
পয়সা উসুল সিনেমা ‘তাণ্ডব’
‘তাণ্ডব’ এককথায় ফুল অব এন্টারটেইনমেন্ট, পয়সা উসুল সিনেমা। প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলোকে সামনে আনা ও ইউনিভার্স তৈরির এই চেষ্টাটাকে হাইফাইভ জানাতেই হবে
দেশের প্রথম সিনেমাটিক ইউনিভার্স, শাকিব খানের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, তাহসিনের দুর্দান্ত ক্যামেরার কাজ, রায়হান রাফীর প্রপার সেন্স অব ডিরেকশন থাকলেও সাহায্য নিতে হলো সাউথ ইন্ডিয়ার। ‘তাণ্ডব’ কম সময়ে বানানো তাড়াহুড়ার সিনেমা, তবে দেশের সেরা টেকনিক্যাল টিম কাজ করায় সেইটা খুব একটা ভাসবে না। কিছু ক্ষেত্রে সময় কম, ডিমান্ড বেশি থাকায় রাইটারও তাড়াহুড়া করে কিছু সিন হুবহু সাউথ ইন্ডিয়া থেকে মেরে দিয়েছেন। গর্বের সাথে যখন বলবেন, এটা আমাদের দেশে নির্মিত সিনেমা, তখন ভুললে চলবে না স্ক্রিনপ্লের জন্য এখানে কিছু জায়গায় আশ্রয় নেয়া হয়েছে দক্ষিণ ভারতের একাধিক সিনেমার। এর বাইরে ‘তাণ্ডব’ ওভারল ‘তুফান’ থেকে দ্বিগুণ ও ‘বরবাদ’ থেকে কয়েকগুণ ভালো সিনেমা।

গল্প ট্রেলার ধরে বললেও সবাই বুঝবেন, এটা হোস্টেজ থ্রিলার। একটা জায়গায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আটকে রেখে দাবি আদায় বা স্টেটমেন্ট দেয়ার গল্পের টেমপ্লেট অনেক আছে। তবে ‘তাণ্ডব’কে অনেকভাবেই আলাদা করা গেছে। শাকিব খান সেই ‘তাণ্ডব’ ঘটানো দলের মূল হোতা, সিনেমায় যাকে বলা হচ্ছে ‘স্বাধীন’! দেশের মন্ত্রী, আইজি, টিভির মালিক ও এক্স টপ জার্নালিস্ট সায়রাকে (জয়া) দর্শকের সামনে লাইভে এনে স্বাধীন ব্যক্তিগত কষ্টের গল্প বলে রিভেঞ্জ নিতে চায়। তার আইন হাতে তুলে নিয়ে করা এমন অপারেশন সফল হবে কী না সেটাই বাকি গল্প।
মাত্র দুই-আড়াই মাসে ‘তাণ্ডব’ নামিয়ে ফেলার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব রাফী, শাকিব খান ও দারুণ টেকনিক্যালি শার্প টিমটার। সেই ‘তুফান’ থেকে সিনেমাটোগ্রাফার তাহসিন রহমান, রাইটার আদনান আদীব খান, মিউজিক নিধিসহ কাস্টিংয়েও অনেককে রাফী রেখে কাজটা বের করে এনেছে। এই সময়ে তার জায়গায় এত অল্প সময়ে কেউ এই লেভেলের আউটপুট দিতে পারবে বলে মনে হয় না। ‘তুফান’-এ গল্প, বিল্ড আপ ও লজিক্যাল কিছু জায়গায় প্রশ্ন থাকলেও ‘তাণ্ডব’-এ সেইটা নেই, আছে তাড়াহুড়া চোখে পড়ার আফসোস, আছে স্বল্প গ্র্যাঞ্জারে ছবির গল্প বেধে দেয়ার আক্ষেপ। রাজশাহী, এফডিসি, দীপ্ত টিভি ধরলে ‘তাণ্ডব’ টিমকে খুব একটা মুভও করতে হয়নি বলা যায়। সেখানে এক্সপেক্টেড রেজাল্টটাই এসেছে।
শাকিব খানের পারফরম্যান্স অবিশ্বাস্য বলার কারণ তার ভয়েস মড্যুলেশন, হাইস্কেল টু লো স্কেল ডায়লগ ডেলিভারি ও সোয়াগ! শাকিব মনেপ্রাণে সিনেমাটা ভালো করতে চেয়েছেন বলেই রাজশাহী থেকে ঢাকার গুলশানের রাস্তা, জেল পালানো থেকে টিভি টকশো সবখানে নিজের ডমিন্যান্স দেখিয়েছেন।
জয়া আহসান অভিনয় করেন ভালো তবে কিছু জায়গায় হয়তো অভিনয়টা লাগতো না, সেখানেও করেছেন। সাবিলা নূর নায়িকা হিসেবে প্রথম সিনেমায় ভালো। তবে রাজশাহীর মত জায়গায় তার ড্রেসআপ কিছুক্ষেত্রে মানানসই লাগেনি, মনে হচ্ছিলো কেরালার কোন কালচার। এর বাইরে খুব বেশি কিছু করার ছিল না কারো।

আফজাল হোসেনের মত শক্তিশালী অ্যাক্টরকে প্লেসমেন্ট দিলেও মনে রাখার মতো কিছু ছিল না তার রোলে। একইকথা এফ এস নাঈম, শহীদুজ্জামান সেলিম, গাজী রাকায়েত, রোজী সিদ্দিকী, ফজলুর রহমান বাবু সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তারিক আনাম খানের ডায়লগ ছিল মোটে তিনটা। সুমন আনোয়ার, শিবা সানু ভালো করেছেন, ইভন অল্পসময়েও দারুণ। দুজন ক্যামিওর মধ্যে প্রথমজনেরটা তবু অথেন্টিক, শেষেরজনেরটা ইউনিভার্স বানানোর জন্য আরোপিত ও লজিকের অনেক বাইরে। কাস্টিংয়ে যাকে খুশি পেয়ে একপ্রকার শোকেসের মত সাজিয়ে রাখা হয়েছে আর কী।
তাহসিন রহমানের প্রশংসা না করলেই না, খুব ভালো ক্যামেরাওয়ার্ক। ওয়ান টেক কিছু শট চোখে পড়েছে। আরাফাত নিধিও এক লেভেল ওপরে নিয়ে গেছেন বিজিএম, তবে কিছু জায়গায় অতিরিক্ত লেগেছে। গানের প্লেসমেন্ট ভালো না, ‘লিচুর বাগান’ তবু মজার কিন্তু রোমান্টিক গানটা জমেনি। টাইটেল ট্র্যাকে শোর থেকে র্যাপ বেশি ডমিন্যান্ট করায় কানে লেগেছে অনেকবার। তবে রাইটার হয়ে আদনান আদীব খানকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয় ফাস্ট পেসে টুইস্টগুলোর ভাল এক্সিকিউশন করানোয়।
‘তাণ্ডব’ এককথায় ফুল অব এন্টারটেইনমেন্ট, পয়সা উসুল সিনেমা। প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলোকে সামনে আনা ও ইউনিভার্স তৈরির এই চেষ্টাটাকে হাইফাইভ জানাতেই হবে। তবে দেশী ট্রিটমেন্ট আরো থাকলে ভালো লাগতো।
রেটিং: ৭.৫/১০