![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
বকুলের কথা
ছবির মানুষটিকে বর্তমান প্রজন্ম খুব ভালো করে চিনে না বা চিনবে না। কিন্তু এই মানুষটির নাম প্রায় সকলেই শুনেছে যারা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা রাখেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরদিনের জন্য এই মানুষটি নিজের নামটি যুক্ত করে ফেলেছেন তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই, যার নাম তোজাম্মেল হক বকুল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ চলচ্চিত্রটির রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি, যার পরিচালক ছিলেন তিনি।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/05/tozammel_haque_bakul_bmdb_image.jpg?resize=853%2C458&ssl=1)
১৯৫৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ভাটপিয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তোজাম্মেল হক বকুল।
বকুলের গুরু ছিলেন আবদুস সামাদ খোকন, যিনি নিজেও ছিলেন ফোক ধারার নির্মাতা। খোকনের সুপারহিট ‘ঝিনুক মালা’র সহকারী পরিচালক ছিলেন বকুল।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2020/03/beder_meye_josna_bmdb_image-1.jpg?resize=800%2C507&ssl=1)
১৯৮৯ সালে বকুল পরিচালক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ দিয়ে, যা মুক্তি পাওয়ার পর পরেই ইতিহাস সৃষ্টি করে। খুব সাধারণ একটি গল্পকে এমনভাবে নির্মাণ করেন যা মানুষের মনকে নাড়া দেয় যেন বাস্তবের কোন বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা বকুল ক্যামেরায় ধারণ করে এনেছেন। গল্পের সঙ্গে মিল রেখে গানগুলো যুক্ত করেন যা চলচ্চিত্রটিকে আরও বেশি আবেগঘন ও উপভোগ্য করে তুলে। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ এমনই সাড়া ফেলেছিল যে, দাদা-দাদি, নানা-নানিরা সিনেমা দেখা হারাম বলে গালমন্দ করত তারাও সিনেমা হলে সপরিবারে অথবা ঘরে বসে ভিসিআরে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ দেখেছিল। বকুলের সার্থকতা এখানেই যে প্রথম চলচ্চিত্রটি দিয়ে সব বয়সী সব শ্রেণীর দর্শকদের দেখতে আকৃষ্ট করেছিলেন, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিরল একটি ঘটনা।
প্রথম চলচ্চিত্রের অভূতপূর্ব সফলতার পর বকুলকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাউল চলচ্চিত্র নামের একটি প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে প্রযোজক ও পরিবেশকের খাতায় নিজের নাম যুক্ত করেন। এ ছাড়া ছিলেন কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও সংলাপ রচয়িতা। নিজের পরিচালনার প্রায় সব ছবিরই কাহিনি, চিত্রনাট্য, গীত ও সংলাপ রচয়িতা তিনি নিজেই।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2016/06/Balika-Holo-Bodhu-a-film-by-Tojammel-Haq-Bakul.jpg?resize=310%2C485&ssl=1)
সেই সময়কার রোমান্টিক, সামাজিক ও মারদাঙ্গা সিনেমার ভিড়ে তোজ্জাম্মেল হক বকুল ফোক ফ্যান্টাসি সিনেমা দিয়ে একাই নিজের একটা শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। ফোক ফ্যান্টাসি সিনেমা নির্মাণ করেও বকুল সেই সময়কার নতুন প্রজন্মের দর্শকদের কাছে এতটাই শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিলেন যে জসিম, রুবেল, মান্না, সালমান শাহ, ওমর সানীরা যখন মহাতারকা হয়ে পর্দা কাঁপাচ্ছেন— তখন কোন তারকা নায়ক ছাড়াই শুধু কমেডি কিং দিলদারকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বছরের অন্যতম সেরা ব্যবসা সফল সিনেমা ‘আব্দুল্লাহ’ দিয়ে বাজিমাৎ করেছিলেন যা রীতিমতো বিস্ময়করও বটে।
১৯৬৪ সালে সালাহউদ্দিনের ‘রূপবান’ দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে ফোক ফ্যান্টাসি ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়ে ইবনে মিজানের হাত ধরে বিকশিত হয়েছিল, সেই ধারার সফল সমাপ্তি হয়েছিল বকুলের মাধ্যমে। তারপর আর একজনও পরিচালক বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পায়নি, যিনি ফোক ফ্যান্টাসি গল্পের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য সিনেমা হলো শঙ্খমালা, দিলরুবা, রঙ্গিলা, অচিন দেশের রাজকুমার, গাড়ীয়াল ভাই, পাগল মন, বালিকা হলো বধূ, বাঁশীওয়ালা, গরীবের বিচার নাই, গলায় গলায় পীরিত, রাখাল রাজা, নাচনেওয়ালী ও রাঙ্গা বাইদানী।
তোজাম্মেল হক বকুল ২০০৪ সালের ২ মে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৬ বছর।