Select Page

মৃত্যুচেতনায় জীবন দেখা

মৃত্যুচেতনায় জীবন দেখা


২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশী ছবি ‘গোর।’* পরিচালনায় গাজী রাকায়েত। ছবিটি প্রথমবারের মতো একটা পরিচিতিও তৈরি করেছে এবং সেটি হচ্ছে এটি প্রথম বাই-লিঙ্গুয়াল বাংলাদেশী ছবি। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় নির্মিত হয়েছে। সেদিক থেকে নতুন টেস্টের ছবিও বলা যায়।

গাজী রাকায়েত প্রথমত একজন অভিনেতা। তিনি নাটক ও চলচ্চিত্রের সুপরিচিত একজন অভিনেতা এবং বর্তমানে নির্মাতা। ‘গোর’ ছবিতে তাঁর সিগনেচার ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে এবং তিনি সম্ভাবনাময় নির্মাতা। ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন।

‘গোর’ ছবির ট্যাগলাইন রাখা হয়েছে ‘the grave.’ ছবির গল্প খুব সাধারণ কিন্তু উপস্থাপনা স্পর্শকাতর। ক্লাইমেক্সে স্পর্শকাতর বিষয়টি বোঝা যাবে। গল্পে প্রধানভাবে যে দর্শন দেখানো হয়েছে তা হচ্ছে মৃত্যুচেতনায় জীবনকে অবলোকন। মানুষ যতদিনই বেঁচে থাকুক না কেন মৃত্যুর জন্যই সে অপেক্ষা করে এবং সেটাই তাকে পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন দেয়।

গাজী রাকায়েত একজন গোরখোদক। তিনি ৯৭ টি গোর (কবর) খুঁড়েছেন। তাঁর লক্ষ্য একশোটি পূরণ করে নিজের একটা ইতিহাস তৈরি করা। ৯৮ পর্যন্ত গেলেও বাকি দুটি যেন আর হতেই চায় না। তিনি কি পারবেন লক্ষ্য পূরণ করতে নাকি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে অন্য কোনো বাস্তবতা?

গল্পের সাথে প্রধান চরিত্র গাজী রাকায়েতেরই। তিনি গোরখোদক হলেও ভিক্ষা করেন কিন্তু ভিক্ষা তাঁর পেশা নয়। মূলত ভিক্ষার ছলে তিনি মৃত্যুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করেন কারণ তাঁর লক্ষ্য একশোটি গোর খোঁড়া। গল্পের এ জায়গাটি স্পর্শকাতর হয়ে যায়। এমন এক চরিত্র যাকে মৃত্যুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু কেন তাঁর এ লক্ষ্য? এখানেও আছে রাকায়েতের নিজের একটি গল্প যার জন্য তিনি এ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। ছবি দেখে তা জানতে হবে। রাকায়েতের অভিনয় নিখুঁত ছিল।

প্রধান চরিত্রের পাশাপাশি মৌসুমী হামিদের চরিত্রটি মায়াবী একটা চরিত্র। একটা আকর্ষণ আছে চরিত্রে। তার গেটআপ ও অভিনয়েও মার্জিত ব্যাপার আছে। সুষমা সরকারের চরিত্র খুব উজ্জ্বল না হলেও তার অভিনয় দারুণ, দীপান্বিতা মার্টিনের চরিত্রে স্বামী, সন্তান ও পরিবারের প্রতি টান আছে এবং অসাধারণ অভিনয় ছিল। আশিউল ইসলাম সম্ভবত নতুন ছেলে তবে তার অভিনয়ের প্রতি মনোযোগ আছে। ছবিতে দ্বিতীয় প্রধান ফোকাস তার চরিত্রেই ছিল এবং চরিত্রটি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বক্তব্যধর্মী। দিলারা জামান এ বয়সে এসেও মনকাড়া অভিনয় করেন নতুন করে দেখা গেল। শামীমা তুষ্টি, মামুনুর রশীদ কম সময়ে যথার্থ।

বাই-লিঙ্গুয়াল ছবি হলেও ইংরেজিই ছিল ৯৫% আর তিন চারটা সিকোয়েন্সে বাংলা ছিল। ইংরেজির ব্যবহারে সহজবোধ্য অ্যাকসেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক দর্শকের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা লাগতে পারে যে একজন ভিক্ষুকও ইংরেজিতে কথা বলছে। ছবির একটা দিক নোটিশ করার মতো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার খুব কম ছিল সম্ভবত রিয়েল প্রাকৃতিক বিষয়টা রাখতে এটা করা হয়েছে। দরজার শব্দ, হাঁটার শব্দ, কাশি, কান্না, কোদালের শব্দ এগুলো রিয়েল রাখা হয়েছে সেজন্য ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খুব কম ছিল। অভিনয়ও মানসম্মত রাখা হয়েছে। ওভারঅল ভালো নির্মাণের ছবি।

মৃত্যুচেতনায় কবি, সাহিত্যিকরাও সাহিত্য রচনা করেন এবং সেদিক থেকে ‘গোর’ ছবি সাহিত্যমূল্যও পেয়ে যায়। ইংরেজির ব্যবহার বেশি থাকায় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এ ছবি সহজেই অংশ নিতে পারবে কিন্তু যোগ-বিয়োগ করে।

গত কয়েক বছর থেকে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে গার্বেজ স্থান পেয়েছিল। সেদিক থেকে ২০২১ এর প্রথম ছবি হলো মানসম্মত। এটা ভালো খবর। ‘গোর’ এর মতো বছরের বাকি ছবিগুলোও হোক মানসম্মত।

রেটিং – ৮/১০

*এ ছবি প্রথম মুক্তি পায় ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি মুক্তি পায় ঢাকার দুটি হলে। সে হিসেবে ২০২১ সালে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নয়, আগের বছরের ছবি। – অ্যাডমিন


মন্তব্য করুন