Select Page

‘বীর’ কেন বোরিং?

‘বীর’ কেন বোরিং?

কাজী হায়াতের সিনেমা দেখা সাহসের ব্যাপার বটে! এ কারণে যে— ছবির মূল চরিত্রগুলো বরাবরই সহিংস থাকে, যা সবাই নিতে পারেন না। তবে তিনি সাধারণত মূল চরিত্রগুলোকে শাদা কাগজের মতো করে ভাবেন, তারপর এগুলো ‘খারাপভাবে’ রঙিন হয়ে উঠতে থাকে। ভিলেন কেন দোষ করলো?

তার নায়কদের মধ্যে একটা পলিটিক্যাল বাসনা থাকে, জনমানুষের ভেতরের জ্বালা-পোড়া ওঠে আসে তাদের বরাতে। আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে কাজী হায়াৎ কথিত ‘নায়ক’ হয়ে উঠতে হইলে একাধিকবার ভালো ও মন্দ হওয়ার ভেতর যাইতে হয়। পাশাপাশি নিজের পরিচয়ের নির্মাণের যে বাসনাটা মুখ্য হয়ে ওঠে তা মূলত এ ব্যাপারের বাহ্যিক একটা দিক।

উনার ৫০তম ছবি ‘বীর’ টিভিতে দেখানো হলো সম্প্রতি, দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও। সেখানেও নায়ক শাকিব খানেরও একই দশা। যদিও তার গেটআপের সঙ্গে কাজী হায়াতের আগের সিনেমার নায়কদের সঙ্গে পার্থক্য আছে। ছবি সবসময় অতি বাস্তবিক হইলেও ক্যারেক্টার হিসেবে মান্নার মতো বাস্তবের কাছাকাছি হয়ে উঠে নাই। মানে শাকিব খানের ‘সুপারস্টার’ ইমেজের কাছে হার মানছেন কাজী হায়াৎ।

ছবির গল্প পুরোনো আমলের মতো প্রচণ্ড বক্তৃতা নির্ভর, লম্বা লম্বা নীতি কথা আছে। যা হয়তো মানুষ আর এভাবে আশা করে না, করলেও চিত্রনাট্যে চমকে যাওয়ার মতো কিছু নাই। এ ছবিতে হায়াতের লক্ষ্যের অবনমন ঘটেছে বৈকি। জাতীয় রাজনীতি (এটা এখন ঝুঁকির বিষয়ও) ছেড়ে হায়াৎ এখানে জেলা পর্যায়ের গুণ্ডামিকে বেছে নিছেন।

ছবির মূল ভাবনাটা ভালো-সাদাসিদে শাকিব ও খারাপ মিশা সওদাগরের (খুবই বোরিং অ্যাক্টর) টানাপোড়ন নিয়ে, তবে সেটা পুরো ছবি জুড়ে কোনো বৈচিত্র্য ছাড়া বিদ্যমান ছিল, গল্প এক জায়গায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল— সম্ভবত এটা এ ছবির ব্যর্থতার মূল কারণ।

এ ছাড়া ছবির শেষে নায়ক-নায়িকা পালিয়ে ইন্ডিয়া চলে যায়, নতুন জীবনের খোঁজে! তাহলে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে নায়ক যে খুন-খারাবি করে সেটার বিচার আমরা কীভাবে করবো। তার তো একটা বিচার হওয়া দরকার। শুধু অনুতাপ হলে চলে না। বিচারের অনুপস্থিতি অবিচারেরই নামান্তর। এ জায়গায় মনে পড়ছে ভারতের ধানুশের ‘অসুরান’ সিনেমাটা। তিনি কীভাবে বিচারের সামনে দাঁড়াইছেন সত্যের খাতিরে, ভবিষ্যত প্রজন্মের খাতিরে। এমন ঘটনা বাংলা সিনেমায়ও আছে, জাস্ট এ মুহূর্তে মনে আসা উদাহরণটা দিলাম। ‘বীর’-এ শেষ পর্যন্ত ন্যায় ও জবাবদিহির ধারণা স্পষ্ট করতে ব্যর্থ কাজী হায়াৎ।

… যাই হোক, নায়িকা হিসেবে চমকে দিছেন শবনম বুবলি। ধরেন উনার একটা আইটেম গান আছে। শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে-ঢুকে, জাস্ট হাত-পা ন্যুনতমভাবে নাড়ায়া, মূলত ক্যামেরা বেশি নাচছে— ঢালিউডে এটা কেমনে সম্ভব! ইভেন হায়াতের অন্য সিনেমার তুলনায়ও। খুব অল্প স্ক্রিন প্রেজেন্সে দেখলাম, এ নায়িকা ‘নর্তকী’ টাইপ ক্যারেক্টার করলেও লম্বা ওড়নায় পুরো ছবিতে নিজেকে ঢেকে রাখছেন। এ ক্যারেক্টারের কেন এ হাল বা উনি না থাকলে কী ক্ষতি হতে কে জানে!

রাজনৈতিক বাসনার অস্বচ্ছতা, অগভীর ও বৈচিত্র্যহীন গল্প, নায়কের গেটআপ, নায়িকার থাকতেই হবে— এমন অনেক চাপের মাঝে মাঝে কাজী হায়াতের (টেকনিক্যালি) সবচেয়ে ঝকঝকে নির্মাণটি মার খায়।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বিএমডিবির সহপ্রতিষ্ঠাতা

মন্তব্য করুন