Select Page

নির্মাতার ভাষা ও ‘হাওয়া’

নির্মাতার ভাষা ও ‘হাওয়া’

মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, গিয়াসউদ্দিন সেলিম-রা নাটক থেকে চলচ্চিত্রে আসার পর তাঁদের কাজ দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। মেজবাউর রহমান সুমন আদতে সেই নির্মাতাদেরই যোগ্য উত্তরসূরি।

তিনি যখন টিভিতে কাজ করতেন নির্মাণ করেছেন তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে, তারপর পারুলের দিন, সুপারম্যান, ফেরার পথ নেই থাকে না কোনোকালে, স্মিতার সাদা জামা এইসব, অরূপার জন্য, ধূলোমেঘে জ্যোৎস্নাভ্রমণ, দক্ষিণের জানালাটা খোলা, নুসরাত সঙ্গে একটি গল্প, জোছনা নদীর মতো সুনির্মিত সব নাটক।

নাটকে তাঁর কাজের প্রাণ ছিল কনটেন্টের শক্তি আর ন্যাচারাল অভিনয়। বেশিরভাগ কাজ ছিল জয়া আহসানের সাথে। জয়াকে নেয়ার মূল কারণ ছিল ন্যাচারাল অভিনয়ের একটা নিশ্চিন্ত অবস্থা। জয়া প্রত্যেকটি নাটকে অনবদ্য ন্যাচারাল অভিনয় করেছিল। তার অভিনয়শক্তির সাথে নাটকগুলোর শক্তিশালী প্লট ছিল। জয়ার বাইরের নাটকগুলোতেও তিনি অভিনয় আদায় করে কনটেন্টের শক্তি প্রমাণ করেছেন। ভাবনার জায়গাটাকে বারবার করাঘাত করেছেন নাটকে। সেজন্য তিনি একজন ক্লাস ডিরেক্টরে পরিণত হয়েছিলেন নাটকে।

চলচ্চিত্রে তিনি এলেনও আলোচনা তৈরি করে। তাঁর প্রথম ছবি ‘হাওয়া’ এখন টক অফ দ্য টাইম হয়ে গেছে। প্রথম ছবিতেই এটা ঘটে যাওয়া তাঁর জন্য অবশ্যই বিশেষ কিছু। প্রথম ছবিতে তিনি ক্লাস ডিরেক্টরের ছাপ রেখেই কাজটা করলেন।

তিনি নির্দিষ্ট কোনো অভিনয়শিল্পীর ওপর তাঁর ছবিকে নির্ভরশীল করেননি। ছবিতে সবার কাছে চরিত্র অনুযায়ী ন্যাচারাল অভিনয়টাই আদায় করেছেন এবং এভাবেই অভিনয়ের ছবি করে তুলেছেন। সেই ক্লাসটা তিনি চলচ্চিত্রেও দেখালেন। প্রথম ছবি ‘হাওয়া’ই তার কনটেন্ট ও অভিনয় দুটোরই ভারসাম্য রাখল।

চঞ্চল চৌধুরী যেমন অনবদ্য ভালোমন্দে। তাকে ছবির প্রথমদিকে যেমন মনে হবে গল্প এগিয়ে যেতে যেতে ততই তার চরিত্রের বাঁক আসবে এবং একসময় সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে ধরা দেবে। শরিফুল রাজের গেটআপেই পরিচালক যে কাজটা করেছেন সেটা সবার আগে প্রশংসনীয় রাজের জন্য। রাজের যে সম্ভাবনা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সেটারই একটা ছাপ মেজবাউর রহমান সুমনও দেখিয়ে দিয়েছেন। একজন নবীন তারকার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারাটাই তো প্রথম ছবির পরিচালকের অনেক বড় সাফল্য। নাজিফা তুষিও সম্ভাবনার মধ্যে আছে এবং তার চরিত্রে যে রহস্য পরিচালক তৈরি করেছেন সেই রহস্যের অভিনয়টাও তিনি আদায় করেছেন, নাসির উদ্দিনের মতো ন্যাচারাল অভিনেতাও দর্শককে বিনোদিত করতে পেরেছে। তার বডি ল্যাংগুয়েজ ও কথাবার্তায় দর্শক বিনোদিত হয়েছে। সিগারেট ফুঁকানোর কারসাজিতে নারীলোভী যে অ্যাটিচিউড নাসির উদ্দিনের অভিনয়ে ছিল সেটাকে প্রেজেন্ট করাও একজন পরিচালকের দক্ষতা প্রমাণ করে। সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল তাদের অভিনয়ের মধ্যেও পেশাদারিত্ব ছিল।

বিজিএম, পিকচারাইজেশন, কালার গ্রেডিং এর কারিগরি দিকের মুন্সিয়ানা মেজবাউর রহমান সুমন দেখিয়েছেন। নাটকে যেমন তিনি একদম ন্যাচারাল জিনিসটাই রাখতে পছন্দ করতেন চলচ্চিত্রেও সেটারই প্রতিফলন ছিল। ন্যাচারালিটির জন্যই তিনি ‘হাওয়া’কে সচেতন দর্শকের মাঝে ওয়ার্ড অফ মাউথে পরিণত করেছেন।

তাঁর আরো আগেই চলচ্চিত্রে আসার দরকারটা ছিল ‘হাওয়া’ দেখে সেটাই মনে হয়েছে।


About The Author

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

Leave a reply