![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
‘পাগল মন’ বিতর্ক: দিলরুবা-আফসারীর বিপরীত দাবি, অবশেষে শাকিবের নাম জিডি
শাকিব খান প্রযোজিত ও অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমায় দিলরুবা খানের আইকনিক গান ‘পাগল মন’-এর দুটি লাইন ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক জমে উঠেছে। দিলরুবার দাবি অনুমতি ছাড়াই এই কাজ করেছেন কিং খান। অন্যদিকে ছবির পরিচালক মালেক আফসারী পুরোপুরি ভিন্ন বয়ান দেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিটে কপিরাইটতে অভিযোগের পর সবশেষে এ নিয়ে জিডি হলো থানায়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ: ২৮ জুন সন্ধ্যায় জানা যায়, এদিন শাকিবের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিটে কপিরাইট ইস্যুতে অভিযোগ আনা হয়। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩ ধারার আশ্রয় নেন।
তিনি ‘পাগল মন’-এর মূল শিল্পী দিলরুবা খান, গীতিকার কায়সার আহমেদ ও সুরকার আশরাফ উদাসের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন এই অভিযোগ দায়ের করেন।
ওলোরা আফরিন জানিয়েছেন, ‘চিত্রনায়ক শাকিব খান তার ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমায় গানটির পিক দুই লাইন অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করেছেন, যা কপিরাইট করা ছিল। তিনি গানটি সিনেমায় ব্যবহার করে কপিরাইট আইন ভঙ্গ করেছেন। এজন্য গেল ফেব্রুয়ারিতে তার কাছে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রথমে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। এরমধ্যে কয়েকবার শাকিব খানের সঙ্গে বৈঠক হলেও ফলাফল পাওয়া যায়নি। অবশেষে বাধ্য হয়েই এই অভিযোগ দায়ের করেছি।’
শুধু শাকিব খান নয়, একই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবির বিরুদ্ধেও। কারণ গানটির ডিজিটাল বিপণন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দিলরুবা অসত্য বলছেন দাবি মালেক আফসারীর: অভিযোগের দুদিন পর এক ভিডিও বার্তায় পরিচালক মালেক আফসারী দেন দিলরুবার একদম উল্টো তথ্য।
তিনি বলেন, ‘‘এফডিসিতে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটির শুটিং চলছিল। আমরা চার নম্বর মেকআপ রুমে গান নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ছিলেন ছবির প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল, আমি, শাকিবসহ অনেকে। সে সময় ইকবাল বলেন, ‘গানের পারমিশন তো নিয়ে আসলাম।’ ‘পাগল মন’ ছবির প্রযোজক নাদের খান ও পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুলের কাছে গানটি দিলরুবা খান বিক্রি করেছিলেন। ইকবাল নাদের খানের কাছে পারমিশন নেন। শাকিব তখন বলেছিলেন, ‘না যিনি এর গায়িকা তার পারমিশনও নেবো।’ দিলরুবা খানকে সম্মান দেওয়ার জন্য শাকিব নিজেই ফোন দেন। আমরা ইঙ্গিত করি, ফোনটা লাউড স্পিকারে দেওয়ার জন্য। ফোনটি ধরে কী যে খুশি হয়েছিলেন দিলরুবা খান।’’
মালেক আফসারী আরও বলেন, ‘‘তিনি খুশি মনে গানটি দিয়েছিলেন। শাকিব বলেছিলেন, ‘আপনি একটু প্যাডে লিখে দিন।’ দিলরুবা খান বলেছিলেন, ‘প্যাড-ট্যাড লাগবে না। বোনের গান ভাই নেবে, সমস্যা কী!’’
‘‘২০১৯ থেকে আপনি কোনও কথা বললেন না। এক বছর পর কথা বললেন। কারণ গানটি রবিতে গেছে। শাকিব কিন্তু আপনাকে সম্মানীর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি মন চায়, বলেন, আমি কিন্তু লিখিত চাই।’ শাকিব ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আপনি মাইন্ড করেছিলেন। বলেছিলেন কোনও কিছু লাগবে না।’’
ফোনে নয়, শাকিবের সঙ্গে আইনজীবীর চেম্বারে কথা হয় দিলরুবার: মালেক আফসারীর দাবিতে অসত্য বললেন দিলরুবা খান। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এখন তারা (পাসওয়ার্ড ছবি সংশ্লিষ্টরা) নানা কথা বলছেন। শাকিব কখনোই আমাকে ফোন দেয়নি। তার সঙ্গে কথা হয়েছে আমার আইনজীবীর চেম্বারে। ফেব্রুয়ারি বা মার্চের শুরুর দিকে দেখা হয়েছিল। আমি তাকে বলেছি, আপনি কাজটি অন্যায় করেছেন। বিস্তারিত বলতে পারবেন আমার আইনজীবী।”
দিলরুবার আইনজীবী ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন বলেন, “আমরা ৭ মার্চ নোটিশ পাঠাই প্রযোজক শাকিব খানকে। এর কয়েকদিন পর সাধারণ ছুটির আগ দিয়ে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আমার চেম্বারে আসেন। উনার প্রথম কথাই হলো, এতে মাত্র দুই লাইন ব্যবহার করা হয়েছে, এজন্য সম্মানী কেন দিতে হবে? পরে শাকিব দুই লাখ টাকা দিতে চান। তবে বিষয়টিতে পুরোপুরি দ্বিমত প্রকাশ করেন আমার ক্লায়েন্ট দিলরুবা খান ও গানের গীতিকার ও সুরকার পক্ষ। শাকিব আমাদের অনুরোধ করেন নেগোসিয়েশন চলাকালে যেন বিষয়টি নিয়ে আমরা পাবলিকলি না আসি। এরপর দীর্ঘ তিন মাস কেটে গেছে। তাদের কোনও পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। সেই সূত্রে আমরা মামলার উদ্যোগ নিই।”
এদিকে মালেক আফসারীর বক্তব্য, গানটি যেহেতু ‘পাগল মন’ ছবির প্রযোজক নাদের খানের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন তারা, সেই অনুমতিপত্র তাদের কাছে আছে।
আইনজীবী ওলোরা আফরিন বলেন, “গানটি প্লেব্যাকের জন্য তৈরি নয়। বাংলাদেশ বেতারে প্রথম প্রচার হয় এটি। এরপর ব্যবহার করা হয় ‘পাগল মন’ চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রের সেই স্বত্বটি নাদের খান আবার অনুপম মুভিজের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে গানের মূল মালিক গীতিকার, সুরকার ও গায়িকা। সুতরাং তাদের মেধাস্বত্ব ও অনুমতির অবশ্যই প্রয়োজন আছে।’’
অবশেষে জিডি: ‘পাগল মন’ গানটি বিনা অনুমতিতে সিনেমায় ব্যবহার এবং বাণিজ্যিকভাবে বিপণনের অভিযোগ এনে শাকিব খানের বিরুদ্ধে ২৯ জুন গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন দিলরুবা খান।
গানের গীতিকার কায়সার আহমেদ, সুরকার আশরাফ উদাসসহ তিনজনের পক্ষে তিনি এ জিডি করেছেন। জিডিতে টেলিকম অপারেটর প্রতিষ্ঠান রবির বিরুদ্ধেও গানটি বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপনচিত্রে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন দিলরুবা।
জিডিতে দিলরুবা খান উল্লেখ করেছেন, “কপিরাইট আইন-২০০০ এর ধারা-১৫(১)(ক) অনুযায়ী গানটি একটি সঙ্গিতকর্ম (মিউজিক্যাল ওয়ার্ক) এবং কপিরাইটের আওতাভুক্ত। আমার গাওয়া এই পাগল মন শীর্ষক গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্যাসেট বিক্রি হয়। তারপর আইনগতভাবে আমি গানটির কপিরাইট সনদ সংগ্রহ করি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস হতে, যার রেজি নং-১৬৩৪৪-সিওপিআর, তারিখ-১১/১০/২০১৮ইং।”
গানটি সিনেমায় ব্যবহারের বিষয়ে শাকিব খান কিংবা তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কোনো অনুমতি নেননি দাবি করে দিলরুবা খান জিডিতে বলেছেন, “কপিরাইট আইন-২০০০ এর ধারা-৭১ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ধারা-২৩ এর সুম্পষ্ট লঙ্ঘন। চলচ্চিত্র অভিনেতা শাকিব খান এবং তার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মসের কেউই আমাদের কাছ থেকে গানটি করার কোন অনুমতি নেননি এবং আমরা এই বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে সকলেই তা অগ্রাহ্য করে। এছাড়াও গানটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যবহারের অনুমতি না নিয়ে এসকে ফিল্মস তা বাণিজ্যিকীকরণ করেন এবং রবি (আজিয়াটা) টেলিকম লিমিটেড এর কাছে বিক্রয় করেন যা কপিরাইট আইন-২০০০ এর ধারা-৮২ এর লঙ্ঘন। তাছাড়া অনুচ্ছেদ-৫.১.১২ এর জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ লঙ্ঘনপুর্বক ‘পাগল মন’ শীর্ষক গানটি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বিজ্ঞাপন বানিয়ে বাজারজাত করেছেন যা সম্পূর্ণভাবে আইনের পরিপন্থী।”
দিলরুবা খান বলেন, “এই বিষয়ে পূর্বে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছি। কোন সুরাহা না হওয়ার কারণে গীতিকার ও সুরকারের পক্ষে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমি ন্যায় বিচার প্রার্থনা করি।”
তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি শাকিব খান।