![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
শিল্পীর তুলিতে আঁকা ‘কখনো আসেনি’
কখনো আসেনি, পরিচালক: জহির রায়হান, শ্রেষ্ঠাংশে: খান আতাউর রহমান, সুমিতা দেবী, শবনম, সৈয়দ হাসান ইমাম প্রমুখ। মুক্তি: ২৪ নভেম্বর ১৯৬১।
জহির রায়হানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’। ছবিটি প্রথম দর্শনে একজন সচেতন দর্শক যখন দেখতে বসবে আশ্চর্য তাকে হতেই হবে একজন পরিচালকের প্রথম ছবি কীভাবে এক নিখুঁত হতে পারে। যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা। চরিত্রগুলো অভিনয় করছে না যেন বাস্তবেই স্বাভাবিকভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে, কথা বলছে, হাসছে, কাঁদছে, মরে যাচ্ছে। একজন জহির রায়হানের ক্লাস যে প্রথম ছবিতেই স্পষ্ট হয়েছিল তার দলিল এ ছবি।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/08/kokhono-aseni_bmdb_image.jpg?resize=572%2C338&ssl=1)
ছবির নামটি খেয়াল করুন ‘কখনো আসেনি’। নামের মধ্যেই একটা মায়াবী ব্যাপার আছে। কাব্যিক গন্ধ আছে। মায়া, কাব্য কাব্য সেই ব্যাপারটি সঞ্চারিত হয়েছে পুরো ছবিতে। তাই ছবির নাম ও নির্মাণ যেন মিলেমিশে একাকার।
ছবির গল্পে অনেক আগের একটি ঘটনা পরবর্তী সময়ে তুলে ধরা হয়েছে। তিনটি সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে এবং সবগুলোর সাথে একটা যোগসূত্র রাখা হয়েছে। অনেক দিন আগে এক মিউজিয়ামের মালিক একটি সুন্দরী মেয়েকে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মূর্তির মতো দাঁড় করিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। মেয়েটিও দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে একজন মানুষের পক্ষে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব তারপরেও সে থাকত। এরপর সে বাড়িতে ছবির নায়ক আসে এবং মেয়েটিকে আবিষ্কার করে। মেয়েটি নায়কের সাথে তার গ্রামে যায় এবং নায়ককে ভালোবেসে ফেলে প্রকৃতিপ্রেমী, প্রেমপিয়াসী গুণের কারণে। নায়ক তার দুই বোনকে আগলে রেখেছে কিন্তু দারিদ্রতার জন্য পরিণতি দুই বোন এবং ভালোবাসা দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায় তার সামনে। সে কাকে রক্ষা করবে নাকি অন্য কিছু ঘটবে? এরপর আরো একটি সময় শুরু হয় যেখানে প্রশ্ন সামনে আসে নায়িকার জন্য কখনো কি কেউ এসেছিল!
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/08/kokhono-aseni1_bmdb_image.jpeg?resize=597%2C372&ssl=1)
খুবই মর্মস্পর্শী এই গল্পকে বাস্তবসম্মত অভিনয় ও নির্মাণে জহির রায়হান উপস্থাপন করেছেন। প্রধান দুই চরিত্রে খান আতাউর রহমান এবং সুমিতা দেবী অনবদ্য অভিনয় করেছেন। খান আতাউর রহমানের স্মার্টনেস আর সুমিতা দেবীর দেবীময় সৌন্দর্য তাকিয়ে থাকার জন্য যথেষ্ট। বোনদের একজন ছিলেন শবনম। শবনমের আধো আধো মিষ্টি কথা কানে যেন প্রশান্তি দেয়।
ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক এর ক্যামেরার কাজ। জীবন্ত সবকিছু। চোখের সামনেই সব ঘটছে এমন লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে রোমান্টিক, স্যাড, হরর বিভিন্ন রকমের ফিল পাওয়া যায়। কিছু কিছু সিকোয়েন্সে একই সময়ে একাধিক স্বাদের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহৃত হয়েছে। সুমিতা দেবীর মূর্তি হয়ে দাঁড়ানো আর চোখ ঝিম ঝিম করা অভিনয় দেখার সময় যেন দর্শকেরই মাথা ঝিম ঝিম অনুভূতি হতে থাকে। জহির রায়হানের কাজের শৈল্পিকতা এভাবে বোঝা যায়।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/08/kokhono-aseni1_bmdb_image.jpg?resize=540%2C800&ssl=1)
‘কখনো আসেনি’ একটি মাস্টওয়াচ ছবি। জহির রায়হানের নির্মাণ সম্পর্কে যারা এখনো সেভাবে জানে না কিংবা প্রথম ছবিতেই তাঁর ক্লাস কতটা ছিল সেটাও জানার জন্য ছবিটি দেখা উচিত।