Select Page

মারা গেছেন হুমায়রা হিমু

মারা গেছেন হুমায়রা হিমু

মারা গেছেন ছোটপর্দার অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমায় অরু আপা চরিত্রে অভিনয় করেন। আজ বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে ফ্যানের হ্যাঙ্গারে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে হিমু আত্মহত্যা করেছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় টিভি নাটকের শিল্পীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন অভিনয় শিল্পী সংঘের আইন ও কল্যাণ সম্পাদক অভিনেত্রী উর্মিলা শ্রাবন্তী কর জানিয়েছেন, হিমুর গলায় দাগ দেখতে পেয়েছে চিকিৎসকরা। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন।

হিমুর মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ছুঁটে যান উর্মিলা। সেখান থেকেই এক ফেসবুক স্ট্যাটাস তিনি লিখেছেন, অভিনয় শিল্পী হুমায়রা হিমু আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আজ বিকেল ৪টা ৪৬ মিনিটে হিমুর একজন বন্ধু ও মিহির হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসেন। পৌঁছানোর পর উপস্থিত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গলায় হালকা দাগ দেখতে পাওয়ায় ডাক্তার পুলিশ ডাকেন। পুলিশ ডাকাতে সেই বন্ধু হাসপাতাল থেকে চলে যান। তাকে খুঁজছে পুলিশ।

হিমুর মৃত্যুর কারণ পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন অভিনেত্রী। তিনি লেখেন, মৃত্যুর কারণ পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে। অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রতিনিধিগণ হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। হাসপাতাল এবং দাফন সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সবকিছু অভিনয়শিল্পী সংঘ সম্পন্ন করবে।

এদিকে হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সেই যুবক অভিনেত্রীর কথিত প্রেমিক বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। যার নাম রাফি, তার সঙ্গেই অভিনেত্রীর বিয়ের কথা চলছিল বলে জানা যায়। তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম।

তিনি বলেন, ‘প্রেমিক রাফির সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কয়েকদিন ধরে হুমায়রা হিমুর সঙ্গে রাফির ঝগড়া-বিবাদও হয়েছে৷ হাসপাতালে হিমুকে ফেলে রাফি পালিয়েছে। আমরা রাফিকে খুঁজছি। তাকে পেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অভিনেত্রীর মৃত্যুর আসল কারণ কি।’

এ বিষয়ে উত্তরার সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) জ্যোতির্ময় সাহা পরিবারের বরাতে বলেন, ‘ফ্যান লাগানোর হ্যাঙ্গারে নাইলনের রশি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় হিমুকে পাওয়া যায়। পরে স্বজনরা উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছি। মরদেহের সুরতহাল চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরে জানানো যাবে।

হুমায়রা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুরে ছোটবেলা কেটেছে হোমায়রা হিমুর। ক্লাস টুতে পড়ার সময় থেকেই কাজ করতেন মঞ্চে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল দেশ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিমু নিজেই বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় হাইফাই কৌতুক শিল্পগোষ্ঠী ও ফ্রেন্ডস নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতেন তিনি।

১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর ঢাকায় আসেন হিমু। প্রথমে ভর্তি হন নাগরিক নাট্যাঙ্গনে। এরপর কাজ করেন আরও কয়েকটি নাটকের দলে।

এরপর এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ফটোশুট করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় মডেলিংয়ের জন্য জমা দেন। তখন এইডস নিয়ে সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। পরে দেখা যায় আরও কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে। একটি চায়ের বিজ্ঞাপনচিত্রে তাঁকে দেখার পর প্রথম হিমুকে নাটকে সুযোগ দেন নির্মাতা তাহের শিপন। নাটকের নাম ছিল ‘পি আই’। তাঁর প্রথম সহশিল্পী ছিলেন প্রয়াত দিলীপ চক্রবর্তী।

২০০৫ সালে বিনোদন দুনিয়ায় কাজ শুরু করেন হুমায়রা হিমু। এই সময়ে তাঁর আসল নাম হুমায়রা নুসরাত হিমু থেকে হোমায়রা হিমু হয়। তাঁর এই নাম বদলের পেছনে রয়েছে অভিনেতা টনি ডায়েসের ভূমিকা। এ প্রসঙ্গে দেশ টিভিকে দেওয়া একই সাক্ষাৎকারে হিমু বলেছিলেন, ‘টনি ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম একটা টেলিফিল্ম করি। উনি তখন আমাকে বলেন, “তুমি দুই অক্ষরের নাম দাও।” এর আগে আমি কেবল “হিমু” বলে পরিচয় দিতাম। তখন টনি ভাই বলেন, “পৃথিবীর যত বিখ্যাত মানুষ আছে সবার নাম দুই অক্ষরের।” এর পর থেকেই আমি হোমায়রা হিমু হয়ে যাই।’

হিমু যখন স্কুলের ছাত্রী, তখন তার স্কুলের এক বড় বোন শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করেন। ঢাকা থেকে শুটিং করে স্কুলে ফেরার পর সবাই তাকে দেখতে আসেন। তখন তাঁকে দেখেই টিভিতে কাজ করার ইচ্ছা হয়। তবে ছোটবেলায় হিমুর ইচ্ছা ছিল এয়ার হোস্টেজ হওয়ার। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী।

টিভি নাটকে অভিনয় শুরুর পর নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর অভিনয় দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। ‘সোনাঘাট’, ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’, ‘বাটিঘর’, ‘শোনে না সে শোনে না’, ‘কমেডি-৪২০’, ‘চাপাবাজ’, ‘অ্যাকশান গোয়েন্দা’, ‘ছায়াবিবি’, ‘এক কাপ চা’, ‘এ কেমন প্রতিদান’, ‘হুলো বিড়াল’, ‘ছন্নছাড়া ৪২০’, ‘অ্যাম্বুলেন্স ডাক্তার’, ‘পাগলা প্রেমিক’ ইত্যাদি নাটকে দেখা গেছে তাকে।

২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় হিমুর। এছাড়া ‘চল যায়’ নামের আরেকটি চলচ্চিত্রের অভিনয় করেছেন। গত কয়েক বছর মিডিয়ায় অনুপস্থিত ছিলেন হুমায়রা হিমু।


Leave a reply