Select Page

দেবী : কিছু ভয় আর অনেক প্রত্যাশা

দেবী : কিছু ভয় আর অনেক প্রত্যাশা

হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদের জন্য এটি অবশ্যই দারুন উত্তেজনার বিষয় যে, ‘দেবী উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। অলিখিতভাবে এই ‘দেবী’ হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্র মিসির আলিকে নিয়ে লেখা উপন্যাস সিরিজের প্রথম বই। স্বাভাবিকভাবেই ভক্তদের জন্য এটি একই সাথে কিছু ভয় আবার অনেক প্রত্যাশার বাক্স নিয়ে আসছে।

হুমায়ূন আহমেদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘হিমু না মিসির আলি?  ব্যক্তিগত জীবনে আপনি কোনটি হলে খুশি হতেন?’

হুমায়ূন খুব আনন্দের সাথেই বলেছিলেন, ‘অবশ্যই মিসির আলি, কেননা বাস্তব জীবনে লজিকই স্তম্ভ।’

তাই নি:সন্দেহে ছবিটি প্রত্যাশার পারদ অনেক উপরে নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবাই যায়। পরিচালক অনম বিশ্বাসের উপর আমরা ভরসা করতে পারি তার মেধার জন্য। তিনি যৌথভাবে গাউসুল আলম শাওনের সাথে চিত্রনাট্য লেখেন ‘আয়নাবাজি’র জন্য, পেতে যাচ্ছেন ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অন্তত এতটুকু বলাই যায়, ‘দেবী’ তার জন্য প্রথম ছবি বলে যতটা চ্যালেঞ্জ, ততটাই ‘প্রত্যাশিত আমেজ’। হলে আড়াই ঘন্টার ছবি দেখতে গিয়ে গল্প ঝুলে যাবার ভয় থাকে, যেটা আয়নাবাজিতে হয়নি। কিন্তু পাঠক সমাজে বহুল পঠিত যে গল্পটি এখন পর্দায় আসবে তা কতটা জমে যায় সেটাই দেখবার বিষয়।

অনম বিশ্বাস বলছেন, ‘আমাদের এই শহরেই, আশে পাশে কোথাও একজনের জীবন ক্রমাগত দুলছে ন্যাচারাল আর সুপারন্যাচারালের ভেতর। একবার এদিক, আরেকবার ওদিক। এই দুই জগতের মাঝখানে বসবাস রানুর। আসলেই কি সুপারন্যাচরাল এক্সিস্ট করে? নাকি সবই মনগড়া . . . .দেবী সিনেমা’র রানুর মনের ভেতর সবাইকে আমন্ত্রণ।’

ছবিটি মুক্তি পাবে হয়তো বছরের শেষের দিকে। কিন্ত্য এপ্রিল থেকেই ফার্স্ট লুক, চরিত্র ভেদে আলাদা টিজার দিয়ে যেহেতু প্রচারণা শুরু হয়েছে বলাই যায়, ‘দেবী’ টিম বেশ আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছে। প্রথম টিজার দেখে দর্শকদের মধ্যে যতটা উত্তেজনা লক্ষ্য করছি ততটাই জিজ্ঞাসু তারা।

জয়া আহসান বর্তমান সময়ে দুই বাংলার পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। কিন্তু ‘রানু’ চরিত্রের বয়স উপন্যাসে ১৬-১৭, যা জয়ার বর্তমান বয়সের অর্ধেকেরও কম। পর্দায় তিনি বয়স সংকুচিত করে কতটা সাবলীল হতে পারেন তা দেখার ব্যাপার।

টিজারে জয়া শবনম ফারিয়াকে বলছেন, ‘আজ গাড়ি করে কোথাও যাবেন না’। ‘রানু’ চরিত্র সুপারন্যাচারাল, সে আগে থেকেই অনেক কিছু বলে দিতে পারে। তার বিয়ের পূর্ব ইতিহাস যথেষ্ট জটিল এটা পাঠক জানে। তবে টিজারে দেয়া এই ডায়লগটি পুরো উপন্যাসে নেই। উপন্যাস থেকে ছবি বানানো হলে কিছু যোজন বিয়োজন হতেই পারে। চিত্রনাট্যকার ছবির সময় আর বৈচিত্র্য মাথায় রেখে এগুলো করে থাকেন।

উপন্যাসটি যথেষ্ট দীর্ঘ, রানুর পাশাপাশি আছে নীলু, আনিস, বিলু, ভাড়া বাড়ির মালিক, রানুর গ্রামের বাড়িতে কিছু চরিত্রের সমাবেশ। এগুলো সামলানো একটি চ্যালেঞ্জ।

মিসির আলি ছবির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই, ভয় আছে কাস্টিং বিকশিত করানোতে। এর আগেও আয়নাবাজিতে বিভিন্ন সাজে তিনি মোহিত করেছেন দর্শককে। কিন্তু বয়স্ক, রোগা আর অগোছালো মিসির আলির চরিত্র, ভারিক্কি ভাব আর চাতুর্যময় অভিনয় কতটায় পর্দায় আনতে পারেন তিনি সেটাও দেখার বিষয়।

সেই ‘পথের পাঁচালি’ থেকে ‘দেবদাস’ সবখানেই এমনটা হয়েছে। স্বয়ং হুমায়ূন তার ‘আগুনের পরশমণি’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’,’শ্যামল ছায়া’, ‘চন্দ্রকথা’ করতে গিয়ে নিজেই তার উপন্যাস থেকে অনেক পরিমার্জন করে পর্দায় এনেছেন। তাই ‘দেবী’ তেমন কিছু আনতেই পারে।

হুমায়ূন আহমেদ এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘উপন্যাস অবশ্যই ছবি থেকে সুন্দর। কেননা, পাঠক উপন্যাস পড়ার সময় একটি নিজস্ব জগত তৈরি করে। সে নিজের মত করে চরিত্রগুলোর চেহারা কল্পনা করে। সিনেমাতে তা পরিচালক সীমাবদ্ধ করে দেন।’

জয়া আহসান ‘দেবী’ দিয়ে প্রযোজনায় নাম লিখাচ্ছেন। ‘কপিরাইট’ সংক্রান্ত জটিলতা মিটিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছেন। কলকাতায় তার নিজস্ব একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে, আছে হুমায়ূন আহমেদেরও পাঠকপ্রিয়তা। তাই সেখানেও মুক্তির সম্ভাবনা প্রবল। সব শঙ্কা ছাপিয়ে দারুন একটি ছবি হলে উপন্যাস থেকে ছবি নির্মাণে বাড়বে আগ্রহ। পরিচালক অনম বিশ্বাসের কাছে দর্শকদের এই চাওয়া।


মন্তব্য করুন