![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
রেহানা মরিয়ম নূর: শিল্প-দক্ষতা ও সীমিত দৃষ্টিভঙ্গির অনুশীলন
রজার ইবার্ট পুলিৎজার পুরস্কার-বিজয়ী চলচ্চিত্র সমালোচক। তার সম্মানার্থে শিকাগো সান-টাইমসে তার লিখিত আর্কাইভকৃত রিভিউসহ অন্যান্য সমালোচকদের রিভিউভিত্তিক ওয়েবসাইট রজারইবার্ট.কম। এই সাইটে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে রিভিউ লিখেছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ব্রায়ান ট্যালেরিকো। সেই রিভিউটি বাংলা মুভি ডেটাবেজের পাঠকদের জন্য বাংলায় তুলে ধরা হলো—
এই বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে মতানৈক্য স্বত্ত্বেও একটি বিষয় একই রয়ে গেছে, সেটা হলো এই উৎসবটি বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্রপূর্ণ চলচ্চিত্রের ইভেন্ট। আমি তিনটি চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পেয়েছি, যা প্রমাণ করে আমি কোভিড-মুক্ত। তন্মধ্যে দুটি চলচ্চিত্র গল্পকথনের দিক থেকে বিষাদময়, সেগুলোতে তাদের চরিত্রবলিকে এমনভাবে বিবৃত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তৃতীয় কাজটি বর্তমান সময়ে জীবিত সবচেয়ে প্রিয় চলচ্চিত্র ইতিহাসবেত্তার নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/rehana_maryam_noor_bmdb_image.jpeg?resize=1024%2C424&ssl=1)
এই তিনটি কাজের মধ্যে সেরা কাজটি হলো আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের শক্তিশালী নির্মাণ ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এটি নাম ভূমিকায় আজমেরী হক বাঁধনের শক্তিশালী অনুভূতিপূর্ণ মর্মার্থ বয়ান করেছে। একটি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ইমু (আফিয়া জাহিন জাইমা, খুবই সহজাত অভিনয় করেছে) নামের উৎফুল্ল কিশোরীর সিঙ্গেল মা রেহানা একজন কর্মদক্ষ ব্যক্তি। এমনকি তার ঊর্ধ্বতন (কাজী সামি হাসান) তাকে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার সময় কিছু ছোটখাট বিষয়ে ছাড় দিতে বললেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড়। এক রাতে মেডিকেলে অবস্থানকালে রেহানা তার ঊর্ধ্বতনের অফিসে এক ছাত্রীর নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিষয় টের পান। অ্যানি (আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ) নামের ছাত্রীটি সেই অধ্যাপকের অফিস থেকে বেরিয়ে এলে রেহানা বুঝতে পারেন কী হয়েছে, কিন্তু অ্যানি সেই নিপীড়নের ব্যাপারে নালিশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। রেহানাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, তিনি এই ঘটনা নিয়ে খুবই পীড়িত হন এবং এই ভয়ংকর অপরাধের শাস্তি হবে না এটা তাকে কুড়ে কুড়ে খেতে থাকে।
হলিউড রিপোর্টারের রিভিউ: দর্শককে একই সময়ে দুটি দিক দেখতে বাধ্য করে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/rehana_maryam_noor2_bmdb_image.jpg?resize=750%2C422&ssl=1)
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ মৈত্রীসম্পর্ক স্থাপন এবং কীভাবে খারাপ লোকেরা অপরাধ করেও শাস্তি থেকে বেঁচে যায় তার একটি চমৎকার উদাহরণ। আসল ব্যাপার হলো অ্যানি যদি তার অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নালিশ করে তবে তার জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং শিক্ষাজীবনে যা কিছু শিখেছে তা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সে বুঝে-শুনেই তা ঘটতে দেয়নি, তাই রেহানা বুদ্ধিদীপ্ত এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি তার ঊর্ধ্বতনদের বলেন যে তিনি নিজেই ধর্ষিত হয়েছেন। রেহানা যতই গভীরে যেতে থাকেন, তখন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এইভাবে সাদের চলচ্চিত্রটি প্রায় থ্রিলারে পরিণত হয়। সাদ সর্বক্ষণ আন্দোলিত ও চঞ্চল ক্যামেরা ব্যবহার করেন, যার মধ্যে দিয়ে দর্শক ও কেন্দ্রীয় চরিত্র উভয়ের মধ্যে কী ঘটছে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা তুলে ধরা হয়।
সাদ প্রতিটি দৃশ্যে কেবল রেহানার দিকে ক্যামেরা তাক করার পাশাপাশি হাসপাতালের অফিস, শ্রেণিকক্ষ ও করিডোর ত্যাগ না করে বিচক্ষণভাবে তার নাম ভূমিকার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। এই পটভূমিগুলো ক্লাস্টোফোবিয়া (আবদ্ধস্থানে থাকার আতঙ্করূপ ব্যাধি) তুলে ধরে, যা নীল রঙের প্যালেটের মাধ্যমে তীব্রতর করা হয়। আমরা প্রায়ই রেহানাকে জানালার মধ্য দিয়ে এবং মেঝেতে তার প্রতিফলন দেখতে পাই, যেন তিনি দুঃস্বপ্নের এই দৃশ্যাবলিতে ত্রিমাত্রিক রূপ ধারণ করেছেন, এবং নিয়মের বেড়াজালে এমনভাবে বিলীন হয়েছেন যা ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করে। একটি দৃশ্যে রেহানা তার এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন, যা চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে কিছুটা পিছনে টেনে নিয়ে আসলেও শেষ দৃশ্যে এমনভাবে প্রথম দৃশ্যের অবতারণা করে যা পুরস্কার পাওয়ার দাবীদার।