Select Page

ভালো কনসেপ্টে সম্পূর্ণ নয় সন্তোষজনক ‘সুপার হিরো’

ভালো কনসেপ্টে সম্পূর্ণ নয় সন্তোষজনক ‘সুপার হিরো’

ডিজিটাল সময়ের চলচ্চিত্রে আশিকুর রহমান ডিজিটাল শর্ত পূরণ করে ছবি বানানো একজন নির্মাতা। অন্তত চেষ্টাটা থাকে তার আধুনিক ছবি দর্শকদের দেখানো। চেষ্টাটা প্রশংসনীয়।

আশিকুর রহমানের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে তাকে চেনার, তার কাজকে চেনার। এর মধ্যে পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটোই প্রধান। এ পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো থেকে তার বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায় –
* ভালো কনসেপ্ট
* আধুনিক নির্মাণের চেষ্টা
* দু্র্বল বা সন্তোষজনক নির্মাণ
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত এবারের ছবি ‘সুপার হিরো’ তার ভালো কনসেপ্টের সন্তোষজনক নির্মাণ। একেবারে দুর্বল নির্মাণ বলা যাচ্ছে না আবার ভালো নির্মাণও বলা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা ছিল নতুন কিছু করে দেখানোর সেজন্য সন্তোষজনক।

একটা নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে এসময়ে। সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে দেখা যাচ্ছে এসময়ের নির্মাতাদের। এ সম্পর্কিত কনসেপ্টে সমসাময়িক বেস্ট কাজ ছিল ‘ঢাকা অ্যাটাক।’ এবার কিছুটা ভিন্ন কনসেপ্টে সশস্ত্র বাহিনীকে স্পেশাল ফোর্সের মাধ্যমে একজন বিজ্ঞানীর গবেষণা, ষড়যন্ত্র এবং সাফল্য-ব্যর্থতার গল্প নিয়ে ‘সুপার হিরো’ নির্মাণ করলেন পরিচালক আশিকুর রহমান। তার ছবির বিশেষত্ব হলো মিসাইল গবেষণা, তৈরি, উৎক্ষেপণ, যুদ্ধবাজ মানসিকতা এবং প্রতিক্রিয়া। এগুলো বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্রে ছিল না। তাই নতুন কনসেপ্ট নিঃসন্দেহে। কনসেপ্ট বা আইডিয়া নতুন হলে সবসময় সেটা প্রশংসার দাবিদার। পরিচালক তা পাবে।

ভালো কনসেপ্ট বা আইডিয়াকে স্মার্টলি প্রজেন্ট করতে পুরো ছবির মধ্যে তার আবহ আনতে পরিচালক কৌশলগত সীমাবদ্ধতা দেখিয়েছেন। এটা না থাকলে ছবিটি অসাধারণ হতে পারত এবং অবশ্যই প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। বরং বলা যেতে পারে এ ধরনের কনসেপ্টের ছবির প্রতি দর্শকের প্রত্যাশা বেশিই থাকবে। সন্তোষজনক একটা অবস্থায় দর্শককে থাকতে হবে এর বেশি না।

বিরতির পর ছবির গল্পে একটা টার্ন আসে কিন্তু আগে তা ছিল না। আর দশটা দুর্বল ডিজিটাল ছবির মতো স্টোরি টেলিং করতে থাকেন আশিকুর রহমান বিরতির আগে। টেনে বাড়ানোর মতো অবস্থা ছিল সাদেক বাচ্চু ও শাকিব খানের বাবা-ছেলের সম্পর্ক দেখাতে পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খান-বুবলির ইনট্রোডাকশন ও রোমান্সের পানসে পার্টটাতে। আড়াই ঘণ্টার ছবিকে সম্পন্ন করতে বিরতির আগের ভাগটা ছিল টেনে বাড়ানো। এসব আশিকুর রহমানের কাছে আশা করা যায় না। বিরতির পর গল্পে ঢুকে ছবির ‘স্লোনেস’ খুব প্রভাব ফেলেছে। কমার্শিয়াল ছবি স্লো হতে পারবে না এমন না তবে এনজয়অ্যাবল হতে হবে। স্পেশাল ফোর্সের সামরিক অপারেশনগুলো ভালো ছিল।

ছবির প্রধান আকর্ষণ তারিক আনাম খান। তার চরিত্রটি ছিল রহস্যময় যদিও সচেতন দর্শক তাকে বুঝতে পারবে তিনি কোন ভূমিকায় থাকবেন ছবিতে ক্লাইমেক্সে। ফিনিশিং-এ শাকিব খান ও তারিক আনাম খানের ফেস-টু-ফেস অভিনয় দারুণ ছিল। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল এবং দরকারমতো হয়েছে।

আশিকুর রহমান কি ছবিতে শাকিব খান-কে সুপার হিরো করতে চেয়েছে শুধু? না, বুবলির চরিত্রটির গুরুত্ব ক্ষেত্রবিশেষে শাকিবের থেকে বেশি ছিল। বুবলি অভিনয়, ফাইট, কস্টিউম সিলেকশন তিনটি দিক থেকে ছবিতে ভালো করার চেষ্টা করেছে। তার ডায়লগ ডেলিভারিতে সমস্যা আছে। থেমে থেমে বলে এবং মুখ বারবার বন্ধ হয় মানে স্বতঃস্ফূর্ততা কম। কাজ করতে করতে ঠিক হবে আশা করা যায়।

অন্য চরিত্রের মধ্যে টাইগার রবি-র ফিটনেস যত অসাধারণ বিপরীতে তার অপ্রয়োজনীয় চিৎকার করার প্রবণতা যায়নি। মার্গারেট জি রোলিং খুব ইম্প্রেসিভ খলনায়িকা আবারও প্রমাণ হয়েছে এ ছবিতে। তাকে সলো খলনায়িকা করা হলে ভালো করবে। বড়দা মিঠুন তার ভূমিকায় ভালো।

পরিচালক ভালো একটা কাজ করেছেন, ছবিকে হিরোইজম দিয়ে একঘেয়ে করেননি। নায়ক ছাড়া কারো চরিত্রের তেমন গুরুত্ব নেই এমনটা তিনি করেননি। শাকিব খান, তারিক আনাম, বুবলি, মার্গারেট জি রোলিং তাদের চরিত্রের গুরুত্ব ছিল ছবিতে। এভাবে একাধিক চরিত্রকে হাইলাইট করেছেন।

ছবিতে মিসাইল উৎক্ষেপণের সেশনগুলোতে টান টান উত্তেজনা ছিল। দর্শক উপভোগ করেছে। ছবির শেষ আধঘণ্টা বাকি সময়গুলোর থেকে আলাদা ছিল। দেশকে বহির্বিশ্বের আক্রমণ বা যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত করার লড়াইতে অপারেশন বা মিশনটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র এই কনসেপ্টের সাথে যুক্ত সাহসীদের ‘সুপার হিরো’ দেখানো হয়েছে।

শেষে এটুকুই বলা যায় একটা ভালো কনসেপ্টের ছবিকে সম্পূর্ণ উপভোগ্য করতে পারেননি পরিচালক আশিকুর রহমান তবে সন্তোষজনক কিছু আছে। ভবিষ্যতে তাকে নতুন কনসেপ্টের ছবিতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বি : দ্র : যারা বলেছে ‘সুপার হিরো’ আশিকুর রহমানের এখন পর্যন্ত নির্মিত সেরা ছবি তারা ভুল বলেছে। ছবির প্রথমার্ধ্ব দেখে এটা মানার কোনো যুক্তি নেই। তার এখন সেরা নির্মাণ অবশ্যই ‘মুসাফির।


মন্তব্য করুন