![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
নেপথ্য কাহিনি: এফডিসিতে প্রথম সিনেমা ‘আসিয়া’
শেষ পর্যন্ত ‘আসিয়া‘ মুক্তি পায় ১৯৬০ সালের ৪ নভেম্বর। ফতেহ লোহানীর দ্বিতীয় আর এফডিসির ষষ্ঠ ছবি হিসেবে …
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/11/asia_sumita_devi_shahid_bmdb_image-rotated.jpeg?resize=1024%2C734&ssl=1)
৩ এপ্রিল ১৯৫৭। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন পরিষদ। অধিবেশনের শেষ দিন। তখন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। উত্থাপন করেন পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিল। সামান্য সংশোধনীর পর পাশ হয় বিনা বাধায়। গঠিত হয় এফডিসি। সে বছরেরই ২০ মে সেখানে প্রথম শুটিং হয়। সিনেমার নাম ‘আসিয়া’।
ছবিটির কাজ অবশ্য শুরু হয়েছিল আগেই। বছরের শুরুতে। সরকারি প্রচার দফতরের উদ্যোগে। তবে প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে। নাম ছিল ‘লাইফ ইন ইস্ট পাকিস্তান’। এরই মধ্যে যাত্রা শুরু করে এফডিসি। ২৮ জুন সচিবালয়ে বসে প্রথম মিটিং। তাতে জনসংযোগ বিভাগের চলচ্চিত্র শাখার কর্মীদের এফডিসির অধীনে আনার সিদ্ধান্ত হয়। অন্যান্যদের সঙ্গে নাজীর আহমদও যোগ দেন। অপারেটিভ ডিরেক্টর হিসেবে। এর বছর দুই আগেই বের হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫)। যাকে বলে একটা পূর্ণাঙ্গ টেক্সট ফিল্ম। এফডিসির শুরুতেও তেমনই একটা ছবি বানানোর কথা ভাবেন তিনি।
তার সঙ্গে একমত হন অন্যরাও। সেই ভাবনা থেকেই ‘লাইফ ইন ইস্ট পাকিস্তান’-এর পরিকল্পনা বদলে ফেলা হয়। কাহিনি ও সংলাপ নাজীর আহমদ নিজেই লেখেন। ছবিটা বানানোর জন্য আনকোরা নতুন সব যন্ত্রপাতি আনান। কাঁচামালের যোগান দেন। আর বন্দোবস্ত করে দেন লাখ চারেক টাকার।১ চিত্রনাট্য তৈরি ও পরিচালনার দায়িত্ব নেন ফতেহ লোহানী। তার সঙ্গে প্রযোজক হিসেবে থাকেন নূরুল ইসলাম। পূর্বাণী চিত্রের ব্যানারে।২ নাম রাখা হয় ছবির নায়িকা চরিত্রের নামে। ‘আসিয়া’।
বছরের মাঝামাঝি। ফতেহ লোহানী কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছেন। একদিন একজন মেয়ে আসেন তার বাসায়। ছিপছিপে গড়ন। শ্যামবর্ণা। অমায়িক হাসি। তার স্বচ্ছ দুই চোখে ছবির নায়িকাকে পেয়ে যান ফতেহ লোহানী। ঠিক করে ফেলেন, এই মেয়েই হবে রূপালি পর্দার আসিয়া।
মেয়েটির নাম হেনা লাহিড়ী। বাবা-মার পদবী ভট্টাচার্য। স্বামী অতুল লাহিড়ী জড়িত ছিলেন বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে। আর ছিল ফটোগ্রাফির শখ। সেই সূত্রেই হেনার সিনেমায় আসার আগ্রহ। এর আগে একটি নাটকে অভিনয় করেন সোমা লাহিড়ী নামে। সিনেমার জন্য তাকে আরেকটি নতুন নাম দেন ফতেহ লোহানী। পরে সে নামেই পরিচিত হন দেশজুড়ে। সুমিতা দেবী।
তার বিপরীতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন শহীদউদ দাহার। মূলত মঞ্চে অভিনয় করতেন। নায়ক-নায়িকার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন রুবী ও সেলিম৩। খলচরিত্রে কাজী খালেক। চিত্রগ্রহণে বেবী ইসলাম ও কিউ এম জামান।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/11/asia_sumita_devi_shahid_bmdb_image-1.jpeg?resize=503%2C740&ssl=1)
২০ মে ১৯৫৭। ‘আসিয়া’র দৃশ্যধারণ শুরু হয়। এফডিসিতে সেই প্রথম কোনো সিনেমার শুটিং। কিন্তু শেষ আর হয় না। দফায় দফায় ছবির কাজ বন্ধ হতে থাকে। কখনো টাকার অভাবে। কখনো অন্য কারণে। একসময় কলাকুশলীরাই এ নিয়ে রসিকতা শুরু করে দেন। ‘আসিয়া’ নাকি দ্বিতীয় ‘মুঘলে আজম’ হতে চলেছে। বলিউডের সর্বকালের অন্যতম ব্যবসাসফল এই ছবির কাজ শুরু হয় ১৯৪৪ সালে। চলতে থাকে বছরের পর বছর। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রেকর্ড ব্যয়ের পর শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায় ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট।
একসময় ফতেহ লোহানী নিজেও হতাশ হয়ে পরেন। শুরু করেন অন্য ছবির কাজ। ‘আকাশ আর মাটি’। প্রায় একই কলাকুশলী নিয়ে। শেষ করে মুক্তিও দেন। ১৯৫৯ সালের ২৪ জুলাই। সেটা ছিল এফডিসিতে গৃহীত ও পরিস্ফুটিত প্রথম ছবি।
এরমধ্যে আবার মারা যান আব্বাসউদ্দীন। পল্লীগীতির সম্রাট। ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কথা ছিল তিনি ‘আসিয়া’র সংগীত পরিচালনা করবেন। তখন সংগীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন দুইজন। যৌথভাবে আবদুল আহাদ ও সমর দাস। গ্রামের গল্পের এই ছবিতে অনেকগুলো গান ব্যবহার করা হয়।
দীর্ঘ আড়াই বছরে শেষ হয় ছবির কাজ। জমা দেয়া হয় সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য। কিন্তু সেখানেও দীর্ঘসূত্রিতা পিছু ছাড়ে না। কয়েকটি দৃশ্যের ব্যাপারে আপত্তি তোলেন বোর্ডের সদস্যরা। ছবিতে নায়ক-নায়িকা ছোটবেলায় ছিল খেলার সাথী। বড় হতে হতে তাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু নায়িকার বিয়ে হয় চাচার সঙ্গে। তারপরও নায়ক-নায়িকা চালিয়ে যায় অভিসার। আর সেখানেই বোর্ডের সদস্যদের আপত্তি। তারা নায়ক-নায়িকার গোপন প্রেমের দৃশ্যগুলো ফেলে দিতে বলেন।
কিন্তু রাজি হননি ফতেহ লোহানী। তাহলে গল্পের বাস্তবতা ক্ষুণ্ন হবে। ঝামেলা মেটাতে আরো সময় লেগে যায়। শেষ পর্যন্ত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬০ সালের ৪ নভেম্বর। ফতেহ লোহানীর দ্বিতীয় আর এফডিসির ষষ্ঠ ছবি হিসেবে। সমালোচকদের প্রশংসা তো বটেই, ছবিটি সে বছর প্রেসিডেন্ট পুরস্কারও পায়। ১৯৬১ সালে অংশ নেয় নয়াদিল্লি চলচ্চিত্র উৎসবে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2022/12/FB_IMG_16700333820767456.jpg?resize=518%2C385&ssl=1)
টীকা:
১ শেষ পর্যন্ত অবশ্য অত টাকা পাওয়া যায়নি। ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ৯২ হাজার টাকা। আর আয় করেছিল ৩৫ হাজার।
২ অনুপম হায়াৎ প্রদত্ত তথ্যমতে পূর্বাণী চিত্রের ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেন ফতেহ লোহানী ও নূরুল ইসলাম। অন্যদিকে নাজীর আহমদকে উদ্ধৃত করে আব্দুল্লাহ জেয়াদ লিখেছেন ছবিটির প্রযোজক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী।
৩ বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।