Select Page

সিনেমার উন্নতির বানোয়াট বান্ডেল অফার কেন? – ফারুকী

সিনেমার উন্নতির বানোয়াট বান্ডেল অফার কেন? – ফারুকী

2012-12-28-16-00-53-50ddc235b41e1-untitled-8_14292বাংলাদেশে ভারতীয় ছবির আমদানী-রপ্তানি বিষয়ে নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সবসময়ই সরব থেকেছেন। পত্র পত্রিকায় কলাম, সাক্ষাতকার ইত্যাদি থেকে শুরু করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতিকল্পে করণীয় বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন সবসময়ই। ভারতীয় ছবি ওয়ান্টেড বাংলাদেশে মুক্তির প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে তার সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসে আমদানীকারকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘বাংলা সিনেমার উন্নতির বানোয়াট বান্ডেল অফার দেখান কেন?’

আমদানীর পক্ষে নানারকম যুক্তি প্রদর্শনকে ‘জ্ঞান বিতরণী তামাশা’ হিসেবে উল্লেখ করে গত বছরের পিঁপড়াবিদ্যা চলচ্চিত্রের নির্মাতা ফারুকী বলেছেন তিনি সংস্কৃতি শুধু নয়, বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ভারতের সহযোগিতা চান, ভারতীয় ছবি আমদানীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন নি, কিন্তু তার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। এ জন্য তিনি তিনটি সূত্র উপস্থাপন করে তার ব্যাখ্যা করেছেন।

ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, টেলিভিশন ইত্যাদি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে ক্রমান্বয়ে নিজের অবস্থান সংহত করতে থাকা এই নির্মাতার সম্পূর্ণ স্ট্যাটাসটি বাংলা মুভি ডেটাবেজ (বিএমডিবি)-র পাঠকদের জন্য তার হুবহু উপস্থাপন করা হল।

আবার শুরু হয়েছে জ্ঞান বিতরণী তামাশা ।

সকাল সকাল উঠেই জ্ঞান পেলাম “বাংলাদেশী সিনেমার উন্নয়ন ঘটাতে হলে ভারতীয় সিনেমা আনতে হবে”, “কলকাতা দেখেন হিন্দি ছবি এনে কত উন্নতি করেছে “! কলকাতা এতোই উন্নতি করেছে যে আনন্দবাজার পত্রিকাকে কয়দিন আগে লিখতে হয়েছে “ইনকিউবিটরে কলকাতার সিনেমা”। প্রসেনজিৎকে বলতে হয়েছে “কলকাতার সিনেমাকে বাঁচাতে হলে বাংলাদেশের বাজার দখল করতে হবে “। আর কোয়ালিটিটিভ স্ট্যান্ডার্ডে কলকাতার সিনেমা কোথায় আছে সেটা বুঝতে মেজর ফেস্টিভাল গুলোর সিলেকশন দেখলে বোঝা যাবে । বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের একটা ইন্টারভিউতে আছে “ওগুলো কুপমন্ডুক। কলকাতার বাইরে কোথাও যায় না ।”

আমার এই লেখা কিন্তু কলকাতার সিনেমার শ্রাদ্ধ করার উদ্দেশ্যে না । এমন কি ভারতীয় সিনেমা আমদানির বিরুদ্ধেও না। ভারতীয় সিনেমার আমদানি আমিও চাই। সেটা কিভাবে লেখার শেষ অংশে বলছি।

এই লেখা কতিপয় স্বদেশী অতি চালাকের ফালতু কথার বিরুদ্ধে । ছবি কেন আমদানি করতে চান সেটা তো জানা কথা। সাথে বাংলা সিনেমার উন্নতির এই বানোয়াট বান্ডেল অফার দেখান কেন?

বাংলাদেশের মানুষকে গাধা ভাবেন বলে? নাকি ওয়ান্টেড বা দাবাং মার্কা ছবিকে স্ট্যান্ডার্ডের ঐশ্বরিক মর্যাদা দিতে চান বলে? তো আপনারা ধরেই নিয়েছেন ঐ ছবিগুলোর মতো ছবি বানালে বাইরের দুনিয়ায় বা এমনকি ভারতের কাছেও আমাদের খুব মর্যাদা বৃদ্ধি হবে? দুনিয়া তালি দিয়ে বলবে “আহা এই দেশটা কি সুন্দর বলিউড স্কুলকে কপি করে”?

ফালতু আলাপ রেখে কাজের কথায় আসেন ।

প্রথমেই পরিষ্কার করি – শুধু সংস্কৃতি না, বানিজ্যের আরো অনেক ক্ষেত্রে আমি বাংলাদেশ ভারত সহযোগিতা চাই । এর মাধ্যমে আমাদের দুই দেশেরই উপকৃত হবার অনেক সুযোগ আছে। কিন্ত সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমাদের পক্ষ থেকে নেগোসিয়েশন করবে এমন লোকজন যাদের বুকে দেশপ্রেম আছে আর যারা বিষয়টা পরিষ্কার বোঝেন।

এবার আসেন ভারতীয় ছবির আমদানি প্রসঙ্গে । হ্যাঁ আমি ভারতীয় ছবির আমদানি চাই। আমি চাই আনুরাগ কাশ্যপ বা দিবাকর বা সুজয় ঘোষ বা আনুশা রিজভী বা আনুপ সিং আসিম আহলুওয়ালিয়ার ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পাক। একই সাথে আমাদের ছবিও ওদের দেশে মুক্তি পাক। এখন যেরকম বিনিময়ের নামে নামকাওয়াস্তে ‘বাংলাদেশী ছবি ভারতে মুক্তির সার্কাস’ চলছে- এই রকম মুক্তির কথা বলছি না । প্রপার রিলিজ ।

তো সেটি কিভাবে হতে পারে? এটা হতে হবে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে । সেই নীতিমালা তৈরী হতে হবে তিনটা সুত্রের উপর ভর করে:

১) পলিসি হতে হবে দেশীয় চলচ্চিত্র বান্ধব । দেশী ছবির কর থাকতে হবে সর্বনিম্ন আর শো’র সংখ্যা থাকতে হবে সর্বাধিক । কোন থিয়েটার ৭০ পার্সেন্টের কম দেশি ছবি দেখাতে পারবে না । এবং এই আইন কেবল কাগজে থাকলে হবে না ।

২) এ লিস্ট বা বি লিস্ট ফেস্টিভালে ট্রাভেল করা বিদেশী ছবি হবে দ্বিতীয় সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনী। এদের করের হার হতে পারে ৫ পার্সেন্ট এবং শো’র সংখ্যা হতে পারে মোট শো’র সর্বোচ্চ তিরিশ পার্সেন্ট ।
(এই তালিকায় আসবে আনুরাগ কাশ্যপ বা দিবাকরদের ছবি যেগুলো দেখলে ‘রক্ষণশীল চোখে’র ঠিক সিনেমা সিনেমা মনে নাও হতে পারে । হায়রে সিনেমা, তুমি যে এই বঙ্গে আসিয়া কি নিদারুণ সংজ্ঞা ধারণ করিলা ! ! এটা মাথা থেকে সরাইতে আরো যে কয় বছর লাগে! !)

৩) এর বাইরের যেসব বিদেশী ছবি আমদানী করা হবে সেগুলো হবে সবচেয়ে কম সুবিধাভোগী শ্রেণী। এদের সর্বোচ্চ শো’র সংখ্যা হতে পারে তিরিশ পার্সেন্ট কিন্তু কর দিতে হবে 25 পার্সেন্ট ।
(এই শ্রেণীতে ঢুকবে চেন্নাই এক্সপ্রেস বা হাপি নিউ ইয়ার মতো ছবি যেগুলো দেখলে রক্ষণশীল চোখের “সিনেমা সিনেমা” লাগে )

দয়া করে একটু জ্ঞান বুদ্ধির পরিচয় দেন, বড় ভাইয়েরা। সব কথাকে ঢালাও ভাবে ভারত বিরোধী বলে উড়াইয়া দিবেন না । আমি ভারত বিরোধী না।


৩ টি মন্তব্য

  1. আমি এক মত প্রকাশ করছি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী র কথার সাথে। কিছু দালাল তাদের অসৎ উদ্দেশ দিয়ে বাংলা চলচিত্রের ধ্বংস কামনা করছে।

    • Moulovi Nezam

      ফারুকীর কথার সাথে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। ভারতীয় চলচ্চিত্রের আমদানি ও প্রদর্শন এদেশীয় চলচ্চিত্রের অবস্থা আরো খারাপ করে দিবে সন্দেহ নাই। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়, ভাল বিনিয়োগকারী আসছেন না আমাদের সিনেমা পাড়ায়। বিনিয়োগ আসলে মান নিশ্চিত করতে বিনিয়োগকারীরাই উঠেপড়ে লাগতো।

মন্তব্য করুন