Select Page

প্রচেষ্টা ও পরিবেশনের দূরত্বে ‘দিন দ্য ডে’

প্রচেষ্টা ও পরিবেশনের দূরত্বে ‘দিন দ্য ডে’

যে কোনো ভালো প্রচেষ্টা প্রশংসা পাবে আবার তার পাশাপাশি সেই প্রচেষ্টাকে পরিবেশনের জায়গায় যদি সীমাবদ্ধতা থাকে তবে সেটাও বলতে হবে। বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘দিন দ্য ডে’ উদ্দেশ্যগত দিক থেকে একটা ভালো ছবি দর্শককে দিতে প্রচেষ্টা করা হয়েছে পরিবেশনার জায়গায় পিছিয়েছে। এর পরিচালক মোর্তোজা আতাশ জমজম।

ছবির বাজেট নিয়ে অনন্ত জলিল ১০০ কোটির কথা বলেছে এবং বর্ষা সে বাজেটকে লাইভে ছবির নির্মাণ ও প্রচারণা সব মিলিয়ে ধরা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে। যদি ছবির বাজেটকে বাংলাদেশ, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক মিলিয়ে শ্যুট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট এবং এডিটিংয়ের কথা মাথায় রেখে বলি তবে খরচ অবশ্যই ভালোই হয়েছে কিন্তু সেটি ১০০ কোটির মতো মনে হয়নি।

ছবির গল্প সহজ। মানব পাচারের মতো স্পর্শকাতর এবং চলমান বৈশ্বিক সমস্যার বিষয় নিয়ে গল্প বাছাই করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের লোভ দেখিয়ে পাচার হওয়া নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষদের উদ্ধার করার মিশন নিয়ে অনন্ত জলিল রওনা হয় বাংলাদেশ থেকে সোয়াট টিমের পক্ষ থেকে। তার অভিযানের স্পেস বাড়তে থাকে এবং এভাবে গল্প এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিস্তৃত হয়। পাচার হওয়া মানুষদের উদ্ধার করতে পারবে কিনা অনন্ত সেটাই গল্পের মূল লক্ষ্য। ছবির নাম কেন ‘দিন দ্য ডে’ সেটা অনেকের কাছে দুরূহ বা অযৌক্তিক লাগতে পারে। তবে ছবির কর্তৃপক্ষ যদি পাচারকৃত মানুষদের উদ্ধারের যে চূড়ান্ত দিন সেটিকে মিন করে থাকে তবে সেটি হয়তো তাদের যুক্তিতে ঠিক।

এই গল্পকে পরিবেশন করতে গিয়েই সীমাবদ্ধতা দেখা গেছে এবং সেটি যথেষ্টই। পয়েন্ট করা বলা যাক—

* ছবির নাম ‘দিন দ্য ডে’। এমন নাম অনন্ত জলিলের আরো ছবির নামে দেখা গেছে। তার ছবির নামে আক্ষরিক অনুবাদে ট্যাগলাইন নির্ধারণের প্রবণতা দেখা যায় যার জন্য ট্রলের শিকার হয়, যেমন; ‘খোঁজ দ্য সার্চ’। যথারীতি এ ছবির ট্যাগলাইনেও এমনই প্রবণতা আছে।

* যে কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ছবির আকর্ষণ থাকে নায়ক-নায়িকা। এমনও বলা হয় নায়ক-নায়িকার স্টাইল, কথা বলা এগুলো সঠিক থাকলে তা দর্শকের মনে আলোড়ন তোলে কিন্তু অনন্ত জলিল ও বর্ষার নায়ক-নায়িকার যে ইমেজ এখানে দর্শক আলোড়নের কোনো বিষয় নেই। কেউ যদি নির্মল বিনোদন পেতেও তাদের ছবি দেখে তাহলে সেটা শুধুই বিনোদন হবে, তাদের মধ্যে সেই চার্মটা নেই যে দর্শক আলোড়িত হবে। এর প্রধান কারণ তাদের উভয়েরই দুর্বল অভিনয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে বলতে গেলে অভিনয় হয়ও না। ‘দিন দ্য ডে’-তে সেটা বিদ্যমান।

* অনন্ত তার ছবিগুলোতে কারিগরি দিকের খেয়াল রাখে, অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের পর্যাপ্ত স্পেস রাখে, ভালো লোকেশন, ব্যাাকগ্রাউন্ড মিউজিক, পরিষ্কার স্ক্রিন রাখে যেখানে তার অভিনয়ের যে দুর্বলতা সেটা এ বিষয়গুলোতে যেন অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তার প্রায় সব ছবিতেই এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। ‘দিন দ্য ডে’-ও তার ব্যতিক্রম নয়। বহির্বিশ্বের অভিনয়শিল্পীদের যথেষ্ট স্পেস দিয়েই ছবিটিতে অভিনয় করানো হয়েছে যাতে অনন্ত-বর্ষার অভিনয় নিয়ে কথা বা সমালোচনা কম হয় কিন্তু যারা অভিনয় দেখার জন্য ছবি দেখে তাদের চোখ তো এড়ানো যাবে না। অনন্ত-বর্ষার অভিনয়ের সীমাবদ্ধতা এ ছবিতেও মোটাদাগে ছিল।

* বিদেশি অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে আবু খালিদ চরিত্রটি ছবির অভিনয়ে কিছুটা হলেও ভালো জায়গা জুড়ে ছিল। তার খলনায়কী অভিনয় চোখেমুখে ভালোভাবেই ছিল। অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় কোনোমতে চালিয়ে নেয়ার মতো ছিল। তাদের সবার প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধতা পেয়েছে ডাবিং-এর বিরক্তিকর অবস্থানে। ডায়লগ এবং এডিটিং বেখাপ্পা ছিল। মিশা সওদাগরের ছোট্ট উপস্থিতিটাই যা ভালো ছিল। 

* অ্যাকশনের মধ্যে গাড়ি পোড়ানো, বোম ব্লাস্ট, গোলাগুলি ছাড়া অভিনয়ের মাধ্যমে যে অ্যাকশন ফুটে ওঠে সেটা মিসিং যার জন্য পুনরাবৃত্তি জাতীয় অ্যাকশন সিন ছিল প্রচুর।

* ছবির মধ্যে যে আকর্ষণটি থাকবে যেখানে পরের দৃশ্যের জন্য বা বিরতির পরে একটা আগ্রহের জায়গা থাকবে তা ছিল না যার জন্য এ ছবিতে বিশেষত্ব নেই।

এসবের বাইরে ভালো লোকেশনের কথা বললে সেটা এমনিতেই বলা হবে কারণ ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্কের মতো দেশগুলোর প্রকৃতির সৌন্দর্য অবশ্যই আছে এবং ক্যামেরায় তা ধরা পড়াই স্বাভাবিক। গানের মধ্যে ইমরানের গানের কথা, সুর, লোকেশন, গায়কী ভালো কিন্তু নায়ক-নায়িকার রসায়ন বলতে কিছু ছিল না।

‘দিন দ্য ডে’ ভালো ছবি উপহার দেয়ার সৎ উদ্দেশ্যের একটা প্রচেষ্টা কিন্তু এর পরিবেশনের যে সমস্যা সেটাই চোখে পড়ার মতো। সমালোচনা হলে সেটাকে গ্রহণ করাই উচিত ছবির কর্তৃপক্ষের কারণ এখন চলচ্চিত্রের দর্শক দেশ-বিদেশের বহু চলচ্চিত্র দেখেই পরিণত এবং তৈরি দর্শক তাই তাদের অবজারভেশনের গুরুত্ব আছে। তারা বোঝে কোনটা ভালো দিক কোনটা মন্দ দিক। ‘দিন দ্য ডে’ এই দুই দিকের তারতম্যের ছবি।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন