Select Page

রাজকুমার: নায়ক-পরিচালক-প্রযোজক তিনজনই জিতে গেলেন

রাজকুমার: নায়ক-পরিচালক-প্রযোজক তিনজনই জিতে গেলেন

একটা দেশি কমার্শিয়াল সিনেমায় যা যা থাকে বলে আপনাদের বিশ্বাস, তার সবকিছু রেখে শাকিব খানকে নিয়ে অনেকবার ব্যালেন্স করা যায়নি। একটা লম্বা সময় শাকিব নামেমাত্র ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ হয়েই ছিলেন। একটা বড় ক্লাসের মানুষজন তার সিনেমা দেখতে নাক সিটকাতেন, ‘রিক্সাওয়ালাদের নায়ক’ বলে এলিট পার্টিগুলোতে রাখতেন না। সেইসময়ও শাকিব হারিয়ে যাননি। ব্যক্তিগত সমালোচনা আর নায়কোচিত ফিটনেস এক্টিংয়ে সময় দিয়ে, অনেক সিনেমা বাদ দিয়ে শাকিব আজকের ‘রাজকুমার’!

‘প্রিয়তমা’ হলে দেখা হয়েছিলো অনেকবছর পর শাকিবের সিনেমা হিসাবে। কিন্তু হিমেল আশরাফ অগোছালো স্ক্রিপ্টেও জানান দিয়েছিলেন, আরো ভাল নির্মাণ তিনি পারেন। ‘রাজকুমার’ এ ডিরেক্টর হিরো এবং অবশ্যই প্রডিউসার আরশাদ আদনান তিনজনই যেন জিতে গেলেন।

গল্প শামসুল নামের পাবনার আশপাশের কোন এক গ্রামের হিরোটাইপ এক ছেলের। আমেরিকা যাবার বাসনা তার মনে প্রবল। কট্টর বাবা ঠিক তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছেলেকে নিজের কাছে রাখতে চান। তবে একবার ছেলের চতুরতায় বাধ্য হন সম্পর্ক ত্যাগ করিয়ে আমেরিকা যাবার টাকা দিতে। শামসুল নিজেকে ‘স্যাম’রূপে জানান দিয়ে কনট্রাক্ট ম্যারেজের মাধ্যমে আমেরিকা যাবার একটা রাস্তা খুঁজে পায় অবশেষে। কিন্তু শামসুলের এই পাগলামি কেন? শুধুই কি আমেরিকার উন্নত জীবনযাপনের লোভ নাকি অন্যকিছু!

‘প্রিয়তমা’য় হিমেল আশরাফ দুইটা মেজর ভুল করেছিলেন – স্ক্রিনপ্লে কানেক্টেড ছিল না আর ক্লাইম্যাক্সটাই ছিল গল্প। দ্বিতীয় ভুলটি এখানেও আছে তবে সেটা স্বার্থকভাবে। ডিরেক্টর একবারও মূল গল্পের বাইরে যান নি। শাকিব খানকে অনেকদিন পর দেখলাম কমিক, রোমান্স, এগ্রেশন, ইমোশন এবং সাইলেন্স এক্টিং মিশিয়ে দারুন একটা ক্যারেক্টার হয়ে উঠতে। আঞ্চলিক ভাষার ডেলিভারি, ইংরেজির প্রয়োগ কিংবা চলিত বাংলার ব্যবহার করেছেন মেপে, জায়গামত। পুরো সিনেমাজুড়েই শাকিবকেই দেখেছে হলের মানুষ।

নায়কনির্ভর সিনেমায় অনেকসময়ই বাকি ক্যারেক্টর ছায়ার নিচে পড়ে। কিন্তু এখানে তারিক আনাম, আরশ খান, ডা. এজাজ, শিবলু মৃধা সবাই ভাল করেছে। আক্ষেপ থেকেই যাবে নায়িকা কোর্টনি কফিকে নিয়ে। গল্পের জন্য ঠিকঠাক হলেও তার অভিনয় খুব দুর্বল ছিল। সারপ্রাইজিং এক্টির ছিলেন আহমেদ শরীফ এবং শাকিব খানের মা। কেন সেটা সারপ্রাইজ থাকুক।

স্ক্রিনপ্লে বিরতির আগে বেশ এঙ্গেজিং তবে বিরতির পর স্লো এবং অনেক জায়গায় বোরিং। এমনও হয়েছে এক দৃশে বাচ্চার কান্না থামছেই না, অন্য দৃশ্যে স্লো মোশনে কেউ সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়েও শেষ হচ্ছে না। সেকেন্ড হাফে ডিরেক্টর ক্লাইম্যাক্স জমাতে একটা ভালো ফ্ল্যাশব্যাক দিয়েছেন তবে মূল চরিত্রের সাথে রাজকুমারের বিল্ড আপ দেননি খুব একটা। ক্লাইম্যাক্স আবেগঘন করতে গিয়ে তিনি করেছেন ‘খুব আরোপিত’ এক ঘটনা।

নেগেটিক দিকে থাকবে বিজিএম, মাত্রাতিরিক্ত সাউন্ড অনেক জায়গায় ডায়লগ অস্পষ্ট করে দিয়েছে। ভালো লাগেনি শেষদিকে আমেরিকা টু বাংলাদেশ আসা যাওয়ার ফাস্ট পেস। তবে চোখের শান্তি দিয়েছেন রাজিবুল ইসলামের ক্যামেরা, এক কথায় ‘দারুন’! পাবনাকে এক্সপ্লোর করেছেন ভালো, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আর সরিষা ক্ষেত মনে থাকবেই।

ইউটিউবে আপলোডের বাইরেও দুই তিনটা গান শুনলাম, ভাল। তবে ‘একাই রাজকুমার’ সিনেমাহলেও বাজে লেগেছে। শাকিবের গ্রামের ড্রেস আপ আরেকটু মানানসই হওয়া দরকার ছিলো।

রেটিং: ৪/৫


About The Author

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

Leave a reply