Select Page

শাকিব খানের ভালো দিক

শাকিব খানের ভালো দিক

শাকিব খান : যেমন হতে পারত‘ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশের পর তার ভক্তদের মধ্যে বলেছে শুধু সমালোচনার দৃষ্টিতে কেন দেখা হচ্ছে, শাকিবের ভালো দিকগুলো নিয়েও লেখা উচিত। কথাটা ভাবিয়েছে। শাকিব খানের ভালো দিক কি আসলেই আছে! ভাবতে ভাবতে কয়েকজনের সাথে মত বিনিময়ও হলো তারপর ঘেটেঘুটে কিছু ভালো দিক নিজেরও চোখে পড়ল। এগুলো নিয়েও মতভেদ থাকবে কারণ অনেকের কাছে ভালো দিক মনে নাও হতে পারে। তারপরেও ‘শাকিব খানের ভালো দিক’ শিরোনামের এ লেখাটি লিখছি। এ লেখাটিকে প্রথমটির পর দ্বিতীয় কিস্তি বলা যেতে পারে।

শাকিব খানের ক্যারিয়ার ২০২০-এ একুশ বছরে পড়ল। বড় ক্যারিয়ারের দিকে এগিয়ে চলেছে। মূল নায়ক হিসেবে এখনো রাজত্ব করে ছবিতে এটা রেয়ার বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিতে। নায়কের দিক থেকে নায়করাজ রাজ্জাকের ২৮ বছরের রাজত্বে শাকিব খান রেকর্ড করতে পারবে কিনা সেটা সময় বলে দেবে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের দিকে যাত্রা করা শাকিব খানের ভালো কিছু দিকের বিশ্লেষণে যাচ্ছি এবার।

ফিল্মি শাকিব
শাকিব খান টোটালি ফিল্মি মানুষ। ফিল্ম ছাড়া তার মাথায় আর কিছু নেই। ছোটপর্দায় কাজ করার অনেক প্রস্তাব পেয়েও করেনি। দু’চারটা বিজ্ঞাপনে কাজ করেছে কিন্তু সেটা ধারাবাহিকতা রেখে করেনি। তার সমসাময়িক রিয়াজ যেমন নায়কের পাশাপাশি ছোটপর্দাতেও সমানভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে শাকিব তা করেনি। কাজ করলে একাধিক মাধ্যমে শাকিবের যোগ্যতার ছাপ থাকত যদিও। শাকিবের কাছে ফিল্মকেই সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি মনে হয়েছে ফিল্মেই পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছে। ফিল্মি এই মনোযোগটা প্রশংসনীয় দিক। হয়তো ফিল্মি হবার কারণেই তার ক্যারিয়ার আজও সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়তো তার মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কোনো ক্যালকুলেশন ছিল অন্য মাধ্যমে নিয়মিত কাজ করলে ফিল্মে ব্যাঘাত ঘটতে পারে সেজন্য। এটা তার ভালো দিক বলাই যায়।

কাজপাগল শাকিব
শাকিব কাজপাগল ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম দিক থেকেই। কম পারিশ্রমিকেও ছবি করে গেছে। অন্য নায়কের পোশাক পরেও তাকে শট দিতে হয়েছে। নিজের পরিশ্রমে জায়গা তৈরি করে তারপর একটা সময় পারিশ্রমিক হাঁকিয়েছে। ‘মনপুরা’ মুক্তির সময় ২০০৯ সালে মান্নার মৃত্যু পরবর্তী অবস্থায় যখন শাকিবের বাজার আরো চাঙ্গা হতে থাকে তার পারিশ্রমিক বেড়ে গিয়েছিল। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে তার সমসাময়িক অন্য নায়করা অনিয়মিত ছিল। পরিশ্রম বেড়ে গিয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই তাই পারিশ্রমিকের দিকে নতুন করে নজর দিয়েছিল শাকিব। কোনো এক ছবিতে ৩৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক হাঁকিয়েছিল এবং ফলাও করে নিউজ হয়েছিল। পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের কাজের যোগ্য প্রাপ্তি যদি শাকিব পেতে চায় সেটা খুব বেশি অন্যায় না। তাই এ বিষয়টাকেও ভালো দিক বলা যায়।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ শাকিব
শাকিব ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্ক্রিন শেয়ার করত। মান্না, রিয়াজ, আমিন খান, ফেরদৌস তাদের সাথে তাকে স্ক্রিন শেয়ার করতে হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নিজের যোগ্যতাকে কোনো না কোনোভাবে দর্শকের কাছে তুলে ধরেছে এবং সেটাই তাকে একক নায়কের জায়গায় ধারাবাহিকতা দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টা শাকিব সফলভাবেই পার করেছে।

মনোযোগ আকর্ষণকারী শাকিব
শাকিব তার ক্যারিয়ারের স্ট্রাগল পিরিয়ডে দর্শকের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করতে পেরেছিল। দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণের মতো যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছে। যেমন – মান্নার সাথে ‘সিটি টেরর’, রিয়াজের সাথে ‘স্বপ্নের বাসর’, ফেরদৌসের সাথে ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, আমিন খানের সাথে ‘রঙিন সমাধি’ ছবিগুলোতে শাকিব তার চরিত্রটিকে অভিনয় ও নায়কোচিত ইমেজ দিয়ে দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। এভাবে লাইমলাইটে আসতে শুরু করেছিল। মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষমতাটা তার গুণ ছিল।

সাবলীল নায়ক
শাকিব যতগুলো নায়িকার সাথে কাজ করেছে সবার সাথেই তাকে পর্দায় সাবলীল লেগেছে। জড়তা, আড়ষ্টতা তার মধ্যে ছিল না। অনেক সময় নায়িকাকেই তার বিপরীতে দুর্বল লেগেছে। নায়কোচিত বডি ল্যাংগুয়েজে শাকিবের দক্ষতা আছে। তবে এ বিষয়টা ভালো ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকেই বর্তমান প্রেক্ষিতে তাকে এক্সট্রা হিরোইজমে দেখা যায়। শাকিব চাইলেই তার আগের ইমেজে ফিরে যেতে পারে কারণ তার মধ্যে নায়কোচিত বিষয়টা সাবলীল ছিল।

ক্যাপচার করার কোয়ালিটি
শাকিব নায়কের ভূমিকায় অনেকভাবে কাজ করেছে। একজন অভিনেতা হয়ে ওঠার সাধনা তার মধ্যে না থাকলেও নায়কের ভূমিকায় পারফেক্ট। হয়তো নায়ক হওয়া বা থেকে যাওয়াটাই সে নিজের কমফোর্ট জোন ভাবে। একজন নায়কের যে গুণগুলো দরকার ভালো লুক, হাইট, নাচ, ফাইট এগুলোতে সাবলীল। ফিটনেস সমস্যা তার কমন হলেও নিজের পারফরম্যান্স করে যেতে পারে যে কোনোভাবে। ‘সুপার হিরো’ ছবির সম্পূর্ণ নতুন চরিত্র কিংবা ‘সত্তা’ ছবির একদম বদলে যাওয়া একটি চরিত্রকে ধারণ করেছে। এভাবে চরিত্রের জন্য দ্রুত ক্যাপচার করতে পারে নিজেকে। নায়কের দিক থেকে এটা ভালো দিকই বলা যায়।

ভালো বিজনেস সেন্স
ফিল্ম বিজনেস শাকিব খান ভালো বোঝে। প্রযোজক শাকিব খান শুধু নয় নায়ক শাকিব খানও এ হিসাব ভালো বোঝে। কখন ছবি মুক্তি পেলে ভালো হবে, কয়টা হলে মুক্তি দিতে হবে এ ধরণের জরুরি বিষয়গুলো ভালো বোঝে। নিজের ছবিকে সফল করার জন্য টেকনিক যে কেউ অ্যাপ্লাই করার অধিকার রাখে। নেগেটিভ প্রচারণা ছাড়া যদি এটা হয় তবে বেশি ভালো। যেভাবেই হোক তবে শাকিবের ফিল্ম বিজনেস সেন্স ভালো মানতেই হবে।

সমালোচনা নয়, কাজে মনোযোগ
ক্যারিয়ারে বিভিন্ন কন্ট্রোভার্সি, ঝড় আসলেও নিজের মনোবল হারায়নি কখনো শাকিব। কাজকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়েছে এবং কাজটাই করে গেছে। একের পর এক ছবি করে গেছে। তাকে নিয়ে ট্রল, সার্কাজম যতকিছু হোক না কেন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। টেনশন মুক্ত থেকে কাজ করে যাওয়াটাও একটা গুণ।

তারুণ্য ধরে রাখা
তারুণ্য ধরে রেখেছে শাকিব। তার সমসাময়িক অন্য নায়কদের লুকে পরিবর্তন বা বয়সের ছাপ এলেও শাকিব নিজের লুক নায়কোচিত রাখার চেষ্টা করেছে এখনও। নিজের বাজারটা সে বোঝে তাই সেটাকে ঠিক রাখতে চেষ্টা করে গেছে। ভালো দিক বলতেই হয় এটাকে।

ঠাণ্ডা মাথার শাকিব
তাকে নিয়ে ফিল্ম পলিটিক্স ডিজিটাল সময়ে বেশি হয়েছে। নিজের ভুলেও সমস্যায় পড়েছে। নিষিদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে কিন্তু হাল ছাড়েনি। খুব ঠাণ্ডা মাথায়, কৌশলে সমাধান করেছে। বিপদে ঠাণ্ডা থেকে সমাধান করাও একটা গুণ।

বাইরের ইন্ডাস্ট্রিতে অবস্থান করা
বাংলাদেশী তারকাদের মধ্যে দেশের বাইরে নাম করা তারকা অনেক আছে। তাদের মধ্যে শাকিবও যুক্ত করেছে নিজেকে। টলিউডি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছে নিজের যোগ্যতায়। তবে যৌথ প্রযোজনাতে যে ছবিগুলোতে সমস্যা ছিল বা বিতর্কিত ছিল সেগুলো কাউন্ট না করে ‘শিকারী’-র কথাই যদি বলি এ ছবিতেও শাকিব কাজ করেছে নিজের যোগ্যতায়। নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করে বাইরের ইন্ডাস্ট্রিতে অবস্থান করতে পারাটাও ভালো দিক তার।

ফ্যানবেজের পালস বোঝা
শাকিব ফ্যানবেজের পালস বুঝে কাজ করেছে সবসময়। তার ফ্যানবেজ পছন্দ করে এমন ছবি করেছে। সমালোচিত ছবি কিন্তু ফ্যানবেজ পছন্দ করেছে এটাকে সে গুরুত্ব দিয়েছে। নিজের ফ্যান ফলোয়িংকে কাজে লাগানোর অধিকার তার আছে। তবে তার ফ্যানবেজ যদি মানসম্মত ছবি করতে বেশি বেশি উৎসাহ দিত তাহলে শাকিবের ক্যারিয়ার অন্যভাবে সমৃদ্ধ হত। ফ্যানদের কাজে লাগিয়ে একসময় ইন্ডাস্ট্রিতে লিড দিয়েয়েছিল। কাজে লাগানোর দক্ষতাটাও একভাবে ভালো দিক।

হাওয়া বুঝে কাজ করা
সময় যত বদলে গেছে শাকিব নিজেকে পরিণত করেছে বুদ্ধির জোরে। ডিজিটাল সময়ে যে পরিচালকরা সময়ের চাহিদা মিটিয়ে কাজ করেছে শাকিব তাদের সাথেও কাজ করেছে। কাদের ছবি করলে নিজেকে শিরোনামে রাখা যাবে এটা সে বোঝে তাই বুদ্ধি করেই কাজটা করে। সম্প্রতি টিএম ফিল্মসের সাথে তার ছবি করার বিষয়টাও সময়ের চাহিদাকেই মিন করে।

খুঁজলে মে বি আরো দু’একটা ভালো দিক পাওয়া যাবে শাকিব খানের। তবে খারাপ লাগার ব্যাপার হচ্ছে, একজন নায়ক ২১ বছর ধরে আছে ইন্ডাস্ট্রিতে অথচ তার ভালো দিক খুঁজতে বেগ পেতে হয়। তবুও শাকিব খান আমাদের নায়ক, বর্তমানে শীর্ষ নায়ক এটা চরম সত্য। তাকে আমরা সমালোচনা যেমন করব তার ভালো দিকগুলো নিয়েও কথা বলতে পারি। সেই চেষ্টা থেকেই এ লেখাটি থেকে যাক ডকুমেন্ট হয়ে।


মন্তব্য করুন