Select Page

‘বিকল্প প্রদর্শনী বিরোধিতা’য় রনির প্রতিবাদ

‘বিকল্প প্রদর্শনী বিরোধিতা’য় রনির প্রতিবাদ

Redoan-Rony

ঢালিউড সিনেমায় ‘বিকল্প প্রদর্শনী’ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যে সিনেমা আগের সপ্তাহে হলে দর্শক টানতে পারেনি, একই সিনেমা আবার পরের সপ্তাহে বিকল্প প্রদর্শনীতে দর্শক টানছে। কেন এমনটা হচ্ছে— তা ভাবার আগেই নতুন বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ভালো সিনেমা’ ট্যাগ লাইন।

নতুন সিনেমা ‘আইসক্রিম’ নিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন রেদওয়ান রনি। এর আগে কুমিল্লায় সিনেমাটির হাউসফুল বিকল্প প্রদর্শনী হয়। চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটেও একই অবস্থায়। তার কয়েকদিন আগেই একটি অনলাইন পোর্টালে বাণিজ্যিক ছবির বিকল্প প্রদর্শনীর বিরোধিতা করে লেখেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির বেলায়াত হোসেন মামুন ও ‘সুতপার ঠিকানা‘ নির্মাতা প্রসূন রহমান। সেখানে একটি লেখায় ‘আইসক্রিম’র নামও উল্লেখ করা হয়। এর পরপরই শনিবার রনির এর প্রতিবাদ করেন।

তারই জবাবে লেখা রনির ফেসবুক স্ট্যাটাস নিচে তুলে দেওয়া হলো—

“আমি একজন মুক্ত চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে এই লিখাটি লিখতে বাধ্য হচ্ছি, বলতে পারেন অনেকটা অনিচ্ছ্বা সত্বেও। আমি এতদিন জানতাম একজন চলচ্চিত্রকর্মী মুক্তমনা হন, কোনো কিছু বাতিলের মিছিলে তারা থাকেন না, তারা থাকেন মুক্ত করার মিছিলে, চলচ্চিত্রকার একজন শিল্পী, আর শিল্পী মাত্রই শিল্পকে কদর করে, একজন শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনে আরেকজন শিল্পী জনসন্মুখে নির্লজ্জ ভাবে বাধা প্রদান করে সেটা এই প্রথম দেখলাম।

পৃথিবীতে এরকম নজির আছে কিনা আমার জানা নেই একজন চলচ্চিত্র কর্মী শুধু তার নিজের চলচ্চিত্রই একমাত্র ‘সুস্থ’, ‘ভালো’ বিকল্পধারা স্বকল্পধারা ১২ জায়গায় প্রর্দশনযোগ্য আর সহকর্মী নির্মাতার চলচ্চিত্র ‘অসুস্থ’, ‘মন্দ’ বলে নিজের মানদণ্ডে বিচার করে চলচ্চিত্রের মতো একটি মুক্ত মাধ্যমের প্রদর্শনকে বাধাগ্রস্ত করে!

বতর্মানে সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্রকর্মীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে চলচ্চিত্রকে আরো কতভাবে মুক্ত করা যায় সেখানে আমাদের দেশের তথাকথিত চলচ্চিত্রকর্মীরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সেন্সর বোর্ড কর্তৃক অবাধ প্রদর্শনে অনুমতিপ্রাপ্ত কোন চলচ্চিত্রকেও জোরপূর্বক মুক্ত প্রদর্শনে বাধা প্রদান করছে, এরা নাকি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে! সত্যি সেলুকাস!!

আমরা যারা নতুন দিনের চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রাগলের পর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সুযোগ পাচ্ছি, বিজ্ঞাপনের টাকার হাতছানি পেছনে ফেলে, টিভি প্রোডাকশনের রমরমা ক্যারিয়ারকে তুচ্ছজ্ঞান করে, এক দেড় বছর রুটি রুজির চিন্তা না করে দিন-রাত ছবিটার জন্য পরিশ্রম করে, নায়িকার সাথে শুইতে চায় না এরকম প্রডিউসারকে খুঁজে বের করে, নির্মাণের তুলনায় নিতান্তই স্বল্প বাজেট নিয়ে মাঠে নেমে স্বপ্নের চলচ্চিত্রকে যতটুকু পারা যায় ভালো করার জন্য নিজের তিল তিল করে জমানো সবগুলো টাকা শুটিংয়ে ব্যয় করে, এর ওর হাতে পায়ে ধরে রেমুনারেশন কমায়ে, পোস্টপ্রডাকশনে ভালো করতে যেয়ে আবার বাজেটের সঙ্কটে পড়ে বন্ধুদের কাছে হাত পেতে কয়েক লক্ষ টাকা ধার দেনা করে যখন একটি ছবি মুক্তি দেয়ার জন্য কাকরাইলে যাই তখন কাকরাইল পাড়ার কর্মাশিয়াল ফিল্ম বোদ্ধাদের সিন্ডিকেট বলে ওঠেন এইগুলা কী বানায়ে আনছেন সিনেমা হয় নাই, খেমটা নাচ নাই, নায়িকার হাতে বন্দুক নাই, লিপে গান নাই, নায়ক/ভিলেন হুংকার ঝুংকার মারে না, এই সব জীবনঘনিষ্ঠ প্যাচাল কাকরাইলে চলে না, এই কথাগুলো শুধু আমার একার নয়, আমার মতো অনেকেরই শুনতে হয়েছে। তখন আমরা ‘কাকরাইল সিন্ডিকেটে’ বাতিল বলিয়া গন্য হই। তখন এত কষ্ট করে বানানো সিনেমা দর্শকদের দেখানোর রাস্তা থাকে ঢাকা শহরের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে আর ঢাকার বাইরে বিকল্প প্রদর্শনীতে।

এবার সেখানেও দেখা যাচ্ছে আরেক ভূঁইফোর চলচ্চিত্রকর্মী সিন্ডিকেটদের বাধা। আমি যদি কোন ফিল্ম সোসাইটির সদস্য না হই, আমি যদি মুক্ত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার হিসেবে আমার চলচ্চিত্রের প্রদর্শন করতে যাই তাহলে আবার আমাদেরকে আরেক কাকরাইলেরই (একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ) কায়দায় বাতিল বলিয়া গণ্য করা হচ্ছে। আরে ভাই এত ভয় পান কেন? নিজেদের দুর্বলতা গুলোকে এই ভাবে কি সুরক্ষিত করা যায়? সারা পৃথিবীর সিনেমা চলছে প্রতিযোগিতার উপর ওপেন মার্কেটে বলেন আর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বলেন কোথায় প্রতিযোগিতা নেই?

icecream

যারটা ভালো তারটাই তো কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পাম দ্যওর পাচ্ছে, নাকি আপনি মনে করেন একজন নির্মাতা নিজেরটা ভালো বলে চিল্লায়ে নিজেরটাই শুধু প্রর্দশনযোগ্য বলে চিৎকার করছে? আপনি বিকল্পধারাতেই বলেন আর ফিল্ম ফেস্টিভালেই বলেন আপনারটা ভালো হলে আপনারটাই দর্শকগ্রহণ করবে আর আমারটা ভালো হলে আমারটাই, আর দুটোই ভালো হলে তো চলচ্চিত্রের আরো ইতিবাচক দিক। আপনার সিনেমার প্রদর্শনীতে তো আমি আপনাকে বাঁধাগ্রস্ত করি নাই তাহলে আমারটার সময় আপনার এতো ভয় কোত্থেকে আসে?

আপনার মত আমিও ১২ জায়গায় প্রর্দশন করি, আপনি যে সমাদর পেয়েছেন তারচেয়ে বেশিও তো আমি পেতে পারি, নাকি সেটাই আপনাদের ভয়? আমি তো কুমিল্লাতে সফলভাবে প্রদর্শনী করেছি সেখানে ডিসি, এডিসি, প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরাসহ সংস্কৃতি কর্মীরা তাদের পরিবার নিয়ে নিজের পকেটের টাকায় টিকেট কেটে সিনেমা দেখে আমাকে কী রকম সমাদর করেছে সেটা একবার ফোন করলেই তো আইসক্রিম নিয়ে তাদের মতামতটা পেয়ে যাবেন, আর মধ্যবিত্ত দর্শক পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে এসে কি উপলব্ধি হয়েছে সেটা জানাও তো কোন দুরুহ ব্যাপার নয় তাই না? তাহলে আপনি আইসক্রিমের পরবর্তী শো কে বাধাগ্রস্ত কেন করছেন? দর্শক নিয়েই এত চিন্তা আপনাদের সেটা দর্শকদের উপরেই তো ছেড়ে দেয়া উচিৎ, নাকি? আপনার উপর ছেড়ে দিলে তো নির্লজ্জভাবে নিজেরটার মার্কসটা ফুল দিয়ে বাকিগুলোকে বাতিলের চেষ্টা করেন,এ কজন চলচ্চিত্রকর্মীর এটা কোন ধরনের সততা?

সারা পৃথিবীর ফিল্মমেকাররা যদি ব্যাপারটা জানে যে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার চলচ্চিত্র প্রদর্শনে বাধা প্রদান করছে বাংলাদেশের আরেকজন নির্মাতা! তাও আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সেই চলচ্চিত্র ও নির্মাতার নাম ব্যবহার করে! বিশ্ব চলচ্চিত্রে আপনাদের অবস্থান কোথায় থাকবে আর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্র্যাকটিস নিয়ে কোন ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে?

আমার চলচ্চিত্র নিয়ে ভালো-মন্দ রিভিউ করার অধিকার সবার মতো আপনারও আছে, আপনারটা নিয়েও আমার আছে কিন্তু সেন্সর পাওয়ার পর অবাধ প্রর্দশনে বাধা দেয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আর বিকল্প চলচ্চিত্র প্রদর্শনের দায়িত্বটাও ‘শুধু আপনাদেরই’কে দিয়েছে? একজন নির্মাতা সেন্সর পাওয়ার পর তার চলচ্চিত্র কোথায় প্রর্দশন করবে কার মাধ্যমে করবে এটা একান্তই তার ইচ্ছা, বাংলাদেশের সংবিধানে (দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট) স্পষ্ট করে উল্লেখ এবং সেই অধিকার দেয়া আছে, আপনারা তো দেখি দেশের আইনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল নন বরং সংবিধান এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন।

আমার প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য দেশ আমাকে জাতীয় পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করেছে, মেরিল-প্রথম আলো, সিজেএফবি, বাচসাসসহ বেশ কিছু পুরস্কারের স্বীকৃতি আমার পাওয়া হয়েছে, এই শিল্প মাধ্যমে কিছুটা হলেও তো আমার অবদান আছে, পুরস্কারকে কোনো ভাবেই বড় করে দেখছি না, পুরস্কারের কথা এ জন্য বললাম যে এতগুলো সামাজিক, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পরেও আমার দ্বিতীয় চলচ্চিত্রের প্রর্দশনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন তাহলে আসছে তরুণ্যের একঝাঁক নির্মাতারা যারা সত্তরদশকের সাদাকালো সিনেমা ছাড়াও বতর্মানের বিশ্বসিনেমা দেখে, তাল মিলিয়ে, বুঝে, ভেজে খেয়ে, নানান জনরার সব গল্প (রোমান্টিক, ড্রামা, অ্যাকশন থ্রিলার, সাইকো থ্রিলার, ফ্যান্টাসি নানান ধরনের নানান চলচ্চিত্র যা আজকাল বড় বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোতেও শুরুর অবস্থানে আছে) মাথায় নিয়ে চলচ্চিত্রপাড়ায় হাজির হওয়ার অপেক্ষায় টগবগ করছে তাদের জন্য আপনাদের মত ‘চলচ্চিত্রকর্মী’দের সিন্ডিকেট কি খড়গ নিয়ে অপেক্ষা করছে?”

রনির এমন স্ট্যাটাসে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অনিমেষ আইচসহ অনেকেই মন্তব্য করেন।


মন্তব্য করুন