Select Page

মায়াবতী : নিষিদ্ধ পরিবেশে বেড়ে ওঠা স্বপ্ন

মায়াবতী : নিষিদ্ধ পরিবেশে বেড়ে ওঠা স্বপ্ন

মায়াবতী
ধরন: সোশ্যাল রোম্যান্টিক ড্রামা
পরিচালনা: অরুণ চৌধুরী
গল্প ও চিত্রনাট্য: অরুণ চৌধুরী ও তার টিম
প্রযোজনা: আনোয়ার আজাদ ফিল্মস
পরিবেশনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া
অভিনয়: নুসরাত ইমরোজ তিশা (মায়া), ইয়াশ রোহান (ইকবাল), ফজলুর রহমান বাবু (খোদা বক্স মৃধা), আব্দুল্লাহ রানা (বাদশাহ আলম), অবিদ রেহান (আকবর আলী), রাইসুল ইসলাম আসাদ (উকিল), দিলারা জামান, অরুণা বিশ্বাস (মায়ার মা), ওয়াহিদা মল্লিক জলি (বড় মা), আফরোজা বানু (ইকবালের মা), মামুনুর রশীদ (বিচারক), তানভীর হোসেন প্রবাল (উকিল), আগুন (অতিথি চরিত্র) প্রমুখ।
শুভমুক্তি: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

নামকরণ: দয়া বা মমতা আছে যে নারীর তাকেই মূলত মায়াবতী বলা হয়। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন, মায়াবতীর কোনো পুরুষবাচক শব্দ নেই। এই নাম নারীর ভুষণেই মানায়।

সিনেমার কেন্দ্র মায়া বেগম নামে এক নারীকে ঘিরে। যিনি সেই ছোটকাল থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত নিজের স্বপ্ন বুকে লালন করে এ সমাজের সাথে লড়াই করে এসেছেন। তাই কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম মায়া বেগম অনুসারে এছবির নাম “মায়াবতী”কে যথার্থ বলা যায়।

কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ: সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্য সাজানোতে একাধিক মানুষের অবদান রয়েছে, প্রি ক্রেডিট সিনে তাদের নামগুলি অতি দ্রুত সরে যাওয়ায় মস্তিষ্কে টুকলিফাই করা সম্ভব হয়নি। তাই এক্ষেত্রে গল্প ও চিত্রনাট্য সাজানোর ক্রেডিট পরিচালক অরুণ চৌধুরী ও তার টিম কে দেওয়াই ভালো মনে হলো।

একটা সিনেমাকে উপভোগ্য করার পূর্বশর্ত হলো গল্পের গঠন ভালোভাবে করা, প্রধান চরিত্রকে ভালোভাবে গড়ে তোলা। সিনেমার চিত্রনাট্যই মূলত এই কাজটি প্রাথমিক অবস্থায় গড়ে তোলে। যদি এটা না করা হয় তবে গল্প কিংবা নির্মাণ যতই ভালো হোক, দর্শক ঐ গল্পের সাথে নিজেকে কানেক্ট করতে পারে না।

ভালো বিষয় হলো মায়াবতীর প্রথমার্ধে এমনটা মনে হয়নি। গল্পটাকে খুব সুন্দরভাবে ডেভলপ করে একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করানো হয়েছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র মায়াকে খুব সুন্দর করে তৈরী করা হয়েছে। গল্পের মূল বিষয়বস্তু পতিতালয়ে বেড়ে ওঠা এক নারীকে ঘিরে, যার গানের গলায় এক অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে আছে। কিশোর বয়সে যখন মায়া কিছু ঘটনাবলীর মাধ্যমে এই ব্রথেলে প্রথম আসে তখন এক গায়ক খদ্দের তার গানের গলার সুরে মোহনীয় হয়ে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। চেষ্টা করেন মেয়ের মতো ভালোবাসা দিয়ে মায়াকে তার উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার। পরবর্তীতে কিছু দুষ্ট লোকের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে মায়া নোংরা সমাজের বেড়াজালে আটকে যান। তো এই বেড়াজাল টপকে কীভাবে তিনি বের হন সেটাই দেখা যায় গল্পের পরবর্তী অংশে।

গল্পের ডেভলপমেন্ট খুব সুনিপুণ হাতে করায় এসিনেমার প্রথমার্ধ যেকোনো দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে। দ্বিতৗয়ার্ধের প্রায় পুরোটাই সাজানো হয়েছে কোর্ট রুম ড্রামা দিয়ে। চিত্রনাট্যের মূল দূর্বলতাও এখানে। প্রথমত, প্রায় ৪০-৪৫ মিনিটের কোর্ট রুম ড্রামা সিক্যুয়েন্সটিতে অপরাধী, সাক্ষী, পক্ষ-বিপক্ষের উকিলদের এমন আঙ্গিকে দেখানো হয়েছে, যেটি দেখলে সবার আগে মনে পড়ে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী পরিচালিত হিন্দি ছবি “পিংক” এর কথা। যদিও দুটি ছবির প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। এক্ষেত্রে বিষয়টাকে অনুপ্রাণিত বলা যায়।

দ্বিতীয়ত, কোর্ট রুম ড্রামা সাজানোতে ব্যাপক পরিমাণে টুইস্ট ও সাসপেন্স রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাসপেন্স কিংবা টুইস্ট দুটোই আছে, কিন্তু দর্শককে একনাগাড়ে সিটে বসিয়ে রাখার জন্য যতটুকু দরকার, তা যথেষ্ট পরিমাণে নেই। যেভাবে সাজানো হয়েছিল তাতে বোঝা যাচ্ছিল প্রকৃত ঘটনাটি কি। এখন সিনেমা দেখতে গিয়ে যদি দেখেন অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই যখন সকল রহস্যের জট খুলে আপনার সামনে চলে আসে, তখন এই ৪০-৪৫ মিনিট ব্যপ্তির সিক্যুয়েন্সও আপনার কাছে অনেক বেশি দীর্ঘ মনে হবে।

তবে এতো বড় আকারে কোর্ট রুম ড্রামা দেখানোও মোটাদাগে সাহসী কাজ, অন্তত আমাদের সিনেমার প্রেক্ষাপটে। কোর্ট রুম ড্রামাকে আমাদের দেশের সিনেমায় ততটা গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়না। “মায়াবতী” ও হয়তো এক্ষেত্রে ততটা সফল হতে পারেননি, তবে চেষ্টা করেছে। সিনেমায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভালোমানের সংলাপ ছিল, যেগুলো গল্প ডেভলপমেন্টে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। তিশা, ফজলুর রহমান বাবু, রাইসুল ইসলাম আসাদ, অরুণা বিশ্বাস, দিলারা জামানসহ আরো অনেকের মুখে সুন্দর ও অর্থবহ সংলাপ শোনা গেছে। তবে ছবিতে ফজলুর রহমান বাবু ও আব্দুল্লাহ রানার মধ্যে পালং শাক দাঁতের কোণায় আটকে থাকা নিয়ে একটি কথোপকথন পাওয়া গেছে, যেই আইডিয়াটি মনে হলো একটি বিদেশী বিজ্ঞাপন থেকে নেওয়া।

অনেক ভালো ভালো সংলাপ যেখানে মনে স্থান নিতে পারে না, কিন্তু এই ধরনের ছোটখাটো দূর্বল জিনিসগুলি কেন জানি দর্শক মস্তিষ্কে আঁচড় কেটে যায়। এ এক বড়ই আশ্চর্য বিষয়।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৪০

পরিচালনা ও অভিনয়: “মায়াবতী” ছবিটি পরিচালনা করেছেন অরুণ চৌধুরী। এটি তার পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি, প্রথম ছবি ছিল “আলতা বানু”। তার প্রথম ছবিতে তার পরিচালনা ততটা মুনশিয়ানা ছড়ায়নি। তবে “মায়াবতী” তে তার পরিচালনার কাজ তুলনামূলক ভালো। একসময় ছোটপর্দায় তার কিছু কাজ বেশ জনপ্রিয় ছিল, “মায়াবতী” এর মাধ্যমে মনে হলো তিনি কিছুটা হলেও তার সেই নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন। সিনেমাটিকে তিনি নন লিনিয়ার স্টাইলে পেশ করেছেন, কিন্তু সেটা অতি সহজভাবে। সবাই বুঝতে পারে এমনভাবে। গল্পের দুটি সময়কে তিনি খুব গোছানো আঙ্গিকে একত্রে পর্দায় তুলে ধরেছেন। মায়া বেগমের অতীত ও প্রিন্সেস মায়ার বর্তমান, দুটি সময়কে একসাথে তুলে আনাই এ সিনেমার প্রথমার্ধকে আকর্ষণীয় করে তোলে। সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে তার লেখনীর দূর্বলতা কিছুটা পরিচালনার ওপরও পড়ে। তবে প্রথমার্ধের গল্পের গঠন ভালো হওয়ায় এটি দ্বিতৗয়ার্ধেও দর্শক আকর্ষণ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

অভিনয়ে নিঃসন্দেহে নুসরাত ইমরোজ তিশা সবথেকে ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছেন, যদিও এছবিতে মোটাদাগে কারো অভিনয়ই খারাপ লাগেনি। তবে কেন্দ্রীয় চরিত্র হওয়ায় তিশার স্ক্রিণটাইম ছিল সবথেকে বেশি, সেহিসেবে বলা যায় তিনি আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন। তবে সিনেমায় যেরকম দৈহিক গঠনে তাকে দেখা গেছে, তাকে টিনএজার মানতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছিল। এক্ষেত্রে গল্পে যদি তার বয়সের দিকে কোনো ইঙ্গিত না দেওয়া হতো সেটাই সবথেকে ভালো সমাধান হতো।

আরেকটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম, তিশা ও ইয়াশ রোহানের মধ্যকার রসায়ন নিয়ে। তাদের মধ্যকার বয়সের ব্যবধান কতখানি সেটা তো আমরা সবাই জানি, কিন্তু এই ব্যবধান পর্দায় ফুটে উঠেনি। দুজনকে পিঠাপিঠি সমবয়সী লেগেছে। তাদের মধ্যকার ছোটখাটো রোম্যান্স বেশ উপভোগ্য ছিল। ছবির পরিচালক এই ক্রেডিটের বড় অংশিদার। তবে ইয়াশ রোহানের চরিত্রের গুরুত্ব এগল্পে অনেক কম। তার চরিত্রটি মূলত বিভিন্ন চরিত্রের সাথে মেলবন্ধনে সাহায্য করেছে।

খোদা বক্স মৃধা চরিত্রটি রূপদান করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। তার অভিনয়ে খুঁত বের করার সাধ্য আমার নেই। “অজ্ঞাতনামা” এর পর থেকে প্রতিটি চরিত্রে তিনি তার বড়পর্দার অভিনয়কে এক অন্য লেভেলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আস্তে আস্তে লিভিং লেজেন্ড হওয়ার পথে এগুচ্ছেন।

সিনেমার অন্যতম নেতিবাচক চরিত্রে দেখলাম আব্দুল্লাহ রানাকে। এর আগে তাকে বড়পর্দায় এতোটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সেহিসেবে তিনি খুব ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। তার সাথে ফজলুর রহমান বাবুর কিছু সার্কাস্টিক রসায়ন ভালো বিনোদন দিয়েছে।

উকিল চরিত্রে থাকা রাইসুল ইসলাম আসাদের অভিনয় এবার কিছুটা সেই “পিংক” ছবির অমিতাভ বচ্চনের মতো মনে হলো। তাই তেমন বৈচিত্র্য পাইনি। তার বিপক্ষে থাকা উকিল চরিত্রে তানভীর হোসেন প্রবাল ও গল্পের আরেক ভিলেন অবিদ রেহানের পারফরমেন্স মামুনুর রশীদ ও রাইসুল ইসলাম আসাদের সামনে সাদামাটা পড়ে রইলো। আফরোজা বানুর নিঃশব্দ অভিনয় ব্যাপক মন কেড়েছে, গল্পের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। ছোট ছোট চরিত্রে দিলারা জামান, অরূণা বিশ্বাস, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও কন্ঠশিল্পী আগুনকে দেখা গেছে। তাদের অভিনয় ভালো ছিল।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০

কারিগরি: “আলতা বানু” যখন দেখেছিলাম, তখন এর প্রতিটি সিনে কারিগরি দৈন্যতা খুবই বাজেভাবে ফুটে উঠেছিল। আনোয়ার আজাদ ফিল্মস এবার “মায়াবতী” এর ক্ষেত্রে এব্যাপারে ছিলেন সতর্ক, তাই এবার আর পরিচালকের পূর্বের ছবির মতো কারিগরি দৈন্যতা চোখে পড়েনি।

এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ভুয়সী প্রশংসা করতে হয় এসিনেমার জন্য বাছাই করা লোকেশনের। দৌলতদিয়া রেড লাইট এরিয়া নিয়ে অতীতে বহু কাহিনী শুনেছি। সিনেমায় ফজলুর রহমান বাবুর মুখে একটি ডায়লগ শোনা যায়, এই ব্রথেল এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ। ঠিক কোন দিক থেকে এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠ তা জানি না, তবে শুনেছি এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবথেকে বড় পতিতাপল্লী। প্রায় দশ হাজার সেক্স ওয়ার্কার আছে এখানে। এরা আবার কিছু বাড়িওয়ালার অধিভুক্ত থেকে বসবাস করে। দৈনিক তিন থেকে চার হাজার পুরুষ এই পতিতাপল্লীতে যাতায়াত করে। এখানে অনেক আগে হতেই মাদক চোরাচালান চলে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ইন্ধন আছে এই পল্লীতে, তারা এই পল্লীর বাড়িওয়ালিদের ইনকামের একটা অংশ নিজেরা পায়। মাঝেমধ্যে শোনা যায় এখানে কম বয়সী শিশুদের জোর করে অবৈধ কাজে লিপ্ত করানো হয়। এখন অবশ্য কিছু এনজিওর বদৌলতে এই বিষয়টির প্রভাব কিছুটা কমেছে। আবার এও শোনা যায়, মাঝেমধ্যে দৌলতদিয়া ঘাটে কৃত্রিম জ্যাম তৈরী করা হয়, যেনো গাড়িচালক/ট্রাকচালকেরা এই পল্লীতে এসে তিন-চার ঘন্টা সময় ব্যয় করতে পারে।

এরকম একটি পরিবেশে গিয়ে একটি সিনেমার শ্যুটিং সম্পন্ন করা মোটেও চাট্টিখানি কথা না! এরকম সাহসিকতা দেখানোর জন্য পুরো শ্যুটিং ইউনিটের কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য। এছাড়া সিনেমায় দেখানো গ্রামটিকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দারুণ সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে। তানভীর আনজুমের নান্দনিক ক্যামেরাওয়ার্ক বৃহৎ পতিতাপল্লী, গ্রামবাংলার রূপ ও পুরান ঢাকার অন্ধকার অংশকে ব্যাপক সৌন্দর্য দান করেছে।

সিনেমার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এর গান। খন্ড খন্ড আকারে প্রায় ৬/৭ টির মতো গান আছে ছবিতে। ফরিদ আহমেদ এই গুরুদায়িত্বটি বেশ ভালো সামলিয়েছেন। ছবিতে পূর্ণাঙ্গ গান আছে দুটি। “আটকে গেছে মন” গানটি কথা ও সুর দিয়েছেন চিরকুটের ভোকাল সুমি, গেয়েছেনও তিনি। এই গানটির সিনেমার সেরা গান। এছাড়া চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় গান “মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা” কে এসিনেমায় পুনরায় রিক্রিয়েট করা হয়েছে। অনন্যা আচার্য্য গানটিকে সুরেলা কন্ঠে গেয়েছেন, তবে তিশার ঠোট মেলানোটা ঠিকভাবে হয়নি।

সিনেমার কালার গ্রেডিং ও শব্দ মিশ্রণ দুটোই খুব ভালো ছিল। যেখানে দেশসেরা সাউন্ড ডিজাইনার রিপন নাথ আছেন সেখানে তো সেরা কাজই পাওয়া যায়! তবে সিনেমার এডিটিং এ কিছুটা সমস্যা চোখে পড়লো। সিনেমার দৈর্ঘ্য ১০-১৫ মিনিটের মতো কমালে কাজটি হয়তো আরো ভালো হতো।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০

সামাজিক বার্তা ও বিনোদন: অরুণ চৌধুরী তার দুটি ছবিই তৈরী করলেন নারীর অধিকার ও সমাজের কতিপয় ট্যাবুকে কেন্দ্র করে। সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ ছিল যেখানে তিশা রোহান কে বলে, কোনো পুরুষ চাইলেই বোনিবোনা না হলে একাধিক সংসার করে, কিন্তু একজন নারী তা পারেনা। কারণ সমাজ তাকে বাকাচোখে দেখে। পতিতাপল্লীতে বসবাস করা মানেই খারাপ, আর ভদ্রসমাজে থাকলেই ভালো, এমন চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে এছবিতে। পতিতাপল্লীতে থেকে যেমন সুস্থ গানের চর্চা করা যায়, তেমনি ভদ্র সমাজের লোকেরা রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ পল্লীতে চলাফেরা করে এমনটাও দেখা যায়।

মেয়েদের ‘না’ বলার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এছবি। না মানে হলো তার এই কাজে মত নেই। তিনি অনাগ্রহী। এই ‘না’ বলার গুরুত্বকে আমাদের সমাজের মানুষদের উপলব্ধি করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে গণমানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়া ভালগার লিরিক্সের ঝাকানাকা গানের ওপরও পরোক্ষভাবে আঙ্গুল তোলা হয়েছে। গান হলো সাধনার বিষয়।এটি যে শুধু শোনার বিষয় তা না, অনুভবের বিষয়। গানের কথা আসতে হয় অন্তর দিয়ে, তবেই মন সুস্থধারায় মনোরঞ্জিত হতে পারে।

অন্যান্য বিনোদনের মধ্যে নতুন জুটি তিশা-রোহানের রসায়ন পর্দায় উপভোগ্য লাগবে। সিনেমার গানগুলি শ্রুতিমধুর। বাবু এবং আব্দুল্লাহ রানার মধ্যকার সার্কাজম উপভোগ্য। এগুলো পূর্বেই আলোচনা করে ফেলেছি।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০

ব্যক্তিগত: পোস্টারবয় সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েমের নান্দনিক সব পোস্টার দেখে এসিনেমা সর্বপ্রথম আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। তবে সিনেমা দেখার পর সবমিলিয়ে যদি বলি, ছবির উপস্থাপনা তুলনামূলক ভালো। চিত্রনাট্য গোছালো, কিন্তু যথেষ্ট টুইস্ট ও সাসপেন্সের অভাব আছে। সিনেমার দ্বিতৗয়ার্ধ বিশেষ করে কোর্টরুম ড্রামা যদি আরো ভালো করে লেখা যেতো তবে এসিনেমা মোটামুটি সবদিক থেকে পরিপূর্ণতা পেতো।

রেটিং: ৭/১০

ছবিটি কেন দেখবেন: নারী দর্শকদের জন্য এটি একটি আদর্শ ছবি। গল্পের স্থাপন পতিতালয়কে কেন্দ্র করে, কিন্তু পরোক্ষভাবে প্রতিটি নারী এই গল্পে তার নিজ সত্তাকে খুজেঁ পাবে। তবে এছবির জন্য চেষ্টা করবেন ভালোমানের সিনেমাহলে যাওয়ার।


মন্তব্য করুন