নোনাসময়ে ‘নোনা জলের কাব্য’
নোনা একটা সময় যাচ্ছে আমাদের। প্রকৃতিকে বাঁচাতে উদ্যোগ কম কিন্তু প্রকৃতিকে কষ্ট দেয়ার মানুষের অভাব নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কাজনক বিভিন্ন ফলাফল ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতারা দূষণ কমাতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন, এখন কথা হচ্ছে কয়জন শুনবে সে কথা!
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সৃষ্ট সমস্যার একটা গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘নোনা জলের কাব্য’ ছবিটি। এরই মধ্যে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘এশীয় বাছাই নেটপ্যাক সেরা চলচ্চিত্র’ পুরস্কার পেয়েছে। প্রদর্শিত হয়েছে কপ২৬-সহ একাধিক আয়োজনে। রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নামের তরুণ এক নির্মাতার ছবি এটি।
গল্পটা জেলেজীবনের। জীবন যাদের প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার। প্রকৃতি এখানে সাগরপাড়। সাগরের সাথে জেলেদের জীবিকার সম্পর্ক এবং প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করা। জেলেদের মাঝে ভাস্কর রুদ্র একদিন চলে আসে। জেলেদের জীবন তার কাছে ভালো লাগলেও তাদের প্রতি শোষণের দিকটা তার খারাপ লাগে। কী করবে সে? প্রতিরোধ করবে নাকি নিজের পথ খুঁজে নেবে?
ছবির গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ হচ্ছে ইলিশের মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণের জন্য যে দুই মাস মাছ ধরা সরকারিভাবে নিষেধ থাকে তখন জেলেদের জীবিকা কীভাবে চলে বা তাদের জীবনটা কত কঠিন হয়ে ওঠে সেটা দেখানো। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কীভাবে সম্মিলিতভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, দুর্যোগে সচেতন থাকতে হয় এ দিকটিও ছবির জরুরি বিষয় ছিল।
শিক্ষার অভাব কীভাবে নিম্নবর্গকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয় এ ছবিতে তার একটা চমৎকার উপস্থাপনা আছে। ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্রটি নির্মাতার সেরা নির্বাচন ছিল। তিতাস জিয়া রুদ্র চরিত্রে সচেতনতার প্রতীক হিসেবে ছিল। পুরোনোর সাথে নতুনের চিরন্তন দ্বন্দ্ব এ দুটি চরিত্রে বিশেষত্ব পেয়েছে। তাসনুভা তামান্নার চমৎকার ন্যাচারাল অভিনয় তার ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছে। শতাব্দী ওয়াদুদের ক্যালিবার অনুযায়ী তার চরিত্রটি ছিল না তবে অভিনয় ঠিকঠাক। খেটে খাওয়া মানুষের চরিত্রে অশোক ব্যাপারী বরাবরই ভালো।
‘সাগর শুধু নেয় না দেয়ও’ ছবির এ সংলাপটি পুরো ছবির একটা সারমর্ম বলা যায়। সাগর নিজেই যেন ছবির চরিত্র হয়ে উঠেছে। নির্মাতার ক্যামেরায় সাগর কথা বলেছে নিজের চিরচেনা ভাষায়।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত যেন ছবি বানানো বন্ধ না করেন। তার প্রথম ছবি ‘নোনা জলের কাব্য’ ওভারঅল মানসম্মত হয়েছে।
রেটিং: ৮/১০