Select Page

শিল্পী ও কারিগর তৌকীর আহমেদ

শিল্পী ও কারিগর তৌকীর আহমেদ

তৌকীর আহমেদ বাংলাদেশের অভিনয় অঙ্গনের জনপ্রিয় ও সুপরিচিত নাম। তিনি নিজে একজন অভিনেতা এবং নির্মাতা। তাই তাকে অভিনয়জগতের জন্য শিল্পী এবং নির্মাণজগতের জন্য কারিগর বলাই ভালো। দুয়ের মিশ্রণে তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ তারকা।

ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষে বুয়েটে ভর্তি। বুয়েট ছাড়াও বিদেশি ডিগ্রি আছে।

১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতকে বিয়ে করেন। তাদের দুই ছেলেমেয়ে আছে। আদর্শ দম্পতির মধ্যে বাংলাদেশে তাঁরা অন্যতম। তার শ্বশুর কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত এবং শ্যালিকা অভিনেত্রী নাতাশা হায়াত, শ্যালিকার স্বামী অভিনেতা শাহেদ। পারিবারিকভাবেই অভিনয় জগতের মানুষ তারা।

অবাক করা বিষয় ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটির প্রস্তাব সালমান শাহ-র আগে যাদেরকে দেয়া হয়েছিল তৌকীর আহমেদ তাদেরই একজন। তথ্যটি হয়তো অনেকেরই অজানা।

অভিনেতা তৌকীর আহমেদ আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত নাটক, চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন।

উল্লেখযোগ্য নাটক/টেলিফিল্ম : রূপনগর, যুবরাজ, ফিরিয়ে দাও অরণ্য, অহর্নিশ ভালোবাসে একজন, তোমার বসন্ত দিনে, যত দূরে যাই, ছোট ছোট ঢেউ, আড়াল, কাগজের বউ, মাতৃকোষে, শুধু তুমি, পার্থ সারথি, আশিক সব পারে, অতিথি, লন্ডনী কইন্যা, কথা ছিল, অঙ্কুর, আকাশের কাছাকাছি, এক জোনাকি, হারজিত, প্রত্যাশা, হাঁসুলী, ওইখানে যেওনাকো তুমি, গোপন কথা ছিল বলার, পোড়া গন্ধ শহর জুড়ে, অন্ধকার জোনাকি, অপার আনন্দ, সোনালি ডানার চিল।

নির্মিত নাটক :  তোমার বসন্ত দিনে, অরণ্যের সুখ দুঃখ, বাল্যশিক্ষা, বিস্ময়।

‘রূপনগর’ ধারাবাহিক নাটকটি নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় নাটক ছিল। তৌকীরের ক্যারিয়ার সেরা নাটকের মধ্যে প্রথম কাতারে থাকবে। নাটকে অভিনেতা খালেদ খান ‘ছি ছি ছি, তুমি এত খারাপ’ সংলাপটি তৌকীরকে লক্ষ্য করেই দেন। ‘যুবরাজ’ ধারাবাহিকটিও তার অন্যতম সেরা এবং জনপ্রিয়। তাছাড়া ‘ফিরিয়ে দাও অরণ্য’ নাটকটি মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বক্তব্যের জন্য নামকরা। ‘আড়াল’ টেলিফিল্মে তৌকীরকে স্টাইলিশ দেখা গেছে। একক নাটকের মধ্যে বিপাশা হায়াতের সাথে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি ছিল এছাড়া শমী কায়সারের সাথেও জনপ্রিয় জুটি ছিল।

তৌকীর আহমেদের অভিনীত চলচ্চিত্র : নদীর নাম মধুমতি, চিত্রা নদীর পারে, লালসালু, রূপকথার গল্প, বৃত্তের বাইরে, রাবেয়া, প্রিয়তমেষু, জালালের গল্প, কমলা রকেট, অর্পিতা, বিউটি সার্কাস।

চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘নদীর নাম মধুমতি’-তে মুক্তিযুদ্ধে বিপথগামী বাবাকে নিজহাতে হত্যা করেন তৌকীর। চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ‘চিত্রা নদীর পারে’ ছবিতেও বিপ্লবী ছাত্রের ভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ। ‘জালালের গল্প’ ছবিতে বহুবিবাহের ধারক, ‘কমলা রকেট’ ছবিতে সুবিধাবাদী মালিক শ্রেণির প্রতিনিধি চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন।

নির্মিত চলচ্চিত্র : জয়যাত্রা, রূপকথার গল্প, দারুচিনি দ্বীপ, অজ্ঞাতনামা, হালদা, ফাগুন হাওয়ায়।

সবগুলো ছবিই নির্মাণে মানসম্মত। নির্মাতা তৌকীর অভিনেতা তৌকীরের থেকে এগিয়ে এজন্যই। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নদীপথের জীবনযুদ্ধে নির্মিত ছবি ‘জয়যাত্রা।’ ‘রূপকথার গল্প’ একটি শিশুকে তার মায়ের কাছে পৌঁছানোর সংগ্রামে করুণ গল্পের ছবি। সাহিত্য থেকে ডিজিটাল বাণিজ্যিক ছবি ‘দারুচিনি দ্বীপ’ অসাধারণ নির্মাণের। ‘অজ্ঞাতনামা’ আদম ব্যবসার প্রভাব ও বাস্তবতা নিয়ে নির্মিত আরেকটি করুণ গল্পের অনবদ্য ছবি। নদীবাহিত জীবনের, সংসারের ও ভালোবাসার ছবি ‘হালদা।’ ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত সাম্প্রতিক ছবি ‘ফাগুন হাওয়ায়।’ সাহিত্যভিত্তিক ছবিও আছে এর মধ্যে। যেমন – ‘জয়যাত্রা’ কিংবদন্তি পরিচালক আমজাদ হোসেনের ‘অবেলার অসময়’ উপন্যাস থেকে নেয়া এবং ‘দারুচিনি দ্বীপ’ কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস থেকে।

তৌকীর আহমেদ সেরা পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দু’বার – জয়যাত্রা (২০০৪), অজ্ঞাতনামা (২০১৬)। সেরা পরিচালকের মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন দু’বার – জয়যাত্রা (২০০৪), রূপকথার গল্প (২০০৬)। এছাড়া দেশি-বিদেশি আরো পুরস্কার পেয়েছেন।

তৌকীর আহমেদকে বিভিন্ন সময় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান যেমন ‘ইত্যাদি, জলসা, আনন্দমেলা’-তে দেখা গেছে।

একজন তৌকীর আহমেদ হওয়া সহজ ছিল না। অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতার জোড় বন্ধনে তৌকীর আহমেদ দেশের শোবিজ অঙ্গনে যে উদাহরণ তৈরি করেছেন তা আগামী প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।


মন্তব্য করুন