকিছু টুইস্ট হাজির করতে যাচ্ছেন পরিচালক ইয়াছির আল হক তা সহজেই বোধগম্য। তাহলে নাতাশাকে খুন করলো কে? আর আশফাক রেজাই বা এই খুনের রহস্য একরাতেই উদঘাটন করে পরদিনের শুনানিতে উপস্থিত হতে পারবেন কি না সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে অপেক্ষা করতে হবে সিরিজটি মুক্তি পাওয়া অবধি।

আফরান নিশোর লুকে দারুণ একটা আভিজাত্যের ছাপ দেখা গেছে। ভার্সেটাইল এই অভিনেতা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দারুণ সময় পার করছেন বর্তমানে তা বলাই যায়। আইনজীবী আশফাক রেজা চরিত্রে তিনি যে নতুন কিছু উপহার দিতে চলেছেন তা অনুমেয়ই বটে।

আফরান নিশোর সাথে জুটি হিসেবে নাতাশা চরিত্রে আফিয়া তাবাসসুম বর্ণের এক্সপ্রেশন কিংবা চাহনি কোনোটাই ঠিক ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে এত এত দারুণ সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর ভিড়ে নাতাশা নিজের ওপর ফোকাস কতটুকু ধরে রাখতে পারবেন তা বোঝা যাবে গোটা সিরিজটি দেখার পর।

গতবছর হইচইয়েই মুক্তি পেয়েছিলো ডিটেক্টিভ থ্রিলার ‘কাইজার’। সেখানটায় সেয়ানে সেয়ানে এক দারুণ অভিনয় দেখা যায় ইমতিয়াজ বর্ষণ ও আফরান নিশোর মধ্যে। এই দুই জুটি আবারো হাজির হচ্ছেন ‘সাড়ে ষোলো’তে। ট্রেলার দেখে এখানটায়ও দুজনকেই একে অন্যের বিপরীতে দেখা যাবেই মনে হচ্ছে। লড়াইটাও জমবে, আঁচ করা যায়ই। পুলিশ অফিসার আলতাফ চরিত্রে ইমতিয়াজ বর্ষণকে দেখা যাবে এখানটায়। যিনি আশফাক রেজাকে ধরার জন্য ওঁতপেতে ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। রেজাকে ধরার এই ব্যাকুলতা কেন? তা কি ব্যক্তিগত কিংবা কোনো গোষ্ঠীর রেজার প্রতি আক্রোশ বলেই? নাকি রেজা নিজেই একজন অপরাধী, যিনি আইনের চোখে ধুলো দিতে জানেন ভালোভাবেই? প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে সিরিজে।

এই ওয়েব সিরিজে আলাদা করে নজর কাড়তে পারেন রিনি চরিত্রে জাকিয়া বারী মম। মমকে একে দেখা যাবে নিউজ প্রেজেন্টার চরিত্রে যিনি উক্ত মামলার শুনানীর খবর পাঠ করছেন, আবার অন্যদিকে হোটেল এলিটেও তাকে দেখা যাবে আলতাফের সাথে প্রবেশ করছেন, ক্যামেরার সামনে স্বীকারোক্তি নিতে চাইছেন আশফাক রেজার কাছ থেকে। তার সাথে রেজার যে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া থাকছে সেটাও খুলতে পারে নতুন এক রহস্যের জট, এমনটাও মনে হবে ট্রেলার দেখে।

রাকিব চরিত্রে ইন্তেখাব দিনার সাদামাটাই। বুঝা যাচ্ছে তিনি এম্পেরর শু ফ্যাক্টরি যারা কিনা ভবন ধসের দায়ে অপরাধী হয়ে আদালতে লড়ছেন তাদের পক্ষে কাজ করছেন। আমরা দিনারকে সবসময় এই ধরনের চরিত্রেই দেখে আসি। দেখা যাক এই ওয়েব সিরিজে কতটুকু চমক দিতে পারেন।

এই ট্রেলারটি দেখে বুঝার উপায় নেই এটা ইয়াছির আল হকের ওটিটিতে প্রথম কাজ। কালার, মিউজিক, গল্পের সিলেকশন বা যাবতীয় মেকিং মিলে মুনশিয়ানাই দেখা যাচ্ছে। এছাড়া কাজটা ভায়োলেন্স নির্ভর থ্রিলার হলেও এখানে পাওয়ার কিংবা ডমিনেশনের একটা ইনফ্লুয়েন্স দেখা যাবে বলে আমার ধারণা। যেভাবে শু ফ্যাক্টরি ধসের খবরকে এম্পাসাইজ করা হচ্ছে তা আমাদেরই আশেপাশের গল্প বলা যায়। আমরা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি কিংবা সেজান জুসের ফ্যাক্টরির দুর্ঘটনার খবর তো জানিই। সুতরাং, এখানে কিছুটা পলিটিক্যাল মসলাও থাকছে কিছুটা এ ব্যাপারে নিশ্চিত। যদি এমন হয় তবে এই গল্প আর ওয়েব সিরিজ মিলে ইয়াছির আল হক যে একটা পাকা স্ক্রিনপ্লে হাজির করতে যাচ্ছেন এ ব্যাপারে দর্শক বুঝতে পারবেন।

আফরান নিশো, ইমতিয়াজ বর্ষণ, জাকিয়া বারী মম, শাহেদ আলী, ইন্তেখাব দিনারদের মতো একটা ‘Many Man Show’ এর ট্রেলারে বড় পরিসরে আফরান নিশোকেই হাজির করেছেন তারা। ট্রেলার কিংবা গল্প হিসেবে বা উক্ত অভিনেতারা এই কাজের ব্যাপারে যেমনটা বলছেন মিডিয়ায় সে অনুসারে এখানকার প্রত্যেকটা চরিত্রই যে কেউ কাউকে ছাড় দেওয়ার নয় সে সিদ্ধান্তে যাওয়া যায়। সে মতে ট্রেলারে সবার উপস্থিতি ছিলো না। হতে পারে দর্শককে আরো বেশি আগ্রহী করে তুলতে এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কিংবা হতে পারে আরো একটি ‘কাইজার’-এর মতো একজন প্রোটাগনিস্টকে ঘিরেই গল্পটা পাব আমরা। সে যাই হোক, এই ট্রেলার দর্শককে সতেরো তারিখে ‘সাড়ে ষোলো’ ওয়েব সিরিজ দেখতে আগ্রহী করে তুলবে তা নিশ্চিতভাবে বলেই শেষ করছি।


About The Author

সাইদ খান সাগর

সিনেমাকর্মী

Leave a reply