দেবী : হুমায়ূন অনুপ্রেরণায় নতুন মাত্রা
মুভি রিভিউ : দেবী (২০১৮)
কাহিনী : হুমায়ূন আহমেদ
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : অনম বিশ্বাস
প্রযোজনা : বাংলাদেশ সরকার ও সি তে সিনেমা
চিত্রগ্রাহক : কামরুল হাসান খসরু
জেনার : থ্রিলার ও প্যারাসাইকোলজিকাল
মিউজিক : প্রীতম, অনুপম, কিবরিয়া
অভিনয় : জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শবনম ফারিয়া, অনিমেষ আইচ ও ইরেশ যাকের
প্রাককথা : স্টার সিনেপ্লেক্সে গতকাল অগ্রিম টিকেট কিনতে বাধ্য হয়েছি ‘দেবী’ টিমের প্রচারণার জন্য। আগেই জানতাম, এটি অবলম্বনে নয়, মূল উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত তবে গল্প থেকে না সরে নির্মিত। যারা এই ব্যপারটা বুঝবেন তারা ছবির শুরুতে ২০১৮ সাল, নীলুর ফেসবুক চ্যাটিং কিংবা হাতির ঝিলে মিসির আলির বাসা আর নকিয়া মোবাইলে কথা বলাতে অবাক হবেন না, হতাশও হবেন না, দারুণ একটা সময় কাটবে।
গল্প : যারা উপন্যাস পড়েছেন তারা গল্প জানেন। ২০১৮ সালের আঙ্গিকে বানাতে গিয়ে কিছু জায়গায় প্লাস মাইনাস করা হয়েছে জাস্ট। ১৩ মাস আগে বিয়ে হয়েছে রানু আর আনিসের। রানুর মানসিক সমস্যা আছে, সে কি দেখে যেন ভয় পায়, তাই আনিস যোগাযোগ করে মিসির আলি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক খণ্ডকালীন শিক্ষকের সাথে। মিসির আলি সরাসরি রানুর সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন, এমন কেস তার জন্য নতুন। রানু ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে, সে যা স্বপ্নে দেখে তাই সত্যি হয়। সে বাড়িওয়ালার মেয়ে নীলুকেও তার অসুখের কথা বলে। নীলু ফেসবুকে ভূয়া একাউন্টের এক লোকের যন্ত্রণায় অস্থির, তবে সে ক্রমশ তার প্রতি দূর্বল হয় এবং এক সময় দেখা করে। মিসির আলি রানুর শৈশবের যে ঘটনায় এই সমস্যার শুরু তা বুঝতে রানুর গ্রামেও যান এবং দ্বিধায় পড়েন কিছু ঘটনার সত্যতা নিয়ে। একদিকে রানুর সমস্যা আর অন্যদিকে নীলুর সেই মানুষের সাথে সম্পর্কে এগুনো, ঠিক একইসাথে রানুর আশপাশে বাস করা কিছু অশরীরী আওয়াজ নিয়ে এগুতে থাকে গল্প।
অনম বিশ্বাসকে এই সময়ের এডাপ্টেশনে আমি ১০ এ ১০ দেব।
পরিচালনা : ছবি প্রথম বানালেও অনম কাজ করছেন অনেকদিন, সেট সিলেকশন, সিচুয়েশনাল কমেডি আর আলো ছায়ার খেলা তে তিনি মুগ্ধ করেছেন রীতিমত। কাজ আদায় করেছেন দারুণভাবে, মিসির আলিকে আরেকটু ভাবগাম্ভীর্য এর দিক থেকে মিস করছিলাম তবে রানু সেটা পুষিয়ে দিয়েছে। ক্রেডিট অনম বিশ্বাসের এই সময়ে গল্পকে রূপ দেয়ার ভাবনাকে।
রেটিং : ৮.৫/১০
অভিনয় : যদি এককথায় বলি, রানু মিসির আলিকে ছাড়িয়ে গিয়ে রেখে গেছে নীলুকে। জয়া নিজেকে উপন্যাসের ১৬-১৭ বছরের রানু বানাতে জোর করেননি কিন্তু বই পড়ার সময় রানুকে যেভাবে ভেবেছি সেই অনুভূতি এনে দিয়েছেন অনেকটাই, তাই জয়া এই ছবিতে সফলই বলব আমি। চঞ্চল চৌধুরীকে মিসির আলি ভাবতে একটু দেরি লেগেছে, ভারিক্কি ভাব কম থাকলেও সেন্স অব হিউমার প্রদর্শনে চঞ্চল আগের কাজ ছাপিয়ে গেছেন নিঃসন্দেহে। ফারিয়া প্রথম বড়পর্দায় হলেও তার অভিনয় ছিল সাবলীল বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সে তার এক্সপ্রেশন ছিল আশাতীত, একটু দূর্বল ও প্রাণহীন লেগেছে অনিমেষ আইচকে, ইরেশ যাকের তিনটি ভিন্ন লুকে গল্পে উত্তেজনা এনেছেন দারুণভাবে তার স্পেস অনুসারে।
রেটিং : ৮/১০
চিত্রগ্রহণ : কামরুল ইসলাম খসরু এর আগেও স্বপ্নজাল, মনপুরা’সহ অন্যান্য ছবিতে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তাই সিনেমাটোগ্রাফি এককথায় অসাধারণ ছিল, রহস্যের আবহ আনতে দারুন ভূমিকা রেখেছে।
রেটিং : ৯/১০
গান : এই ছবির গান প্রমোশনাল কাজে আপলোড দেওয়া ছিল তাই মমতাজের গান বাদ গেছে, অনুপমের গান সিকুয়েন্সের সাথে মানানসই ছিল।
রেটিং : ৭.৫/১০
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক : এই ছবির সমস্ত আবহ তৈরিতে আবহ সংগীত দারুন ছিল, হলে সবাই শিহরিত হয়েছে বলে মনে হয়েছে ।
রেটিং : ৯.৫/১০
শেষকথা : ‘দেবী’ ভালো করলে ‘নিশীথিনী’ আসতেই পারে, আর শবনম ফারিয়ার শেষ এপ্রিসিয়েশন আমাদের সে কথাই বলে। তাই, জয়া আহসানের প্রযোজক ও অভিনেতা হিসেবে এই সাহসিকতা আর প্রচারণা টিমের কাজকে সফল করতে ‘দেবী’ প্রজেক্ট সাকসেসফুল হওয়া ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব দরকার।