Select Page

যেভাবে ঈদের সেরা ছবি ‘নোলক’

যেভাবে ঈদের সেরা ছবি ‘নোলক’

ঈদের ছবির বাজার এখন অনেকটাই ছোট। এর মধ্যেও অনেক হিসাব-নিকাশ চলে। কোন ছবি কিভাবে কতটুকু বাজারে প্রভাব ফেলবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠিক করে দেয়। তবে দর্শকের চোখ এবং সমালোচকের চোখ যখন এক হয়ে যায় মাঝখান থেকে একটা উত্তর আসে আর তা হচ্ছে সেরা ছবি কোনটা।

এই ঈদে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে ‘নোলক, পাসওয়ার্ড ও আবার বসন্ত।’ ছবির গল্প, উপস্থাপনা, অভিনয়, দর্শককে আকর্ষণের স্পেশালিটি এসব ফ্যাক্টর বিবেচনা করে একটা ছবিকেই সেরা বলতে হয়। এ ঈদে এসব বিবেচনায় সেরা ছবি ‘নোলক’ (২০১৯)।

প্রথমত পরিচালক সাকিব সনেটের প্রথম ছবি ‘নোলক’ দেখার সময় তা মনে হয় নি। অভিজ্ঞ মনে হয়েছে। দর্শকেরও মনে হবে বোধ হয় এটা তার পাঁচ/ছয় নম্বর ছবি। কিন্তু, না প্রথম ছবিতেই নিজের সিগনেচার রেখে দিয়েছেন তিনি।

‘নোলক’ একটা ফুল প্যাকেজ প্রজেক্ট। ভালো গল্প একটা ছবির প্রথম শর্ত। ছবিতে ভালো গল্প আছে। গল্পের কয়েকটা ধাপ আছে, একেক ধাপে দর্শক নতুন গল্পে ঢুকবে এবং যা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই সামনে চলে আসবে। গল্পের শক্তি আছে এ ছবিতে। কথার ফুলঝুরিতে বাঁধা কমেডির মধ্য দিয়ে নায়ক-নায়িকা শাকিব খান-ববির দারুণ খুনসুটি এবং সুন্দর পারিবারিক বন্ধন দেখা যাবে। যারা ট্রেলার দেখে ভেবেছিল চিরায়ত পারিবারিক দ্বন্দ্ব আর প্রেমের পথে বাধাই এ ছবির গল্প তারা ভুল ভেবে বসে আছে। ট্রেলারের গল্পের একটা অংশকে দেখানো হয়েছে বাকি অংশগুলো দর্শককে সারপ্রাইজ করবে। সিনেমাহলে অলসভাবে পপকর্ণ খাওয়ার যে পরিস্থিতি অনেক সময় দর্শকের তৈরি হয় এ ছবি সেটা করবে না। নির্মল বিনোদন আছে। ডায়লগ বেসিস কমেডি যেমন ববির মুখে-‘বড়মা এটা কি ছেলে জন্ম দিল! এটা কি পোলা না ছোলা!’ তারিক আনাম, রজতাভ দত্ত, শাকিব খান, ববি চারজনই কমেডির কাজ সেরেছে ছবিতে। তারিক আনাম-রজতাভের রসায়নটা স্পেশাল কিছু ছিল। তারা দর্শককে মজা দেবে আবার বিষণ্নও করবে। মৌসুমী-ওমর সানীর ভূমিকা গল্পে বাঁক এনেছে।

শাকিব খান-ববির অন্যান্য ছবি থেকে অবশ্যই ‘নোলক’ আলাদা এবং সেরা। তাদের রসায়ন শাকিব খানের অন্য একঘেয়েমি জুটির থেকে মুক্তি দেবার মতো ভালো কিছু ছিল। শাকিব-ববি প্রথমত দুজন দুজনের পেছনে লেগে থাকে ছবিতে তারপর ঠিকই দুজনের প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং দর্শককে নতুন একটা ঘটনার সামনে দাঁড় করায়।

ছবির বাজেট ভালো ছিল। লোকেশন অসাধারণ আউটডোরের। রাজকীয় বাড়ির ইনডোর লোকেশনও দৃষ্টি কাড়ে। গানে গানে নবান্ন উৎসব, মোরগ লড়াই, ঘোড়ার টমটম গাড়ি, গ্রামীণ জীবন এগুলো সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছে। ‘নোলক’-কে কেন্দ্র করে বংশীয় পরম্পরার রীতির সাথে প্রেমের গল্পকে এক করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ইতিহাসেও ঘটেছে বিখ্যাত সব ভালোবাসার জুটির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে। ডায়লগের দিক থেকেও বলতে গেলে অনেক ডায়লগ আছে উল্লেখ করার মতো। রেবেকার মুখে রজতাভ দত্তকে বলা এ ডায়লগটি অসাধারণ ছিল-‘মেয়ের বাপ কখনো পরাজিত হয় না, মেয়ের বাপ তো দু’হাত ভরে মেয়েকে দিয়ে দেয় অন্যের ঘরে।’ শাকিব-ববির রোমান্টিক ডায়লগে একটা ছোট্ট কথোপকথনও দারুণ :
– আর ঝগড়া করবি না তো! সুখে রাখবি তো!
– সুখে রাখব কিনা জানি না তবে মরলে তোরে এই বুকেই নিয়া মরব
বলার ধরণ দুজনেরই চমৎকার।
ওমর সানী-র ‘আমরা জট খুলি, পাকাই না’ মজার সংলাপ ছিল।

ছবির গান ইতোমধ্যে প্রশংসিত। ‘জলে ভাসা ফুল’ বড়পর্দায় দেখতে ভালো লাগবে। ‘কলিকালের রাধা’-ও অনেকের ভালো লেগেছে। তবে টাইটেল সং-এ ‘দুই ভুবনের মাঝে দু’প্রাণ / নোলক মায়ার পাখি’ এটা সেরা। সিচুয়েশন তৈরি করতে এবং দর্শকের মনে দাগ কাটতে সিনেমাহলে এটাই সেরা গান। তার সাথে শাকিব-ববির প্রেমের অনুভূতিতে পড়ার সময়ের গানটাও ভালো ছিল। ক্যামেরার কাজে প্রকৃতি কথা বলেছে।

কিছু সিকোয়েন্স বা আর্টিস্ট দর্শকের কাছে বোরিং মনে হতে পারে তবে সেগুলো মেজোর কোনো ফল্ট না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেক সিকোয়েন্সে একই রকম ছিল এটা ভিন্নভাবে করা যেত।

ছবির ক্লাইমেক্স-ই দর্শককে বলে দেবে কেন সেরা এ ছবি। শাকিব খানের অনেক ছবি ক্লাইমেক্সের কারণে দর্শক বা তার ভক্তরা মনে রেখেছে। ‘নোলক’-ও ক্লাইমেক্সের কারণে মনে রাখবে।

শাকিব খান অসাধারণ অভিনয় করেছে। শাকিব খান-কে তারুণ্যের একটা রঙে উপস্থাপন করা হয়েছে। ববি আগের থেকে উন্নতি করা অভিনয় দেখিয়েছে। তারিক আনাম ও রজতাভ দত্তের কমেডি ও সিরিয়াস অভিনয় ছবির অন্যতম প্রাণ। সুপ্রিয় দত্ত, শহীদুল আলম সাচ্চু এ দুজন দুটি বিশেষ চরিত্রে ছবির গল্পের একটা অংশকে প্রভাবিত করেছে। রেবেকা চলনসই হলেও নিমা রহমান তার চরিত্রে ন্যাচারাল ছিল না।

‘নোলক’ বাণিজ্যিক ছবির জরুরি কিছু সাবজেক্টকে মাথায় রেখে নির্মিত ফুল প্যাকেজ বিনোদনধর্মী ছবি। ঈদের অন্য ছবিগুলোর থেকে উপস্থাপনায়, নির্মাণে এগিয়ে আছে তাই এটাই সেরা ছবি ঈদের এবং যারা দেখেনি দেখার পর একমত হবার সম্ভাবনা বেশি।

রেটিং – ৮/১০


মন্তব্য করুন